২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বপ্ন যখন বাস্তবের

-

১৯৮৪ সাল; আমি ও আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী রফিকুন নবী (রনবী), অষ্টম ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক ছাপচিত্র প্রদর্শনীতে যোগদান শেষে দেশে ফিরছি। আমরা বিমানে বসা। নানা কথার ফাঁকে একসময় রফিকুন নবী স্যার বললেনÑ আমেরিকা সরকার ফুলব্রাইট স্কলারশিপ ঘোষণা করেছে তুমি কি জান? সে তো বেশ কিছু দিন আগের কথা। অনেকেই স্কলারশিপের জন্য আবেদনও করেছে। আমি বললাম না, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এমন কি কেউ আমাকে জানায়ওনি। এ কথা শোনার পর দেশে ফিরে খোঁজখবর নিয়ে আমি দরখাস্ত করলাম। ঝিগাতলার অফিসে আমি যখন দরখাস্ত জমা দিতে গেলাম তখন সংশ্লিষ্ট অফিসার আমার দরখাস্ত খুলে দেখলেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফোন করে বললেনÑ স্যার ফুলব্রাইট স্কলারশিপের জন্য একজন যোগ্য প্রার্থীর দরখাস্ত পেয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রার্থীর বয়স ৩৫ বছর ৩ মাস। দরখাস্তটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব? ফোনে অপর প্রান্ত থেকে পাঠাতে বলায় আমি খুশি মনে বাসায় ফিরে গেলাম। উল্লেখ্য, সে সময় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসন চলছে দেশে। আর তিনি সামরিক আইন জারি করে বলেছেনÑ যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি তারা বিদেশে পড়তে যেতে পারবে না।
সামরিক আইন বলে কথা। আইন ভঙ্গ করার কারো ক্ষমতা নেই। সুতরাং আমার বয়স ৩৫ বছর ৩ মাস হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমার দরখাস্ত পাঠাল না। সবার দরখাস্ত ঢাকার আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে পৌঁছে গেল। কিন্তু আমার দরখাস্ত ৩ মাস বয়স বেশি হওয়ায় বাতিল হয়ে গেল। আমার এ দুঃসংবাদের কথা একদিন শিল্পকলা একাডেমিতে বলেছিলাম। এরপর কয়েক দিনের ব্যবধানে বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে শৌখিন শিল্পী মেজর হারুন একদিন আমার আজিমপুরের ভাড়া বাসায় হাজির। সে দিন ছিল শুক্রবার। আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। রাস্তায় নেমেই গেটের সামনে তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। তিনি বললেনÑ জেনারেল আতিকের কাছে অত তারিখে (তারিখটি এখন স্মরণে নেই) সকাল ১০টায় আপনি যাবেন। সব ব্যবস্থা করা আছে। আপনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপের দরখাস্ত নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে, সব খুলে বলবেন। যেহেতু আমি নামাজ পড়তে বের হয়েছি, সে জন্য তিন এ কথা বলেই চলে গেলেন।
আমি নির্ধারিত দিনে যথাসময়ে জেনারেল আতিকের অফিসে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অফিস) গিয়ে দেখি এরশাদ সরকারের একজন মন্ত্র¿ী বেশ (ডাকনাম ভোলা) জেনারেল আতিকের সামনে বসে কথা বলছেন। আমি ঢুকতেই কথা বলা বন্ধ করে জেনারেল আতিক আমাকে বসতে বললেন। আমি বসে সব খুলে বললাম এবং বললামÑ সামরিক আইন অনুযায়ী আমার বয়স ৩ মাস বেশি হওয়ায় দরখাস্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আটকে রেখেছেন। আমার কথা শেষ হতেই জেনারেল আতিক সচিবকে ফোন করলেন। বললেন শিল্পী সাত্তার আমার সামনে বসে আছেন। আপনি তার দরখাস্ত আটকে রেখেছেন। আরো বললেনÑ ‘সব আইন সবার জন্য নয়’। আপনি দ্রুত উনার দরখাস্ত আমার কাছে পাঠান। উল্লেখ্য, আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের একমাত্র স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিল্পী হিসেবে ব্যাপক প্রচারণা হয়। তা ছাড়া ১৯৭৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি, ১৯৭৬ সালে শিল্পকলা একাডেমিতে ছাপচিত্রে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, ১৯৮০ সালে শিল্পকলা একাডেমির রেইনি সিজন