০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`
রাজকীয় সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা

বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ

বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ -


আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমান বিন ফয়সাল বিন তুর্কি বিন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আল সউদ হিজরি ১২৯৩ সালের ১৯ জিলহজ রাতে (১৪-০১-১৮৭৬ ঈসায়ী) রিয়াদের রাজ প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা তাকে সঠিক ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। ছয় বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত শাইখ আবদুল্লাহ আল-খুরাইজির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ১১ বছর বয়সেই কুরআন হিফজ সমাপ্ত করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন আলেমের কাছ থেকে তাফসির, হাদিস, ফিকাহ, তাওহিদ, আরবি ভাষা, সিরাতুন্নবী ও ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি অধ্যয়ন করেন।

লেখাপড়ার পাশাপাশি আবদুল আজিজ তার পিতার সাথে বিভিন্ন সভা-সমিতি, বৈঠক ও সফরে যেতেন ও সেখানে বিভিন্ন বৈষয়িক বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। সাথে সাথে অশ্ব চালানো ও যুদ্ধ কৌশলও রপ্ত করেন। তার পিতার সাথে কুয়েতে অবস্থানকালে তৎকালীন কুয়েতের রাজা মুবারক আছছবাহর (১৩০৯ হি.) কর্মকাণ্ড, শাসনকার্য ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
পরবর্তীতে তিনি শাইখ আবদুল্লাহ আবদুল লতিফ আল-আশ-শায়েখের কাছ থেকে ইসলামী ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। তার পরিবার কুয়েত থেকে ফেরার পথে মুররাহ উপজাতির সাথে অবস্থান করার সময় প্রায় সাত মাস অশ্ব চালানো শেখেন। সেখানে তিনি ১০ বছর অবস্থান করেন। সৌদি আরব নামক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দেন। রাজ্যগুলো একত্রকরণে তিনি ছিলেন আদর্শ ব্যক্তি। সেটির জন্য তিনি অব্যাহতভাবে সংগ্রাম করেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ, মজলিসে শূরা, ট্রাস্টি পরিষদ ও অন্যান্য প্রশাসনিক দফতর গঠন করেন। বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও স্বাধীনতাকে রক্ষা করেন, যা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। নিকটতম আরব রাষ্ট্র ইরাক, ইয়েমেন, মিসরসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে তিনি তার রাজ্য চালনায় দৃঢ় সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন।

বাদশাহ আবদুল আজিজ ৫৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময় তিনি আরব উপদ্বীপে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্বেষী বেদুইন উপজাতিদের থেকে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত রাজ্য গঠন করেন। ৯ নভেম্বর ১৯৫৩-এ যখন তিনি ৭৩ বছর বয়সে মারা যান, তখন তিনি একটি গভীর ভিত্তিমূলের ওপর দাঁড়ানোর ব্যবস্থা এবং একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্র রেখে যান, যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়, জাতীয় কোম্পানি এবং অসংখ্য বংশধর (পুত্র এবং নাতি) যারা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।
বাদশাহ আবদুল আজিজ যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি শত্রুদের পরাজিত করতে সক্ষম হন। তাদের প্রতি অত্যন্ত ধৈর্য ও উদারতা প্রদর্শন করেছিলেন। তাদেরকে বের করে দেয়ার পরিবর্তে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করেন। হিজাজের অধিবাসীদেরকে তিনি স্বাধীনতা ও নিজস্ব বিষয়ে শাসন করার ক্ষমতা প্রদান করেছেন।
একজন বুদ্ধিমান রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের ভুলগুলো বুঝতে পারেন। এ কারণে তার রাজ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় ঝুঁকি নিতে হয়নি। তিনি দ্বিতীয় সৌদি রাষ্ট্রের মৃত্যু থেকেও শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং ফলস্বরূপ তার নিজের পরিবারের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং আল-শেখ পরিবারের সাথে মৈত্রী বজায় রেখেছিলেন।
তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে খুব বেশি ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তার ছেলে প্রিন্স সালমান, রিয়াদ অঞ্চলের আমির থাকাকালে একবার বলেছিলেন, ‘আমার বাবা কখনোই বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়েন না বা ঘুমাতে যেতেন না যতক্ষণ না তিনি দেশের সব অংশ থেকে জমা দেয়া প্রতিবেদনগুলো পড়তেন এবং শোনতেন, এমনকি রাতের শেষ প্রহরেও তিনি এই কাজ করতেন।’

বাদশাহ আবদুল আজিজ এবং তেল যুগ
ঊনবিংশ শতকের তৃতীয় দশকের শুরুর দিকে সৌদি রাষ্ট্রের অর্থনীতি কঠিন অবস্থার দিকে গিয়েছিল। সেটি কয়েক বছর স্থায়ী ছিল। ব্যক্তিগত আয় ছিল নিম্নমানের এবং রাষ্ট্রের আয় ছিল স্বল্প। সরকার ঋণী হয়ে পড়েছিল। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব ছিল না। আবদুল আজিজ এবং তার উপদেষ্টারা এটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এ সঙ্কটের সমাধান খুঁজছিলেন। তারা খনিজ সম্পদ ও তেল অনুসন্ধানের চিন্তা করলেন। পাশাপাশি তিনি তার দেশে বিদেশীদের প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা করছিলেন।
এরই মধ্যে চার্লস আর ক্রেন নামে একজন আমেরিকান ধনী ব্যক্তি বাদশাহ আবদুল আজিজের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন এবং সৌদি বাদশাহর জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন। সৌদি সরকার তাকে সাক্ষাৎ করতে দিতে রাজি হওয়ায় ক্রেন বাদশাহ আবদুল আজিজের কাছে কার্ল টুইচেল নামে একজন ভালো তেল অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞকে পাঠান, যিনি ছয় মাসের মধ্যে জানতে পেরেছিলেন যে সৌদি পূর্ব অঞ্চলে তেলের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ খবর বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলো সৌদি আরবে তেল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তিন প্রতিযোগী তখন এই সুযোগ পাওয়ার জন্য লড়াই করছিল: পূর্বাঞ্চলীয় এবং সাধারণ সিন্ডিকেট, ইরাক পেট্রোলিয়াম কোম্পানি (আইপিসি) এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানি (ক্যাসকো)।

দীর্ঘ সময়ব্যাপী অভিজ্ঞ লোকজনদের সাথে আলোচনার পর ১৯৩৩ সালে সৌদি সরকার ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির সাথে প্রায় ৪৯৫ হাজার ৫০০ বর্গমাইল এলাকার তেল অনুসন্ধান ও উৎপাদনের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। রাজ্যের পূর্ব উপকূল থেকে তেল অনুসন্ধান কার্য শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে দাহরান এলাকার সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক তেলক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। প্রথম অপরিশোধিত তেল জাহাজের মাধ্যমে বাহরাইনে রফতানি করা হয় এবং ১৯৩৯ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজের উপস্থিতিতে রা’স তান্নুরা বন্দর থেকে তেল ট্যাংকারে করে রফতানি করা হয়। এ আবিষ্কার ছিল জমিন এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার প্রাকৃতিক গ্যাস আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ১৯৪৪ সালে পূর্বের নাম পরিবর্তন করে অ্যারাবিয়ান অ্যামেরিকান তেল কোম্পানি (অ্যারামকো) করা হয়।

বাদশাহ আব্দুল আজিজ তার উদারতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ডক্টর সাইদ আল-মুলাইস নিম্নোক্ত গল্পটি লিখেছেন: ‘এক দিন বাদশাহ আবদুল আজিজ হজ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই বাদশাহর গাড়ির একটি টায়ার পাংচার হয়ে গেল। ফলে বাদশাহ তার গাড়ি থেকে নেমে বালুর ওপর বসলেন। টায়ার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছিল, একজন বেদুইন পাশ দিয়ে চলে গেল এবং রাজাকে জিজ্ঞেস করল বাদশাহ আব্দুল আজিজ কি এই পথ দিয়ে গিয়েছেন? রাজা জিজ্ঞেস করলেন: ‘আপনি এটা কেন জিজ্ঞেস করছেন?’ বেদুইন উত্তর দিলো: ‘আমাকে বলা হয়েছে যে আব্দুল আজিজ এই পথে যাচ্ছিলেন। তাই আমি ভাবলাম, আমি তাকে কিছু টাকা দিতে বলব যাতে আমি হজ করতে পারি।’ উত্তরে, বাদশাহ আবদুল আজিজ স্বর্ণমুদ্রার ব্যাগটি খুললেন এবং লোকটিকে এক মুঠো মুদ্রা দিলেন। বিস্মিত বেদুইন। কয়েনের দিকে এবং তারপর রাজার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ধন্যবাদ আবদুল আজিজ! আমি প্রথমে আপনার চেহারা চিনতে পারিনি, কিন্তু এখন আপনার উদারতায় আমি আপনাকে চিনি।’


আরো সংবাদ



premium cement
কওমি ছাত্ররা বিসিএস করে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবে : যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী পীরগাছায় শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে গাছের চারা তুলেন দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবন্ধন পাচ্ছে আরো ২৯ দেশী পর্যবেক্ষক সংস্থা গাজায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৬০০০ রাজধানীতে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস উপলক্ষে সাইকেল র‍্যালি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাথরুম থেকে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার ইসরাইলের হামলায় হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নোয়াখালীতে ৭ জুয়াড়ি গ্রেফতার গাজায় ইসরাইলি সৈন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ বিরোধীদলের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়ে যা বললেন আমিরে জামায়াত

সকল