বাঘের রাজ্য
- আবু নেসার শাহীন
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো। সাঁকোর এক পাশে বিশাল বন। অন্য পাশে লোকালয়। বনজুড়ে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বনের রাজা বাঘ ভীষণ রেগে আছে। সকাল থেকে সে কিছু খায়নি। মাংস ছাড়া তার আর কিছু খেতে ভালো লাগে না। বনের সব পশুপাখি এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। বাঘ রাগে গজ গজ করতে করতে শিয়ালকে উদ্দেশ করে বলল, ‘তোমাকে প্রতিদিন একটা করে ছাগল নিয়ে আসতে বলেছিলাম? পরপর দুই দিন ঠিকে আনলে। আজ তোমার কী হলো?’
‘কারণ ছাগলগুলো এখন আর বোকা নেই। তারা এখন সব বোঝে। প্রথম দুই দিন সাকার্স দেখানোর কথা বলে বনে এনেছিলাম। কিন্তু যাদের এনেছিলাম তারা তো আর ফেরত যায়নি। তাই তারা বুঝতে পেরেছে সব।’
‘ও। তা হলে এখন আমি কী করি? ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে পড়েছি। দুই দিন ছাগলের মাংস খেয়ে অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। এখন আর অন্য পশুর মাংস খেতে মন চাইছে না।’
একটু পরে রাত আকাশে ফুটবে তারা
ছাগল খেয়ে বাঘ রাজা খেয়েছে ধরা
দোয়েল সঙ্গে সঙ্গে একটা কবিতা লিখে ফেলল। বাঘ হুঙ্কার দিয়ে বলল, ‘এখনই এ বন ছেড়ে চলে যাও। এ বনে কোনো কবি থাকতে পারবে না।’
‘হাজার হাজার বছর যাবৎ আমরা এ বনে আছি। এ বন ছেড়ে আমরা কোত্থাও যাবো না।’ দোয়েল ভয়ে ভয়ে বলল।
‘না না এ বন ছেড়ে আমরা কোত্থাও যাবো না।’ একসাথে লাখ লাখ পশু পাখি বলে উঠল।
‘তোমার কথা মতো কাজ করলে ভালো। আর না করণে ভালো না, তাই না?’ হাতি বলল।
‘এ বনে সিংহ না থাকায় আমরা তোমাকে রাজা বানিয়ে ছিলাম। অথচ আজ তুমি...।’
ভালুক তার পুরো কথা শেষ করতে পারল না। বাঘ তার গালে একটা রাম চড় কষিয়ে দিলো।
‘এ মুহূর্তে তোমরা এ বন ছেড়ে হলে যাও। তোমাদের কাউকে আমার দরকার নেই।’ এই বলে বাঘ তার গুহায় ঢুকে পড়ে এবং ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
এ দিকে বনের সব পশু পাখি অভিমান করে পাশের বনে চলে গেল। সেখানকার পশু পাখিরা তাদের সাদরে গ্রহণ করল। থাকার জায়গা দিলো। তিন বেলা খাওয়া দিলো। তাদের দিন রাত আনন্দে কাটতে লাগল। সে বনের রাজা সিংহ খুব ভালো। প্রজাদের খুব ভালোবাসে।
কয়েক বছর পরের কথা। বনের রাজা বাঘ বিশাল বনে একা ঘুরে বেড়ায়। বেশির ভাগ সময় তার মন খারাপ থাকে। চার দিক খাঁ খাঁ। কোথাও কেউ নেই। বনজুড়ে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। একদিন ভোর বেলা ঠুকঠাক শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে গেল। সে তার গুহায় বাইরে এসে দেখে এক কাঠুরিয়া কাঠ কাটছে। সে কাঠুরিয়ার সামনে এসে হুঙ্কার দিয়ে বলল, ‘তোমার এত বড় সাহস। আমার অনুমতি ছাড়া কাঠ কাটছ?’
কাঠুরিয়া ভয়ে অস্থির। ভয়ে তার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। বাঘ বলল, ‘কী হলো মানুষ কথা বলছ না কেন?’
‘তুমি রাজা? হা হা হা। যে বনে প্রজা নেই। সে বনে রাজাও নেই। পাশের বনে গিয়ে দেখো কত সুখ। সবাই কেমন হাসিখুশি।’ কাঠুরিয়া এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল। তার হাত পা কাঁপছে।
‘তোমার কথায় যুক্তি আছে। এখন কী করি বলো তো?’ বাঘ চিন্তা করে বলল।
‘যাও ওদের ফিরিয়ে নিয়ে আসো।’ এই বলে কাঠুরিয়া চলে যায়। বাঘ ব্যস্তসমস্ত হয়ে পায়চারী করে। পরদিন ভোরবেলা পাশের বনে গিয়ে হাজির হয়। বাঘকে দেখে ছুটে আসে লাখ লাখ পশুপাখি। হাতি বলল, ‘তুমি এখানে কী করতে এসেছ?‘
‘তোমাদের ছেড়ে আমি ভালো নেই। আমি এখন আর মাংস খাই না। ফলমূল শাক সবজি লতাপাতা খাই। নিজ বনে ফিরে চলো।’ বাঘের চোখে জল এসে যায়।
‘আমরাও ভালো নেই। খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি তবু কেমন যেন একটা কষ্ট।’ ভালুক বলল।
‘ঠিক আছে সবাই ফিরে চলো।’ বাঘের কথা শুনে সবাই খুশি হয়। সবাই নিজ বনে ফিরে আসে। মুহূর্তে সবার মন ভালো হয়ে যায়। পাখিরা গান ঘায়। নদীতে কুমিররা সাঁতার কাটে, পশুরা নির্ভয়ে ছুটে চলে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। এসব দেখে বনের রাজা বাঘও খুব খুশি। সত্যি প্রজারা ফিরে আসায় বনজুড়ে একটা উৎসব উৎসব ভাব। প্রজাদের খুশিই রাজার খুশি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা