২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেই বাড়িটা

-

সেই বাড়িটা আমার বাড়ি ছিল
পেছনে এক খামারবাড়ি ছিল
শ্যামল ছায়ার বাগান ছিল ডান দিকে বাঁ দিকে...
ডানের বনে শুইয়ে দিলাম দাদাকে-দাদীকে।

সেই বাড়িটা দাদার বাড়ি ছিল
কান্না হাসি ধাঁধার বাড়ি ছিল
আনন্দগান স্বপ্নসুখের নিবিড় নির্ভরতা...
সেই বাড়িতে এখন নিঝুম গভীর নির্জনতা।

সেই বাড়িটা বাবার-ফুপুর-চাচার বাড়ি ছিল...
দুঃখ-সুখে সবাই মিলে বাঁচার বাড়ি ছিল।
আকাশছোঁয়া ঝাউয়ের সারি পথের কিনার ঘেঁষে...
ঝাবুক পাতার ঝিনিকঝিনিক আসত সাঁঝে ভেসে।
ঝরাপাতার মর্মব্যথা নীল কোকিলের কুহু...
ফুলফাগুনের দুপুরবেলায় বাজত মুহুর্মুহু।

সেই বাড়িটা থাকতো মেতে কত যে উৎসবে...
খুশির আমেজ উপচে যেত মুখর কলরবে।
সদর দোরে বৈঠকখানা লোক
গমগম করা...
আচার বিচার কল্পকথার গল্প দিয়ে ভরা।
কুমার গাঙের রজত ধারা সামনে গেছে বয়ে...
সেই নদী আজ লুকিয়ে আছে স্মৃতির নহর হয়ে।

হাজার কথার অরূপগাথা এই বাড়িটা ঘিরে...
জোসনা রাতে পুবাল হাওয়া বইতো ধীরে ধীরে...
কলের গানের সুরের ধারা খেলত হাওয়ায় ভেসে...
হাটের পথিক দাঁড়িয়ে যেত ঝাউতলাতে এসে।

সেই বাড়িটা আমার বাড়ি ছিল
বটতলাতে কামার বাড়ি ছিল
পুবের পাড়ায় কুমোর বাড়ি, জোলাপাড়ার পাশে
চরকা কাটার সুর ছড়াতো উত্তুরে বাতাসে।
আসতো ভেসে হারান কলুর ঘানির খরর-খর...
দেখতে পেতাম চিলেকোঠায় বসলে সবার ঘর।

সেই বাড়িটা সেই বাড়ি নেই সেই বাড়ি আজ চুপ...
স্মৃতির আঁধার অশ্রু ঝরায় নির্জনে টুপটুপ।
গোলাপ মাঝি কাজীর ঘাটে ভিড়ায় না আর নাও...
মিঠেল সুরের উদাস বাঁশি বাজে না কোত্থাও।
সেই বাড়িতে সাঁঝের বেলা ব্যথার ঝিঁঝি ডাকে...
নিঝুম রাতে নীরব চোখে চাঁদটি চেয়ে থাকে।

সেই বাড়িটা আমার বাড়ি দাদার বাড়িটা...
সদর দোরে আর থামে না ঘোড়ার গাড়িটা...
সেই বাড়িটা এখন তো আর আলোয় সাজে না...
আলতাপরা ফুফুর পায়ের নূপুর বাজে না।
সেই বাড়িটা নয় তো এখন আমার বাড়িটা...
স্মৃতির ধুলোয় মিলিয়ে গেছে খামারবাড়িটা।


আরো সংবাদ



premium cement