স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব ভাবনা
- সরদার আবদুর রহমান
- ২৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০৫
কবি যখন বলেন : ‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?/ দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায়’- তখন বুঝিবা ‘স্বাধীনতা’ তথা মুক্তির জন্য প্রাণে আরো বেশি করে দোলা দিতে শুরু করে।
কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় তার ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় এই বিখ্যাত বাণী উচ্চারণ করে অমর হয়ে আছেন। তবে, তিনি হয়তো সে সময় বুঝতে পারেননি যে, স্বাধীনতা যদি কেবলই একটি খোলস হয় তাহলে সেই স্বাধীনতা মূল্যহীন। এই আধুনিকতার প্রবলতম কালেও পৃথিবীর এমন অনেক দেশ আছে যেখানে ‘স্বাধীনতা’ কেবলই একটি মুখরোচক শব্দ হয়ে আছে।
এবারের স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে এমন একটি প্রেক্ষাপটে যেখানে দৃশ্যত রাজনৈতিক সুস্থিতি ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা দৃশ্যমান। কিন্তু এর অন্তরালে একটি প্রবল অস্বস্তি ও গুমোট অবস্থা বিরাজমান। সদ্য সমাপ্ত যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পুনরায় ক্ষমতাসীন হলো সেটি এক প্রবল বিতর্ক নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো। বলা যেতে পারে, সম্পূর্ণ একতরফা ও একদলীয় এই নির্বাচন ছিল কেবল একটি নির্বাচনী মহড়ামাত্র। এর খোলনালচে ছিল সুদৃশ্য, কিন্তু অন্তরাল ছিল অন্তঃসারশূন্য। এর পূর্বের নির্বাচনগুলোও ছিল একই রকম প্রবল বিতর্কযুক্ত। ফলে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে একপ্রকার গণতন্ত্রশূন্যতার ‘অ্যানিমিয়া’ রোগের শিকার হয়ে পড়েছে। এর থেকে উত্তরণ ছাড়া ‘স্বাধীনতা’ নামক শব্দটি তার মূল্য হারিয়ে ফেলবে।
স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত পটভূমি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ ইতিহাসে রয়েছে। সংক্ষেপ করলে এটুকু বলা যায়, ১৯৭০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকবর্গ ক্ষমতা হস্তান্তরে সংশয়পূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে। তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর পাশাপাশি অধিকাংশ ইসলামী দলও পাকিস্তানের শাসকদের প্রতি আহ্বান জানাতে থাকে। অন্য দিকে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এককভাবে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতা করে নিজেরাও সমভাবে ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়। এ ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা গণপরিষদে যোগদান করতে চেয়েছিলেন তাদের প্রতিও ভুট্টোর দল হুমকি সৃষ্টি করতে থাকে। এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বাংলাদেশে অসন্তোষ দেখা দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে হরতাল ও সর্বব্যাপী প্রতিবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান গণ-অসন্তোষকে পাকিস্তানের সংহতিবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেন। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন এবং এর ধারাবাহিকতায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং অন্যান্য পাকিস্তানি নেতা ঢাকা আগমন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনায় চরম অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। এই আলোচনার আড়ালে পাকিস্তানি শাসকরা ক্র্যাকডাউনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।
অপর দিকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সশস্ত্র আক্রমণ শুরু হয়। এর ফলে বেসামরিক প্রতিরোধ জোরদার হয়। এ দিন মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাষণ এবং ২৬ ও ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের দু’টি ভাষণ প্রচারিত হয়। (বিস্তারিত : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, ২য় খণ্ড)। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে- যা ৯ মাস স্থায়ী হয়। প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে এই সর্বব্যাপি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে। অতঃপর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম ও অভিযাত্রা শুরু হয়। ফলত, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এরপর দেশ থেকে প্রথমে পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে ভারতের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া হয় এবং পরে বাংলাদেশে অবস্থানরত মিত্র বাহিনীর ভারতীয় সৈন্যদেরকেও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এভাবে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বিদেশী সৈন্য মুক্ত হয়। বাংলাদেশে আইন প্রণয়নের জন্য গঠিত হয় গণপরিষদ যা পরে জাতীয় সংসদ নামে পরিচিত হয়। তৈরি হয় বাংলাদেশের সংবিধান।
স্বাধীনতার সুফল কী
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর একটি সংবিধান দ্বারা এর আইনগত কাঠামোও প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে জনগণের অভিপ্রায় অনুযায়ী জন্মলাভ করে যার মূল চেতনা ছিল জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার প্রভৃতি। এগুলো পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলেই তাকে ‘স্বাধীনতার সুফল’ হিসেবে গণ্য করা যায়। সে মোতাবেক ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে এসব বিষয় অনুচ্ছেদ আকারে স্থাপিত হয়। যেমন- সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’
কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পর থেকে অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দেখা গেলো সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ পদে পদে ধাক্কা খেতে থাকল। একাধারে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ ও একদলীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্যতম স্তম্ভ নির্বাচনব্যবস্থা ক্ষমতাসীনদের একতরফা কব্জাভুক্ত হয়ে পড়ল। রাজনৈতিক ময়দান থেকে প্রতিপক্ষকে উচ্ছেদ করার যাবতীয় কর্মকাণ্ড- তা যতো নৃশংস পদ্ধতিতেই হোক না কেনো- পরিচালিত হতে থাকলো। বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের দাপট বৃদ্ধি পেলো। সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সব নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও এসব অধিকারের ওপর বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ আসতে থাকল। একসময় মাত্র চারটি সংবাদপত্র সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হলো।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়ার পর হিসাব কষে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার সুফল প্রাপ্তির দিক থেকে জাতির ভাগ্যে হতাশাজনক অবস্থা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে- এ কথা প্রমাণের জন্য খুব বেশি গবেষণা করার প্রয়োজন পড়বে না।
সার্বভৌমত্ব-চিত্র
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, একটি দেশের স্বাধীনতার সাথে সার্বভৌমত্বের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রাষ্ট্র যে চারটি মৌলিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত তার মধ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষমতাবলে রাষ্ট্র বহির্বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেকে আত্মপরিচয় দিতে পারে। যে রাষ্ট্রের এই ক্ষমতা নেই সেটি প্রকৃতপক্ষে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। দেহের মধ্যে প্রাণ না থাকলে যেমন সে মানুষকে মৃত বলা যায়, তেমনি সার্বভৌমত্ব না থাকলে সে রাষ্ট্রও প্রাণহীন ব্যক্তির মতো পরাধীন জনপদ মাত্র।
তাদের মতে, সার্বভৌমতার দু’টি দিক আছে যথা; অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমতা বলতে বুঝায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বা সীমারেখার মধ্যে এর কর্তৃত্ব। বর্তমান সময়ে অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্বের প্রাবল্য থাকলেও বাহ্যিক সার্বভৌমত্বের দিকটি বেশ দুর্বল বলে প্রতীয়মান হয়। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেমন একটি বৈধ ও গণরায়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের ক্ষমতার অবমাননা করতে পারে না, তেমনই বাইরের কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো রাষ্ট্রও অশ্রদ্ধা করতে পারে না। নিজ দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একে সমুন্নত রাখতে হয় এবং অন্য কোনো শক্তি যেন ক্ষতি করতে না পারে সে দিকে নজর রাখা কর্তব্য। মিলেমিশে চলার জন্য কিছু আন্তর্জাতিক নিয়ম অবশ্যই মান্য করা কর্তব্য। এসবকে মানতে গিয়ে যদি দেশের সার্বভৌমিকতার অবমাননা হয়, তবে তা পরিত্যাগ করতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষকদের মতে, অনেকসময় রাষ্ট্রের ভৌগোলিক স্বাধীনতা বা পৃথক মানচিত্র থাকলেও কার্যকর সার্বভৌমত্ব অনেক দেশের থাকে না। এ ধরনের অবস্থা অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে একপর্যায়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় সীমানার ওপর নিয়ন্ত্রণে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিদেশী শক্তিগুলো দেশের অভ্যন্তরের সংক্ষুব্ধ শক্তির সাথে যোগসূত্র তৈরি করে অশুভ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সরকার রাষ্ট্রের স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণে হয়ে পড়ে অপারগ। একপর্যায়ে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বিদেশী প্রভাব প্রকট হয়ে পড়ে। এ ধরনের অবস্থা দীর্ঘ দিন চললে রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বও হয়ে পড়ে হুমকির সম্মুখীন।
বাংলাদেশে হতাশা
এই সার্বভৌমত্বের দিকটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করা যায়। এ নিয়ে একটি হতাশাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংক্ষেপে এর চিত্র এরকম :
বাংলাদেশ প্রায়শই কোনো না কোনোভাবে বিদেশী ‘হস্তক্ষেপ’ নামক পরিস্থিতির শিকার হয়ে চলেছে। বিশেষ করে একটি বিশেষ দেশের প্রভাবাধীনে প্রবলভাবে যন্ত্রণাকাতর থাকতে হয়।
সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যার ঘটনা প্রতিরোধ করতে না পেরে নিজেদের লোকদেরকেই অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়ে থাকে।
দেশের নির্বাচন-ব্যবস্থায় বিদেশীদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ঘটে। এটি একেবারে খোলামেলাভাবে মানুষ জেনে গেছে যে, দেশের নির্বাচনব্যবস্থাটি কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে বিদেশী প্রভাব বিস্তারের দরোজা খুলে দেয়া হয়। কিছুটা অতি আগ্রহে এবং কিছুটা প্রভাব অতিক্রম করতে না পেরে এই অবস্থা মেনে নিতে হয়।
সীমান্তের কিছু সঙ্কট অমোচনীয় থেকে যাচ্ছে। যেমন, মুহুরীচরে সীমানা নির্ধারণ হয়নি আজো। তিন বিঘা করিডরের মালিকানা বাংলাদেশ আজো স্থায়ীভাবে পায়নি।
দেশের বাণিজ্য বিশেষ দেশের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এমনকি তা অনেকটাই একতরফা হয়ে যায়। একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হয় না। বিভিন্ন অশুল্ক বাধা দিয়ে নিকট প্রতিবেশী দেশে বাংলাদেশের যেটুকু রফতানির সম্ভাবনা আছে, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।
একতরফা করিডর বা ট্রানজিট ব্যবস্থা বিশেষ দেশের জন্য উন্মুক্ত এবং প্রায় শুল্কবিহীন হয়ে পড়ে। একে বলতে গেলে ‘স্বাধীনতার ঋণ শোধ’ নামক ইউটোপিয়ার সাথে যুক্ত করে ফেলা হয়েছে। এতে দেশ ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হলেও তাতে ভ্রƒক্ষেপ থাকে না।
অভিন্ন নদীসমূহের পানির সিংহভাগ একতরফা প্রত্যাহার অব্যাহত থাকলেও তা নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ থাকে না। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে উজানে অসংখ্য বাঁধ-প্রকল্প তৈরি করে এই পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রয়েছে। এর সমাধানের নামে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে পানি নিয়ে চুক্তি করা হয়। এতে থাকে না কোনো গ্যারান্টি ক্ল¬জ।
প্রতিবেশী দেশটির ক্ষমতাসীন দলের উচ্চ নেতৃত্ব বাংলাদেশীদের সম্পর্কে যে ভাষা ব্যবহার করে চলেছেন তা দু’টি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এ ছাড়া আসামের নাগরিকপঞ্জি ও ভারতের নাগরিকত্ব আইনে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে এ নিয়ে নীরব থাকতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা রোহিঙ্গা। এ ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়নি। এটি এ দেশের মানুষের বড় মর্মপীড়ার কারণ।
বাংলাদেশের সাথে চুক্তিসমূহ সম্পাদিত হওয়ার বেলায় বিশেষত শক্তিধর দেশগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কিছু কিছু ব্যাপারে বাংলাদেশ স্রেফ ‘মেনে নিতে’ বাধ্য হয়। ‘সমতা’র নীতি প্রায়শই মানা হয় না।
এভাবে দেখা যায়, প্রতিবেশীদের যেসব উৎপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত সংঘটিত হয়ে চলেছে সেগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশের জনগণ জোরালো কণ্ঠে কোনো মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে না। কখনো ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার কিংবা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে না দেয়ার অসিলায় জনগণকে এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশে বাধা দেয়া হয়ে থাকে। এভাবে রাষ্ট্র ও তার জনগণ নিজেদের সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হতে থাকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা