১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষিত সুবিধাবাদীদের খপ্পর থেকে মুক্তি পেতে হবে

-

দেশ এমনই রাজনীতিবিহীন হয়েছে যে, আগামী দুই বছর পর অনুষ্ঠিতব্য ব্যর্থ নির্বাচন নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা চলছে। লজ্জার কথা হলো, কারচুপির নির্বাচন বন্ধের নতুন রাজনৈতিক কৌশলের কথা না ভেবে কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে সেই কবরস্থ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলা হচ্ছে। বুঝতে চেষ্টা করা হচ্ছে না যে, কারচুপির নির্বাচন বা ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পেছনে কারা কাজ করছেন। ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুবাদে একশ্রেণির সুবিধাবাদীর সুবিধা ভোগের মহাসুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সুবিধাবাদীদের নির্মিত ভুয়া নির্বাচনের ‘বার্লিন প্রাচীর’ ভাঙতে না পারা পর্যন্ত কেনাবেচার দলীয় রাজনীতির নির্বাচন সরকারের জন্য কোনো দুশ্চিন্তার কারণ হবে না। আসন ভাগাভাগির প্রহসনী মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের কোনো তাগিদ নাই। সুবিধাবাদীরা টিকতে পারলে তাদের নীলনকশার গণবিরোধী নির্বাচনও চালিয়ে যেতে পারবে।
জনগণ রক্ত দিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন বহুদিন ধরেই করে আসছে। এ জন্য রক্তও কম দেয় নাই। বারেবারেই জনগণ হোঁচট খেয়েছে। নেতাদের বিশ^াস ভঙ্গের চরম দৃষ্টান্ত জনগণ দেখেছে। সুবিধাবাদীদের চক্রান্তে পড়ে নিজেদের ভুলের জন্য এ দেশের লক্ষ লক্ষ লোককে প্রাণ দিতে হয়েছে পাকিস্তানি পাশবিক সেনাদের হাতে। ইতিহাস সত্য বলবে। রাজনৈতিক নেতাদের ডাকে আন্দোলন এখন আর হবে না বলতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। তার অর্থ এই নয় যে, জনগণকে উপেক্ষা করে খেয়াল-খুশির বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না। জনগণ নিজ থেকেই নিজেদের দুঃসহ অবস্থার বিরুদ্ধে জেগে উঠবে।
আমরা রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করতে অভ্যস্থ। রাজনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতা খাটো করে দেখাও চরম বোকামি। কিন্তু সুবিধাবাদী শিক্ষিত শ্রেণীর গণবিরোধী ভূমিকা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিভ্রান্তিতে ফেলার কাজে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সবধরনের কুচক্রীমহলের সাহায্য নিতে তাদের অসুবিধা হয় নাই। অশিক্ষিত লোকদের চাটুকারিতা জানা নাই। তারা সহজ সরল মানুষ হিসেবে নেতাদের সবকিছু বিশ^াস করে সবই হারিয়েছে।
এই সুবিধাবাদীশ্রেণী সঙ্ঘবদ্ধ এবং সুচতুরভাবে সাজানো ভাষায় অনর্গল মিথ্যা প্রশংসা করে চলেছেন সরকারের সর্বত্র সাফল্য দেখানোর জন্য। মিথ্যা বলতে তো আর সাক্ষ্য-প্রমাণের দরকার হয় না। টেলিভিশনের টকশো মানুষকে আর আকৃষ্ট করে না। সবকিছু আমাদেরকে পতনের দিকে, নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মধ্যবর্তীকালীন নির্বাচন না হলেও সঙ্কট সৃষ্টির অনেক সমস্যাই ঘনিভূত হয়েছে।
দেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন যোগ্যতা ও দক্ষতা। পেশাদারি চাটুকারদের নিকট প্রশ্ন, যোগ্যতা দেখিয়ে কোথায় কে কী সাফল্য অর্জন করেছেন, তাই দেখান। তা দেখাতে পারবেন না বলেই মানুষের কথা বলার স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। আসুন, সত্যকে সামনে রেখে খোলা মন নিয়ে জনসমক্ষে ডিবেট করি। দেখতে অসুবিধা হবে না যে, কিভাবে বিবেকহীন সুবিধাবাদীরা জনজীবনকে বিষাক্ত করে তুলেছে। মিথ্যা প্রচারে সত্য প্রমাণিত হয় না।
আমলাতান্ত্রিক রাজনীতির দুঃশাসন তো পাকিস্তান আমলেই অনেক দেখেছি। মেগা প্রজেক্টের উন্নয়ন তো মানুষের বেঁচে থাকার উন্নয়ন নয়। উন্নতি হচ্ছে অন্যায় কমিশন ভোগীদের। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা নানা ধরনের অন্যায়-অবিচার ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুলিশি ক্ষমতার নিকট জনগণের অসহায়ত্ব সবাইকে হতাশার মধ্যে রেখেছে। পুলিশও বলে তারা অসহায়। নির্দেশ মানতে হচ্ছে। নির্দেশ পেলে আইন দেখার সুযোগ তাদের থাকে না।
কোথায় কোথায় যে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে তা নিয়ে যুক্তিসম্মত আলোচনায় যাওয়া যাবে না। স্বাধীনতা প্রশ্নেও তো আমাদের নেতৃত্ব ধোঁকাবাজির শিকার হয়েছে।
অধিকারহীন জাতির কি স্বাধীনতা বা সাফল্য থাকতে পারে, তা বুঝি না। সবার জানা আছে যে, সুবিধাবাদী শিক্ষিত শ্রেণী বাংলাদেশ হওয়ার পর কিভাবে অবিশ^াস্য রকমের ধন-দৌলতের মালিক হয়েছে। দেশটিতে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম না হলে, এ রকম হতে পারে না। যখন নীতিহীন চরিত্রহীনদের মুখে শুনতে হয় আমরা বীরের জাতি, তখন প্রশ্ন জাগে, কারা কোথায় বীরত্ব দেখিয়েছেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরুন। জাতিইবা কিভাবে স্বাধীন জাতির মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করেছে?
আমাদেরকে নেতৃত্বহীন করতে তাদের বিজয় নিশ্চয়ই উল্লেখযোগ্য। দেশটিতে দুর্নীতির রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় তাদের বিজয়ও প্রশ্নাতীত।
সুবিধাবাদীদের সহযোগিতায় দেশ থেকে গণতন্ত্র বিলুপ্ত করে দেশে এক প্রকার রাজতন্ত্র চলছে। সফরসঙ্গীদের বিরাট বহর নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসার নামে লন্ডন-আমেরিকায় যেতে তাদের অনেকেরই কোনো অসুবিধা নাই। গরিবের টাকায় ধনী রাষ্ট্রের ফুটানি দেখানো হচ্ছে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা চরম অবহেলার শিকার। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কত ভঙ্গুর তা তো করোনাভাইরাস মোকাবেলা থেকেই খোলাসা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসংসস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। বেঁচে থাকার জন্য অর্থ উপার্জনের সন্ধানে লক্ষ লক্ষ লোক পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করার দুর্ভাবনা নাই ভাগ্যবান সুবিধাবাদীদের। সরকারদলীয় লোক না হলে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া দুষ্কর। সুবিধাবাদী শিক্ষিত এ শ্রেণীর নিকট আমরা সবাই মূর্খ ও আহম্মক।
বর্তমান বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য রাজনীতি জানতে হয় না। আওয়ামী লীগাররা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শই তাদের রাজনীতি। বিএনপির লোকজন বলেন, জিয়াউর রহমান তাদের রাজনৈতিক আদর্শ। রাজনৈতিক আদর্শ যে রাষ্ট্র পরিচালনার বিশেষ জ্ঞান ও মূল্যবোধের ব্যাপার তা তাদের কেউই বলেন না। জনগণের অধিকার হরণ করা বা সুশাসনের জন্য অপরিহার্য শাসনতন্ত্রের অবমূল্যায়ন করা, কোনো রাজনীতি নয়। দেশ, জাতি বা দেশপ্রেমের কোনো মূল্য নাই। রাজনীতি নাই, রাজনৈতিক নেতাও নাই। ক্ষমতার দম্ভ দেখানোই সুবিধাবাদীদের রাজনীতি।
যেভাবেই মন্ত্রী-এমপি হোন না কেন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে সবই বৈধ। সরকারের শাসনতান্ত্রিক বৈধতা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। যেজন্য অন্যায়-অবিচার আমাদের লোক দ্বারাই আমাদের উপর চালানো হচ্ছে। আমাদের লোকেরাই জাতিকে হেয় করে চলেছে। দেশের বিবেকবান ও সৎ শিক্ষিত লোকেরাও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে না। ভীতু বাঙালি ভীতুই থেকে গেলাম। সুশিক্ষিতদের সৎ সাহসের অভাবের কারণেই অন্যায়কারীদের সাহস বেড়েই চলছে।
সুশিক্ষিত লোকেরা যদি তাদের নিজেদের নিয়ে ভালো থাকার বিষয়টি সবকিছু মনে করেন, তাহলে ন্যায়ভিত্তিক স্বাধীন দেশ গড়ার দায়িত্ব কারা পালন করবেন? জনসচেতনতা তো সুশিক্ষিত লোকদের থেকে আসে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই রাজনীতিবিদদের সম্পূর্ণ আস্থায় নেয়া হয় না। ক্ষমতার দোষই হলো ক্ষমতার অপব্যবহার করা। দুর্নীতিপরায়ণ হওয়া। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করে শিক্ষিত-সচেতন লোকেরা। আমাদের শিক্ষিত-সচেতন ভালো লোকেরা বড় বেশি উদাসীন, নিজেরা ভালো থাকলেই হলো। তাই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায় না। সুবিচার ভিন্ন শান্তি আসে না।
অন্যায়-অবিচার করে যে মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না, সেকথা বঙ্গবন্ধুই বলেছিলেন। কিন্তু সুবিধাবাদীদের চক্রান্ত থেকে তিনিও দূরে থাকতে পারেন নাই। জনগণকে ঠিকই দাবিয়ে রাখতে কারও অসুবিধা হচ্ছে না। জনগণকে দাবিয়ে রাখতে বঙ্গবন্ধুকেও তারা ব্যবহার করেছেন।
সুবিধাবাদীরা সব বিষয়ে পণ্ডিত সেজে সাধু ভাষায় মিথ্যা বলার পাণ্ডিত্য দেখাচ্ছেন। সত্য যে জনগণের জানা নাই, এমনটি ভাবা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মিথ্যাবাদী চাটুকাররা ক্ষমতাসীনদের খুশি রাখতে পারলেই তাদের লাভ। জনগণের দুর্ভোগ তাদের দুশ্চিন্তার বিষয় নয়।
সত্য বলার জন্য দেশে সাংবাদিকরা সাংবাদিক থাকতে পারছেন না, শিক্ষকরা শিক্ষক থাকতে পারছেন না এবং আইনজীবিরা আইনজীবী থাকতে পারছেন না। ভদ্র ভাষায় রাজনীতি করাও সম্ভব হচ্ছে না। জ্ঞানী-গুণীরা লুকিয়ে আছেন ভয়ে। কখন কী কথা বলে বিপদে পড়বেন। এমন একটি দেশে আছি যেখানে জ্ঞানী-গুণীদের প্রয়োজন নাই। সুবিধাবাদীদের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার শাসন চালাতে কোনো দুর্ভাবনা নাই। পুলিশ দিয়ে ভোট ডাকাতির চেয়ে আর লজ্জার কী থাকতে পারে!
তবে সরকার জনগণের ভয়ে যে অবাধ নির্বাচন দিতে সাহস পাচ্ছে না, এ সত্যের মধ্যে আমি আশা খুঁজে পাচ্ছি। অশিক্ষিত সাধারণ মানুষকে যে কেনা যায় না, এটা কম আশার কথা নয়।
বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যা জনজাগরণের কথা বলে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে পাঠিয়ে যারা আমাদেরকে নেতৃত্বহীন করেছে তারা এখন পুরাতন অভিশাপ নতুন করে অধিকতর ভয়াবহ রূপে আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে। সেই সুবিধাবাদীরা এখনও তৎপর আমাদেরকে স্বাধীনতার কথা ভুলিয়ে দিতে। বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠাতে হলো কাদের স্বার্থে? আমাদের সংগ্রামের নেতৃত্ব চলে গেল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিকট। আমরা নেতৃত্ব হারিয়েছি। স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের গণভোটের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর নিকট। পাকিস্তানে অবস্থিত সে সময়ের ভারতীয় হাইকমিশনারই পত্রটির বাহক ছিলেন। এ প্রস্তাব বিবেচনার সুযোগ বঙ্গবন্ধু পান নাই। মিসেস ইন্দিরা গান্ধী নিজেই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। রক্ত ঝরছিল আমাদের।
আমাদের দুর্ভাগ্য রাজনীতির বিরাজনীতিকীকরণ হওয়ায় রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে আন্দোলন হচ্ছে না, তাই, ক্ষমতসীনরা বিপদও দেখছেন না। তবুও আমরা বলবো, সরকারের অভ্যন্তরীণ এরকম বেহাল অবস্থায় কোনো সরকারের টিকে থাকার কথা নয়। সরকারের নিজস্ব নৈরাজ্যের জন্যই পরিবর্তন অনিবার্য। কিন্তু সে পরিবর্তনের পথ যাতে হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়, সেটা নিয়েই যত দুশ্চিন্তা।
ঐতিহাসিক নিয়মে যা ঘটার তা ঘটবে। কিন্তু এ দেশের ১৭ কোটি মানুষের করণীয় কিছু থাকবে না, তা হয় না। আমরা সবাই দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির অন্যায়-অবিচারের কাছে অসহায় থাকব, এটা মানতে পারছি না।
স্বাধীন দেশের গর্ব আমাদের অবশ্যই অর্জন করতে হবে। নেতাবিশেষকে বড় করে তুলে ধরে, জাতিকে ছোট করে অধিকারহীন অবস্থায় সবাইকে ভয়-ভীতিতে রাখা কোনো জাতির মর্যাদার বিষয় হতে পারে না। কোনো নেতাকেও মহান করে না।
রাজনীতি জাতি গঠনের এবং জনসেবার বিষয়। দান-অনুদান কিংবা ব্যক্তিগত মানবিক সেবার নাম রাজনীতি নয়। গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র বা জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অনুসরণ করাই রাজনৈতিক অর্থে জনসেবা।
জনগণের জন্য আইনের শাসনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবে। জাতীয় উন্নয়নের সুষম বণ্টন হতে হবে। সকলের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অগ্রাধিকার পেতে হবে, কারণ সেটা করা সরকারের শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব। পরিবার পরিজনকে দেশে রেখে অমানবিক অবস্থায় বিদেশে কর্মের সংস্থান খোঁজার মধ্যে জাতির কোনো মর্যাদা থাকতে পারে না।
বিদেশীদের পুঁজি বিনিয়োগ সহজ করার জন্য একশ’টি বিশেষ শিল্পাঞ্চল করা হয়েছে। কিন্তু বিদেশীদের পক্ষ থেকে তেমন উৎসাহ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ভরসা পাচ্ছেন না। সুশাসনের স্থীতিশীলতা ভিন্ন কেউ বিনিয়োগ করে না। আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করছে। বিদেশী শ্রমিকদের পাঠানো অর্থসঙ্কটে ভরপুর দেশটির অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এ শক্তি আমাদের নিজস্ব অর্থনীতির শক্তি নয়। তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ধনী রাষ্ট্রের ফুটানি দেখানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের সুশাসন ব্যবস্থা হিসেবে জনগণ প্রদত্ত শাসনতন্ত্রের অস্তিত্ব এখনও আছে। যদিও জনগণের নির্বাচনী ব্যবস্থা গুম হয়ে গেছে। জনগণের সুশাসন নিশ্চিত করার প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করা হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যবসায়ী চিন্তার রাজনীতি থেকে মুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক চিন্তার রাজনীতি প্রবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ আইনের শাসন, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। স্বৈরশাসন ব্যবস্থার সর্ববিধ কাঠামো ভাঙতে হবে। নির্বাচন-ডাকাতির নীলনকশা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্যই সুশিক্ষিত লোকদের ভূমিকা অপরিহার্য।
সুবিধাবাদীরা নিজেদের স্বার্থে গণতান্ত্রিক সুশাসনের কাঠামো ভেঙে ফেলেছে। ফলে দেশব্যাপী সুবিধাবাদীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে পেরেছে। তাই সুবিধাবাদীদের তৈরি কাঠামো না ভাঙা পর্যন্ত গণভোটের নির্বাচন সম্ভব হবে না। আমাদের সংগ্রাম হতে হবে সুবিধাবাদী শিক্ষিত শ্রেণীর বিরুদ্ধে। তাদের বাঁধন-কষন ছিন্ন করতে হবে। তামাশার নির্বাচন নয়, নির্বাচনী রাজনীতির পুনর্বাসন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement