২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

যা পাখি উড়ে যা

-

বারান্দার যে কোণটাতে রঙ্গন ওর পাখিগুলো রাখে, রঙ্গন সেই কোণটার নাম দিয়েছে বার্ড কর্ণার। তামান্নার খুব ইচ্ছে ছিল বার্ড কর্নার দেখে আসবে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। তাই আজ যখন রঙ্গন ওর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তামান্নাকে বলল, তামান্না তখন সিদ্ধান্ত নিলো এবার সে রঙ্গনদের বাসায় যাবে আর বার্ড কর্ণারটা দেখে আসবে।
স্কুলে যাওয়ার সময় তামান্না বলল, মা, কাল রঙ্গনের জন্মদিন। আমি রঙ্গনকে একটা পাখি কিনে দেবো। স্কুল থেকে ফিরে তুমি আর আমি পাখি কিনতে যাবো।
দুই.
বিকেলে মায়ের সঙ্গে গিয়ে তামান্না সুন্দর একটা পাখি কিনে আনল। সাথে আনল একটা সোনালি খাঁচা।
রাতে ঘুমাবার সময় পাখিটাকে ওর ঘরে নিয়ে এসেছিল তামান্না। রাত তখন কয়টা বাজে কে জানে! ঘুমের মাঝে হঠাৎ কেমন যেন একটা শব্দ শুনে তামান্নার ঘুম ভেঙে গেল। তামান্না দেখল খাঁচার ভেতর পাখিটা ছটফট করছে।
পাখিটাকে অমন করতে দেখে তামান্না বলল, তুমি এত শব্দ করছ কেন? আমার ঘুম ভেঙে গেল।
পাখি বলল, তোমার তো মাত্র ঘুম ভাঙল! আর আমি তো একটুও ঘুমোতে পারিনি। ঘুমোতে গেলেই কান্না বেরিয়ে আসছে। নিজেকে খুব হতভাগা মনে হচ্ছে।
তামান্না বলল, কি সুন্দর সোনালি খাঁচায় রেখেছি তোমাকে। তারপরও নিজেকে হতভাগা ভাবছ?
পাখি বলল, খাঁচা তো খাঁচাই। বন্দী পাখির কাছে সোনালি খাঁচা আর বাঁশের খাঁচার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। সবুজ বনের একটা ছোট্ট বাসায় জন্ম হয়েছিল আমার। সারা দিন বনে ঝিরঝির করে বাতাস বইত। সেই বাতাসের ছোঁয়ায় আমার দু’চোখে ঘুম নেমে আসত। কাকডাকা ভোরে মায়ের মিষ্টি শিস শুনে ঘুম ভাঙত। ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়াতাম। আহ,্ কি সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো! ভেবেছিলাম এমন করেই জীবন কাটিয়ে দেবো। কিন্তু একদিন এক লোক আমাকে ধরে নিয়ে এলো। তার পর তোমরা নিয়ে এলে। এখন আমাকে নিয়ে কী করবে?
ছলছলে দু’টি চোখ তুলে পাখি তামান্নার দিকে তাকাল। তামান্না বলল, আমার ক্লাসমেট রঙ্গনের কাল জন্মদিন। তোমাকে নিয়ে ওকে উপহার দেবো।
: আহা রে, কী দুঃখের জীবন আমার! রঙ্গনের বাসায় গিয়ে আবার আমার বন্দী জীবন শুরু হবে। বন্দী জীবন যে কত কষ্টের, তুমি তা বুঝবে না। এর চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। তামান্না, হয় তুমি আমাকে মুক্তি দাওÑ নয়তো গলা টিপে মেরে...
কথাটা শেষ করতে পারল না, তার আগেই পাখির কণ্ঠ কান্নায় রুদ্ধ হয়ে এলো। সেই কান্না তামান্নার মনটাকেও খারাপ করে দিলো। তামান্না বলল, কান্না থামাও সোনা পাখি! তোমাকে কাঁদতে দেখে আমারও কান্না পাচ্ছে। ঠিক আছে, তুমি বলো তোমার জন্য আমি কী করতে পারি?
পাখি বলল, তুমি আমাকে মুক্তি দিতে পারো। কিন্তু তুমি তো তা দেবে না। তুমিও তো মানুষ।
তামান্না বলল, মানুষ বলেই আমি তোমাকে মুক্তি দেবো।
এ কথা বলে খাঁচা খুলে তামান্না পাখিটাকে বের করে আনতে গেল। আর ঠিক তখনী মায়ের কণ্ঠ ভেসে এলোÑ ওঠ্ তামান্না। সকাল হয়েছে।
মায়ের ডাক শুনে তামান্না চোখ মেলল। আর দেখল, সত্যিই তাই, ভোর হয়েছে। সারাটা ঘর আলোয় আলোয় থইথই করছে। আর খাঁচার ভেতর পাখিটা অনড় চোখে উপর দিকে তাকিয়ে আছে!
তামান্না ভাবল, পাখিটা উপর দিকে তাকিয়ে আছে কেন? সে কী আকাশ খুঁজছে? কিন্তু বন্দী পাখি তো উড়তে পারবে না। ওড়ার জন্য ওকে ডানা মেলতে হবে। আর ডানা মেলার জন্য বন্দী জীবন থেকে মুক্ত হতে হবে। সমস্যা নেই, আমিই ওকে মুক্তি দেবো।
এ কথা ভেবে তামান্না আর শুয়ে থাকল না। সাথে সাথে বিছানা থেকে নেমে সে মাকে বলল, মা! খাঁচার ভেতর পাখিটাকে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
মা বললেন, আমারও কষ্ট হচ্ছে। আমি মনে করি, পশুপাখিকে খাঁচায় আটকে রাখা অন্যায়।
তামান্না বলল, তাহলে আমি কেন অন্যায় করব মা! আমি না হয় পাখিটাকে ছেড়েই দিই।
মা বললেন, তাই কর। একটা ভালো কাজ দিয়ে দিনটা শুরু হোক আজ।
মায়ের কথা শুনে তামান্না পাখিটাকে নিয়ে ছাদে গেল। তারপরÑ যা পাখি উড়ে যা বলে পাখিটাকে উড়িয়ে দিলো। ছোট্ট পাখিটা উড়ে উড়ে দূরে গিয়ে বিশাল আকাশে মিশে গেল। আর সেই আকাশের দিকে তাকিয়ে তামান্নার মনটা আনন্দে ভরে গেল। হ


আরো সংবাদ



premium cement