২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্যায় মতি মিয়ার কষ্ট

বন্যায় মতি মিয়ার কষ্ট -

করিমপুরে বাস করত এক গরিব কৃষক মতি মিয়া। মতি মিয়ার নিজের জমি ছিল না। পরের জমিতে কাজ করে যা পেত তাই দিয়ে সংসার চলত। মতি মিয়ার ছেলে নেই শুধু তিনটি মেয়ে। অনেক কষ্টে জীবন যাপন করত। তিন মেয়েকে ভালো কোনো খেতে দিতে পারত না,তাই মতি মিয়ার খুব খারাপ লাগত। করিমপুরে প্রতি বছর বন্যা আসে তাই সারা বছর ঠিক মতো কাজও করতে পারত না। একদিন মতি মিয়া চিন্তা করে জমি কটে নিবে, ধানের আবাদ করবে। তাই মতি মিয়া কিছু টাকা লোন নিয়ে এক বিঘা জমি নিলো তারপর আরো কিছু টাকা ঋণ করে জমিতে ধান লাগায়। শুধু নিজের জমিতে কাজ করলে লোনের কিস্তি কী করে দেবে, আর ধান না ওঠা পর্যন্ত কী খাবে?
তাই সারাদিন পরের জমিতে কাজ করে আর বিকেলে এসে নিজের জমিতে কাজ করে। খেয়ে না খেয়ে জমিতে আবাদ করে। ধানও অনেক ভালো হয়। মতি মিয়া এত সুন্দর ধান দেখে খুশিতে চোখে নানান স্বপ্ন এসে ভিড় করে। জমি থেকে এসে হাসিমুখে বৌকে বলে আমাদের জমিতে অনেক ভালো ধান হয়েছে এবার আমাদের আর অভাব থাকবে না। ধান বিক্রি করে বড় মেয়েটা বিয়ে দেবো। ছোট মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়াব। আমাদের আর কষ্ট থাকবে না। মাস কয়েক পরে ধানগুলো সোনালি হয়ে আসছে আর কিছু দিন গেলেই কাটা যাবে। গ্রামের লোক মতি মিয়াকে মজা করে বলে, মতি মিয়া তোমার এত ভালো ধান হয়েছে তুমি তো বড়লোক হয়ে যাবে। মতি মিয়া মুচকি হেসে বলে না ভাই আপনাদের দোয়ায় আল্লাহ ধান ভালোই দিয়েছে। গ্রামের লোক বলে মতি মিয়া ধান কাটবে কবে? মতি মিয়া বলে আর দশ দিন পরে কাটা যাবে। এভাবে আরো পাঁচ সাত দিন কেটে গেলো ধানগুলো পুরো সোনালি রঙ নিয়েছে। মতি মিয়া ভাবে কাল সকালে ধানগুলো কেটে নিবো আর দেরি করা ঠিক হবে না। এ দিকে চার দিকে বানের পানি এসে গেছে প্রায়। রাতে খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল। ভোরে উঠে ধান কাটতে যাবে তাই। হঠাৎ তখন রাত সাড়ে ৩টা কি ৪টা হবে গ্রামের লোকের শোরগোলে মতি মিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। চার দিকে চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে, মতি মিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে বাইরে এলো। হঠাৎ পাশের বাড়ির এক চাচাতো ভাই কান্না করতে করতে এসে বললো, মতি ভাই আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। হঠাৎ বানের পানি এসে আমাদের সবার ধান ডুবে গেছে। এই কথা শুনে মতি মিয়া আকাশ থেকে পড়ে- এটা কী হলো। দৌড়ে যায় নিজের জমিতে। গিয়ে দেখে কোথাও কোনো ধান দেখা যাচ্ছে না শুধু পানি আর পানি। পানিতে চার দিক সাদা হয়ে গেছে। মতি মিয়া মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে আর কাঁদতে থাকে হায় আল্লাহ আমার একি হলো, আমার এত কষ্টের ধান সব পানির নিচে। ভাবতেই পারে না মতি মিয়া স্বপ্ন ভেঙে ঘিরে আসে মাথায় এত টাকা ঋণ কী করে পরিশোধ করবে। ভেবেছিল বড় মেয়েটার বিয়ে দেবে। সব কিছু নষ্ট হয়ে গেলো। গ্রামের মানুষ এসে মতি মিয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু মতি মিয়ার মন কিছুতেই বুঝতে চায় না। কী করবে অনেক কষ্ট বুকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement