বিদেশী বাড়িতে দাওয়াতের দিন
- জুয়াইরিয়া জাহরা হক
- ২২ মে ২০২২, ০২:৪০
সেদিন ছিল দাওয়াতের দিন। মাসখানেক আগের ঘটনা। এ দেশে, বিশেষ করে এ শহরে এক বাঙালি পরিবার ছাড়া আমাদের দাওয়াত পাওয়ার মতো কেউ নেই। বলা যায় কাকতালীয়ভাবেই এক ব্যবসায়ী হোজা উনার বাসায় সব বাঙালি আর ইয়েমেনি স্টুডেন্টদের দাওয়াত করলেন। উনি মূলত আরেকটি যে বাঙালি পরিবার তাদের সাথে পরিচিত।
ও, জানিয়ে রাখা ভালো, তুর্কিরা সম্মানিত লোক আর মুরুব্বিদের ‘হোজা’ বলে সম্বোধন করে।
অপেক্ষা করছিলাম সে দিনটির জন্য। জানা কথা ওদের খানাপিনা বিশেষ মন মতো না। আমাদের জিহ্বা তেমন আনন্দের সাথে ওদের খাবার চাখে না। মূল আকর্ষণ ছিল নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া। তুর্কিদের আতিথেয়তা দেখা।
আমরা যখন হোজাদের বাসায় পৌঁছলাম ইফতারের তখন বিশেষ সময় বাকি নেই। অন্য যাদের যাদের আসার কথা সবাই উপস্থিত। ছেলেরা মূল ড্রয়িং রুমে বসেছে আর মেয়েরা তখন রান্নাঘরে। যেহেতু এটাই আমার প্রথম কোনো তুর্কি বাসায় মেহমান হয়ে প্রবেশ করা আমি তাই সব কোনাকাঞ্চি দেখছি। যারপরনাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর গোছানো। বারান্দাটা আস্ত একটা রুমের সমান। এমন একটা বারান্দা পেলে আমি নির্ঘাত ‘একটি বারান্দা একটি খামার প্রকল্প’ করে ফেলতাম। সাথে আরেকটি বিষয় খেয়াল করলাম। আমরা সাধারণত বাসাবাড়িতে সাদা ডিস্টেম্পার এভয়েড করি। অথচ এরা কী সুন্দর সব সাদা করে রেখেছে। আর সন্তানওয়ালা ঘর হওয়া সত্যেও কোথাও কোনো আঁকাবুকি নেই। শিশুদের আঁকার বয়স হলেই নাকি ওয়াইট বোর্ড আর মার্কারের ব্যবস্থা করা হয় এখানে।
গৃহকর্ত্রী সিরিয়ান আর হোজা, মানে তার স্বামী তুর্কি। তাদের দুটি সন্তান। সন্তানগুলো একদম যেন সূর্যমুখী ফুলের মতো সুন্দর। স্পঞ্জের মিষ্টির মতো মিষ্টি! আমরা সবাই নিজ থেকে বারবার মাশা আল্লাহ বলছিলাম যেন কোনো প্রকার বদনজর না লাগে। মেয়ে বাবুটা নাম ‘জেইনেপ’। আট মাসের ছানাটা সেদিন একটু অসুস্থ ছিল। খানিক হেসে আবার কেঁদে দিচ্ছিল। আর ছেলেটার বয়স দুই। মুহাম্মদ, আদরের নাম ‘হামুদি’। নতুন নতুন মুখ দেখে তার ছোটাছুটির শেষ নেই।
দাওয়াতটা মূলত ছিল ইফতারের। সূর্য মামা ডুবুডুবু করছে। তাই দ্রুত খাবারের গোছগাছ হলো। মেনুতে ছিল মান্তার (এক রকম সুপ), সটেড ভেজিটেবল উইথ মিট, দুই রকমের সরবত, সালাদ, খেজুর আর সিরিয়ান বিরিয়ানি। উনারা খোঁজ নিয়েছিলেন আমাদের আগ্রহের খাবার কী। পরে জানানো হয়েছে আমরা বিরিয়ানি পাগলা। তাই সিরিয়ান এই বিরিয়ানির আয়োজন হয়েছে।
খাবার খেয়েÑ নামাজ পড়ে তারপর চলল তুমুল আড্ডা। কি যে একটা হুলস্থুল অবস্থা! আমরা বলি বাংলা, গৃহকর্ত্রী বলেন আরবি আর তুর্কি। ইয়েমেনিরা বলে আরবি আর তুর্কি। আমার সাথে ইংরেজি, যেহেতু আমি তুর্কি পারি না। অনেক রকম সবজি দিয়ে পাতলা খিচুড়ি যেমন অনেক পদ মিলেঝিলে ইন্টারেস্টিং একটা খাবার হয়, তেমন একটি অবস্থা! ইয়েমেনিদের কথা লিখা হয়নি। ওরা দুই বোন, দুইজনই পড়ছেন। ভালোই মিশুক। প্রচুর কথা বললাম ওদের সাথে। ওদের মা নাকি ইন্ডিয়ার আর তাই শাড়ি, আচার, বিরিয়ানির সাথে ওদের পরিচয় আছে। হাতে হাতে তার্কিশ চা আর সাথে তুমুল আড্ডায় ভরপুর একটি সন্ধ্যা যাকে বলে।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বেড়িয়ে গেলাম বাসার দিকে। হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম লাল নীল আলোর গাজিয়ান্তেপ ক্যাসেল। কড়া আলো না। রাতের ডিম লাইটের মতো আলো। দেখলে মনে হবে যেন দুর্গের ভেতরটা যাবতীয় রহস্য দিয়ে ঠাসা! সবাইকে আয় আয় করছে। সব ইনফ্রাস্ট্র্যাকচার এমনভাবে সিস্টেম করা যে ক্যাসেলটা একদম মুকুটের মতো শহরের মাথায় বসে থাকে।
রাত বাড়ল আর আমরা ফিরলাম বাড়ি।
গাজিয়ান্তেপ, তুরস্ক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা