২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

স্বাধীনতা : প্রয়োজন উপলব্ধির

-

স্বাধীন সত্তায় বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষায় বেড়ে ওঠে জীবন। একটি জীবনকে ঘিরে মানুষের স্বপ্ন থাকে হাজারো। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে পরবর্তিত হয় দিন-রাত। জীবন গড়িয়ে যায় সময়ের স্রোতে। শতসহস্র হা-হুতাশার পরও মানুষ আশাবাদী হয়ে বাঁচতে চায়। চায় নতুনত্বের স্বাদ। একটি ছোট্ট শব্দ স্বাধীন। এই স্বাধীন শব্দটির মধ্যে জড়িয়ে আছে এক ধরনের আকর্ষণ। জন্মগতভাবেই এই শব্দটির সাথে মিশে আছি আমরা। বেঁচে থাকার দৌড়ে মৌলিক কিছু চাহিদা মানুষের চিরন্তন। ভাবনা থেকে নয় বরং বাস্তবতাই মানুষকে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় উজ্জীবিত করে তোলে। স্বাধীনতা শব্দটি সকলের জন্য বিশেষ গুরুত্বের হয়ে ওঠে। পৃথিবীকে জানতে বুঝতে চাই ইচ্ছের স্বাধীনতা। সৃষ্টির রহস্যের দ্বারে পৌঁছাতে চাই। সকলেই চাই স্বাধীন হয়ে বাঁচতে। পথ যতই কঠিন হোক তবুও চাই। চাই সব কঠিনেরে জয় করে এগিয়ে যেতে। এখানেই ভাবনা; স্বাধীন হওয়ার পথ আসলে কতটা কঠিন? কেমন করে পাওয়া যায় এই স্বাধীনতা। এর জন্য কতটা প্রস্তুতির প্রয়োজন!
একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিকল্পনাই পারে জীবনকে গুছিয়ে দিতে। পরিকল্পনাহীন পথ চলা যায় ঠিকই কিন্তু সাফল্যের কাছে পৌঁছানো যায় না। সাফল্যময় জীবনের প্রত্যাশা সকলের। এই পরিকল্পনার জন্যই চাই চিন্তার স্বাধীনতা। একটি শিশু যখন বড় হতে থাকে তখন থেকেই তার মনের আকাশ প্রশস্ত হতে শুরু করে। সে আকাশ দেখবে। পাখিদের সাথে মিতালি করবে। বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে। বাগানের সৌন্দর্যে মন ভরাবে। এই আনন্দকুড়াতেও তাকে স্বাধীন হতে হবে। মায়ের শাসন বাবার বকুনি খেয়েও সে তার মনের রাজ্যের রাজা হবে। হোক তা একদিনের জন্য! বা কয়েকটি দিনের জন্য। তবুও তার মন যা চাইবে সে প্রবলভাবে তা করার চেষ্টা করবে। শুধু প্রয়োজন সঠিক উপলব্ধির। শিশু মনের ভাবনায় যদি এতোটুকুও স্বাধীনতা না থাকে তাহলে অংকুরেই তাদের স্বপ্নগুলো পাতা ঝড়ার মতোই ঝড়ে যায় অবহেলায়। তাই জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে মনের কথা প্রকাশ করতে স্বাধীনতার বিকল্প কিছু নেই।
আমাদের জাতিসত্তার অভ্যুদয়ের মূলমন্ত্র ছিল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ থেকে আরম্ভ হয়ে সকল ধর্মের মানুষের সমঅধিকারের দেশ। যেখানে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন। সেই লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। এ লড়াই একটি দেশকে স্বাধীন করার লড়াই। এ লড়াই মায়ের ভাষার জন্য লড়াই। এমন যুদ্ধ আর দেখেনি সমগ্র বিশ্ব। তাই এর গুরুত্ব অন্যরকম। মাত্র নয় মাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। যা কোনোভাবেই সহজ কিছু নয়। পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা অর্জনের যে পথ তাতে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের চূড়ান্ত আত্মত্যাগ, নির্যাতিত মানুষের চিৎকার, ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন ও এক নদী রক্ত। এই স্বাধীনতা নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা-গল্প-উপন্যাস। ইতিহাস পরিক্রমায় পরাধীন জাতির জন্য সবচেয়ে আকাক্সক্ষার এবং সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের এই স্বাধীনতা।
ভালেবাসার সাথে লতাগুল্মের মতো জড়িয়ে আছে স্বাধীনতা। কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই এই স্বাধীনতাকে জয় করা যায়। বাংলার মানুষও নিজেদের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতার প্রতি তাদের ভালোবাসার সাক্ষর রেখেছে। আজও যা ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয়-বরণীয়। একটি উন্মুক্ত সুনির্মল আকাশ পেতে কঠিন সংগ্রামে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ভাষার জন্য লড়াই। মায়ের ভাষার স্বীকৃতির জন্য আত্মত্যাগের যে ঘটনা তা একমাত্র বাংলাদেশের মানুষই দেখিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ হারিয়ে, প্রিয়জনদের শোকে গর্বিত জাতি আমরা। বাড়ি-ঘর হারিয়ে নিঃস্ব তবুও হাসিমুখে বেঁচে থাকা। সত্যিই কী এতোটা সহজ! নয় কিন্তু। কঠিন বলেই একে জয় করার আনন্দ সীমার বাইরে। দেশের জন্য, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এই লড়াই আমাদের শিখিয়েছে কেমন করে দৃঢ়তায় টিকে থাকতে হয়। ছিনিয়ে আনতে হয় স্বাধীনতা। কারণ একটাই; পরাধীনতা কখনও আনন্দের হতে পারে না। ইচ্ছে করে কেউ হেরে যায় না। এটা যেমন সত্য তেমনি জেতার জন্য চাই সাহস, চাই ইচ্ছের দৃঢ়তা।

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কথাটি সত্য। সরল এ কথাটি ঘিরেই আবর্তিত মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা। লেখাপড়া শিখেই মানুষ জগৎ জয়ের আনন্দ নেয়। বাবা-মাও শতরকম স্বপ্ন বোনে মনের আঙিনায়। ভাবনার রেখাটি ক্রমশ বাড়তে থাকে। কেমন করে তারা একজন সত্যিকারের মানুষ হবে। উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে। ছাড়িয়ে যাবে আকাশের সীমানা। স্বপ্নের চূড়ায় দেখবে নিজেকে। এমনই যখন সংকল্প তখনই প্রয়োজন সঠিক শিক্ষার পরিবেশ। একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাই পারে উন্নত জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে। বুকের অতল কোণে লুক্কায়িত স্বপ্ন পূরণের পথও এটাই। যারা শিক্ষা দিবে তাদের চিন্তা এবং কর্মের স্বাধীনতা থাকতে হবে। এটি ভীষণ জরুরি। তারা বাচ্চাদের মনোজগত নিয়ে ভাববে। প্রতিটি বাচ্চাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করবে। প্রতিটি বাচ্চার বৈশিষ্ট্য আলাদা। তেমনি তাদের মনোজগত। শিশুদের মনোজগতে প্রবেশ করতে না পারলে তারা কখনোই স্বাধীনভাবে নিজেদের নিয়ে ভাবতে শিখবে না। বাচ্চারা ফুলের মতো কোমল। মনোগতভাবে আবেগি। সহজেই সব কিছুকে আপন করে নিতে তারা উৎসাহী। উৎসবের আনন্দে তারা চায় বড় হতে। অনেক বড়। এই বড় হওয়ায় প্রয়োজন বাবা-মায়ের স্বপ্নের সাথে নিজের স্বপ্নগুলোকে গুছিয়ে নেয়া। স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠাতেই তারা এগিয়ে যাবে ভবিষ্যৎ এর পথে। স্বাধীনভাবে চলতে শিখবে। কারণ তাদের হাতেই নির্মিত হবে জাতির ভবিষ্যৎ। আলোকিত একটি দেশ হবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।
আমরা কী করি! কেন করি! এর কখনো কারণ খুঁজি না। অথচ এর উপলব্ধি অত্যন্ত গুরুত্বের। একটি কাজ কখন বিশেষ হয়ে উঠে! যখন কাজটি সম্পন্ন করতে ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকে। একটি ভাবনার রেখা থাকে। স্বাধীনভাবে চিন্তার রেখাটিই একজন ব্যক্তিকে আস্থাশীল করে তোলে। কারণ পরনির্ভরতা দিয়ে কখনো সেরা কাজটি হয় না। কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা না পেলে সেই কাজটি বিশেষ হয়ে উঠে না। দেশের মানুষের জন্য জাতির উন্নতির জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন। রক্ত দিয়ে জয় করা স্বাধীনতার মর্ম উপলব্ধি করতে হবে। একজন মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর চাহিদা খুবই সামান্য। কিন্তু এটুকুও তারা সময়মতো পায় না। তাই একজন ব্যক্তির মৌলিক অধিকার যখন নিশ্চিত হয় তখনই মানুষের বেঁচে থাকা সহজ হয়ে উঠে। জীবনে নেমে আসে প্রশান্তি। এক্ষেত্রে আরো আছে স্বাধীনভাবে মানুষের ভোটের অধিকার। যেখানে সকল নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীন চিন্তার আলোকে শাসক নির্বাচন করবে। এই অধিকার আমাদের সকলের। এসব ঠিকঠাক মতো করতে পারাতেই স্বাধীনতার আনন্দ। এভাবেই স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে। এবং আধুনিক বিশ্বায়নে নিজেদের অবস্থান হয় সুদৃঢ়।

একটি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তার যৌবনকাল। এ বয়সেই তারা স্বাধীনভাবে চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বনির্ভর দেশ গড়ে তুলতে পারে। এ সময়টিতে উন্নত চরিত্র গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমস্ত শাসনবেড়ি উপেক্ষা করে মন চায় কেবলই পাখির মতো উড়তে। এটিই সহজাত চেতনা। ভীষণরকম দুশ্চিন্তারও। এটি দূর করতেই প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান আহরণ। মানবজাতির জন্য আল্লাহর রাসূলের শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে। সৃষ্টিকর্তা কী উদ্দেশ্যে আমাদের সৃষ্টি করেছেন? কী সেই দায়িত্ব যা আমাদের পালন করা জরুরি। আল্লাহ কতটা স্বাধীন হতে বলেছেন। এ বিষয়ে জানতে হবে। এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে ছোট-বড় সকলকেই। ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। যেনো প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে নিজেকে নিয়ে ভাবনার সুযোগ পায়। অপরের কল্যাণে এগিয়ে যেতে পারে। অন্যের জন্য সমস্যার কারণ না হয়। প্রযুক্তির এ যুগে সকলেই ব্যস্ত। পাশাপাশি বসে থেকেও যেন বহু দূরে। জীবনের উদ্দামতা, উচ্ছলতা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। কেউ যেন বাধা হতে না পারে। এমন কিছু হলে কঠোর প্রতিবাদে রুখতে হবে। সকলের অধিকারের বিষয়ে সতর্ক হয়ে এগোতে হবে। কর্মস্থলের স্বাধীনতা থাকতে হবে। বর্তমানে অনেকেই উদ্যোক্তা হয়ে বিভিন্ন কাজে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। এর জন্যও চাই স্বাধীনভাবে কাজের ক্ষেত্র। এ বয়সে সকলেরই চাওয়া; যেনো জগৎটাকে কাছ থেকে দেখা যায়। পৃথিবীর এক কোণা থেকে অপর কোণা পর্যন্ত ছুটে বেড়ানো যায়। স্বাধীনতার এমন আনন্দের কথা শোনা যায় কবির কণ্ঠে, রইব না কো বদ্ধ খাঁচায়, দেখব এ-সব ভুবন ঘুরে-/ আকাশ বাতাস চন্দ্র-তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চূড়ে।/ আমার সীমার বাঁধন টুটে/ দশ দিকেতে পড়ব লুটে/ পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে/ বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।
শিশু থেকে যৌবনের সময়টা যেমন গুরুত্বের। তেমনি বার্ধক্যের সময়টাও। কর্মে চঞ্চল মানুষটি যখন বৃদ্ধ হয় তখনই এককীত্ব আঁকড়ে ধরে। চারিদিকে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করে। মন হয়ে যায় শিশুর মতো। প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্য মনকে আন্দোলিত করে। অবাক হয়ে চেয়ে দেখে সময়ের চলে যাওয়া। দেখে কেমন করে অন্ধকারে ঢেকে যায় পৃথিবীর সমস্ত আলো। তখনও মিটমিট করে জ্বলতে থাকে তারার রাজ্য। নতুন ভোর আসে নতুন দিনের সংবাদ নিয়ে। নতুন আলোয় স্বাধীনভাবে বাঁচার ইচ্ছে আরো প্রবল হয়ে ওঠে। মাঠ ভরা ফসল বাংলার চিরায়ত রূপ। সোনালি রঙ এর ধানের শিষে কৃষকের মুখভরা হাসি। খেটে খাওয়া মানুষের সুখ। এসবই স্বাধীনতার আনন্দ। বাংলার প্রতিটি ঋতু প্রকৃতিকে সাজিয়ে রাখে বিভিন্নতায়। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের বেঁচে থাকা। ফুলের আনন্দে আনন্দিত মন নেচে বেড়ায় সর্বত্র। পথের উপর শুয়ে থাকা মানুষটিও আনন্দ নেয় জীবনের। এমনই সুখ পেতে চায় মানুষ। দু’মুঠো খেয়ে বাঁচবে। তবুও স্বাধীনভাবে বাঁচবে। এমনই স্বাধীনতা চায় মানুষ। যে স্বাধীনতায় হাসবে পুরো পৃথিবী। সবার প্রিয় সবার ভালোবাসায় স্বাধীন হয়ে এগিয়ে যাবে মহা আনন্দের দিকে।


আরো সংবাদ



premium cement
কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’

সকল