২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রঙ পেন্সিল

-

রনি অনেক দিন ধরে বায়না ধরেছে বাবার কাছে একটা রঙ পেন্সিলের বাক্স চাই। কিন্তু বাবার হাতে নেই টাকা। তাই আর কেনা হয় না। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। তাদের কাছে এগুলো অযথা অপচয় ছাড়া কিছু না। রনি জেদ করলে বাবা তাকে শান্ত করতে বলে, টাকা হলেই এনে দেবো।
একদিন রনি অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেল। রাতে তার স্বপ্নে এলো এক পরী। সে রনিকে একটা রঙের বাক্স দিলো। তাতে ১২টা রঙ ছিল। জাদুর রঙ পেন্সিল। তাই রনি এটি দিয়ে যা-ই আঁকবে। তাই বাস্তবে পরিণত হবে। শর্ত ছিল কাউকে বলা যাবে না। আর এক দিনে মাত্র তিনটি ইচ্ছা পূরণ হবে। আর একটি শর্ত ছিল পরীর। রনির শুধু নিজের ইচ্ছাই নয়, অন্য কারোর ইচ্ছাও পূরণ করতে হবে। স্বার্থপর হলে এই রঙের জাদু থাকবে না।
রনি তো রঙ পেয়ে বেজায় খুশি। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখল সত্যি সে রঙ পেন্সিল পেয়েছে। কিন্তু কাউকে বলা যাবে না। তাই যা-ই করে লুকিয়ে। যখন যা ইচ্ছা আঁকে আর খুশিতে নাচে। ঠিক ঠিক মনে রাখে শুধু প্রতিদিন তিনটি ইচ্ছা পূরণ হবে। মাঝে মধ্যে বন্ধুদের জন্যও এটা ওটা করে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। বন্ধুরাও মহাখুশি।
একদিন এক ছোট্ট ছেলে এসে তার কাছে বায়না করল। তার একটি রঙিন কলম চাই। সে দিন রনির তিনটির মধ্যে দুটো ইচ্ছে পূরণ হয়েছিল। একটি এখনো বাকি; কিন্তু রনির সে দিন খুব চকোলেট খেতে ইচ্ছা করছিল। সে তাই আঁকবে। এর মধ্যে এলো এই ছেলে।
রনি তাকে বলে দিলো, আমার কাছে রঙিন কলম নেই। তুমি অন্য কোথাও দেখো। ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
রাতে সে আবারো স্বপ্ন দেখল। পরী এসে তার রঙ পেন্সিলের জাদু কেড়ে নিলো।
আর বলে গেল, তুমি স্বার্থপর হলে কিভাবে? শিশুটাকে কেন রঙিন কলম দিলে না? তোমার জাদুর ক্ষমতা আর থাকল না।
সত্যি তাই হলো। রনির রঙ পেন্সিল আছে ঠিকই। কিন্তু জাদু নেই। সে কষ্টে একা একা কাঁদল।
স্কুলে যাওয়া পথে একটি ছোট্ট মেয়ে এসে তার হাতের রঙ পেন্সিলগুলো দেখে চাইল। রনির মন খুব খারাপ ছিল।
সে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে রঙ পেন্সিলগুলো দিয়ে দিলো। আর বলল, তোমার বন্ধুদেরও দিও রঙ করতে।
মেয়েটা খুব খুশি হলো। আর আচ্ছা বলে চলে গেল। হঠাৎ রনির মনটা ভালো হয়ে গেল।
সে ভাবল এত দিন তো মনের মতো সব পেয়েছে। আর এই রঙ পেন্সিল তো তার না। ওটা পরীর দেয়া ছিল। যাই হোক মেয়েটি অনেক খুশি হয়েছে। আজ রনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে। কাউকে খুশি করতে পারাতে যে আনন্দ আছে তা সে আজ সত্যিকারে বুঝতে পেরেছে। তার মনের কষ্ট দূর হয়ে গেল। সে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে গেল।


আরো সংবাদ



premium cement