২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি পাখি একটি ফুল

-

জলমুরগি

হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল জলাশয়, যেখানে রয়েছে নলখাগড়া বা অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ, পদ্মবন ইত্যাদির আধিক্য বেশি যেখানে, সেখানেই দেখা যেতে পারে কালো কালো মুরগির মতো এক ধরনের পাখিকে। একটি নয়, কখনো জোড়ায় বা কখনো-কখনো দলবল নিয়ে ওরা ঘোরাফেরা করে। অনেকেই দেখে হুট করে জলপিপি বলে ভুল করতে পারে। এটির নাম জলমুরগি। ইংরেজি নাম মুরহেন।
নিরাপদ দূরত্বে থেকে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, এই জলমুরগিগুলো সাঁতার কাটছে মাথাটাকে সামনে পেছনে করে। লেজ তুলে চলেছে বলে কারও পেছনটা দেখা যাচ্ছে। কেউ-কেউ নলের উপর পা আঁকড়ে বসে আছে। আবার দু-একটা পাখি অন্যমনস্কভাবে হেঁটে-হেঁটে খাবার খুঁজছে। আমাদের দেশে স্থায়ী বাসিন্দা জলমুরগি যেমন আছে, তেমনি শীতের অতিথি হিসেবেও প্রচুর জলমুরগি আমাদের দেশে আসে। ওরা জোড়ায়-জোড়ায় বা ছোট দলে, ঘুরে বেড়ায়। আবার শীতের অতিথিরা এলে ৫০-৬০টির দলও হয়। ওরা পানিতেই বেশির ভাগ সময় কাটায়। পদ্ম, শাপলা কিংবা অন্যান্য জলজ লতাগুল্ম ঠেলে ঠেলে ওরা শব্দহীন সাঁতার কাটে। সামান্যতম বিপদের সঙ্কেত পেলেই আত্মগোপন করে জলজ উদ্ভিদের আড়ালে। তখন এক ধরনের আওয়াজ করে ওরা। আওয়াজটা হয় অনেকটা ‘কাড়–ক-কুড়–ক’ ধরনের। আত্মগোপন করার সময় ডানার চেয়ে পায়ের কাজটা-ই বেশি হয় ওদের। আর বিপদ বড় হলে জল ছেড়ে উড়াল দেয়। অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেই যেন ওরা ওড়ে। তখন পা দুটো ল্যাগব্যাগ করে ঝুলতে থাকে। মনে হয় উড়াটা ওদর খুব পছন্দ নয়। কিন্তু যখন দেশান্তরী হয়, তখন ওরা অবলীলায় বড়-বড় পাহাড় পর্বতের ওপর দিয়ে চলে যায় দূর-দূরান্তে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে। প্রয়োজনে ওরা ডুব-সাঁতারও দিতে পারে। ওরা আনন্দ প্রকাশ করার সময় জলকেলি করে ডুব-সাঁতার দিয়ে-দিয়ে। তখন দৃশ্যটি হয় দেখার মতো।


শরতের শুভ্র কাশ

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। শরতে সাদা কাশফুল আর শিউলির বেশ আধিপত্য লক্ষ করা যায়। শরতে ঝকঝকে নীল আকাশ হয় দেখার মতো। মৃদু বাতাস দোলা দিয়ে যায় কাশের নরম পাপড়িতে। এই তো চিরচেনা শরত। চার দিকে কাশফুল আর কাশফুল। শরতের স্নিগ্ধতাকে মোহময় করে রাখে কাশফুল। নদী কিংবা জলার ধারে ফোটে কাশ বা কুশ।
শরৎকাল শুভ্রতার প্রতীক! শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ। শুভ কাজে কাশফুলের পাতা বা ফুল ব্যবহার করা হয়। কাশফুলের বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ঝধপপযধৎঁস ংঢ়ড়হঃধহবঁস. এরা ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। পাতার দুইধারে খুবই ধারালো। পালকের মতো নরম এর সাদা ফুল।
শরতের মনভোলানো প্রকৃতিতে রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলায় মনে কখনো জমে মেঘ, আবার কখনও হয়ে ওঠে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝে আমরা পারি না মনের আকাক্সক্ষায় শরতের রঙে সাজাতে। তবু যেন মনে হয় হারিয়ে যাই-শরতের কাশফুলে, এই গোধূলিবেলায়।
শরতের স্তব্ধতা যেন দূর গ্রামের দিগন্তরেখার নিচে সাঁঝবেলার মতোই শান্ত ও মধুর। এমন মধুর একটি ঋতু শুধু ভাবনায় নয়, বাস্তবেও নির্মাণ করা সম্ভব। ঋতুচক্রের এই বর্ণিল দোলায় উদ্ভাসিত হয় স্নিগ্ধ শরতের শুভ্র কাশফুল।

 


আরো সংবাদ



premium cement