ছেলেবেলার ঘুড়ি
- গোলাপ মাহমুদ সৌরভ
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০৫
সেই ছেলেবেলার ঘুড়ি আজো মনে পড়ে। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে বইখাতা কোনো রকম ঘরে টেবিলের উপরে ছুড়ে ফেলে স্কুলড্রেস না খুলেই বসে পড়তাম ঘুড়ি বানানোর নেশা। মা আমার জন্য ঘরে নারকেল পাতার শোলার ঝাড়ু রাখতে পারতেন না আমি রোজ রোজ শোলার কাঠির ওপর সুতা পেঁচিয়ে বড় পলিথিন কেটে ঘুড়ি বানাতাম। মা যখন দেখতেন আমি ঘুড়ি বানাতাম তখন হাতে একটি লাঠি নিয়ে আমাকে দৌড়ানি দিতেন আমি আমার জিনিসপত্রগুলো হাতে নিয়ে দৌড়ে কোনো এক নির্জন জায়গায় বসে আপন মনে ঘুড়ি বানাতাম। একবার বানাতাম তা মনের মতো সুন্দর না হলে আবার নতুন করে বানাতাম তার পর খোলাম খোলা মাঠে গিয়ে নাটাই দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতাম। আমার মতো গ্রামের আরো আট-দশজন ছেলে ঘুড়ি ওড়াতে খলাপাড়ের মাঠে আসত। সবাই হাসি আনন্দে ঘুড়ি ওড়াতাম। আর দেখতাম কার ঘুড়ি সবচেয়ে বেশি উপরে উঠত। এটি যেন একটি ছেলেবেলার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো আর হাতে নাটাই দিয়ে আরেকজনের নাটাই কেটে ঘুড়ি ছিনিয়ে নেয়ার একটি খেলা হতো। প্রচণ্ড রোদে শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে যেত তার জন্য মনে কোনো টেনশন হতো না। শুধু ঘুড়ি নিয়ে একটি ব্যস্ত সময় পার করতাম। কখনো কখনো দুপুর ঘনিয়ে বিকেল হতো কিন্তু ঘুড়ি ওড়ানো শেষ হতো না। এ দিকে মা সারা বাড়ি খুঁজে বেড়াতেন আমাকে। আমি ঘুড়ির নেশায় পড়ে দুপুরের খাবারের কথা ভুলে যেতাম। যখন বিকেল বেলা ঘুড়ি ওড়ানো শেষ হতো তার পর পেটে ক্ষুধা মনে হতো চুপি চুপি বাড়ি যেতাম, দেখতাম মা কোথায় আছে। যদি আমাকে দেখে ফেলে তাহলে মাইর দেবে এই ভয়ে কখনো উঠানের পাশে খড়কুটোর পেছনে লুকিয়ে থাকতাম। মা হলো এমন একজন মানুষ যে কখনো সন্তানের সাথে রাগ করে বেশি ক্ষণ থাকতে পারেন না। একটু পরেই আবার আদর করে ঘরে নিয়ে নিজের হাতে নলা দিয়ে খাইয়ে দেন। মা শব্দটি হলো আদর স্নেহ মায়া-মমতার নাম। তারপর খাওয়া শেষ হলে মা বলতেন, খোকা এবার একটু পড়তে বস। সারা দিন হাণ্ডুহাণ্ডুু করে ঘুরে বেড়িয়েছিস, একটুখানি পরেই মাগরিবের আজান হবে পড়তে বসবি। আমি মাথা নেড়ে বলতাম ঠিক আছে মা। ঠিক আছে বলে পড়তে বসতাম কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে ছোট ছোট ভাইবোন নিয়ে আবার বাড়ির উঠোনে কানামাছি খেলতাম সাথে চাচাতো ভাইবোনেরাও ছিল। আকাশে তারাভরা রাত সুন্দর চাঁদের আলো বাঁশবনে জোনাকিপোকার আলো। আরেক দিকে মা চাচীরা বসে সবাই সবার সাংসারিক গল্প এবং রূপকথার গল্পে মেতে উঠতেন। তা ছাড়া মিষ্টি বাতাস এসে গায়ে লাগত। গল্প আর হাসি-আনন্দে সময় পার হতো। আবার যখন রাত্রি পেরিয়ে সকাল হতো ঘুম থেকে ওঠে হাত মুখ না ধুয়ে মাকে না বলে ঘুড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যেতাম চুপচাপ। মাঠে ঘুড়ি আর খেলাধুলা করে বাড়িতে আসতাম। তাড়াহুড়ো করে অল্প কয়েকটা খেয়ে আবার বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতাম ঠিক মতো শাটের বোতাম লাগাতাম না। স্কুলে যাওয়ার সময় দেখতাম অন্য পাড়ার ছেলেরা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়ায় তখন তাদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখতে দাঁড়িয়ে যেতাম। হাতে বই খাতা নিয়ে তাদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখতাম। তাদের ঘুড়ি ওড়ানো দেখে মনে আনন্দ পেতাম। কখনো কখনো তাদের সাথে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে গল্প করতাম- কে ক্যামনে ঘুড়ি বানায়। ঘুড়ি ওড়ানো দেখে কখন যে ক্লাসের সময় চলে যেত তাও ভুলে যেতাম। মাঠে বসে স্কুলের সময় পার করে আবার যখন স্কুল ছুটি হতো সবার সাথে একসাথে বাড়ি যেতাম। ঘুড়ির নেশায় কখনো কখনো এভাবে স্কুল ফাঁকি দিতাম। বাড়িতে গিয়ে আবার ঘুড়ি বানাতাম আর ওড়ানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম। কতই না মধুর হতো আবার যদি সেই ঘুড়ি ওড়ানোর সেই ছেলেবেলা ফিরে পেতাম, তা হলে ঘুড়ি নিয়ে মাঠে যেতাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা