২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিম ও পশুপাখি

-

তখন চৈত্রমাস চারিদিকের পানি শুকিয়ে গেছে। কোথাও এক ফোঁটা জলও নেই। খালবিল নদীনালা শুকিয়ে গেছে। অন্য দিকে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে জীবনটা অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে। ঘরে বসে বইটি হাতে নিয়ে পড়ছিল মিম, হঠাৎ করে লোডশেডিং- নাহ গরমে আর ঘরে থাকা যাচ্ছে না। বলেই বইটি হাতে নিয়ে একটি চেয়ার নিয়ে বাড়ির পেছনে চলে যায় মিম একটু প্রকৃতির থেকে শান্তির পরশ নিতে। কিন্তু কই আর শান্তির পরশ প্রকৃতির ও যেন মন ভালো নেই। গাছদেরও মন চাইছে না পাতা নেড়ে হাওয়া করতে, যেন তারাও থমকে গেছে। নাহ, কিছুই ভালো লাগছে না বলেই আবার বই আর চেয়ার নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে এলো মিম। পিপাসায় গলাটা যেন শুকিয়ে আসছে ভেবেই বই আর চেয়ার ঘরে রেখে গ্লাসটা হাতে নিয়ে টিউবওয়েল দিকে যায় মিম। গ্লাসটা ধুয়ে টিউবওয়েল চেপে পানি নিয়ে খেতে যায় মিম, হঠাৎ থমকে যায় মিম পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে। এই তীব্র গরমে অতিরিক্ত সূর্যের তাপে চারিদিকে পানি শুকিয়ে গেছে তাহলে এই যে পশুপাখি পিঁপড়া আরো অনেক জীবজন্তু কী খেয়ে বেঁচে আছে। আমরা তো যাই হোক টিউবওয়েল থেকে কিছু হলেও পানি খেতে পাচ্ছি কিন্তু তারা কী খাচ্ছে এই গরমে? ভেবেই পানি খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল মিমের। ঘরে গিয়ে বসে ভাবতে লাগল মিম- আমরা কী এসব পশুপাখি জীবজন্তুর জন্য কিছুই করতে পারি না! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় একটি বুদ্ধি চলে এলো মিমের। মনে মনে বলে, আমরা তো কিছু করতেই পারি, আমরা সবাই যদি একটি পাত্রে করে কিছুটা পানি বাড়ির আশেপাশে রেখে দেই তাহলে তো পশুপাখি পিঁপড়া আরো যেসব জীবজন্তু আছে তারা ওখানে থেকে পানি খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ভেবেই ঘরে থেকে একটি বড় গামলা নিয়ে পানি ভরে বাড়ির পেছনে রেখে দিলো। আর কিছুটা পানি গামলার চারিদিকে ফেলে দিলো যাতে করে পিঁপড়া খেতে পারে। পানি রেখে দূরে গিয়ে বসে থাকে মিম দেখে আসলেই মিম যেটি ভেবে পানি রেখে দিলো আসলেই তার ভাবনা ঠিক আছে কি না। হঠাৎ মিম দেখতে পেল, গামলার চারিদিকে ফেলে রাখা পানিতে মাটি ভিজে আছে তার উপর ছোট ছোট অনেকগুলো পিঁপড়া এসে জমা হয়েছে, মনে হচ্ছে তারা পানি খাচ্ছে অনেক শান্তি তৃপ্তি করে। আরো কিছুক্ষণ পরে দেখে একটি কুকুর এসে পানি খাচ্ছে। গাছের ডালে কয়েকটি পাখি কিচিরমিচির করছে কিন্তু পানি খেতে আসছে না। কিন্তু কেন- ভাবতে থাকে মিম। পরে বুঝতে পারল, মিম যে কুকুর দেখে ভয় পেয়ে আসছে না। তাই মিম চট করে বাড়ির ভেতরে গিয়ে আরো একটি গামলাতে ভরে পানি এনে একটু দূরে রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পরই মিম দেখতে পেলো পাখিগুলো এসে এসে পানি খাচ্ছে। এসব দেখে মিমের মনটা খুশিতে ভরে গেল। পরের দিন সকালে স্কুলে গেল মিম। মিম ক্লাস ফাইভে পড়ে। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার তাই ক্লাসটাও ছিল হাফ, তাই প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও গান, ছড়া কবিতা আবৃত্তি আয়োজন আছে। স্যার শুরুতেই কবিতা আবৃত্তি করার জন্য মিমকে ডাকে আর মিমকে ডাকতেই চলে যায় স্যারের কাছে। স্যার মিমকে বলে, মিম আজকে তুমি আমাদের কী কবিতা শুনাবে? মিম এবার বলে স্যার আজকে আমি কোনো কবিতা আবৃত্তি করে শুনাব না। স্যার বলে, তাহলে তুমি এখানে এলে কেন? মিম বলে, স্যার আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্যই এসেছি। আপনি অনুমতি দিলে বলব? স্যার বলে, অবশ্যই বলো- তুমি কী বলবে? এবার মিম সবার দিকে মুখ করে বলে- এই যে গরমে প্রচণ্ড রোদে চারিদিকের পানি শুকিয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে খালবিল নদীনালা, আমরা তো টিউবওয়েল থেকে পানি খেতে পাচ্ছি কিন্তু আমরা কী একটু ভেবে দেখেছি পশুপাখি পিঁপড়া আরো অনেক জীবজন্তু তারা কী খাচ্ছে? কী খেয়ে তারা তাদের পিপাসা মেটাচ্ছে? আমাদের কী একটু তাদের জন্য কিছু করা উচিত না? মিমের কথা শুনে স্যার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মিমের দিকে। সবটা শুনে স্যার মিমকে বলে, তুমি খুব মূল্যবান কথা বলেছ এখন আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করতে পারি। এবার মিম স্যারকে গতকালের সবটা খুলে বলে। স্যার আমরা সবাই যদি একটি পাত্রে পানি নিয়ে বাড়ির আশেপাশে রেখে দেই তাহলেই পশুপাখি পিঁপড়া আরো জীবজন্তুরা ওখান থেকে পানি খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। মিমের সব কথা শুনে এত সুন্দর ভাবনাকে সবাই সমর্থন করে মিমকে বাহবা দিতে লাগল। আর সবাই বাড়ি গিয়ে নিজ নিজ বাড়ির আশেপাশে পানি রেখে দিলো আর পশুপাখি পিঁপড়া আরো অনেক জীবজন্তু তারা পানি খেয়ে শান্তি তৃপ্তি পেলো এবং পিপাসা দূর হলো।


আরো সংবাদ



premium cement