২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাখির মতো উড়ব

-

বেলা ১১টা। রবিন ঘুম থেকে ওঠেনি। আম্মুর বিরক্তি চরমে উঠল। ডাকতে শুরু করল। রবিন এখনো ঘুমাচ্ছ। রবিন এ পাশ-ও পাশ করতে করতে বলল, আম্মু খুব মাথাব্যথা করছে। আম্মু ধমকে উঠে বললেন, লেখা নেই পড়া নেই কিসের এত মাথাব্যথা? সারাক্ষণ মোবাইল চালাও। কি আছে এই মোবাইলে? আম্মু রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। রবিনের মনটা কেমন হয়ে গেল। হঠাৎ টুং করে শব্দ হলো। রবিন ম্যাসেঞ্জারে ঢুকল। সুমন লিখেছে মন খারাপ। রবিন প্রশ্ন করল, কেন? সুমন লিখল, আম্মু বকেছেন। রবিন লিখল, আমাকেও। সুমন মন খারাপের ইমোজি পাঠাল। রবিনও পাঠাল। এভাবেই ছোট্ট একটি ডিভাইস হয়ে উঠল রবিনের সুখ-দুঃখের সাথী।
রবিনের আব্বু অনেক দিন থেকেই ভাবছিলেন প্রশ্ন করবেন। আজ করেই ফেললেন। রবিন তুমি কি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছ? রবিন নিঃসঙ্কোচে বলল, হ্যাঁ। আব্বু রেগে গিয়ে বললেন, তুমি জানো না ১৮ বছর বয়সের আগে ফেসবুক খোলা অনৈতিক। রবিন মুখ গোমড়া করে বলল, তাহলে আমি কী করব? সময় কাটতে চায় না। আব্বু আরো রেগে গিয়ে বললেন, আমাদের সময় ফেসবুক ছিল না, ইন্টারনেট ছিল না। তখন কি আমাদের সময় কাটেনি? রবিন কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল আব্বু তোমাদের সময়টা কিভাবে কাটিয়েছ? আব্বু বলতে লাগলেন, ভোরে মক্তবে যেতাম। সেখান থেকে ফিরে স্কুলে ছুটতাম। স্কুল বন্ধ থাকলে বাবাকে কাজে সাহায্য করতাম। বিকেল বেলা খেলাধুলা করতাম। রবিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আব্বু রবিনের দিকে তাকালেন। ছেলেটাকে বকা দেয়া ঠিক হয়নি। এই পাথরের শহরে নেই খেলার মাঠ। মানুষ যন্ত্রের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। ছুটে বেড়াচ্ছে জীবন। কিছুই ভালো লাগছে না রবিনের। স্মৃতিগুলো চোখের পাতায় ভেসে উঠছে বারবার।
রবিন, জিসান, সুমন ওরা তিন বন্ধু। কখনো প্রচণ্ড ঝগড়া করে, কখনো টিফিনের ফাঁকে গল্প করে। আবার কখনো একে অপরের জিনিস না বলেই নিয়ে যায়। রবিন হোমওয়ার্ক করে নিয়ে এসেছে। অঙ্ক স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। এরই মাঝে প্রশ্ন করলেন, হোমওয়ার্ক করে এনেছ? সবাই একবাক্যে বলল, হ্যাঁ। ঠিক আছে, খাতা জমা দাও। জিসান এগিয়ে গেল। তারপর সুমন, সর্বশেষে রবিন। রবিনের খাতা দেখে স্যার ধমকে উঠলেন। এখানে তো কিছুই নেই। ফাজলামো করছ আমার সাথে? রবিন চমকে উঠল। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কোনোভাবে উত্তর দিলোÑ আমি তো হোমওয়ার্ক করে এনেছিলাম স্যার। স্যার হাসতে হাসতে বললেন, তাহলে অঙ্কগুলো কী হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? রবিনের প্রচণ্ড কান্না পেলো। ক্লাস এইটে পড়ুয়া ছেলেকে কান্নাকাটি মানায় না। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো।
ছুটির ঘণ্টা বাজল। রবিন কারো কাছ থেকে বিদায় না নিয়ে চলে যাচ্ছিল। পেছন থেকে সুমন ডাকল। রবিন একটু দাঁড়াবি? রবিন হনহন করে চলল। রবিন একটু দাঁড়াবি? রবিন ঘুরে তাকাল। কী হয়েছে? কিছু বলবি? সুমন হঠাৎ ছুটে এসে রবিনকে জড়িয়ে ধরল। শিশুর মতো কাঁদতে কাঁদতে বলল, কাজটা আমিই করেছি। তুই আমাকে আচ্ছামতো চড় লাগা। এমন হাজারো স্মৃতি উড়তে লাগল রবিনের মনের আকাশে।
সবাইকে চমকে দিয়ে হেডস্যার ঘোষণা করলেন, বনভোজনে যাওয়া হবে। কোথায় যাওয়া হবে, কখন যাওয়া হবে সবই ঠিকঠাক। আনন্দের দিনটি চলে আসার আগেই দেশে করোনাভাইরাস প্রবেশ করল। ভাইরাস যেন ছড়িয়ে না পড়ে তাই লকডাউন দেয়া হলো। মানে কর্মস্থল বন্ধ। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিও বন্ধ। রবিন, জিসান, সুমন হাসিমুখে বিদায় নিলো। বহুদিন পর সময়টা নিজের মতো কাটানো যাবে। ধীরে ধীরে ঘরবন্দী সময়গুলো অসহ্য হয়ে উঠল। ছোট্ট একটি মোবাইলে ওরা খুঁজে নিলো আনন্দের উৎস। একদিন সেটিও বিরক্তিতে পৌঁছল।
মোবাইল বাজছে। রবিন রিসিভ করল। ওপ্রান্ত থেকে জিসানের কান্নাভেজা কণ্ঠ। রবিন হকচকিয়ে গেল। জিসান কাঁদতে কাঁদতে বলল, কবে লেখাপড়া করব? কবে স্কুলে যাবো? রবিনও কেঁদে ফেলল। ফোনের এপাশে আর ওপাশে দুই বন্ধু কাঁদল। কিন্তু কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারল না।
একটা ফেসবুক পোস্টে চোখ আটকে গেল রবিনের আব্বুর। রবিন লিখেছেÑ স্কুল খুলে দাও। তোমরা কেউই আমাদের বুঝতে পারো না। শুধু রাগারাগি করো। স্কুল খুলে দাও। আমরা হাসতে চাই। যদিও কেউ হাসতে নিষেধ করেনি তবুও আমরা হাসতে পারি না। স্কুল খুলে দাও। আমরা মিস করি স্কুল, ক্লাস, বন্ধুদের আড্ডা, টিচারের বকুনি। স্কুল খুলে দাও। আমরা লেখাপড়া করব। আমরা উড়ব পাখির মতো। রবিনের এই পোস্ট সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলো। রবিনের আব্বু-আম্মু, জিসানের আব্বু-আম্মু, সুমনের আব্বু-আম্মু ওদের ভালো ভালো বই কিনে দিলেন। সময়টা আনন্দদায়ক করার জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করলেন আর বললেন, আঁধারের পর আলো আসবেই। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ

সকল