২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আব্বু

-

এই তো সেদিনের কথা! হ্যাঁ, সেদিনই তো! বড় হলাম আর ক’দিন ই বা হলো। ছিলাম তো তোমাদের মতো একদম এতটুকুন বয়সের। ঢোলা হাফপ্যান্ট আর শার্ট পরতাম। আলুথালু হয়ে হাঁটতাম। বেখেয়ালে কখনো কখনো তো পড়েই যেতাম রাস্তায়। তারপর জুড়ে দিতাম বিরামহীন কান্না। ভ্যাঁ, ভ্যাঁ।
আমি যখন তোমাদের মতো একেবারে ছোট্টটি, তখন আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন আব্বু। তিনি আমাকে কাঁধে করে এখানে-ওখানে নিয়ে যেতেন। হাত ধরে হাটে নিয়ে যেতেন। মজার মজার খাবার কিনে দিতেন। তবে আমিও আব্বুর জন্য খুবই পাগলপারা ছিলাম। ধরো, প্রতিদিন দুপুরে খেয়েদেয়ে যখন ঘুমাতে যাই, ঘুম ভাঙতে ভাঙতে দেখি বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এলো। আমি আব্বুকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যেতাম। একবার এক লোক কী করল দেখো! সে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য আমাকে মিছিমিছিভাবে বলল, এই খোকা, তোমার আব্বুকে তো পুলিশ নিয়ে গেছে! কী বলে এসব! আমি বাসায় এসে দিলাম এক কান্না। সেই কান্না দেখে আম্মু কেবলই হাসে। ওহ্, বলাই হয়নি! আব্বুকে আমার সবচেয়ে ভালো লাগত আমার প্রশ্ন করতে পারার কারণে। একসাথে হাঁটছি, পাশে হয়তো বৈদ্যুতিক খুঁটি। অমনি আব্বুকে জিজ্ঞেস করছি, আচ্ছা আব্বু, এই খুঁটি কিভাবে এখানে এলো? এর কাজ-ই বা কী? একবার রেললাইনের পাশ দিয়ে আব্বুর আঙুল ধরে হাঁটছি। আব্বুর কাছে প্রথমে জিজ্ঞেস করি, আচ্ছা আব্বু, এত বড় লোহার পাত কিভাবে এখানে বসানো হয়েছে? এতো লোহা কোথায় পেল তারা? আর এত পাথর কোথা থেকে আসে? সেবার আব্বু হেসেই দিয়েছিলেন। সে বয়সটাতে একবার চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম আব্বুর প্রতিষ্ঠান থেকে। আব্বু আগে থেকেই চট্টগ্রাম ছিলেন। সে সময় তো আর এখনকার মতো এমন মোবাইলের চল ছিল না। আব্বু জানতেন আমরা আজ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসব। আমি মনি আপুর কোলে করে চট্টগ্রাম এলাম। চিড়িয়াখানার গেটে গাড়ি বাঁক নিতেই দেখি আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন তপ্ত রোদে। কপাল বেয়ে তার দর দর করে ঘাম ঝরছে। সেবার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আব্বু আমার অনেকগুলো ছবি তুলিয়েছেন। ঘোড়ার পিঠে, কৃত্রিম পুলের উপর, চরকির পাশে। সে ছবিগুলো আমাদের বাসায় অনেকদিন ধরে জমা ছিল। আমরা ভাইবোনরা যখন একটু একটু করে বড় হতে লাগলাম, তখন এ ছবিগুলো আমরা বের করে আয়োজন করে দেখতাম।
যখন বড় হতে লাগলাম তখনো আব্বু আমাকে গোসল শেষে মাথার পানি মুছে দিতেন। মাঝে মধ্যে সন্ধ্যায় বাজারে নিয়ে মোগলাই কিংবা দই খাওয়াতেন। আমরা যখন ভাইবোনরা বাজারে যেতাম, তখন আমাদের মনে আনন্দের হল্লা বয়ে যেত। আনন্দে আমাদের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত।
এখন আর আব্বু আগের মতো আমাদের মোগলাই কিংবা দই খাওয়াতে বাজারে নিয়ে যান না। ঘুরতে নেন না কোনো চিড়িয়াখানায়। গোসল শেষে মাথাভর্তি পানি রয়ে গেলেও আর তিনি মুছে দেন না। আব্বু এখন কেমন আছেন তা-ও আমরা জানি না।


আরো সংবাদ



premium cement