২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক নজরে সউদী আরব

-

ষ প্রথম সউদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৪৪ সালে, মোহাম্মদ বিন সউদের নেতৃত্বে।
ষ দ্বিতীয় সউদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২৪ সালে, তুর্কি বিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে।
ষ তৃতীয় সউদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৬ সালে আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহমানের নেতৃত্বে। এর একীভূতকরণ ও স্বাধীনতা ঘোষিত হয় ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
জাতীয় নাম : আল-মামলাকাতুল আরাবিয়া আস-সাউদিয়া
সরকার পদ্ধতি : রাজতন্ত্র, নিয়োগ করা মন্ত্রিপরিষদ ও একটি মনোনীত মজলিসে শুরার মাধ্যমে পরিচালিত। সউদী নাগরিকেরা তাদের বক্তব্য সরাসরি সরকারের কাছে পেশ করার অধিকার ভোগ করে। আইনগত ফায়সালা হয় ইসলামি শরিয়াহর ভিত্তিতে, আলাদা কোনো সংবিধান নেই।
রাষ্ট্রপ্রধান : দুই পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক বাদশাহ সালবান বিন আবদুল আযীয আল সউদ, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে।
আয়তন : ২,২৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৮,২৯,৯৯৫ বর্গমাইল)।
ভাষা :সউদী আরবের সরকারি ভাষা আরবি (ইংরেজিও ব্যবহৃত হয়)।
জনসংখ্যা : ২৭,১৩৬,৯৭৭-এর মধ্যে সউদী ১৮,৭০৭,৫৭৬ সউদী; পুরুষ : ৯৫,২৭,১৭৩ ও নারী : ৯১,৮০,৪০৩, বৃদ্ধির হার : ১.৮ শতাংশ, জন্ম হার : ২৮.৫/১০০০; নবজাতক মৃত্যুর হার : ১১.৫/১০০০; গড় আয়ু : প্রায় ৭২ বছর, জনসংখ্যার ঘনত্ব, প্রতি মাইলে : ৩৩।
ধর্ম : ইসলাম
পতাকা : সবুজ রঙের। এর দৈর্ঘ এর আকারের দুই তৃতীয়াংশ। এতে একত্ববাদের মূলনীতি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইলাহ নেই এবং মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল) মুদ্রিত রয়েছে। এই লেখার নিচে বিচারকে প্রতীকী করে খোলা তরবারি ছাপা রয়েছে। বিশ্বে কেবল এই দেশটির পতাকাই কখনো অর্ধ-নমিত করা হয় না এতে ’তৌহিদ’ মুদ্রিত থাকায়।
প্রতীকচিহ্ন : শীর্ষে থাকা খেজুর গাছ-সংবলিত দুটি আড়াআড়ি তরবারি হলো দেশটির প্রতীকচিহ্ন। খেজুর গাছ সমৃদ্ধি আর প্রবৃদ্ধিকে প্রতীকীকরণ করেছে, আর তরবারি দুটি ন্যায়বিচার, শক্তি আর সুরক্ষার প্রতীক।
জলবায়ু : তাপমাত্রা থাকা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টি : বিরল ও অনিয়মিত। গ্রীস্মকাল দীর্ঘ, উত্তপ্ত ও শুষ্ক। রাতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পায়। শীতের রাতে হালকা তুষারপাত দেখা যায়।
জাতিগত অবস্থান : আরব-৯০ তাংশ, আফ্রো-এশিয়ান-১০ শতাংশ।
সাক্ষরতার হার : ৯৫ শতাংশ (২০১২)
অবস্থান : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার সন্ধিক্ষণে; পশ্চিমে লোহিত সাগর থেকে শুরু হয়ে পূর্বে আরব উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত; উত্তরে সীমান্ত জর্দান, ইরাক ও কুয়েত; দক্ষিণে ইয়েমেন ও ওমান; পূর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও বাহরাইন।
মুদ্রা : সউদী রিয়াল। বিনিময় হার ১ মার্কিন ডলার + ৩.৭৫ সউদী রিয়াল।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) : ১১৫ বিলিয়ন ডলার
জাতীয় বিমান সংস্থা : সাউদিয়া। বাংলাদেশ থেকে সউদী আরবের মধ্যকার বর্তমান ফ্লাইট শিডিউল হলো : ঢাকা-জেদ্দা, ঢাকা-রিয়াদ, ঢাকা-দাম্মাম।
প্রশাসনিক বিভাগ
দেশটি ১৩টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে Ñ
রিয়াদ, ২. পবিত্র মক্কা, ৩. পবিত্র মদিনা ৪. কাসিম, ৫. পূর্বাঞ্চল, ৬. আসির, ৭. তাবুক, ৮. হাইল, ৯. উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত, ১০. জাজান, ১১. নাজরান, ১২. আল-বাহা, ১৩. আল-জাউফ।
সময় : গ্রিনিচ মিন টাইমের চেয়ে তিন ঘণ্টা বেশি (জিএমপি+৩)=ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড সময়ের চেয়ে আট ঘণ্টা বেশি (ডেলাইন সেভিংস টাইমের সময় সাত ঘণ্টা)।
ছুটি : ঈদুল ফিতরের সময় সব অফিস ও স্কুল বন্ধ থাকে।
অফিস : সরকারি অফিস : রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা আড়াইটা, বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান : সকাল ৮টা থেকে দুপুর এবং ৩টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত। সাধারণ ব্যাংকিং : সকাল ৮টা থেকে দুপুর ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। মার্কেট ও দোকানপাট : সকাল ৮ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
স্বাস্থ্য : স্বাস্থ্য খাতে বিশ্বে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি ব্যয়। প্রবাসীসহ সব নাগরিকের জন্য বিনা পয়সায় চিকিৎসা সুবিধা। হাসপাতালের সংখ্যা ২১৩, বেড ৪৫,৫০০ চিকিৎসক ৩০,৭০০ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩১৩০ (২০০৪)।
শিক্ষা : সউদী শিশুরা স্কুলে যায় ছয় বছর বয়স থেকে, হাই স্কুলে ১২ বছর পড়াশোনা করে গ্রাজুডেট হয়। হাই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ছাত্ররা কারিগরি ও সেইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব নাগরিকের জন্য শিক্ষা অবৈতনিক।
শিল্প : অন্তত ১.১ ট্রিলিয়ন সউদী রিয়াল (২০১৫) ব্যয়ে সাত হাজারের বেশি শিল্প ইউনিট রয়েছে, শ্রমিক সংখ্যা ৯৯০,০০০।
কৃষি : চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৪.৫ মিলিয়ন হেক্টর। চাষের আওতায় থাকা জমি ২.৯ মিলিয়ন হেক্টর। পশুচারণ ভূমি : ৪৮ মিলিয়ন হেক্টর। প্রধান শস্য : খেজুর উৎপাদিত হয় স্থানীয় চাহিদার চেয়েও বেশি। উল্লেখ্য, সউদীরা বিপুল খেজুর খায়। মাথাপিছু খাওয়ার পরিমাণ বছরে ২৯ কেজি। সউদী আরবে খেজুর কারখানার সংখ্যা ৪০। অন্যান্য শস্যের মধ্যে রয়েছে গম, যব, বিভিন্ন ধরনের ফল, আলু ও সব্জি। সউদী আরবে প্রতিবছর ৪০ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়। দেশটিতে বিভিন্ন ধরনের সব্জি ও ফলমূল চাষ হয়ে থাকে।
বিদ্যুৎ : ষষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনায় (১৯৯৬-২০০০) ৯০ শতাংশের বেশি এলাকা বিদ্যুৎ কর্মসূচির আওতায় এসেছে।
পর্যটন : সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন রিসোর্টগুলো হচ্ছে : তায়েফ, আল-শিফা, আল-হাদা, আল-বাহা, আভা, খামিস মাশাইত, আল-নামাস, আল-আহসা। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলে আছে সুন্দর অর্ধ চন্দ্রাকৃতির বিচ, জেদ্দার সুন্দর ‘কোরাল রিফ’ এবং দীর্ঘ কয়েকটি বিচ।
খনি : মোট অপরিশোধিত তেল মজুত- ২৬০ বিলিয়ন ব্যারেল (বিশ্বের মোট মজুতের ২৫ ভাগ); মোট গ্যাস মজুত- ১৮০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট। সউদী আরব জাতীয় গ্যাসের চতুর্থ বৃহত্তম মজুতের অধিকারী। অন্যান্য খনিজ : লিড, নিকেল, জিঙ্ক, স্বর্ণ, টিন, টানস্টেন, লোহা, কপার, ইউরেনিয়াম, ফসফেট, বক্সাইট, পটাসিয়াম, গ্রানাইট, মার্বেল।
পরিবহন ও যোগাযোগ : ক. বিমানবন্দর : ২৭টি বিমানবন্দর। এর মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলোÑ ১. জেদ্দা, ২. রিয়াদ, ৩. দাম্মাম, ৪ মদিনা। বাকিগুলো অভ্যন্তরীণ। খ. রেলওয়ে : সউদী রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মোট দৈর্ঘ প্রায় ১,৩৯২ কিলোমিটার (২০০২) গ. মহাসড়ক : মহাসড়ক : মোট ২২১,৩৭২ কিলোমিটার; বাঁধানো : ৪৭,৫৯২ কিলোমিটার, অবাঁধানো : ১৭৩,৮৪৩ কিলোমিটার (২০০৬)। ঘ. বন্দর ও পোতাশ্রয় : ১. আদ দাম্মাম, ২. আল জুবায়েল, ৩. দুবা, ৪. জেদ্দা, ৫. জিজান, ৬. রাবিঘ, ৭. রাস আল খাফজি, ৮. মিসহাব, ৯. রাস তান্নরা, ১০. ইয়ানবু আল বহর, ১১. ইয়ানবু কমার্সিয়াল সিটি।
গণমাধ্যম ও যোগাযোগ
ক. দৈনিক পত্রিকা ও সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন: সউদী আরবের সবচেয়ে প্রচারবহুল পত্রিকা ১১টি। এগুলো হচ্ছেÑ ১. আল-রিয়াদ, ২ আল-জাজিরা, ৩. ওকাজ, ৪. আল-ওয়াতান, ৫. আর-ইকতিসাদিয়া, ৬. আল-মাদিনা, ৭. আল-ইয়োম, ৮. আল-রিয়াদিয়া, ৯. আল-রিয়াদা, ১০. আসরাক, ১১. আল-আওসাত, ১১. আল-হায়াত।
খ. রেডিও সম্প্রচার স্টেশন : এএম. ৪৩, এফএম ৩১, শর্টওয়েভ ২টি (১৯৯৮)
গ. টেলিভিশন সম্প্রচার স্টেশন : ১১৭ (১৯৯৭)
ঘ. ডাকঘর : ৬৮৩
ঙ. টেলেক্স লাইন : ৩০০০০ (২০০৮)
চ. ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার : ২২ (২০০২)।
ড্যাম : ৮৫০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ২৩০টি ড্যাম। দেশের বৃহত্তম দুটি ড্যাম হচ্ছে বিশা ও নাজরান।
লবণমুক্তকরণ প্লান্ট : ২৭টি প্লান্ট, উৎপাদনক্ষমতা : দৈনিক ৫৭৩ কিউবিক মিটার।
ঐতিহাসিক স্থান : ঐতিহাসিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলোর অবস্থান প্রধানত নিচের স্থানগুলোতে সীমিতÑ ১. মক্কা আল-মোকারামাহ, ২. আল-মদিনা আল-মুনাওয়ারাহ, ৩. আর উলা, ৪. মাদাইন সালেহ ও ৫. নাজরান।
দুই পবিত্র মসজিদের সম্প্রসারণ
মক্কা ও মদিনার দুটি পবিত্র মসজিদের সম্প্রসারণের কাজ ব্যাপকভাবে শুরু করেন যথাক্রমে ১৯৮৯ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আযীয আল সউদ ও ২০০৮ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আযীয আল সউদ। সম্প্রতি দুই মসজিদ সম্প্রসারণের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করেছেন দুই পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আযীয আল সউদ, ২০১৫ সালে। এই কাজের মধ্যে রয়ছে মসজিদ দুটি দুই তৃতীয়াংশ তথা ১.৫ কিলোমিটার এলাকা বাড়ানো। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এইচআরএইচ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আযীয, ক্রাউন প্রিন্স, প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাকে পবিত্র কাবা সফরের সময় তাকে মক্কার মসজিদের সম্প্রসারণ সম্পর্কে অবগত করেন। একইভাবে সউদী আরবের বাদশাহরা মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর বিপুল গুরুত্বারোপ করে থাকেন। আর হজের সময় দুই পবিত্র মসজিদ ও হজের পবিত্র স্থানগুলোর জন্য আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া করি এই পবিত্র ভূমিকে সব ধরনের ক্ষতি থেকে তিনি রক্ষা করুন এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রদান করুন।


আরো সংবাদ



premium cement