২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গাঁয়ের রূপ

-

এক দিকে দিগন্ত বিস্তৃত সোনা ঝরা ফসলি জমি, আরেক দিকে কলকলিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট সুরমা নদী- এরই মাঝে সবুজবেষ্টিত আমাদের ছোট্ট গাঁ। দূর থেকে দৃষ্টি দিলে মনে হবে যেন গাছগাছালিতে ঢাকা কোনো সবুজ অরণ্য। অথবা অথৈ সবুজের বুকের ভেতর আলাদাভাবে গড়ে ওঠা কোনো এক সবুজ দ্বীপ। গাঁয়ের পুব দিকে আরো আছে ছোট্ট একটি বিল। বর্ষায় সে বিল জল থইথই করে ওঠে। শাপলা ফুটে থাকে এখানে সেখানে। বর্ষা ছাড়াও সবসময়ই বিলে অল্প জল থাকে। জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরে। গাঁয়ের ছেলেপুলেগুলোও ছুটে যায় ঠ্যালা জাল হাতে।
আমাদের গ্রামটি ছোট হলেও বেশ কোলাহলমুখর। গাঁয়ের ডানপিটে ছেলেপেলেগুলো মাতিয়ে রাখে সবাইকে। আম-জাম আর বরইয়ের মৌসুমে ওঁৎ পেতে বসে থাকে গাছের নিচে। মাটির চাকা ভেঙে যেই ঢিল ছুড়ে ওমনিই লাঠি হাতে দৌড়ানি দেয় মুন্সী দাদু। পাজি ছেলেগুলোর এসব দুষ্টুমিতেই মেতে থাকে গাঁয়ের সবাই। তা ছাড়া গাঁয়ের মানুষগুলোও খুব অমায়িক। শান্ত। নম্র-ভদ্র। বলতে গেলে কারো মাঝেই তেমন ঝগড়াঝাটি হয় না। সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকে। সুখদুঃখ ভাগাভাগি করে একে অপর। কারো ঘরে ভালো কিছু রান্না হলে পাশের ঘরের লোকদেরও সেখান থেকে ভাগ দেয়। বেশ আন্তরিকতা আর ভালোবাসা লক্ষ করা যায় সবার মাঝে। ইট পাথরের শহুরে মানুষগুলোর ভেতর এসবের কিছুই নেই।
সবচেয়ে ভালো লাগে গাঁয়ের সকালগুলো। এখন তো শীতকাল। এই তীব্র শীতে ভোরবেলা বাইরে বের হলে হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডায় শরীর জমে যায়। গাছের পাতা বেয়ে টুপটাপ শিশিরের ফোঁটা পড়ে। সবুজ ঘাসের জমিন ভেজা থাকে শিশিরের দানায়। শিশিরসিক্ত কচি ঘাসের ডগায় মৃদু পা ফেলে ফেলে হেঁটে চলার আনন্দটাই অন্য রকম। যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কোমল নরম এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়।
গাঁয়ে খুব দ্রুতই রাত নামে। আটটা কী নয়টার আগে আগেই ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। নীরব নিশ্চুপ হয়ে যায় সবাই। রাতের অন্ধকারে কেউ বাইরে বের হয় না। ভয়ে গা ছমছম করে। এই বুঝি ধরে ফেলল মেছো ভূত! ওদিকে শিয়ালের হুক্কাহুয়ার ডাক তো আছেই। তবে গাঁয়ের লোকগুলো প্রচণ্ড সাহসী। এরা এসব ভূতটুতকে থোড়াই কেয়ার করে না। বিশেষ কোনো প্রয়োজন পড়লে গভীর রাতেও তারা বেরিয়ে পড়ে বাইরে। সব মিলিয়ে গাঁয়ের রূপ বর্ণনা করার মতো নয়। সকাল সন্ধ্যা- একেক সময় গাঁয়ের রূপও একেক রকম ধারণ করে। সকালে একরকম তো বিকেলে আরেক রকম। গাঁয়ে যাওয়া ছাড়া গাঁয়ের রূপ সৌন্দর্য কিছুতেই উপভোগ করা যাবে না। গ্রামবাংলার চিরায়ত এই সৌন্দর্য দেখতে হলে তাই আমাদের ছুটে যেতে হবে কোনো এক সবুজ গাঁয়ে।


আরো সংবাদ



premium cement