২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কৃতজ্ঞতা

-

অনেক কাল আগের কথা, এক গ্রামে এক বৃদ্ধ বসবাস করত আপনজন বলতে দুনিয়াতে কেউ নেই, ছিল না তার, তার অভ্যাস ছিল বছরের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন দেশ-বিদেশে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করা। সর্বদা তার সাথে একটা ব্যাগ থাকত তাতে সে ভ্রমণকালীন প্রয়োজনীয় খাবার-পানি ইত্যাদি রাখত।
একবার সে বিশাল এক বন-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎই তার দৃষ্টির জালে আবদ্ধ হল এক ক্ষুধার্ত-পিপাসার্ত কুকুর, রঙ ও গঠনে কুকুরটা খুবই সুন্দর, সারাগাঁয়ে ফুটবলের মতো বড় বড় সাদা-কালো ছাপা, পিঠের ঊর্ধ্বদেশ থেকে পাঁজরের উপর বয়ে গেছে অসংখ্য লম্বা লম্বা কেশরাশি, লেজের কেশও কোনো দিক থেকে কম নয়, বাতাসে কাশফুলের মতো উড়ছিল তার শরীরের কেশরাজি। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কুকুরটা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল, মুখগহ্বর থেকে আধহাত জিহবা বের হয়ে কচুর পাতায় জমা শিশিরের মতো টপটপ করে লালা পড়ছিল। এ দৃশ্য দেখে বৃদ্ধের মায়া হলো এবং সে তার কাছে থাকা খাবার ব্যাগে হাতড়াতে লাগল এবং কিছু রুটিটুকরা ও সামান্য পানি কুকুরের সামনে এগিয়ে দিলো। ক্ষুধার্ত কুকুর খাবার-পানি দেখামাত্রই দৌড়ে এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগল যেন সে চাবানোরও ফুরসত পাচ্ছে না। খাবার শেষে কুকুরটা বৃদ্ধের দিকে কৃতজ্ঞতার চাহনিতে তাকিয়ে লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করল এবং আনন্দচিত্তে সেই বৃদ্ধের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে লাগল। ভ্রমণের একপর্যায়ে বৃদ্ধ ক্লান্তি নিয়ে বিশালদেহী এক বটবৃক্ষের নিচে নিজেকে এলিয়ে দিলো, কুকুরটাও বৃদ্ধের সাথে সাথে তার গা ঘেঁষে এমনভাবে বসে পড়ল দেখে মনে হচ্ছিল তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। এভাবেই তাদের কয়েকদিন কেটে গেল।
এক দিনের ঘটনা, বিকেল গড়িয়েছে, সূর্য রক্তমাখা গোলাপের মতো লালরূপ ধারণ করেছে, তার আলোকরশ্মিতে দিগ-দিগন্ত রক্তের মতো লাল হয়ে উঠেছে, পাখির ঝাঁক আপন নিড়ে ফিরে যাচ্ছে, চতুর্দিকে নিস্তব্ধতা অনুমিত হচ্ছে, গগনদেশে তারকারাজি মিটিমিটি হাসছে, চার দিক থেকে অন্ধকারের কালো চাদর পুরো বনজঙ্গল বেষ্টন করে ফেলেছে। রাত যাপনের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধ বনজঙ্গলের একটি জায়গা বেছে নিলো এবং রাত যাপনের সার্বিক ব্যবস্থা সেরে বৃদ্ধ ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।
কুকুরটা তাঁবুর বাইরে পাহারা দিচ্ছিল, ঘনজঙ্গলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়া সত্ত্বেও গাছ-গাছালির ফাঁকফোকর দিয়ে মাঝে মধ্যে চাঁদের আলো উঁকি দিচ্ছিল। রাতের আঁধারে হঠাৎই এক হিংস্র নেকড়ে হাজির, কুকুর তাকে দূর থেকে দেখে তার মনিবের জীবন বাঁচানোর জন্য নেকড়ের সামনে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে গেল এবং রীতিমতো দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষয়ী লড়াই করে নেকড়েকে পরাজিত করে আবার তাঁবুর সামনে এসে শুয়ে পড়ল, নেকড়েকে যদিও সে পরাজিত করেছে; কিন্তু তার ক্ষত অতি গভীর হওয়ায়- সেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। প্রভাতের আলো বৃদ্ধের চোখে পড়ায় সে ঘুম থেকে উঠে তাঁবুর বাইরে এসে দেখে কুকুরের মৃতদেহ তার সামনেই পড়ে আছে। কুকুরের চোখের ভাষা বৃদ্ধকে এটাই বলছিল যে মনিব! নিজের জীবন বিনাশ করে হলেও আপনাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি, নিজের জীবন থাকা না থাকার কোনো পরোয়া করিনি। বৃদ্ধ এই দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে তার চোখের কোণ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। এবং সে একা একা বিড়বিড় করে বলতে লাগল হায়! তুমি কতই না কৃতজ্ঞজীব যে সামান্য রুটি ও পানির বিনিময়ে নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিলে।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল