নিমেষে নগণ্য আমি
- কে জি মোস্তফা
- ২০ জুলাই ২০২১, ০০:২৪
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী গীতা দত্তের জনপ্রিয়একটি গানের চরণ-‘একা থাকা কারে কয় বুঝিনিতো আগে’। গানটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যেন একটি মেসেজ, বাণী। বিশেষভাবে সেটা অনুভব করলাম গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। আমি তখন ঘরে একা। শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ এক সুজনের মোবাইল, কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। জানতে চাইলেন, আমি কোথায় কেমন আছি। কিছুক্ষণ আগে নাকি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে গেছে। আমি তো মোটেই অনুভব করতে পারিনি। হয়তোবা তিনতলা ভবনের নিচতলায় থাকার কারণে অথবা শুয়ে শুয়ে বই পড়ায় নিমগ্ন ছিলাম বলে বুঝতে পারিনি।
দীর্ঘকাল রাজধানী ঢাকায় আছি। বহু বছর থাকতে থাকতে এ শহর আর ভালো লাগে না। এত মানুষ, গাড়ি, লম্বা স্কেলের মতো যানযট, আকাশচুম্বী বাড়িঘর, ছাইরঙের আকাশ, চিৎকার, হুল্লোড়, যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। এখানে জীবন এখন জলছাড়া নদী, প্রাণছাড়া শরীরের মতো। বেঁচে থাকা মানে তো কিছু সুযোগ-সুবিধাকে সঙ্গে করে বেঁচে থাকা।
যাই হোক। সুজন, তুমি আমাকে প্রাণবন্ত সজীব দেখতে চাও। অধুনা আকাশে যতসব অশুভ চিহ্ন, দৈব দুর্বিপাক। বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস। ভূমিকম্পে হৃদকম্প না-হওয়া অস্বাভাবিক বই কি। স্নায়ুগুলো টান টান হয়ে কেঁপে ওঠে, আত্মাও আক্রান্ত অসুস্থ আতঙ্কে। প্রতিটি সেকেন্ড চেপে থাকে পাহাড়ের মতো। টের পাই পৃথিবী কাঁপছে, যেন এইমাত্র তার তাজা দেহ থেকে হৃদপিণ্ড খুলে নেয়া হলো। আর বারুদের মতো ছিটকে পড়ছে মানুষ। মানুষ কত যে অসহায়! নিমেষে নগণ্য আমি তুমি সে।
মাংসকাটা বঁটির মতো সময় গলে যাচ্ছে। চূর্ণাকারে ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রবীণ পৃথিবী। কোন রকমের বিপর্যয় হয়তো চূড়ান্ত অর্থহীন, তবুও আমরা যেন মৃত কিংবা মরতে উদ্যত।
যাই হোক, একা থাকা কারে কয়। মনে পড়ে গেল সাম্প্রতিক একটি ছোট গল্পের কথা। অবসরপ্রাপ্ত বিপতœীক প্রৌঢ় এক কর্মকর্তা নিজস্ব ভবনে একা একা থাকেন। তাঁর দুই ছেলে এক মেয়ে। যথাযথ উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ওরা প্রবাসী। এক ছেলে সপরিবারে নিউ ইয়র্কে, অন্যজন কানাডায়। স্বামী-সন্তানসহ মেয়েটি থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। ফোনে ওদের সাথে নিত্য আলাপচারিতা হয়। বিত্ত-বৈভব আর সাফল্যে এক গর্বিত পিতা তিনি। হাসিখুশিতে সদা উজ্জ্বল। কিছুটা এক্সট্রোভার্ট ধরনের, হইচই করা মানুষ।
মাঝে মাঝে গ্রাম থেকে আত্মীয়স্বজনদের কেউ না কেউ বেড়াতে আসে। একবার সমবয়সী এক দূর সম্পর্কের ভাই বেড়াতে এলেন। কথায় কথায় বললেন, শহরে দিনের পর দিন একলা থাকেন, কাছাকাছি আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। শোনা যায়, একলা ফ্ল্যাট বাড়িতে নৃশংসভাবে কেউ কেউ খুন হয়ে যায়। সবকিছু লুটপাট করে খুনিরা পালায়। তা ছাড়া হঠাৎ যদি শারীরিকভাবে আপনার কিছু একটা হয়ে যায়, সে মুহূর্তে কে দেখাশোনা করবে! কাছে তো আপন কেউ নেই। সম্বল শুধু আত্মঅহমিকা আর আত্মাভিমান।এ সব কথা শুনে ভদ্রলোক বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো ভেতরে ভেতরে নড়েচড়ে উঠলেন! জীবনের এতটা দিন কেটে গেলো একা একা! সংসারে আছেন অথচ যেন এক অনাথ আশ্রম। স্নেহভাজনদের, স্বজনদের অনুপস্থিতিতে বাস্তবে এক দুঃসহ সময় কাটানো।
জীবনের চাওয়া-পাওয়ার সুখস্মৃতি, খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্কের চড়াই-উতরাই বেয়ে চলতে থাকা জীবনব্যাপী যে পরিক্রমা-গল্পটি যেন তারই এক বাস্তব প্রতিচ্ছায়া।
জীবনের শেষ প্রান্তে তবে কি নিঃসঙ্গতা হয়ে ওঠে একটা বড় চ্যালেঞ্জ! নিঃখবর শূন্যতায়, নিরাত্মীয় দূরত্বে সময় কিভাবে এক মানুষকে অন্য মানুষ করে দেয়। মৃত্যুর স্তূপে কেবল প্রাণের খোঁজ।
আসলে জীবনটা যেন একখানা হাওয়ার সাঁকো। শৈশব থেকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাওয়া এক গূঢ় অনিশ্চয়তাবোধ পিছু ছাড়ে না। বেঁচে থাকার রসায়ন বড় জটিল, বড় রহস্যময়। তবে কি মানুষ কেবল স্বপ্নের সওদাগর, বাস্তবে ফকির! হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা