১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাগজের ছাতা

কাগজের ছাতা -

বাইরে খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছে। সেই সাথে বিকট শব্দে বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। প্রায় আধ ঘণ্টার মতো রোজা রেডি হয়ে বসে আছে। কিন্তু বের হতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর পর ভাবে দৌড়াতে শুরু করবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আর যেতে পারে না।
ও মা, গুড্ডুবুড়ি কই? এখনও স্কুল থেকে ফেরেনি?
-ওর রুমে দেখ, শুয়ে আছে।
এখন শুয়ে আছে কেন? গোসল করেছে?
-বাবারে দয়া করে তুই একটু গিয়ে দেখ। আমার সাথে আর কথা বাড়াস নাতো।
কিছুই তো বুঝছি না। মায়ের মুখে এমন তিতা তিতা কথা কেন!!
রাফি রোজার রুমে গেল। রোজা সেইভাবেই বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে।
গুড্ডুবুড়ি, গুড্ডুবুড়ি, মাথায় হাত দিয়ে চুল নাড়তে নাড়তে বললো কিরে এখনও ঘুমাস কেন?
এখন কি ঘুমের সময় নাকি?
-ভাইয়া, আমার খুবই মন খারাপ ।
কেনরে বুড়ি?
-পরে বলবো, তুমি এখন যাও।
রাফি রোজাকে জোর করে টেনে তুলল। আগে বলতো কী হয়েছে তোর?
-আজ আমি স্কুলে যেতে পারিনি (কেঁদে কেঁদে)।
আরে বোকি, তাতে কি হয়েছে?
এমন বৃষ্টির দিনে আমি তো আরো খুশি হতাম। কত সহজে স্কুল ফাঁকি দিতে পারতাম। পড়াশোনা নেই, সারা দিন কত্তো মজা করতাম।
এখানে কিসের মজা? আম্মু রান্না করবে। তার পাশে বসে বকবকানি শোনো।
-কই, এখন তো আমি আসছি। আমরা এখন ছাদে গিয়ে গোসল করবো। তারপর খাবার খেয়ে সারা বিকেল গল্প করব। এবার খুশি?
-তুমি তো একটু পরেই বাইরে চলে যাবে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবে। আমি জানি না বুঝি?
-এই তোকে কথা দিলাম। আজ সারা দিন তোর জন্য। আমার গুড্ডুবুড়ির মন খারাপ বলে আজ আমি কোথাও যাব না। এবার একটু হাসো না,,,,
হি হি হি হি হি,,,,,আমার ভাইয়া কত্তো ভালো!
গুড্ডুবুড়ি কি আজ পড়াশোনা করেছ?
-আব্বু, আজ তো স্কুলে যেতে পারিনি। তাই পড়াও নেই।
ইশ! বৃষ্টির জন্য তাই না?
-হ্যাঁ, আব্বু।
রাফি, তুই এখন থেকে প্রাইভেটে যাওয়ার সময় ওকে স্কুলে দিয়ে যাবি। এ সময় তো রোজ রোজ বৃষ্টি হবে। তাই বলে স্কুল তো আর মিস দেয়া যাবে না।
হুম, আব্বু। তুমি একদম ঠিক বলেছো। কিন্তু আম্মু কিছুই বোঝে না। একটু বৃষ্টি হলেই আর স্কুলে যেতে দেয় না।
ডিনার বাদ দিয়ে সবাই রোজার কথায় হেসে উঠলো। সবার হাসিতে রোজাও হাসলো।
রাফির প্রাইভেট ৬.৩০ এ শুরু হয়। সে জন্য রাফি ৬টায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়। কিন্তু আজকে রোজা রাফিরও আগে উঠেছে। আম্মুকেও ডাকেনি। নিজে নিজেই রেডি হয়েছে।
এই ভাইয়া, উঠো না, উঠো?
তোমার প্রাইভেটের সময় হয়েছে তো,
রাফি হুড়মুড় করে ঠেলে উঠে ঘড়ি দেখে। কেবল ৫.৩০ বাজে। রোজার প্রতি রাগ হলো তার।
এই বুড়ি, এতো সকালে তোকে কে উঠতে বলেছে?
-বাহ্ রে, তোমার বুঝি মনে নেই? রাতে তো আব্বুই তোমাকে বললো আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে।
-উঁহু! তাই বলে এত্তো সকালে! দিলি তো আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে। সাত সকালে আবার রেডিও। যা রুমে যা। চুপচাপ শুয়ে থাক। সময় হলে আমি ডেকে নিয়ে যাব। রোজা মন খারাপ করে রুমে ফিরে গেল। রাফি আবার শুয়ে পড়ল।
সাতটা বাজে। সবাই নাস্তার টেবিলে। রাফি নেই, ওর থাকার কথাও না। কিন্তু রোজা কেন?
রোজা মা মনি, তুমি রাফির সাথে যাওনি ?
-আব্বু, ভাইয়া তো এখনো ঘুমাচ্ছে।
বলিস কি! ওরতো প্রাইভেট ৬.৩০ এ।
রাফি, রাফি,,,,
তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস? প্রাইভেটে যে লেইট হবে, তোর কি সে খেয়াল আছে ?
-হু, কয়টা বাজে আম্মু?
সাতটা বেজে গেছে।
রাফি এক লাফে উঠে যায়।
উহু! রোজার জন্য আজ লেইট। সাত সকালে আমাকে ডেকে তুলেছে।
আমি জানি তো, এমন কিছুই হবে। কাল রাতে তোমার আব্বু বলেছেন, আর সে কি মিস করতে পারে? খুশিতে তার তো রাতে ঘুমই হয়নি।
রাফি উঠে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই প্রাইভেটে দৌড় দেয়। আর রোজা? রোজকার মতো মায়ের সাথেই স্কুলে গেল।
আজ তার ডাবল মন খারাপ। ক্লাসে বন্ধুরা জানতে চাইলে দুইটা ঘটনাই বললো। প্রথমটা শুনে সবাই দুঃখই পেয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয়টা শুনে সবাই হেসেছে আর রোজাকে ক্ষেপিয়েছে। রোজা আরো রেগে মন খারাপ করল। পরে রোজার প্রিয় বন্ধু রাতুল তার মন ভালো করে দিলো। তাকে একটা কাগজের ছাতা আর একটা নৌকা গিফট করল। রোজা কত্তো খুশি!
রাতুল এগুলো কীভাবে বানালে?
-এগুলো আমি নয়, কাল বিকালে আমার আপু বানিয়ে দিয়েছিল। আমি তোমার জন্য এনেছি।
-ওহ, তাহলে তো এগুলো বড়দের কাজ।
-হ্যাঁ, রোজা তুমি ঠিক বলেছ। কাল বিকেলেই আপু আমাকে বানানো শিখাতো। কিন্তু আপুর হোমওয়ার্ক, আমার হোমওয়ার্ক করতে করতে লেইট হয়ে গেছিল। তাই বলেছে-পরে শিখিয়ে দেবে।
-আজকে আমিও বাসায় গিয়ে আমার ভাইয়াকে বানিয়ে দিতে বলব।
-আচ্ছা, বলো। আর না পারলেও সমস্যা নেই। আমি তো আপুর কাছে শিখবোই, তারপর তোমাকেও শিখাবো। কী এবার খুশি তো?
-হুম, খুব খুশি। আমার এখন আর কোনো মন খারাপ নেই।
-তাহলে এবার চলো, ক্লাসে যাই রোজা।
-গল্পে গল্পে টিফিনটাই শেষ করলাম, কিন্তু কিছুই খেলাম না তো। দাঁড়াও, আমার ব্যাগে চকোলেট আছে। রোজা রাতুলকে চকোলেট দিলো এবং নিজেও নিলো।
দু’জনের চকোলেট খুব প্রিয়। চকোলেট খেতে খেতেই ক্লাসে ঢুকলো তারা।
রোজার আর মন খারাপ নেই। খুব মনোযোগ দিয়ে, হাসিখুশিভাবেই ক্লাস করল। ঠিকমতো পড়াও বুঝে নিলো সে।
ক্লাস শেষ কিন্তু খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছে। রাতুলকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
কী হলো রাতুল? তোমাকে বিষণœ দেখাচ্ছে কেন?
-না, তেমন কিছু না।
তাহলে মন খারাপ কেন?
-আসলে রোজা, আজ আমার ছাতা আনতে মনে নেই। আর আজ আপু, আম্মু একটু ব্যস্ত থাকায় কেউই আমাকে নিতে আসবে না।
এতে টেনশনের কি আছে? তুমি তো আমাকে একটি ছাতা দিয়েছ, আমি ওটা দিয়ে বাসায় যাবো। আর আমারটা তোমাকে দিয়ে দেবো।
-ধুর, বোকা মেয়ে। আমি তোমাকে কাগজের ছাতা দিয়েছি। আর ওটা খেলনা ছাতা।
- তাতে কি, কোনো সমস্যা নেই। তোমার ছাতা একটুও ভিজবে না।
কীভাবে রোজা?
- রোজা হাসলো, হি হি হি হি হি হি।
ওটার উপরে তো আমার আম্মুর ছাতা থাকবে। রোজার কথা শুনে রাতুলও হাসলো।

 


আরো সংবাদ



premium cement