২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লোকসংস্কৃতির উদ্ভব ও বিকাশ

-

সংস্কৃতির উৎস লোকজীবন। সমাজে যাদের ‘লোক’ বলে অভিহিত করা হয়, যারা সাধারণ, অমার্জিত এবং নিরক্ষর মানুষ। এরা শহর ও নগরের মানুষ থেকে অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে কিংবা পশ্চিমবাংলায় অথবা ভারতের নানা স্থানে আজো এরা নগর সভ্যতার বাইরে গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহর নগর বন্দরে ‘বস্তি’তেও বসবাস করে। এই ‘লোক’ নামে কথিত মানুষদের একদিন প্রতিদিনের জীবন চর্চার মধ্যে নিহিত সংস্কৃতিই-লোকসংস্কৃতি। অতীত বা প্রাচীনকালে মানুষ তার জীবনাচরণের জন্য নানা কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নিয়েছে। এ সব কর্মাকাণ্ডের ভেতর থেকেই লোক-সংস্কৃতির উদ্ভব ও বিকাশ।
সংস্কৃতির একটি বড় মাধ্যম ‘ধর্ম’। শিক্ষিত মানুষ ধর্মকে স্রষ্টা বা আল্লাহর প্রদত্ত বলে জানে। এদের কাছে ‘ধর্মগ্রন্থ’ আছে। এদের মধ্যে কেউ একেশ্বরবাদী, কেউ বহুমাত্রিক দেব-দেবীতেও বিশ্বাসী। তবে দেব-দেবীতে যারা বিশ্বাসীরা তারাও একজন স্রষ্টার কথা জানে। স্বর্গ, নরক সম্বন্ধেও তাদের ধারণা রয়েছে।
কিন্তু যারা ‘লোক’ নামে চিহ্নিত, ধর্ম সম্বন্ধে তাদের ধারণাও ভিন্ন। এদের বেশির ভাগই কেবল ‘বস্তু’কে প্রত্যক্ষ করে বলে তারা বস্তুবাদী। এরা বলে ‘যারে দেখি না নয়নে তারে ভজিব কেমনে।’ এরা নিজেদের বাইরের বিশ্বকে অনেক বড় করে দেখে। এমনিভাবে তারা সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র প্রকৃতি, সমুদ্র ইত্যাদি এমন সব কিছুকেই তারা ভয় কিংবা ভালোবাসে এবং তাদের দেবতা জ্ঞানেও পূজা করে। এদের জ্ঞান যতটুকু তার মধ্যেই তাদের অবস্থান। পণ্ডিতেরা তাদের ‘লোকায়ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, তাঁর ‘লোকায়ত দর্শন’ গ্রন্থে বলেন : ‘লোকায়ত বলতে বোঝায় সাধারণ লোকের দর্শন, জনসাধারণের দর্শন। লোকেষু আয়তো লোকায়ত অর্থাৎ কিনা, সাধারণ লোকের মধ্যে পরিব্যাপ্ত বলেই এ-দর্শনের ওই রকম নাম।’ ‘লোকায়ত’ শব্দটি প্রথম উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায় শঙ্করাচার্যের লেখা ‘ব্রাহ্মণ্য ভাষ্য’ গ্রন্থে। এখানে উল্লেখ রয়েছে ‘দেহমাত্রং চৈতন্য বিশিষ্টমাত্মোতি প্রাকৃতজনা লোকায়তিকাস্ত প্রতিপন্ন’) (দ্র: উধংমঁঢ়ঃধ ঝ.ঘ/ ১৯২১:৫৫)

মাধবাচার্য তার ‘সর্বদর্শন সংগ্রহ’ গ্রন্থে লোকায়তিকদের সম্বন্ধে বলেন যে, এই সম্প্রদানের পক্ষে লোকায়ত নামটি বেশ মানানসই হয়েছে। তার মতে সাধারণ লোক অর্থ ও কামকেই পরম পুরুষার্থ মনে করে। এরা পরকাল নিয়ে ভাবে না আর সে কারণে পরলোকের কথাকে তারা বিশ্বাস করতে চায় না। (দেবী প্রসাদ : ১৪১৬:৫০)
এ প্রসঙ্গে দেবী প্রসাদ আরো বলেন, লোকায়ত হলো ইহলোক সংক্রান্ত দর্শন : যারা পরলোক মানে না, আত্মা মানে না, ধর্ম মানে না, মোক্ষ মানে না, তাদেরই বলে লোকায়তিক। তারা মনে করে জল মাটি আগুন, হাওয়া দিয়ে গড়া এই মূর্ত পৃথিবীটাই একমাত্র সত্য; আত্মা বলতে দেহ ছাড়া আর কিছুই বোঝায় না। ...লোকায়ত হলো দেহাত্মাবাদ, বস্তুবাদ। ইংরেজি পরিভাষায় যাকে বলে মেটিরিয়ালিজম।’ (Dasgupta S.N/ 1921:55)
এরা পদার্থকেই জানে। যা চোখে দেখা যায় অর্থাৎ প্রত্যক্ষ, তাকেই এরা বিশ্বাস করে। সে কারণেই তারা লোক এবং তাদের ধর্ম লোকায়ত দর্শন বা বস্তুবাদী দর্শন।
দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় তার ‘লোকায়ত দর্শনে’ বলেন ‘সত্যিই কী আশ্চর্য ওই ‘লোকায়ত’ নামটি। এই নামের মধ্যেই খেটে খাওয়ার ইঙ্গিতটুকুও খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। কেননা নামের মূলে রয়েছে দু’টি শব্দ লোকায়ত’ (দেবী প্রসাদ : পৃ-১৪১৬:৬৩)। দেবী প্রসাদ ‘আয়ত’ শব্দের অর্থ অন্বেষণ করেছেন, চেষ্টা; উদ্যম ও কাজ’ শব্দটির মধ্যে। অর্থাৎ যারা কাজ করে। ‘লোক’ শব্দটির অর্থ বুঝতে তিনি লাতিন ‘লুকাস’ ও ‘লিথুনিয়ন’ শব্দ দু’টির উল্লেখ করেছেন। ‘লুকাস’ থেকে লোক এবং লিথুনিয়ন শব্দটির অর্থ চাষের জমি। লাতিন শব্দটিকে তিনি ‘চাষের জন্য জঙ্গল সাফ করা জায়গা’ বলে বুঝেছেন।

দেবী প্রসাদ তার গ্রন্থে ‘মনিয়ার উইলিয়ামস’ এর বরাৎ দিয়ে যা বলেছেন তা থেকে বোঝা যায় যে অতীতে যারা জমিতে বা মাঠে কাজ করত, তাদেরকেই ‘লোক’ বলা হতো। এরা মাঠে চাষবাস করে ফসল ফলাতো বলে তাদের ‘লোক’ নামে অভিহিত করা হতো। এরা ছিল কৃষিজীবী সমাজ। (Peasant Society)।
আমাদের আলোচ্য ‘লোকসংস্কৃতি’ আদিতে এই কৃষিজীবী সমাজকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন কৃষিজীবী সমাজ সৃষ্টি হওয়ার আগে মানুষের ‘যাযাবর’ জীবন ছিল। এরা শিকার ও পশু পালনের মাধ্যমে তাদের জীবন নির্বাহ করেছে। সমাজ ও কর্মকাণ্ডের বিবর্তনের এক পর্যায়ে কৃষিজীবী সমাজ গড়ে ওঠে।
আমাদের লোকসঙ্গীতে কৃষি একটি প্রধান উপজীব্য বিষয়। নারীও এসব লোকসঙ্গীতে প্রাধান্য পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, গ্রামীণ সংস্কৃতি ক্রমান্বয়ে সমাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে। সমাজে বিবাহের প্রচলন হয়েছে এবং নানা লোকাচার প্রয়োজন ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। আমাদের মেয়েলি গীত মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশকে প্রস্ফুটিত করেছে।
অতীতে লোকসঙ্গীত ছিল মানবজীবনের দুঃখ-সুখের আলেখ্য। যে লোকসঙ্গীত এ পর্যন্ত প্রচলিত রয়েছে তা আজো এই মিশ্র সংস্কৃতিকেই ধারণ করে আসছে। আবহমানকাল ধরে এসব লোকসঙ্গীত এ দেশের মানুষের জীবনতৃষ্ণাকে মিটিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই জাদুবিশ্বাসী। ফলে নিজেদের কাজেকর্মে জাদুবিশ্বাসের পাশাপাশি এরা সর্বপ্রাণাবাদী (Animist) হয়ে পড়ে। বলেছি, এ দেশের মানুষের মূল কর্ম ছিল কৃষি। এই কৃষির উৎসও ছিল নারী। বলতে কী, নারীর হাতেই কৃষির পত্তন ঘটে। এরা প্রথম দিকে মাতৃতান্ত্রিক ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কৃষি উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ নারীর হাত থেকে পুরুষের হাতে চলে যায় এবং এর ফলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
শিল্পায়নের মাধ্যমে যে নগর সভ্যতা এবং তার কার্যকরণের মাধ্যমে যে কৃতি বা কর্মের পরিচয় আমরা পাই, তা একটি দেশ বা জাতির সংস্কৃতি বলে বিবেচিত হলেও, এটি মূলত নগর সংস্কৃতি।

‘লোকসংস্কৃতি’ বলতে যারা নগর সভ্যতার বাইরে পিছিয়ে পড়া মানুষ, যাদের জ্ঞান, বিশ্বাস, ভাবনা, নৈতিকতা, আচার-আচরণ আবহমান কাল ধরে অদ্যাবধি প্রবহমান। এই সংস্কৃতি নিয়ে আজো এই পিছিয়ে পড়া ‘লোক’ নামে অভিহিত মানুষরা নগর সংস্কৃতির পাশাপশি তাদের সংস্কৃতিকে আজো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। বর্তমানে নাগরিক সমাজে যারা বসবাস করছে, তাদেরকে সাধারণত ‘ভদ্রলোক, বলা হয়। এরা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন সুশিক্ষিত ও শিল্পায়নে সমৃদ্ধ নাগরিক মানুষ’।
একজন মানুষ সমাজের অংশভাগ হিসেবে অন্যের কাজ দেখে শিখে নেয় এবং এই কৃতী বা কর্মকাণ্ড তার জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নৈতিকতা, আচার-আচরণ, যা সে আবহমানকাল ধরে অনুসরণ করে আসছে তা সামাজিকভাবে নীতিবোধ প্রণয়নের মাধ্যমে সিদ্ধ করে নেয়। সংস্কৃতির এই সংজ্ঞা ও পরিচয় থেকেই আমরা বুঝতে পারি সাধারণ মানুষ যারা সমাজে folk বা ‘লোক’ নামে পরিচিত তারাই এর উৎস। অতঃপর ‘লোক’ থেকে আমরা ‘ভদ্রলোক’-এ পরিণত হয়েছি এবং নিরক্ষর অমার্জিত, পিছিয়ে পড়া সমাজের সংস্কৃতিকে লোকসংস্কৃতি নামে চিহ্নিত করেছি। অবশ্য সংস্কৃতি ‘লোক’ এবং ‘ভদ্রলোক’ উভয়ের সংস্কৃতিকেই একীভূত করেছে। তবে নৃবিজ্ঞানীরা লোকসংস্কৃতিকেই সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বলে গণ্য করেছে। এখানে বলা প্রয়োজন ‘লোক’ বা ‘ভদ্রলোক’ উভয়েই মানুষ এবং সে ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞানীরা উভয়ের সংস্কৃতিকেই তাদের জ্ঞান অনুসন্ধানে বিবেচ্য বলে বুঝে থাকেন। প্রসঙ্গত, এই সংস্কৃতি চর্চার অনেক আগেই লোকসংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস শুরু হয়েছে।

প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘চকমকি পাথর হলো সভ্যতার বিষয়, আর তার ঘর্ষণে যে আলো বিচ্ছুরিত হয়, তা হলো সংস্কৃতি। অর্থাৎ শুধু বস্তু হলেই চলে না, তাতে ক্রিয়াশীলতার ও সৃষ্টিশীলতার ধর্ম আরোপিত হলে সংস্কৃতি হয়। সংস্কৃতি একটি জাতিগোষ্ঠীর শুধু পরিচয় বহন করে না, তার স্বাতন্ত্র্যকেও তুলে ধরে।’ সংস্কৃতি একটি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক এবং লোকসংস্কৃতি এই অস্তিত্বের ভিত্তি।
লোকসংস্কৃতির তিনটি ধারা : মানসম্মত লোকসংস্কৃতি যেমন- লোকসাহিত্য। পরিবেশনামূলক লোকসংস্কৃতি বা যেমন- লোকসঙ্গীত, লোকনাট্য, লোকনৃত্য, লোকক্রীড়া প্রভৃতি। বস্তুগত লোকসংস্কৃতি যেমন লোকশিল্প, লোকযান, খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্যদ্রব্য। লোকপ্রযুক্তি, লোকমেলা, লোকচিকিৎসা, লোকপ্রথা ও লোকধর্ম।
বাংলাদেশে আমাদের সংস্কৃতির তিনটি ধারা রয়েছে- এক. লোকসংস্কৃতি; দুই. আদিবাসী সংস্কৃতি; তিন. নগর সংস্কৃতি। নগর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে শিক্ষিত সমাজের নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। এই কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক আবহ সর্বদা সক্রিয়। নগরে বসবাসকারী বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও কর্মকাণ্ডের ভিত্তি হল গ্রাম এবং লোকজীবন। নগরে বসবাস করতে এসে তারা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, বলা যেতে পারে, তাদের জীবন ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এখানে লোকজীবন তথা লোকসংস্কৃতি নগরায়নের মাধ্যমে নতুন এবং পরিবর্তিতভাবে পরিবেশিত হচ্ছে। নাগরিক সমাজ একে সংস্কৃতির ‘আধুনিকায়ন’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। আবহমানকাল ধরে যে লোকসংস্কৃতি এখনো গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে- নগরবাসী তার পুনর্বাসন ঘটাতে চাইছে নাগরিক চেতনা ও দর্শনের মাধ্যমে। তারা বলতে চাইছে, সেই কোন প্রাচীন যুগে মধ্য এশিয়া থেকে আগত আর্য সভ্যতা আজ তো আর একরকম নেই। মুসলিম ধর্মবিশ্বাস ও পাল্টে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নগরে-শহরে আজ নানা মূর্তি স্থাপিত হচ্ছে। অথচ ইসলামে মূর্তি স্থাপনা তো একেবারেই নিষিদ্ধ।

পৃথিবীর তাবত অঞ্চলের মানুষদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। তাদের জীবনাচরণ ভাবনা, তাদের জন্ম থেকে মৃত্যু এবং তার পরও তাঁর রেশ থেকে যায়। এ সংস্কৃতির জন্ম আজকে আমরা যাদের পিছিয়ে পড়া মানুষ বলে ভাবছি সেখানেই তার শুরু হয়।। যখন নগর ছিল না, পর্বত সমান বাড়িঘর ছিল না, ঐশ্বর্য ইত্যাদির এমন আকাশচুম্বী প্রকাশ ছিল না। যখন ধলা-কালো মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য বা বিভাজন কোনো কিছুই বলতে কি ছিল না। তখনকার মানুষের মধ্যে ধনসম্পদ কিংবা বিত্তের প্রভাব যে ছিল না তা নয়, এসব থেকেও ধনী-নির্ধনের মাধ্যমে যে মেলবন্ধন গড়ে উঠেছিল, সেটি ছিল তার গান। পূজা-পার্বণে, আনন্দে-উৎসবে গানই ছিল সমন্বয়ের মাধ্যম। গ্রামে বসবাসকারী নানা জাতি ধর্ম কর্মের নারী-পুরুষদের ঐক্যের এক অভিন্ন অবস্থান ছিল, এই গান যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলে থাকি। গ্রামে গ্রামে গায়েন ও বয়াতিদের পাড়া ছিল। এদের পেশা ছিল গান গেয়ে বেড়ানো। ‘বায়না’ নিয়ে তারা গান গেয়ে বেড়িয়েছে, এদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান নামধারীরা থেকেছে। হিন্দু পূজায় মুসলমান গায়েন ও বয়াতিরা হিন্দুধর্মের নানা কাহিনী এমন সাবলীল ও মনোমুগ্ধকরভাবে গেয়েছে যারা এসব কখনো শোনেনি বা দেখেনি তাদের অবাক করেছে। এটিই ছিল বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সারা দিনের পরিশ্রমের শেষে গানই মনের ক্লান্তিকে দূর করে দিয়েছে। নবান্নে গ্রামে গান জেগেছে। গরম থেকে শীতেই জমতো গান। বাড়িতে পিঠা উৎসব হতো। মেয়ে আসত জামাইকে নিয়ে। এ সময়ে গ্রামে বিশেষ কওে শীত মৌসুমে তিন দিন ধরে গান জমতো। কবিগান বিচার, তর্জ্জা, শব্দ, বাউল নানা গানের আসর বসতো খোলা মাঠে। মঞ্চ হতো খোলা আসরের মাঝখানটাই। একটু উঁচু মঞ্চে দাঁড়িয়ে, বসে নেচে গেয়ে আসর মাৎ করতো বয়াতিরা। বাংলাদেশের এক এক অঞ্চলে এক এক রকমের গানের আসর হতো। বাংলার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বসতো ভাওয়াইয়া গানের আসর। রংপুরে ভাওয়াইয়ার দাপট ছিল বেশি। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ সুর ভেসে এলে প্রাণেমনে কি যে কম্পন জাগে ভুক্তভোগীরা তা জানে। আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া ধরলে তো তার নাচন তো সহজে থামতো না। ছেলেবেলায় রংপুর, গাইবান্ধা অঞ্চলে থেকেছি, ভাওয়াইয়ার সে সুরের ধ্বনি আজো মন থেকে মুছে যায়নি। আব্বাসউদ্দীনের পরে অনেকেই ভাওয়াইয়া গানে আসর জমিয়েছেন, কারো নাম এখানে বলার প্রয়োজন নেই, সবাই তাদের জানে। দিনাজপুরের গম্ভীরা ছেলে বুড়ো সবার মনে রঙ ধরিয়ে দেয়। নানা-নাতির খেল, জি-বাংলার ভানুমতির খেলকেও ছাপিয়ে দেয়। কোমর বাকিয়ে, দেহ দুলিয়ে, চোখের ঠাহর সাজিয়ে সে গানের বহর এবং তামাসার এমন প্রাণমাতানো সুরে চতুর্দিক ভরে যেত। সামাজিক অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড গানের হাসি ঠাট্টায় অন্যেও প্রতি সতর্ক ধ্বনিও উচ্চারণ করতো।
বাংলাদেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে গানের আর এক উদ্ভাস কৈনু ঘর। বাউল বৈষ্ণবে ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনুঘর, কোনটাই বুঝি বাধ মানে না, বাঁধন ছেড়ার গানে তখন আকাশ বাতাস টাল মাটাল।

কৃষ্ণের প্রেমে রাধা টইটুম্বুর। সমাজ সংসার কিছুই তার কাছে আর বড় হয়ে দেখা দেয় না। বাঁশি বাজলেই হলো, চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের প্রেমে এক নতুন বৈভব আনলেন দেহকেই প্রতীকী রূপে বিবেচনা করে। অবশ্য এ ধারণা নতুন কিছু নয়। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদে আধ্যাত্ম প্রেমে দেহবাদ প্রাধান্য পেয়েছে।
বর্ধমান বীরভূম অঞ্চলের বাউল গানে দেহতত্ত্ব রাধাকৃষ্ণের প্রতীকী প্রেমে স্রষ্টাকে মানবপ্রেমের দৃষ্টান্ত করে নিলো। কিন্তু এ প্রেম তো গুরু ভিন্ন সম্ভব নয়। জীবাত্মা ও পরমাত্মা এই ভালোবাসার স্বরূপ কেবল গুরুই নির্দেশ দিতে সক্ষম। বাউল বৈষ্ণব প্রেমে এই গুরুই প্রধান। এর উৎসও চর্যাপদ। বাউল গানেও তারই আধিপত্য।


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১

সকল