২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কী লিখব কিভাবে লিখব

-

[চতুর্থ কিস্তি ]

কবিতার উপাদান
কবিতার উপাদান বলতে আমরা বুঝি সেসব বিষয়, যেগুলোর সমন্বয়ে কবিতা প্রকৃত রূপ পায়। অর্থাৎ, কবিতাকে যদি একটি রান্না হিসেবে ধরি, তাহলে যেমন মাছ-মাংস বা কোনো তরকারি রাঁধতে গেলে নানা উপাদান মেশাতে হয়; যেমনÑ মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, লবণ ইত্যাদি। এবং সবই পরিমিতভাবে মেশালেই রান্নাটি আসল স্বাদের হয়।
কবিতারও তেমন মসলা আছে। ছন্দ। ছন্দ কবিতার মুখ্য উপাদান। এটা কবিতার ধরন চিনিয়ে দেয়।
এরপর মাত্রা। মাত্রা ছন্দের বাঁধন। মাত্রাই ছন্দের আত্মা। মাত্রার মূল অর্থ হচ্ছে পরিমাণ। অন্য অর্থে সীমা। কবিতার মাত্রা বলতে বোঝায়Ñ উচ্চারণ কালের পরিমাণ। অর্থাৎ স্বরের উচ্চারণ কাল পরিমিত ছন্দ। ধ্বনির লঘু-গুরু উচ্চারণের ওপর নির্ভরশীল পদ্যের ছন্দবিশেষ। এই পরিমিত বোধ অবশ্যই কবির থাকা জরুরি। এটা ঠিক না থাকলে কবিতায় গুবলেট পাকিয়ে যাবে।
এরপর অক্ষর। আমরা সাধারণত বর্ণমালার প্রতিটি বর্ণকে অক্ষর বলে থাকে। তবে কবিতার অক্ষর ভিন্ন। কবিতায় বর্ণের উচ্চারণযোগ্য শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে অক্ষর (ংুষষধনষব) বলে।
এ ছাড়া পর্ব, অতিপর্ব, অপূর্ণ পর্ব, পঙক্তি, স্তবক, যতিচিহ্ন বা বিরাম চিহ্নÑ এসবও কবিতার প্রযোজ্য বা অপরিহার্য বিষয়।
আর যেটা কবিতার ভাব বা স্বাদটা চিনিয়ে দেয়, তা হচ্ছে রস। রসের স্বাদেই যেমন আমরা কোনো ফলকে চিনতে পারি, তেমনই। যেমন- কাঁঠালের স্বাদ আমের মতো নয়, আবার লিচুর স্বাদ আপেলের মতো নয় বা খেজুরের স্বাদ কমলার মতো নয়। এক-এক ফলের এক-এক স্বাদ। প্রত্যেকের রসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কবিতারও তেমন রস থাকতে হয়। রসহীন কবিতা শুকনো খোশার মতো। পাঠেও আনন্দ নেই, শুনেও।
রসই কাব্যের মাধুর্য। কবিতা পড়া বা শোনার সময় হৃদয়ে যে অনুভূতি সঞ্চারিত হয় সেটাই রস। রস নানা রকম। যেমনÑ আনন্দরস, হাস্যরস, কৌতুকরস, শোকরস, প্রেমরস, বিরহরস, বিস্ময়রস, বীররস ইত্যদি নানা রকম রস আছে। আমরা কবিতার যাবতীয় বিষয় নিয়ে পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করব।*

বানান যেন শুদ্ধ হয়
ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ বা চিঠিপত্রÑ যাই লিখি না কেন, শুদ্ধ বানানে লেখা চাই। ভুল বানান লজ্জার ব্যাপার। যদি আমি কবিতা লিখি, এবং কবিতাটি ভালোও হয়, হাতের লেখা খুব সুন্দরও হয়, তবুও ভুল বানানের জন্য সম্পাদকের চোখে অযোগ্য প্রতিপন্ন হতে হবে। সে জন্য সঠিক বানান জানাটা লেখকের জন্য অতি জরুরি। অনেক সময় খুব সাধারণ শব্দের বানানও ভুল হতে পারে। এ জন্য সবসময় হাতের কাছে একটি উন্নতমানের অভিধান থাকা উচিত। কিছু লেখার পরে সেটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। কোনো শব্দের বানানে সন্দেহ হলে সাথে সাথে অভিধান খুলে দেখে নিতে হবে। বানান ভুলের আরো একটা কারণ আঞ্চলিকতা। অনেক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিও ইংরেজি ভাষা নির্ভুল বানানে লেখেন, অথচ শুধু আঞ্চলিক-উচ্চারণের দোষে মাতৃভাষার সাধারণ শব্দটিও শুদ্ধ করে লেখেন না। এ জন্য চর্চার বিকল্প নেই। লেখককে শুধু লেখক হলেই চলবে না। তাকে একজন ভালো পাঠক এবং শুদ্ধবাক হতে হবে। প্রমিত বানান রপ্ত করার পাশাপাশি মোটামুটি একজন বাচিক শিল্পীও তাকে হতে হবে। অধুনা যুগে একজন কবি বা লেখক সভাসমিতিতে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানেÑ মঞ্চে, বেতারে, টেলিভিশনে আলোচনা বা কবিতাপাঠে অংশ নেন। ফলে, তাকে শুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই শিখতে হবে। এ জন্য লেখকের পয়লা কাজ শুদ্ধ বানান এবং শুদ্ধ উচ্চারণ রপ্ত করা।** [চলবে]


আরো সংবাদ



premium cement