নামক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক, ১৯৮১ সালে যুগোস্লাভিয়ায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে পুরস্কার এবং শিল্পকলা একাডেমিতে আবার ছাপচিত্রে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে আবার যুগোস্লাভিয়ায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে পুরস্কার পাওয়ায় দেশে ব্যাপক প্রচার ও আলোচনা হওয়ায় এ বিষয়ে জেনারেল আতিক অবগত ছিলেন। এ কারণেই তিনি আমার জন্য সামরিক আইন শিথিল করে আমার দরখাস্ত পাঠানোর লক্ষ্যে সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল এরশাদের কাছে পাঠালে তিনি সানন্দে তাতে স্বাক্ষর করে অনুমোদন দিয়েছিলেন। সে দিন থেকে আমি হয়ে গেলাম প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট। ফলে আমাকে আর কোনোরূপ বাধার সম্মুখীন হতে হলো না। আমি দ্রুত সব অফিসের অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করে নিজ হাতে দরখাস্ত আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে পৌঁছে দিলাম। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, ফুলব্রাইট স্কলারশিপ (গ্রান্ট) সম্ভবত একমাত্র স্কলারশিপ, যে স্কলারশিপের জন্য বাংলাদেশ সরকার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারে না। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দরখাস্তগুলো আমেরিকান কালচারাল সেন্টারের মাধ্যমে আমেরিকা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো। কারণ আমেরিকা সরকারই দরখাস্ত দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্কলারশিপের জন্য কে মনোনীত হবে আর কে হবে না।
দরখাস্ত জমা দেয়ার পর কয়েক মাস কেটে গেল। বিষয়টি আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন আমাদের অফিস থেকে একজন পিয়ন আমাকে একটি চিঠি দিয়ে বললÑ ডাক পিয়ন কিছুক্ষণ আগে চিঠিটি দিয়ে গেছে। খামটি হাতে নিয়ে দেখলাম আমেরিকার চিঠি। খাম খুলে চিঠিটি বের করে পড়লাম। ২৫ অক্টোবর ১৯৮৪ তারিখের লেখা পত্রে বলা হয়েছে, প্রিন্সিপাল ক্যান্ডিডেট হিসেবে চূড়ান্তভাবে আমাকে ফুলব্রাইট গ্রান্টের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এটাও উল্লেখ করা হয়েছে, ফুলব্রাইট গ্রান্টের মেয়াদ ১২ মাস, অর্থাৎ এক বছর। অর্থাৎ সার্টিফিকেট কোর্স। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব একপত্রে জানান আমাকে ২২ জুলাই ১৯৮৫ তারিখে আমেরিকা গমন করতে হবে। আমেরিকায় গমনের জন্য ঢাকার আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে কিছু ফরম ফিলাপ করতে হলো। ফরম ফিলাপের সময় আমি বললাম আমাকে মাস্টার ডিগ্রিতে ভর্তির ব্যবস্থা করুন। এক বছর শেষে কোনোভাবে যদি নিজ উদ্যোগে মাস্টার ডিগ্রি শেষ করতে পারি তা হলে আমি একটি ডিগ্রির অধিকারী হতে পারব। আর যদি না পারি তা হলে এক বছর পড়েছি এরূপ একটি সার্টিফিকেট নিয়ে দেশে চলে আসব। আমার প্রস্তাবে কর্তৃপক্ষ সম্মত হয়ে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলেনের প্রাট ইনস্টিটিউটে ছাপচিত্র বিভাগে ভর্তির ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন।
সব নিয়মকানুন সম্পন্ন শেষে আমি ২২ জুলাই আমেরিকার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করি। ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে এক মাসের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম ছিল। ঢাকার আমেরিকান কালচারাল সেন্টার থেকে বলা হয়েছিল, আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে লোক থাকবে। সুতরাং আমি বিমান থেকে নেমে কাউন্টারে গিয়ে আমার নাম ঘোষণা করতে বলায় কয়েকবার তারা আমাকে নেয়ার জন্য কেউ আছে কি না সে বিষয়ে মাইকে ঘোষণা করলেন। কিন্তু সে দিন কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। অগত্যা অনুসন্ধান কাউন্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি একজন সুন্দরী নিগ্রো যুবতীকে দেখে বললেনÑ মি. সাত্তার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে যাবেন। তুমি তাকে একটু সাহায্য কর। এরপর আমি মেয়েটিকে অনুসরণ করে বাইরে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই একটি বাস এসে থামলে আমরা দু’জনই বাসে উঠে পড়লাম। বাস কিছু দূর যাওয়ার পর মেয়েটি বলল, এবার নামতে হবে। আমরা বাস থেকে নামলাম। মেয়েটি একটি ট্যাক্সি ডেকে ড্রাইভারকে বলল, মিস্টার সাত্তার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি যাবেন। উনাকে পৌঁছে দিন। কোনো অসুবিধা যেন না হয়। আমাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে মেয়েটি বলল, আমার বাসা এখানেই। আমি এখন বাসায় যাবো। থ্যাংক ইউ। এনজয় আমেরিকা। গুডলাক। এতগুলো কথা বলে মেয়েটি বিদায় নিলো। আমার ট্যাক্সি চলতে থাকল রাস্তার দুই পাশে বিশাল বিশাল ইমারত। অপূর্ব সুন্দর রাস্তা। সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে একসময় একটি ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেলাম। ড্রাইভার বলল, আমরা এসে গেছি। আমি ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে সুটকেস নিয়ে নেমে পড়লাম। যেখানে নেমেছি তার পাশেই ছিল অফিস। অফিসে ঢুকতেই অফিসের কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আমাকে থাকার জন্য নির্ধারিত ডরমিটরিতে পৌঁছে দিলেন। সেখানেও এক যুবতী সুন্দরী মেয়ে আমার ভারী সুটকেস নিয়ে আমার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিলেন। আমি আমার সুটকেসটি বহন করতে চাইলেও আমাকে দিলেন না। এয়ারপোর্টের সেই নিগ্রো মেয়ে এবং অফিসের এই মেয়েটির ব্যবহার ও দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম। ভাবলাম এ কারণেই আমেরিকা ধনী ও স্বপ্নের দেশে পরিণত হয়েছে।
পরদিন সকাল ১০টায় ক্লাসে গিয়ে দেখলাম পৃথিবীর নানা দেশ থেকে নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছেন অসংখ্য স্কলার। যথাসময়ে শিক্ষক এলেন। বললেন এক মাসের প্রোগ্রামে তোমাদের পড়তে হবে গান্ধী নামক গ্রন্থ। ক্লাস করতে করতেই অনেকের সাথে পরিচয় হলো। পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হলো যুগোস্লাভিয়া থেকে আসা মিসেস রাডার সাথে। অত্যন্ত সুন্দরী ও ভদ্র। ডরমিটরিতে আমি যেখানে থাকতাম সেখানে রাডা মাঝে মধ্যেই আমার খোঁজ নিতে আসত। কারণ আমরা দু’জনই কোর্স শেষে নিউ ইয়র্কের প্রাট ইনস্টিটিউটে যাবো। তার বিষয় পেইন্টিং। আর আমার বিষয় প্রিন্টমেকিং। একদিন এসে দেখলাম আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথার কারণে আমি শুয়ে আছি। আমাকে দেখেই সে বলল আমি আসছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ফেরত এলো। হাতে মাথাব্যথার ওষুধ। বলল এটি খাও। ব্যথা এখনই চলে যাবে। ওষুধ খেয়ে শুয়ে থাকলাম রাডা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। বিদেশ বিভুঁইয়ে তার স্পর্শ আমাকে আবেগে আপ্লুত করল কিছুক্ষণ আমার খেদমত করে একসময় বিদায় নিলো। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম, এ-ও কি সম্ভব! দুই দিনের পরিচয়ে এতটা ঘনিষ্ঠ হওয়া। রাডা আমার পাশেই এক রুমে থাকে। একসাথে ক্লাস করা, একসাথে ঘুরে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া। এভাবেই আমাদের সময় কাটছিল। এভাবে চলতে চলতে পরীক্ষা এসে গেল। শিক্ষক প্রত্যেককে বই থেকে ভাগ ভাগ করে দিয়ে বললেন, তোমরা তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দেয়া অংশগুলোর ওপর বক্তৃতা দেবে। আর আমাকে বলা হলো গান্ধী যেহেতু তোমাদের দেশের, সেহেতু তুমি গ্রন্থের পুরোটাই বক্তৃতা করে আমাদেরকে শোনাবে। উল্লেখ্য, সে সময় অনেকেই বাংলাদেশের নামই জানত না। আমি যখন বলতাম আমি বাংলাদেশী। তখন বলত সো-হোয়াট। তুমি তো দেখতে ইন্ডিয়ানদের মতোই। যাই হোক শিক্ষকের কথা শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। পুরো বইয়ের ঘটনা ইংরেজিতে বক্তৃতা করে শোনাতে হবে!
ইংরেজি সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণা থাকলেও ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজি বলার অভ্যাস তো নেই। কারণ আমাদেরকে ইংরেজিতে তো কথা বলতে হয় না। আমি ভয়ে ভয়ে থাকলাম। কিভাবে বলব কী কী বলব।
যথাসময়ে পরীক্ষা শুরু হলো। শিক্ষক নম্বরপত্র নিয়ে বসে বক্তৃতা শুনে কে কেমন বলছে, বাচনভঙ্গী কেমন, উচ্চারণ কেমন একসেন্ট কেমন ইত্যকার বিষয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে যার যারটা খামে ভরে দিয়ে দিচ্ছেন। বেশ কয়েক দিন ধরে চলল এই প্রক্রিয়া। এক সময় আমার পালা এলো। আমি ভারতবর্ষ, ভারত বর্ষের মানুষ, তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক ইত্যকার বিষয় উল্লেখপূর্বক দীর্ঘ সময় ধরে বক্তৃতা করলাম। আমাকেও ধরিয়ে দেয়া হলো আমার ফলাফল। আমি খাম নিয়ে ডরমিটরিতে টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলাম। ভয়ে দুই-তিন দিন খুলিনি। আমি নিশ্চিত ছিলাম ফলাফল খারাপ হবে। কারণ এ ধরনের বক্তৃতা করবার তো কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। দুই-তিন দিন পরে একটু স্বাভাবিক হলে খামটি খুললাম। খুলে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম সবগুলোতে এক্সিলেন্টের ঘরে টিক চিহ্ন দেয়া এবং নিচে একটি মন্তব্য লিখা রয়েছে। লিখেছেন একটি শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রে তুমি একটু ভিন্ন ধরনের একসেন্ট ব্যবহার করছো। তবে তোমারা তো ব্রিটিশ একসেন্টে অভ্যস্ত যে কারণে হয়তো এমনটি হয়েছে। এরপর আরো একদিন মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রত্যেককে তাদের নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বক্তৃতা করতে হয়েছে। আমার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিলÑ বাংলাদেশের ফ্লাড বা বর্ষা-বন্যার ভয়ঙ্কর রূপ।
ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের সব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পিকনিকের আয়োজন করা হয়। ক্যাম্পাস থেকে বেশ কিছুটা দূরে এই পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল। এটি ছিল জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ মিলনমেলা। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত স্কলাররা দিনব্যাপী মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া ও গল্পগুজবের মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে দিনযাপন করেন। কিন্তু আমরা যারা নিউ ইয়র্কের প্রাট ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে আনন্দে ভাটা পড়ল। ঘোষণায় বলা হলো যারা নিউ ইয়র্কে যাবেন তাদেরকে এখনই অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আনন্দঘন পরিবেশ ছেড়ে আমি এবং যুগোস্লাভিয়ার রাডা ক্যাম্পাসে ফিরে গেলাম। অফিসে গেলে বলা হলো কালকের তোমাদেরকে নিউ ইয়র্ক রওনা দিতে হবে। আমরা জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করে নিউ ইয়র্ক যাত্রার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকলাম। পরদিন সকালে আমরা দু’জন জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মনোরম ক্যাম্পাস ছেড়ে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে বেরিয়ে পলাম। কিন্তু দু’জনের পথ ভিন্ন ভিন্ন। রাডা গেল এয়ারপোর্টের দিকে। আমি গেলাম রেলস্টেশনের দিকে। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা এ রকমটাই ছিল। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement