২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নবান্নে দেশ হাসে

-

‘বাড়ি আইলে ইস্টি কুটুম ওইনা ধানের চিঁড়া কুটুমরে/ পিঠা পায়েস বানাইয়া খামু পাড়া-পড়শি লইয়া/ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া /ও ধান ভানিরে।
ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া/ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া/ ও ধান ভানিরে’
এমনি সঙ্গীত শিল্পীর গানের মতো, চিত্রশিল্পীর কল্পনার রঙ-তুলিতে আঁকা বাংলার হেমন্তের এক প্রতিচ্ছবি।
কার্তিক অগ্রহায়ণ এই দুই মাস নিয়ে ঋতুচক্রে আবর্তিত হয় হেমন্তকাল। কার্তিকের শেষে অল্প অল্প শীতে কুয়াশায় যখন সব কিছু ধোঁয়াশার মতো মনে হয়, তখন ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই ছোট্ট বেলায়।
হেমন্ত মানেই নতুন প্রাণের স্পন্দন, নতুন আমেজ। হেমন্ত ছাড়া এই আমেজ যেন উপলব্ধি করাই যায় না। কার্তিকের শুরু থেকেই হালকা ঝিরঝিরে বাতাস জানিয়ে দেয় হেমন্তের সূচনা। বেলা ছোট হয়ে আসে। কর্মব্যস্ততা শেষ করার আগেই পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে সূর্য দিনের সমাপ্তি ঘটিয়ে অস্ত যায়। হিম হিম ঝিরঝিরে শুষ্ক বাতাস শরীরকে আরো শুষ্ক করে তোলে। ত্বক খসখসে হয়ে যায়। পথঘাট আবার ধুলোয় ভরতে থাকে। হেমন্ত মানেই নতুন ধান ঘরে তোলার ব্যস্ততা। হেমন্ত মানেই কৃষাণ- কৃষাণীর ব্যস্ততা। কার্তিকের শেষ দিকে মাঠে মাঠে সোনালি ধান দেখা যায়। পাকতে শুরু করে কৃষকের মাঠের ধান। কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। ধান কাটার উপকরণ গুলো ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে থাকে। পুরোপুরি ধান পেকে যাওয়ার পর দল বেঁধে মাঠে যায় কৃষকরা। সকালের সূর্য ওঠার আগেই কাস্তে হাতে নিয়ে মাঠে চলে যায় কৃষকগণ। সকালের খাবার হিসেবে পান্তা ভাত পৌঁছে দেয় কৃষাণ বৌ। বাড়িতে ফুরসত নেই কৃষাণ বৌ-দেরও। তারাও ধান গোছাতে ব্যস্ত। ধান মাড়াই করা। ঝাড়া মোছা, ধান সেদ্ধ করা, রোদে শুকানো। সব মিলিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করে তারা। সেই ধান তুলতে আশপাশের সবাই পাশাপাশি কাজ করে। সে কাজের ফাঁকে কত আনন্দ বেদনার গল্প লুকিয়ে থাকে। কত হাসি কান্নার গল্প জড়িয়ে থাকে তাতে। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করার মতো নয়। শীতের দিন রোদ তেমন থাকে না। যতটুকু রোদ পাওয়া যায় তাতেই শুকাতে হয় স্বপ্নের ধান। বহুল আকাক্সিক্ষত সে ধান। সে ধানে কত স্বপ্ন জমা থাকে। অনেক ব্যস্ততায় বেশ কিছুদিনের কষ্টের পরে সে ধান ঘরে তোলে। ধান ঘরে তোলার পর শুরু হয় ঘরে ঘরে পিঠা পায়েসের আয়োজন। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব জমে উঠে নতুন করে নতুন রূপে। কৃষাণ বৌরা মনের আনন্দ নিয়ে বানায় নানান রকম পিঠা। কত রকমের পিঠা যে তৈরি করে তা বলে শেষ করা যাবে না। এ বাড়ি ও বাড়ি বিলায় পিঠা। এ সময় জামাইরা বেড়াতে আসে শ্বশুর বাড়ি। মেয়ের বাড়িতে পিঠা পায়েস পাঠায় বাবার বাড়ি থেকে। প্রতিবেশীদের নিয়ে তৃপ্তি সহকারে খায় পিঠা পায়েস। সারা বছর অল্প অল্প করে স্বপ্ন জমায় হেমন্তে ধান কাটার পর ধান বিক্রি করে কাপড়-চোপড়, ঘর- গৃহস্থালির টুকিটাকি জিনিস ক্রয় করবে। সাধ্য অনুযায়ী ক্রয়ও করে। সারা বছর বেড়ানোর ফুরসত না পেলেও হেমন্তে নতুন ধান ঘরে তোলার পর নতুন ধানের পিঠা পায়েস বানিয়ে বেড়ানোর ধুম পড়ে গ্রামে। পল্লীর চিরায়ত রূপে ভরে ওঠে বাংলার প্রতিটি ঘর। প্রতিটি ঘরে লেগে থাকে কৃষাণ-কৃষাণীর হাসি। হেমন্তের নবান্নের হাসিতে হেসে ওঠে পুরো বাংলা।


আরো সংবাদ



premium cement
গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা

সকল