২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দুরন্ত ও তিতলী

-

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র দুরন্ত। নাম দুরন্ত হলেও খুব শান্ত ও ভাবুক। কিছুদিন যাবৎ বাবা-মা লক্ষ করছেন দুরন্ত স্কুল থেকে দেরিতে বাসায় ফিরছে। আগের চেয়ে টিফিনের টাকা একটু বেশি চায়। বাবা-মা এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায়।
মা দুরন্তের বাবাকে বললেন, আজ ছেলেকে জিজ্ঞেস করো কেন স্কুল থেকে দেরিতে ফেরে। বেশি টাকা দিয়ে সে কি করে?
দুরন্ত যথারীতি দেরিতে বাসায় ফিরল।
বাবা দেরির কারণ জানতে চাইলেন। দুরন্ত চুপ। কোনো উত্তর দিলো না।
মা বললেন, দেখেছ ছেলে কেমন বেয়াদব।
বাবা আবারো জিজ্ঞেস করলেন। দুরন্ত এবারো নিরুত্তর।
মা তেড়ে এসে দুরন্তের গালে চড় বসিয়ে দিলেন।
বাবা বললেন, থাক থাক।
দুরন্ত চোখ মুছতে মুছতে নিজ রুমে চলে গেল! বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় বসে পড়লেন।
মা বললেন, শোনো- তুমি কাল ছুটির পর ওর পিছু নেবে। কোথায় যায়, কী করে দেখে আসবে।
বাবা বললেন, কাজটি কি ঠিক হবে?
মা বললেন, অবশ্যই। এ বয়সে শিশুরা বিপথগামী হয়। তাই আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।
পরদিন স্কুল ছুটির পর বাবা দুরন্তের পিছু নিলেন।
দেখলেন হাঁটতে হাঁটতে দুরন্ত পথের পাশের এক বস্তিতে গেল। বস্তির একটি চিলেকোঠা থেকে দুরন্তের সমবয়সী এক মেয়ে বেরিয়ে এলো। দুজনে সেই ঘরের ছায়ে বসে বই বের করল। দূর থেকে মনে হলো, দুরন্ত মেয়েটিকে পড়াচ্ছিল এবং কিছুক্ষণ পর তার হাতে কিছু খাবার ধরিয়ে দিলো।
বাবা খুব বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলেন স্থির হয়ে।
দুরন্ত ঘরে ফেরার আগেই বাবা ফিরলেন। তার মাকে সব জানালেন এবং তাকে কিছু বলতে নিষেধ করলেন।
দুরন্ত যথারীতি বাসায় ফিরল। বিকেলে বাবা তাকে নিয়ে বারান্দায় বসলেন।
হাত দু’খানা পরম স্নেহে জড়িয়ে বাবা বললেন, শোন বাবা, তোর কোনো ভালো কাজেই আমরা বাধা দেবো না। তুই কি আমাকে বলবি, প্রতিদিন কোথায় যাস?
দুরন্ত বলল, বাবা আমি স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই একটি মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতাম। আমার খুব কৌতূহল হলো, কেন সে দাঁড়িয়ে থাকে! একদিন তার কাছে জানতে চাইলাম।
সে বলল, আমি ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ি। আমার নাম তিতলী। বেতন দিতে পারিনি বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার নাম কেটে দিয়েছে। বই-খাতাও কিনতে পারিনি। আমার খুব ইচ্ছে পড়ালেখা করি। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাদের দেখি।
লক্ষ করলাম তিতলীর চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু পড়ছে।
জানো বাবা, আমার বুকটা কেমন যেন শূন্য হয়ে গেল। কয়েকদিন ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম তিতলীকে কিছু প্রয়োজনীয় বই-খাতা কিনে দেবো। আমি প্রতিদিন ক্লাস শেষে তিতলীকে গিয়ে পড়াব। ওরা ঠিকমতো খেতে পারে না বলে কিছু খাবার কিনে দেই। তিতলীর ছোট ভাইয়ের বয়স পাঁচ বছর। মা বাসায় বাসায় ঝিয়ের কাজ করতেন; কিন্তু অসুস্থতার কারণে এখন আর কাজে যেতে পারেন না। রিকশাচালক বাবা চারজনের খরচ চালাতে হিমশিম।
তুমিই বলো বাবা আমি কি কোনো ভুল করেছি?
বাবা বললেন, না রে বাবা। তুই কোনো ভুল করিসনি। তুই যে মানবতার পরিচয় দিয়েছিস তাতে গর্বে আমার বুক ভরে গেছে। তবে আমাদের জানানো তোর উচিত ছিল।
ভয়ে বলিনি বাবা। পাছে তোমরা যদি রাগ করো।
ঠিক আছে। এখন থেকে সব কথা বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করবি। আর কথা দিচ্ছি,আজ থেকে তিতলীর পড়ালেখার দায়িত্ব আমার।
শিগগির যা, তিতলীকে গিয়ে খবর দে।
দুরন্ত আলোর বেগে ছুটে গেল তিতলীর কাছে।


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ

সকল