২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সোহম ও রাইয়ের গল্প

-

বাবা-মায়ের আদরের সন্তান সোহম ও রাই। বাবা-মা দু’জনই শিক্ষক। মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা কলেজের শিক্ষক। একদিন ছুটির দিনে তারা ঘরোয়াভাবে একটা ছোট্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করল। সেই প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু অনেকগুলো কাগজে লেখা। সেই কাগজের টোকেনগুলো একটা কৌটায় থাকবে। সেখানে যে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা থাকবে প্রত্যেকের মনের মতো করে সেই বিষয়ের ওপর উপস্থিত বক্তব্য রাখতে হবে। তাতে যে যত নিখুঁতভাবে উপস্থাপনা করতে পারবে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।
প্রথমে ছোট মেয়ে, রাই টোকেন হাতে নিলো। তাতে লেখা ছিল- ফুল আমাদের পরিবেশে কী ধরনের উপকারে আসে?
রাই বলতে লাগল, ‘ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক, ফুল ছোট-বড় সব মহলের মানুষ ভালোবাসে। ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া বিরল! ফুল পবিত্র, আমরা যেমন একটা ভালো মানুষের সান্নিধ্যে থাকলে, খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকি তেমনি করে যখনই আমরা আমাদের চোখের সামনে ফুল দেখি নিজেকে পবিত্র রাখার মাধ্যম খুঁজে পাই। আমরা বাবা-মায়ের, ভাইবোনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে ফুল ব্যবহার করি। প্রত্যেক ভালো কাজে ফুল ব্যবহার করার কারণ হলো যাতে ফুলের মতো কোমল ও নিষ্পাপ হওয়া যায়। এই মনোবল জোগাতে ফুল স্কুল কলেজের প্রাঙ্গণেও লাগানো হয়।’
এ ছাড়া ফুলের মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণে, মানুষের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে উদ্দীপনা জোগায়। এই ফুলের ঘ্রাণে প্রজাপতি পরিবেশে আলাদা সৌন্দর্য দান করে। মৌমাছি নিজেদের দক্ষতায় মধু আহরণ করে মৌচাকে জমিয়ে রাখে। মৌয়ালরা সেই চাক ভেঙে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে।’
ছোট মেয়ে রাইয়ের এত দারুণ উপস্থাপনায় বাবা-মা অনেক খুশি হয়ে হাতে তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাল। তারপর সোহম একটা টোকেন তুলল, তাতে লেখা ছিল- অসুখী এবং সুখী মানুষ কারা?
‘সোহম খুব বুদ্ধিমান ছেলে, সে বলতে শুরু করল, ‘প্রকৃতপক্ষে সুখী মানুষ হলো যাদের বাবা-মা এখনো বেঁচে আছে। বাবা-মা হীন এই পৃথিবী মরুভূমির বালির মতো।
আমার অনেক সহপাঠীর বাবা-মা নেই। তারা অনাদরে বড় হচ্ছে। বাবা-মায়ের আদর স্নেহ কেমন হয়। সেটা তাদের কাছে অজানা। সেই অর্থে বলা যায় সে অসুখী মানুষ। এই দিক দিয়ে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ। কারণ আমার বাবা-মা এখনো বেঁচে আছেন। যাদের দেখে প্রতিদিন সকালটা আমার শুরু হয়। আমার মতো ভাগ্যবান ছেলে পৃথিবীতে খুব কম হয়। যদিও বই পুস্তকে আছে, ‘যার কিছু নেই সে সুখী মানুষ। কিন্তু আমার কাছে যাদের এখনো বাবা-মা আছে তারাই সুখী মানুষ।’
তাছাড়া আমাদের সমাজের অনেক শ্রেণীর মানুষ আছে। তাদের মধ্যে অনেকের বাবা-মা, থেকেও নেই। তারা রাস্তাঘাটে দিনের পরে দিন কাটায় কেউ তাদের খুঁজ নেয় না। আমাদের সমাজ তাদের নাম দিয়েছে পথশিশু। অনেকে আবার টোকাই বলে গালমন্দ করে। তাদের আমরা অসুখী মানুষ বলতে পারি!’
সোহম ছন্দে ছন্দে বলল-
আমরা তো ভাই সবার সেরা
গেছো এটা ভুলে?
মানুষ ফেলে কুকুর বিড়াল
রাখো কোলে তুলে।
এমন মানুষ এই সমাজে
ভূরি ভূরি আজ;
ওদের কাণ্ডে পশুরাও
পাচ্ছে ভীষণ লাজ।
সোহমের এমন নিখুঁত চিন্তাচেতনার জন্য ওর বাবা-মা অনেক আপ্লুত হয়েছে। সোহমের উপস্থাপনার মাধমেই প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটে। এখন বিজয়ী ঘোষণার সময়! হঠাৎ সোহমের মা বলল যদিও আমরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় একটা স্থান বলে দাবি করি। তবুও আজকের প্রতিযোগিতায় এই নিয়ম মেনে না নিয়ে দু’জনকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। তাতে সোহম ও রাই অনেক আনন্দিত।
পরিশেষে সোহমের বাবা বলেন, ‘এরকম ছোট্ট আয়োজনের মাধমে আমরা আমাদের কোমলমতি শিশুদের চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটাতে পারি। তাদের মন কী করতে চায় এবং কিসব কাজ থেকে বিরত থাকতে চায়। সেই সম্পর্কে জানতে পারা যায়। তাতে আমাদের সন্তান যেদিক দিয়ে বেশি দক্ষ সেদিকে আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পারি এবং আমাদের সন্তানের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের ওপর জোর করে, আমরা আমাদের স্বপ্ন চাপিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারব। প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত এভাবে সন্তানের ভালো-মন্দ যাচাই করে কোমল মনে সাহস জাগানো।


আরো সংবাদ



premium cement