২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘুড়ি উৎসব

ঘুড়ি উৎসব -

বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন উদযাপন করা হয় পৌষসংক্রান্তি। পুরান ঢাকার মানুষ একে বলে ‘সাকরাইন’। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন’ উৎসবে পৌষসংক্রান্তি ও মাঘ মাসের শুরুর দিনটিতে শুরু হয় প্রথম প্রহর। সাকরাইন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্রাণ থেকে এসেছে। আভিধানিক অর্থ বিশেষ মুহূর্ত অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব পালিত হয় তাকেই বলা হয় সাকরাইন। এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক দেশেই এই উৎসব পালন করে। তবে ভিন্ন ভিন্ন নামে। সাকরাইন ঢাকার বিশেষ ঘুড়ি উৎসব। আদিকাল থেকেই এ শহরের মানুষ ঘুড়িবাজ হিসেবে পরিচিত। অনেকের মতে, নবাব ওয়াজিদ আলী শাহর সময় থেকে শুরু হয় এবং ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় নবাব আসাফউদ্দৌলার সময় থেকে। ঢাকার শেষ নবাব গাজিউদ্দিন, যিনি পাগলা নবাব নামে পরিচিত ছিলেন, তার ঘুড়ি ওড়ানোর নেশা আর আহসান মঞ্জিলের নবাববাড়ীর ঘুড়িপ্রীতি সবার জানা। সাকরাইনে একটা ঘুড়ি ভোঁকাট্টা হলেই ভোঁদৌড়। যে আগে পৌঁছতে পারবে, ঘুড্ডিটা তার। একসময় পৌষের শেষে পুরান ঢাকার জামাইরা শ্বশুরবাড়ি এলে তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হতো ঘুড়ি ও নাটাই। সব বাড়ির জামাই ঘুড়ি উড়ালে ঘটা করে সেসব দেখতেন এলাকাবাসী।
সাকরাইন উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানো ছাড়াও থাকে নানা আয়োজন। সেদিন ছেলে বুড়ো সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হয় প্রতিটি বাড়ির ছাদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে আকাশে ঘুড়ির সংখ্যা ও উৎসবের মুখরতা। সাকরাইন উপলক্ষে আয়োজন করা হয় পুরান ঢাকার নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের। পুরান ঢাকার আকাশে শোভা পায় নানা রঙ আর বাহারি আকৃতির অসংখ্য ঘুড়ি। এ ছাড়াও আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ফোটানো এ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে চলে আসছে বহুদিন ধরে । কালের পরিক্রমায় আজো হারিয়ে যায়নি এই ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব। সাকরাইন উৎসবকে পৌষসংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়। এ উৎসবে অংশ নেন সব ধর্ম, পেশার মানুষ।
ঢাকায় পৌষসংক্রান্তির এ দিনকে বলা হয় সাকরাইন। ঢাকাইয়া ভাষায় ‘হাকরাইন’। আদি ঢাকাই লোকদের পিঠাপুলি খাবার উপলক্ষ আর সাথে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতার দিন। সাকরাইন একান্তই ঢাকার, যুগের পরিক্রমায় তাদের নিজস্ব উৎসব পরিণত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের অন্য কোথাও পালিত হয় না; যা ঢাকার জনপ্রিয় ও দীর্ঘ সাংস্কৃতিক চর্চার ফল হিসেবে টিকে আছে সাকরাইন ও ঘুড়ি উৎসব ।
শত বছরের নানা সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত উত্তেজনার মধ্যেও পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন উৎসব এই শহরে আজো টিকে আছে। টিকে থাকুক যুগ যুগ ধরে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অমোঘ বন্ধন হিসেবে বেঁচে থাকুক এই উৎসব ।


আরো সংবাদ



premium cement