১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি পাখি একটি ফুল

-

পানকৌড়ি

পানকৌড়ি জলের পাখি। অন্য নাম জলে কাক। গায়ের রঙের জন্য এ নাম। গ্রামাঞ্চলে তাকে পানিউড়ি নামেও ডাকে। পানকৌড়ি জলের মাছেদের রাজ্যে গিয়ে ধাওয়া করে শিকার ধরে, ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে বসে থাকে না। তার শিকার ধরার মধ্যে শিল্পকলার চেয়ে দৈহিক তৎপরতাই বেশি।
বাংলাদেশে পানকৌড়ি অতি পরিচিত পাখি, বিশেষ করে বিল অঞ্চলে। লম্বা হয় ৫১ সেন্টিমিটার। সারা গা, বুক কুচকুচে কালো, তাতে সামান্য চকচকে আভা। গলায় সাদা একটি দাগ, পাখার নিচের পালক ধূসর রঙের। লেজের গড়ন নৌকার বৈঠার মতো। ঠোঁট সরু, কিছুটা গোল ধরনের, ঠোঁটের আগা বড়শির মতো বাঁকানো। পা দুটি খাটো এবং মজবুত। হাঁসের পায়ের মতো এর পায়ের পাতা জোড়া লাগানো। জলের মধ্যে চলার সময় দাঁড়ের মতো পা দিয়ে পানি ঠেলে এগিয়ে যায়। চোখ সবুজাভ বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। বয়স্কদের বাইরের দিকে নাকের ফুটা থাকে না।
পানকৌড়ির প্রধান খাদ্য ছোটো মাছ, তবে কাঁকড়া, ব্যাঙাচি, ব্যাঙ ইত্যাদিও খায়। পানিতে সাঁতার কাটার সময় কোনো বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিলে শুধু মাথা এবং গলাটুকু পানির ওপর জাগিয়ে রেখে ডুবে থাকতে পারে। পানি থেকে ওঠার সময় এদের একটু বেগ পেতে হয়। পানি থেকে উঠে ডাঙাতে কিংবা শক্ত কোনো জিনিসের ওপর বসে পাখা শুকায়। জলে ওপর কোনো ডালপালা থাকলে সেখানেও এরা সোজা হয়ে বসে পড়ে। তখন নিশ্চিন্ত মনে রোদে পাকা মেলে বহুক্ষণ ধরে আরাম করে একইভাবে বসে থাকে।
পানকৌড়ি বাসা তৈরি করে গাছের ওপর। ঝিল বা পুকুরের ধারে কিংবা জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, এমন গাছই এরা পছন্দ করে। বাসা তৈরিতে এরা পটু নয়। কাক বা বকের পুরনো বাসা পেলে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়। একই গাছে কয়েকটি পরিবার একসাথে বাস করে। এরা সামাজিক পাখি। শুধু নিজেরাই দল বেঁধে থাকে না, অন্য জাতের পাখি যেমন বক, বাচকা (নিশিবক), শামুকখোল ইত্যাদি পাখির সঙ্গে একই গাছে বাসা বেঁধে বাচ্চাদের লালনপালন করে।


হাস্নাহেনা

হাস্নাহেনা সাধারণত দেড় মিটারের মতো উঁচু হয়। গাছের কাণ্ড দুর্বল, কিছুটা লতানো প্রকৃতির। এর বৈজ্ঞানিক নাম ঈবংঃৎঁস হড়পঃঁঁস। প্রচলিত নাম হাস্নাহেনা, রাতের রানি। হিন্দি ও উর্দুতে এই ফুলের নাম ‘রাত কি রানি ’, ইংরেজি নাম ছঁববহ ড়ভ ঃযব হরমযঃ, ঘরমযঃ নষড়ড়সরহম ঔধংসরহব।
এটি একটি ক্রমবর্ধনশীল চিরহরিৎ কাষ্ঠল গুল্ম। চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা সরু, সরল, মসৃণ ও চকচকে, ৬ থেকে ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং ২ থেকে ৪.৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। ফুল সরু, নলাকার, সরল, মসৃণ এবং একটু লম্বাকৃতির, দলমণ্ডল পাঁচ লোবযুক্ত। পাপড়ি সবুজাভ-সাদা হয় এবং পুষ্পবিন্যাস নিয়ত। ছোট ছোট অসংখ্য ফুল রাতের বেলা চার দিক আমোদিত করে তোলে। রাতে ফুল থেকে কড়া, শক্তিশালী, মিষ্টি সুবাস বের হয়। ফল বেরি, দশ মিলিমিটার লম্বা হতে পারে।
প্রায় সারা বছর দফায় দফায় ফুল ফোটে। বর্ষাকালে ফুলের প্রাচুর্য দেখা যায়। প্রধান কাণ্ডের চার দিকে কয়েক বছরের মধ্যে বহু সংখ্যক শাখা বের হয়ে এই গাছ বিস্তার লাভ করে। দাবা কলম ও শাখা থেকে চারা জন্মানো যায়। গাছটি বেশ কষ্টসহিষ্ণু। তবে পানি জমে এমন জায়গায় এই উদ্ভিদটি না লাগানোই ভালো। ঘরের আশপাশে এবং বাগানের বেড়া হিসেবে এই গাছ লাগানো যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement