১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা-উত্তর অর্থনীতি ও সমাজ

-

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্থতার সংজ্ঞা দিয়েছে ঐবধষঃয রং ধ ংঃধঃব ড়ভ পড়সঢ়ষবঃব ঢ়যুংরপধষ, সবহঃধষ ধহফ ংড়পরধষ বিষষ-নবরহম ধহফ হড়ঃ সবৎবষু ঃযব ধনংবহপব ড়ভ ফরংবধংব ড়ৎ রহভরৎসরঃু অর্থাৎ রোগবালাইমুক্ত হলেই শুধু নয়, শারীরিক বা দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক সবলতাই সুস্থতা। এর সাথে আর্থিক সক্ষমতা যোগ করলে কেমন হয়? কেননা আর্থিক সামর্থ্যও তো সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। আর্থিক অসচ্ছলতা, দারিদ্র্য-দৈন্যের দুশ্চিন্তা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সবলতা অর্জনের পথে পয়লা নম্বরের প্রতিবন্ধকতা। এটা একজন ব্যক্তি বা ব্যষ্টির জন্য যেমন সত্য, ব্যষ্টির সমষ্টি পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির জন্যও প্রযোজ্য। একবিংশ শতাব্দীতে এ পর্যন্ত বৃহৎ বলে বিবেচিত করোনাভাইরাস বৈশ্বিক বিচরণে যেভাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে তাতে পৃথিবীর তাবৎ নাগরিকের ব্যক্তিগত শারীরিক সুস্থতা, মানসিক শান্তি ও সামাজিক সুরক্ষা সঙ্কটের সম্মুখীন, আর এর জন্য বর্তমান কিংবা আসন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ। উচ্চবিত্ত বাদে মধ্যবিত্তসহ অন্য সবাই (৯৬ শতাংশের বেশি মানুষ) স্বাভাবিক জীবনযাপনে ও ধারণে ছিল প্রাণান্ত সংগ্রামে। করোনা-উত্তর পরিবেশে তাই সম্ভাব্য সব বিষয়ে মনোযোগের দাবিদার।
শারীরিক সুস্থতায় করোনা প্রতিরোধ এবং নিরাময়কে টেকসইকরণ : ভাইরাস হিসেবে করোনা মানুষের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে, মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে প্রথমে লুকিয়ে থাকে এবং একপর্যায়ে সক্রিয় হয়ে ফুসফুসে আক্রমণ করে শারীরিক ক্ষতি সাধন করে। সচরাচর অন্যান্য ভাইরাসের চেয়ে মানবদেহে করোনার সরাসরি সংক্রমণের ক্ষমতা চাতুর্যময় ও ব্যাপক বলেই এবং এখন পর্যন্ত একে নিরাময়ের কোনো প্রতিষেধক নেই বলেই করোনাকে ভয়াবহতম ভাইরাস ভাবা হচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে মানুষের মাইগ্রেশন স্বল্পসময়ে দ্রুততর সম্ভব হওয়ায় এবং করোনা সংক্রমণ ও সংহারের সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ অবারিত থাকায় অতীতের মহামারীগুলোর তুলনায় করোনার প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ধর্ম বর্ণ অর্থ-দর্শন নির্বিশেষে সব মানুষকে মারাত্মক উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় ফেলে দিয়েছে। অতীতের মতো বর্তমানেও মানুষ শারীরিক ক্ষয়ক্ষতিকারক জানা-অজানা বহু সংক্রামক, অসংক্রামক ও দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে লড়াই করে চললেও করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিরাময় নিয়ন্ত্রণে গোটা বিশ্ব বেশ হিমশিম খেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে করোনার বিস্তার বা সংক্রমণ প্রতিরোধকে তাই এই মুহূর্তের অন্যতম করণীয় কৌশল হিসেবে সব প্রয়াস প্রচেষ্টার ওপর স্থান দিতে হবে। সবাইকে সচেতনভাবে, দায়িত্বশীলতার সাথে প্রতিরোধমূলক যা যা উপায় অবলম্বন করা দরকার তাতে শামিল করতে পারলেই করোনার ব্যাপক বিস্তার রোধ ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো বা থামানোর প্রয়াস টেকসই হবে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাবার সংগ্রামে ব্যর্থতা মানে মানবিক বিপর্যয়Ñ যেমন ঘটেছে চীন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিলে। এরা সবাই উন্নত বিশ্ব, সংক্রমণ ঠেকানোর সক্ষমতা সরঞ্জাম, অর্থ তাদের আছে; তা সত্ত্বেও দেশে প্রত্যাবর্তনকারী অধিকাংশ কর্মজীবী প্রবাসী প্রযোজ্য কোয়ারেন্টিন পরিপালন ছাড়া সমাজের সাথে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই ‘সামাজিক দূরত্ব’ সৃষ্টির মতো কর্মসূচিতে দামি ও দক্ষ ক্যালোরি খরচ করতে হয়েছে, পূর্বপ্রস্ততি না থাকায় আক্রান্ত চিহ্নিতকরণে পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অপ্রতুলতায় সংক্রামকদের শনাক্তকরণে বিলম্ব ঘটেছে। নির্ঘাত সংক্রমণের সম্ভাবনায় রোগীর সংস্পর্শে আসা তো দূরের কথা তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান আবশ্যক ছিল, যে কারণে রোগীকে আইসোলেশনে রাখার প্রয়োজনও ছিল। ব্যর্থতায়, এর বিপরীতে রোগীর চিকিৎসাসেবা শুশ্রƒষা ও সমানুভূতি সহানুভূতি পাওয়ার এমনকি মৃত্যুর পর সমাহিত হওয়ার সর্বজনীন অধিকার বঞ্চিত হওয়ার ভয় তৈরি হওয়ায়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরীক্ষা করা বা করানোয় অনীহা, রোগীর তথ্য প্রকাশ না করার প্রবণতা বেড়েছে, এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকে আপনজনের মৃত্যুর তথ্যটি পর্যন্ত সংগোপন রাখার চেষ্টা চলেছে, এ সবই প্রকারান্তরে অত্যন্ত ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস সংক্রমণেরই বিস্তার ঘটার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সংক্রমিত রোগী শনাক্তকরণ পদ্ধতিকে ব্যাপক, গণমুখী ও সহজসাধ্য করা, সম্ভাব্য সংক্রমণকারীদের কর্তৃপক্ষীয় কঠোর কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে এবং সবশেষে আক্রান্তকে বিশেষব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবা দানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে উপরোক্ত ঝুঁকি এড়ানো কিংবা মোকাবেলা সহজ ও সম্ভব হত। তাছাড়া সবার উপর যেটা প্রয়োজন ছিল যথাসময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তাসামগ্রী নিশ্চিত করা। সংক্রমণ শনাক্তকরণ (টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট) এবং টিকা ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করা।
দ্বিতীয় কর্তব্য হবে সর্বজনীন চিকিৎসা সচল রাখা এবং চিকিৎসাকর্মীদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত রাখা। করোনার ভয়ে, ধমকে, করোনা মোকাবেলার নামে, অজুহাতে সচরাচর অন্যান্য রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা বা সেবা বন্ধ বা সীমিত হওয়ার উপক্রম বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। করোনার ভয়ে অন্যান্য ব্যাধির চিকিৎসাসেবা থেকে কেন বঞ্চিত হবেন সবাই, কেন সাধারণ হাসপাতালের চিকিৎসক চিকিৎসাকর্মী দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে সরকার ঘোষিত ছুটিতে থাকতে, ক্লিনিক বন্ধ রাখতে, বিরত থাকতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনের সময় চিকিৎসাসেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ার ব্রতই তো ১৯৪৮ সালের (২০১৭ সাল পর্যন্ত ন্যূনতম নয়বার সংশোধিত, পরিমার্জিত) ‘জেনেভা ঘোষণা’, যা জপে সবাই এই মহৎ, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘মানবসেবা’ ধর্মী পেশা শুরু করেন। এটি অনস্বীকার্য যে করোনায় সংক্রমণ হতে চিকিৎসা কর্মী নিজেদের সুরক্ষা সামগ্রীসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে সবার স্বার্থেই। দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে জাতীয় বীরের দায়িত্ব ও ভূমিকা পালনে সুযোগ গ্রহণে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে এগিয়ে আসতে হবে। যারা অক্লান্ত সেবা দিয়েছিলেন বা যাচ্ছেন তাদের প্রতি অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা।
আকিঞ্চন আকাক্সক্ষা এই যে একদিন করোনার প্রকোপ প্রশমিত হবে। তার কিছু দিন পর করোনার কথা মাঝে মধ্যে হয়তো মনে পড়বে। কিন্তু এ কথা ভুলে বসে থাকলে চলবে না যে, করোনা আবার আসবে, সে পথ চিনে গেছে। আগামী কোনো শীতে কিংবা কোনো মৌসুমে সে সহসা দেখা দেবে। যেমন এখনো কলেরা ডায়রিয়া ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া মাঝে মধ্যে মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। এবারের চরম অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে মোকাবেলার প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে রাখতে হবে। ভ্যাক্সিন আবিষ্কার ও তার সফল প্রয়োগ পরীক্ষার প্রদোষকাল পেরোতে হবে। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ এ বাংলাদেশে ডেঙ্গু অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করার দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিল। সামনে সে যেন ভালো স্কোরের আশাবাদী। ২০১১ সালে অসংক্রামক রোগ রোখার জন্য ঘটা করে যে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল জাতিসঙ্ঘ সেখানে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা সাফল্যের জয়গান গাওয়া হয়েছিল, শীর্ষ সম্মেলনে অসংক্রামক ব্যধিনিচয়ের প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অনুরূপ উত্তম কর্মপন্থা গ্রহণের জন্য স্ব স্ব দেশ বা সরকার প্রধানরা প্রতিজ্ঞা পত্রে (এ/৬৬/এল ১) স্বাক্ষর করেছিলেন। হায় ২০২১ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে সংক্রামক অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধের তেমন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি অধিকাংশ দেশে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি থেকে প্রতিরোধ নীতিমালার খসড়া তৈরি করে দাখিল করা অবস্থায় বছরের পর বছর পড়েছিল। আজ সেই নীতিমালার আলোকে যদি কিছু অবকাঠামো গড়ে উঠত, জনসচেতনতা ও লজিস্টিক তৈরি হয়ে থাকত, কার কী দায়িত্ব ঠিক হয়ে থাকত, তা হলে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে এমন বেচাইন অবস্থায় পড়তে হতো না।
মানসিক সুস্থতায় মানসিক শান্তি ও শক্তি। দেশে বিদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা ও ক্ষয়ক্ষতির বেহাল চিত্র দেখে আস্থাহীনতায় আতঙ্ক, আশঙ্কা বেড়েই চলেছিল; যা ছিল মানসিক অশান্তির উপসর্গ। অথচ মানসিক শান্তি বা মনের বল করোনার মতো ভয়াবহ মহামারি মোকাবিলায় প্রাণশক্তি হতে পারে। বাংলাদেশে যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তৎপরতায় (যা মাননীয় উচ্চ আদালতও ২০২০ সালের ৫ মার্চ সরকারকে জানাতে তাগিদ দিয়েছিলেন) বিলম্ব,অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান হয়ে উঠলে আস্থাহীন অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আর এহেন আস্থাহীন পরিবেশেই সাধারণত তথাকথিত গুজব উদ্বেগ উৎকণ্ঠা সৃষ্টির দ্যোতক হিসেবে কাজ করে। শুধু আহ্বান জানিয়ে ও শাস্তির ভয় দেখিয়ে গুজব রটনা ও গুজবে কান দেয়া বন্ধ হওয়ার প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার নয়, আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে, কঠিন বাস্তবতায় করোনা মোকাবেলায় গৃহীত ব্যবস্থার স্বচ্ছতায় ও আন্তরিকতায় সবাইকে শামিল করতে পারলে গুজব লাপাত্তা হতে পারে। কাণ্ডারিকে হুঁশিয়ার করে দিতে নজরুলের ছিল সেই আহ্বান, ‘ওরা হিন্দু না মুসলিম? এই জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারি বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার’। গৃহীত সব পদক্ষেপে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিচ্যুতির পরিবর্তে সবাইকে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে আস্থা ও জাতীয় ঐক্য গড়া প্রয়োজন। করোনা-উত্তর সামাজিক পরিবেশে বিভাজন, শোষণ, বঞ্চনা নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সে ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে এ জন্য যে ঐকমত্যের ঐশ্বর্য মতানৈক্যের মাসুল দিতে দিতে যেন শেষ না হয়। বাংলাদেশে হঠাৎ করে ধনী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞে চোখধাঁধানো পরিস্থিতিতে অর্থ পাচার বাড়ার এবং হঠাৎ ধনী হওয়ার সুযোগ কেন অবারিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সে নিরিখে সংস্কার ব্রতী হতে হবে। নিজে পরিশ্রম করে, সম্পদ ও সেবা উৎপাদনের দ্বারা জিডিপি বাড়লে বা হঠাৎ ধনী হলে কোনো সমস্যা নেই। সম্পদ ও সেবা উৎপাদন ব্যতিরেকে নমিনাল টার্মে জিডিপির আকার বাড়লে কিংবা কেউ হঠাৎ ধনী হলে প্রতীয়মান হবে, এই উন্নতি প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, আত্মসাৎ বা দুর্নীতির মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। করোনা-উত্তর সমাজ ও অর্থনীতিতে এই অপ-প্রবণতা রোখা বা দূরীকরণে রাখতে হবে বিশেষ দৃষ্টি।
আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির প্রেরণা। চিন্তা থেকে কাজের উৎপত্তি। চিন্তা বা নিয়ত বা কর্মপরিকল্পনা পল্লবিত হয় আত্মায়। পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তার সাথে এই আত্মার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ঠিক থাকা জরুরি। কেননা ভালো-মন্দ, ভূত-ভবিষ্যৎ জ্ঞান পরমাত্মার এখতিয়ার। যুদ্ধের সময় অগ্রবর্তী দলে সেনাবাহিনী যেমন সবসময় হেড কোয়ার্টারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে নির্দেশনামতো কাজ করে, হেড কোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে রসদ প্রাপ্তিতে বিঘœ ঘটে, শত্রুর অবস্থানের নিশানা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে দিশেহারা হয়ে শত্রুর কবজায় চলে যেতে পারে ওই বাহিনী। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তার জীবন সংগ্রামে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকেই সে পাবে প্রেরণা, বিপদ তারণের মদদ, বিপদে সৃষ্টিকর্তার কাছে জানাবে ফরিয়াদ, চাইবে মার্জনা। এটিই তার মনের শক্তি ও সান্ত্বনা অর্জনের পথ। করোনা মহামারী প্রকৃতির প্রতিশোধ, নানাবিধ সীমা লঙ্ঘনের অভিঘাত, প্রতিফল। সুতরাং এ থেকে নিষ্কৃতি লাভের শ্রেষ্ঠ উপায় অনুতপ্ত অনুশোচনার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাওয়া এবং তা পাওয়াই তার মানসিক শান্তি ও শক্তি। চীন থেকে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, সিংগাপুর, ইরান, সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্য সর্বত্র যার যার ধর্ম বিশ্বাসমতো সৃষ্টিকর্তার প্রতি আবেদন নিবেদনে নত হয়েছিলেন করোনাক্লিষ্ট রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান থেকে সবাই।
বিধাতার প্রতি নৈবেদ্য, তার স্মরণ সব সমাজে অনবদ্য ও অবিরাম সাধনার বিষয়। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে মানুষে মানুষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের ব্যাপক ঘাটতির প্রেক্ষিতে বিধাতার কাছে নৈবেদ্য নিবেদনের কাব্য ‘গীতাঞ্জলি’র গান বা কবিতাগুলোর জন্য। স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার উপলব্ধি এবং তারই কাছে এর পরিত্রাণ প্রার্থনাই আজকের সঙ্কট মোকাবেলার জন্য অপরিহার্য। করোনা চলে গেলে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে এটিকে স্বয়ংক্রিয় ভেবে বিধাতার বিস্মরণের পথে পূর্ববৎ ফিরে গেলে সেটি হবে করোনার মতো নতুন দুর্যোগের দিকে অগ্রসর হওয়া।
সামাজিক বন্ধন রক্ষায় সামাজিক সংহতি, সহানুভূতি সমানুভূতির সুরক্ষা প্রযোজন। প্রাচীনকাল থেকেই দেশ কাল পাত্রভেদে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করতে সবার ভালোর জন্য জোরেশোরেই চালাতে হয়েছিল ‘সামাজিক দূরত্ব’ তৈরির কর্মসূচি। এটিকে ছোয়াচে রোগ করোনার বিস্তৃতি প্রতিরোধের মোক্ষম উপায় ভাবা হয়েছিল অথচ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী মহামারী নিয়ন্ত্রণে, মানুষকে উদ্ধারে সামাজিক সংহতির ভূমিকাই অগ্রগণ্য। ১৮৪৪ সালে কুষ্ঠ রোগীদের পরিবার ও সমাজ বিচ্ছিন্ন করে দীপান্তরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কানাডার পূর্ব উপকূলীয় রাষ্ট্র নিউ ব্রান্সউইক। ইতিহাসের পাতায় রয়েছে দারুণ অমানবিক অনুরূপ অনেক ঘটনা। করোনা বিশ্ব মানবতাকে, সে রকম একটা সঙ্কটের সামনে দাঁড় করিয়েছিল।
চীনের মতো একটি ’নিয়ন্ত্রিত সমাজ সংস্কৃতি ও অর্থনীতির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র্রের মতো পুঁজিবাদী-ভোগবাদী উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক অ্যাডাইসিভ মিশ্রিত রাজনীতির রসে ভরা স্থূল (অবিস) সমাজ ও পেট মোটা অর্থনীতিতে কিংবা ইতালি স্পেন ফ্রান্সের মতো তথাকথিত ওয়েলফেয়ার সমাজে পানপ্রিয় জাতির কাছে সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টি একই আবেদন বা অবদান রাখতে পারে না। পক্ষান্তরে, বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতিতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ও সামাজিক বন্ধনরীতি যেখানে সুদৃঢ়। করোনা মোকাবেলায় আক্রান্তের সেবা শুশ্রƒষায় চিকিৎসাকর্মীর সমানুভূতি, পারিবারিক নৈকট্য, সামাজিক সহানুভূতি যেখানে বিশেষ টনিক হিসেবে কাজ করে। করোনায় মৃত্যু হয়েছে কি না মৃত্যুর পর তার পরীক্ষা করা এবং তার ভিত্তিতে তার পরিবার এমনকি তার গ্রামকে লকডাউন করা, তার স্বাভাবিক জানাজা ও দাফন কাফন নিয়ে বিতর্ক বিসংবাদ তৈরি হওয়ার স্টিগমা তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল না। চার-পাঁচ দশক আগেও গ্রামবাংলায় কলেরা বা ওলা ওঠায় গ্রামকে গ্রামের মানুষ উজাড় হয়ে যেত, ভয়ে মৃতদের সৎকারের লোক পাওয়া যেত না। এরকম পরিস্থিতিতে গণমৃতদের দাফন কাফন জানাজা, তাদের দোয়া অনুষ্ঠানের জন্য খানবাহাদুর আহছানউল্লাহ নিজ গ্রামে যুব সমাজকে সংগঠিত করে, নবীজ সা:-এর হিলফুল ফুজুলের প্রেরণায় একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, মুষ্টির চাল ভিক্ষা করে খরচপাতি সংগ্রহ করে অসহায় মাানুষের সামাজিক আনুষ্ঠানিকতাগুলো পরিপালনের উপায় সৃষ্টি করেন। ১৯৩৫ সালে সাতক্ষীরার নলতায় গড়ে ওঠা সেই অতি সামান্য সংগঠন আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান আহছানিয়া মিশন। রামকৃষ্ণ মিশনও অনুরূপ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলার হাবলু মিয়ার লিচু বাগানে ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন আজকের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখরা, যুদ্ধবিধ্বস্ত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবিগঞ্জের বুড়িচংয়ে ফজলে হাসান আবেদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ থেকেই আজ বিশ্বের সেরা এনজিও ব্র্যাক। এসবই সামাজিক অন্তর্ভুক্তির প্রেরণা থেকে। সমাজের মধ্য থেকেই সামাজিক সেবার আগ্রহ বেরিয়ে আসবে, যদি তা দ্রুত কর্তৃপক্ষীয় প্রযতœ ও পদ্ধতিগত সহায়তা পায়।
অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। মানব সম্পদ বাঁচাতে তাৎক্ষণিক সহায়তা। এ কথা না মেনে উপায় নেই যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ শারীরিকভাবে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার চেয়ে করোনাকালে কর্ম ও আয় উপার্জন হীন হয়ে, অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে আর্থিক সঙ্কটে তার শতসহস্র গুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যক্তি ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য করোনা ছিল তাই বড় হুমকি। মানব সম্পদ বাঁচানোর জন্য করোনার প্রাদুর্ভাবের ভয়ে, করোনা প্রতিরোধের উপায় হিসেবে ছুটি বা গৃহে অন্তরীণ হওয়ায় আয় উপার্জনহীন হয়ে পড়া দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ, স্বল্পবেতনভুক মানুষ, নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন মানুষ সবাইকে দৈনন্দিন খোরাকি পৌঁছাতে হবে, অব্যাহত রাখতে হবে যতদিন তারা স্বাভাবিক অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারি মাসের কর্মচঞ্চল আয় উপার্জনের অবস্থায় ফিরে না আসে। সবাইকে প্রয়োজনমতো খাদ্য খোরাকি নিয়মিত পৌঁছানোর ব্যবস্থাপনা হতে হবে নিñিদ্র ও দুর্নীতিমুক্ত। প্রথম দিকে উৎসাহী সহায়তাকারীদের বিক্ষিপ্তভাবে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণে আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থার পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা বিতরণের উদ্যোগ ছিল; কিন্তু এ তৎপরতাকে নিয়মিত ও টেকসই করতে খোরাকি ভাতা বা সামগ্রী বিতরণের কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতে ৮৫ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। আপদকালীন সময়ে তাদের দেখার দায়িত্ব আসবে। প্রান্তিক মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সঙ্কট কত দিন স্থায়ী হবে জানা না থাকায় আগামী ছয় মাস কিংবা এক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। মধ্যবিত্ত, যারা হাত পাততে পারবে না, অথচ তাদের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে তাদের জন্যও সমন্বয়ধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে।
কঠোর কৃচ্ছ্রতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। করোনা জাতীয় অর্থনীতিতে এত দিনের অর্জিত সাফল্য ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে শুধু শ্লথ করেনি, ক্ষেত্রবিশেষে পিছিয়ে দিয়েছে এবং গোটা অর্থনীতিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে অন্তত আগের অবস্থায় (ডিসেম্বর ২০১৯) ফিরতে সরকারি বেসরকারি, ব্যক্তি ও সামষ্টিক খাতে সর্বত্র উন্নয়ন অনুন্নয়ন বাজেটে ব্যয় সাশ্রয়ী হতে কঠোর কৃচ্ছ্্র সাধনের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিতে হবে এখন থেকেই।
সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয়, অনুৎপাদনশীল খাতে সময়, সামর্থ, সমর্থন ও অর্থের অপচয় অপব্যয় পরিহার করা আবশ্যক হবে। করোনা বিশ্বব্যাপী তার আক্রমণের দ্বারা, বড় ছোট সব অর্থনীতিকে কুপোকাত করে এই সত্য জানান দিয়ে গেছে যে এখন থেকে যার যা আছে তাই দিয়ে তাকে চলতে হবে। পরমুখাপেক্ষী কিংবা পরনির্ভরশীল হওয়া বা থাকার সুযোগ এখন সীমিত। সুতরাং স্বনির্ভর আর্থিক স্বয়ম্ভরতা অর্জনের পথে আরো বেশি ‘হিসেবি’ আরো বেশি ‘সতর্ক’ ও সাবধানতা অবলম্বনকে জাতীয় চিন্তাভাবনা ও অভ্যাসের আওতায় আনতে হবে।
করোনা-উত্তর অর্থনীতি পুনর্গঠনে পুনর্বাসনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ বাজার চাঙ্গা রাখতে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাস্থ্য ও জীবিকা পরস্পরের হাত ধরে চলে। তাই করোনা মহামারী থেকে জনগণকে রক্ষায় স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ছোট-বড় ম্যানুফাকচারিং, আমদানি-রফতানি, ব্যবসা বিপণন, কৃষি (খাদ্য, সবজি, মাছ, গোশত) উৎপাদন, পরিবহন, পর্যটন, সেবা ও আর্থিক খাতে পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তাদের করোনায় ক্ষয়ক্ষতির শুমার করে প্রথমত তাদের টিকে থাকা এবং করোনার প্রকোপ শেষ হওয়ার সাথে সাথে যার যার কাজ জোরেশোরে শুরু করতে পারে সে জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ আকারে নগদ সহায়তা যেসব ট্যাক্স ট্যারিফ ফিসকাল ইনসেনটিভ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। গ্রুপভিত্তিক সহায়তা বিতরণ ও ইনসেটিভ প্রদানের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব পরিহার, পক্ষপাতহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি ও জবাবদিহির ব্যবস্থাসংবলিত নীতিমালা ও অনুশাসন অনুসরণ আবশ্যক হবে।
নগদ সহায়তা প্রদান ও ইনসেনটিভ ঘোষণা বা প্রয়োগে বিলম্ব হলে উদ্দেশ্য সফল তো হবেই না, বরং অর্থনীতি বেশি করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বিধান, সুশাসন কার্যকর ও নীতি নৈতিকতার অধিষ্ঠান জোরদার করা। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের আর্থিক খাত করোনা-পূর্বকাল থেকেই বেশ কিছু বশংবদ দুর্বলতায় সংক্রমিত। ব্যাংকিং খাতে বড় বড় লোপাট, বিদেশে অর্থপাচার, রাজস্ব ফাঁকি কিংবা অঢেল রেয়াত, কঠিন শর্তের দেশী-বিদেশী ঋণ গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হেতু অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি, রেন্ট সিংকিং, ক্ষৈত্রিক পর্যায়েও পদে পদে দুর্নীতি, নানান ফন্দিফিকিরে গণ সম্পদ ও স্বার্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবিধিান প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকার অবর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছিল। ফলে সমাজে আয় বৈষম্য বৃদ্ধির মাত্রা সীমা অতিক্রান্ত হচ্ছে। করোনা-উত্তর পরিবেশে আয়-ব্যয় বণ্টন বৈষম্য বৃদ্ধির বিষয়টি সামাজিক সংহতি ও করোনায় ক্ষতি হেতু সবার বর্ধিত চাহিদা ও দাবি পূরণের পথে শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনা-উত্তরকালে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যেসব দেশে আয়-ব্যয় বৈষম্য পরিস্থিতি আগে থেকেই রোগাক্রান্ত, সেসব দেশে গণ-অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে নিজ নিজ দেশকেই তা মোকাবেলায় পারঙ্গম হতে হলে লুণ্ঠিত টাকা বা সম্পদ পুনরুদ্ধার ও বণ্টনে বৈষম্য বা দুর্নীতি দমনের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। ফিসক্যাল মেজারমেন্ট ও ম্যানেজমেন্টে সংস্কারে মনোযোগ দিতে হবে।
পণ্য ও সেবা উৎপাদন, আমদানি-রফতানি, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, বাজার ব্যবস্থাপনায় ‘নিজেরটা নিজে দেখ’ নীতি অবলম্বন। করোনার বিশ্বব্যাপী বিচরণে ও মোটাতাজাদের সরু হওয়ায় জাতীয় ও বিশ্ব অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার চৌহদ্দিতে এ উপলব্ধি পরিব্যপ্ত হচ্ছে বা হবে যে ‘পুঁজিবাদ’, ‘বিশ্বায়ন’ ও ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র ধ্যান ধারণা হালে পানি পাবে না। এখন ‘চাচা আপন বাচা’ নীতিতে অবগাহনের প্রয়োজন হবে। বঙ্গবন্ধু যেমনটি আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো’। আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় সাফল্য আছে। একে আরো জোরদার করতে হবে। জাপানের মাত্র ২০ ভাগ জমি সমতল এবং মাত্র ১৩ ভাগে তারা শুধু ধান চাষ করতে পারে। গবেষণা দ্বারা এমন চাষপদ্ধতি তারা উদ্ভাবন করেছে যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মৎস্য পশুসম্পদ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ম্ভরতার পথে। যেহেতু বাংলাদেশের রয়েছে উর্বর কৃষি জমি, জলাশয়, অধিক ফলনশীল শস্য উৎপাদনের অবকাঠামো, উদ্যম ও উদ্যোগ সেহেতু খাদ্যশস্য, সবজি, মৎস্য ও গোশত নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে বহির্বিশ্বের বর্ধিত ও সৃজিত চাহিদা মেটানোতে বাংলাদেশ বরং এ খাতে রফতানির মহাসড়কে উঠতে পারবে। করোনা এ সুযোগ বাংলাদেশের জন্য এনে দেবে যদি এ খাতের প্রতি যতœবান ও মনোযোগ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের মানবসম্পদ তৈরী পোশাক খাতে যে অবদান রাখছে, তাতে ভ্যালু এডিশন আরো বাড়ানো সম্ভব হবে বাংলাদেশ যদি কাঁচামাল, মেশিনারিজ ও টেকনোলজিতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলতে পারে। যেকোনোভাবে হোক ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে গড়ে তুলতে মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের মানবসম্পদকে বাধ্যতামূলকভাবে ভোকেশনাল ট্রেনিং দিয়ে, কারিগরি উচ্চশিক্ষায় মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে দেশের চাহিদা (উল্লেখ্য, বিদেশী কর্মীদের দ্বারা বার্ষিক গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসন হয় বাংলাদেশ থেকে) মেটানো সম্ভব হবে, প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ দেশে যে কোন বৃত্তিমূলক পেশায় এবং বিদেশে ‘ভালো বেতনে’ কাজ পাবেন। মানবসম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য করোনা-উত্তর বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়।
করোনাকালে আমাদের বোধোদয় হয়েছে সামনের দিনগুলোর নিয়ন্তা হবে ভার্চুয়াল যোগাযোগ সংস্কৃতির। ডিজিটাল প্রযুক্তি কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সময়ের চেয়েও এগিয়ে আছে, এটি একটা বড় প্লাস পয়েন্ট। এই অবকাঠামোতেই বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা উদ্ভাবক দেশে এবং বিদেশে ভার্চুয়াল অর্থনীতিতে সফলতার সাথে সংযুক্ত হতে পারবে। অতএব মনোযোগ প্রয়োজন এখানেও।
সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতে (বিশেষ করে ব্যক্তি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা কর্ম উদ্যোগে) বিনিয়োগের পাল্লা ভারী করতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ নীতিমালায় সংস্কার ও নতুন নতুন পথ পন্থার সমাবেশ ঘটানো প্রয়োজন হবে। বেসরকারি বিনিয়োগই কর্মসৃজন, ভোক্তা সৃষ্টি ও পোষণ, পণ্য ও সেবা উৎপাদনের হাতিয়ার। ব্যাংকঋণপ্রবাহ সরাসরি ক্ষুদ্র মাঝারিদের কাছে বিনা মাশুলে যাওয়া-আসা করতে পারে, বেল আউট-ইনসেনটিভ- প্রণোদনা সুযোগ সুবিধা শুধু বড়রা বা মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে না নিতে পারে আর আইন কানুনের খড়গ শুধু প্রান্ত ও পান্থজনের বেলায় না হয় সে বিধান বা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বা হওয়া লাগবে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের দায়িত্বটি সুচারু, ন্যায়নীতিভিত্তিক, দুষ্টের যম শিষ্টের বান্ধব হিসেবে পরিপালিত হলে রাজস্ব আহরণ যৌক্তিক মাত্রায় পৌঁছাবে। যেসব খাত বা ক্ষেত্র থেকে মোটা দাগের কর বা শুল্ক রাজস্ব আসবে সেখানে অন্ধ আচরণ, অর্জিতব্য রাজস্ব আয়কে ভিন্ন পদ্ধতির আড়ালে আবডালে চ্যানেলাইজড হতে দিলে, সরকারি সংস্থার দেয় রাজস্ব রাজস্ব বিভাগের পরিবর্তে কিংবা তাদের কাছে পাওনা সরকারের দায়দেনা সরাসরি পরিশোধের পরিবর্তে অন্যত্র রাখার বা দেয়ার ব্যবস্থা হলে রাজস্ব আয়ের হিসাব মিলবে না এবং তহবিল ব্যবস্থাপনা ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। করোনা-উত্তরকালে এসব যথা দেখভালের আওতায় আনা প্রযোজন হবে।
জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন ও প্রাক্কলন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানোর প্রয়াস, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এসডিজি বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিদ্যমান সময়সূচি ও মানদণ্ড করোনার প্রভাব পর্যালোচনার আলোকে পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে। করোনার অভিঘাত সঞ্চারিত হয়েছে প্রধানত রফতানি খাত, প্রবাসী আয়, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক যোগাযোগব্যবস্থায়। নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জীবনমানের অবনতি ঘটেছে। রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমে যাচ্ছে। করোনা সঙ্কটের কারণে সরকারের আয় কমবে, ব্যয় বাড়বে। গরিব-নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সহায়তা বাড়াতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে করের হার কমাতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে মওকুফ করতে হবে। ফলে বাজেট ঘাটতি বেশ বাড়বে। সুদের হার ৬ ও ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়ায় ব্যাংক আমানত কমলে বিনিয়োগও কমবে। সব দিক দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। রফতানিমুখী শিল্পকারখানার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনাসহ ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেয়া আছে। নিজস্ব ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এ অর্থ জোগান দেয়া কঠিন হবে, এ জন্য আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক থেকে মঞ্জুরি সহায়তা, সফট লোন বা সহজ ঋণের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিনিময়ে আর্থিক খাতে সুশাসন, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যবসা সহজীকরণের শর্ত পূরণ করার জন্য এসব সব ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে ১. বাংলাদেশ অর্থনীতির বহির্মুখিনতাকে অন্তর্মুখীনকরণ, বৈদেশিক সাহায্য, বিদেশী বিনিয়োগ, বিদেশী কাঁচামাল, প্রযুক্তি ও পরামর্শ কমিয়ে দেশীয় লাগসই প্রযুক্তি, কাঁচামাল, সক্ষমতা, মানবসম্পদ ব্যবহারসহ নিজ বাজার সৃষ্টি তথা নিজের দিকে তাকানোর উপায় উদভাবন। ২. আন্তঃসহায়ক সলিলাশক্তিকে সম্মান, সমীহ ও অন্তর্ভুক্তি। জনগণই সম্মিলিতভাবে পরিশ্রম ও প্রয়াসের দ্বারা দেশের সব সাফল্য আনে। তাদের এই সক্ষমতা ও ভূমিকাই আন্তঃসহায়ক সলিলাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে চেতনা ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয় তাকে যথা স্বীকৃতি ও সম্মান দেয়া হলে, জনগণের পরিশ্রমকে, জন আকাক্সক্ষাকে, দাবিকে সমীহ করা হলে দেশ জাতি তথা জনগণ উন্নয়ন অর্থবহ ও টেকসই হবে। ৩. পরিবেশদূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসকারী কার্যক্রম গ্রহণে আরো সতর্ক সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। ৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় লাগসই সক্ষমতা বৃদ্ধি। সংক্রামক অসংক্রামক রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে তা মোকাবেলার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা, নীতিমালা নির্দিষ্ট করা। ৪. জাতীয় ঐক্য ও সংহতিতে গুরুত্ব প্রদানকারী স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক অর্থনীতির বিকাশ।
করোনার উৎস, অতি সংক্রমণের প্রসার, প্রসার প্রতিরোধ ও ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে কোনো ঠাণ্ডা যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল কি না, মানবিক বিপর্যয় রোধে তাদের কারো কারো দৃশ্যমান ব্যর্থতার পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য বা অভিসন্ধি ছিল কি না তা নিয়ে সমাজ ও রাজনীতি বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে সমালোচনা শুরু করে দিয়েছেন। এ পর্যালোচনা চলবে বছরের পর। মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ- দার্শনিক নোয়াম চমস্কি ২০২০-এর এপ্রিলে সোজাসাপ্টা বলেই ফেলেছিলেন চীনের বাইরে দেশগুলোর কাছে করোনার ভয়াবহতার তথ্য আগে থেকে থাকা সত্ত্বেও (ঘড়ঃযরহম ধিং ফড়হব. ঞযব পৎরংরং ধিং ঃযবহ সধফব ড়িৎংব নু ঃযব ঃৎবধপযবৎু ড়ভ ঃযব ঢ়ড়ষরঃরপধষ ংুংঃবসং ঃযধঃ ফরফহ'ঃ ঢ়ধু ধঃঃবহঃরড়হ ঃড় ঃযব রহভড়ৎসধঃরড়হ ঃযধঃ ঃযবু বিৎব ধধিৎব ড়ভ.)’ রাজনৈতিক ভেদ বুদ্ধির ফেরে কিছুই করা হয়নি, নইলে করোনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত; যা হোক এটি এখন বাস্তবতা যে করোনাভাইরাস বিশ্বের তখন পর্যন্ত, ২০৫ দেশের মানুষকে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক আশঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল, যা অতীতে কখনো এমন কোন দৈব দুর্বিপাক, মহামারী বা দুর্যোগ এভাবে মানুষকে ভয়ের কাতারে বাঁধতে পারেনি। মানুষের মাধ্যমে ভয়ানক প্রকৃতির এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় বলে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির এবং সামাজিক সংযোগ শুধু নিষিদ্ধই হচ্ছে না করোনায় আক্রান্তের প্রতি সহানুভূতি ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যাপাটিও স্পর্শকাতরতার কাদায় মাখামাখি হয়ে মানবতার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যে যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন করোনার ভয় সবাইকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল। ব্যক্তি স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য করোনা যেমন ভয়াল প্রতিপক্ষ, মানুষের জীবন-জীবিকা তার আর্থসামাজিক অবস্থান, দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য করোনা ব্যাপক অঘটন ঘটন পটিয়সী বলে প্রতীয়মান হচ্ছিল। পুঁজিবাদ, বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা এবং এমনকি মেকি গণতন্ত্র অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়তে পারে বলে পণ্ডিতরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ইতিহাসের সাক্ষ্য এইÑ বিধাতা প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ উপভোগে অপব্যবহারের উদগ্র বাসনায়, উদ্ধত আচরণে অমানবিক, অন্যায় অবিচারের দ্বারা, অকৃতজ্ঞতায় সত্য ও সুন্দরের প্রতি বিরূপ আচরণে অতিষ্ঠ হয়েছে প্রকৃতি। বহু বছর পরপর সীমা লঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে মহামারী আসে উচিত শিক্ষা দিতে। বিশ্ববাসীর উপলব্ধিতে করোনা তাই প্রকৃতির প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে এসেছে। সে সূত্রেই করোনা মোকাবেলায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হওয়া, অনুতাপ অনুশোচনায় সৃষ্টিকর্তার কাছে মার্জনা ও পরিত্রাণ প্রার্থনায় নিত্য নত হওয়া উচিত। উপলব্ধির উপলব্ধিতে আসুকÑ

ঈড়ৎড়হধ, ঃযব ঢ়ধহফবসরপ ংববসং ঃড় যধাব ধৎৎরাবফ ঃড় ংযধশব ঁঢ় ঃযব ড়িৎষফ ঃড় ৎবসড়াব ধষষ ঃযব ফঁংঃ ড়ভ রহযঁসধহরঃু, রহবয়ঁধষরঃু, ষঁংঃ, মৎববফ, ভধষংবযড়ড়ফ,ধহফ ঢ়ৎরফব ঃযধঃ যধং বহমঁষভবফঃযব ড়িৎষফ রিঃয বারষ ধপঃং ড়াবৎ ধ ঢ়বৎরড়ফ ড়ভ ঃরসবৃ
খবঃ’ং ৎবভষবপঃ, ৎবঢ়বহঃ ধহফ ষবধৎহৃ
খবঃ’ং ধিংয ড়ঁৎ ঝঙটখঝ, হড়ঃ ড়হষু যধহফং!

[মহামারী করোনা যেন যুগ যুগ ধরে মানবতার অবমাননা, বৈষম্য, লোভ, লালসা, মিথ্যাবাদিতা ও অহমিকার যে পাপাচার বিশ্বকে গ্রাস করছিল তার সমুদয় দূর করতে গোটা বিশ্বময় একটা প্রবল ঝাঁকুনি দিতেই এসেছে, আসুন আমরা আত্মশুদ্ধি ও অনুশোচনার শিক্ষা নিইÑ আসুন আমরা শুধু দুই হাতকে নয়, আমাদের বিবেককে বারবার ধৌত করি]


আরো সংবাদ



premium cement
খুলনার ইঁদুর মারার বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বউ-শাশুড়ির মৃত্যু কুবিতে‘বেআইনিভাবে' ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না : মির্জা ফখরুল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরাইলের নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধাপরাধের শামিল : জাতিসঙ্ঘ সঙ্গীতশিল্পী খালিদকে বাবা-মায়ের পাশে গোপালগঞ্জে দাফন রাণীনগরে টমটম গাড়ির ধাক্কায় নিহত ১ স্লিপিং ট্যাবলেট খে‌লেও সরকা‌রের ঘুম আসে না : গয়েশ্বর জনসাধারণের পারাপারে গোলাম পরওয়ারের খেয়া নৌকা উপহার ভোলায় হঠাৎ অসুস্থ ২৯ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি করোনায় ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩১ ‘অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রত্যেকের ঈমানী দায়িত্ব’

সকল