২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মনের বিষ

-

মিসেস পুতুল অসাধারণ একজন গৃহিণী। উচ্চশিক্ষিতা, রুচিশীলা এবং মার্জিত চরিত্রের। বহু গুণের গুণী মহিলা তিনি। সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকেন। তার মুখে হাসি নেই, মনে শান্তি নেই। তার মনে শান্তি থাকবে কী করে? স্বামী যে তাকে সব সময় সন্দেহ করেন। তিনি হয় তো বেলকুনিতে গেছেন গাছে পানি দিতে অমনি তার স্বামী পেছন থেকে প্রশ্ন করলেন : কে এসেছে? বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে কাকে খুঁজছো?
অথবা রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছেন, এক হাতে দুই তিনটা ট্র্যাভেল ব্যাগ অন্য হাতে ছেলেটিকে ধরে। তার স্বামী টিকিট কেটে এসে জোরে চিৎকার করে বললেন : ওই ছেলেটি তোমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? তোমার সাথে কি আলাপ পরিচয় হয়েছে? ছেলেটি কি তোমায় অফার করেছে?
মিসেস পুতুল হয় তো ছেলেকে পড়াচ্ছেন, ঠিক তখনই এসে তার স্বামী বললেন : গতকাল বাসায় কে এসেছিল? অথবা স্ত্রীর গায়ের পোশাক দেখে বলবেন : এই জামাটা তোমাকে কে গিফট করল? এই জামা তো আগে দেখিনি! তোমার বয় ফ্রেন্ড দিয়েছে বুঝি?
স্বামীর এ রকম সন্দেহজনক কথায় মিসেস পুতুল থ-বনে যান। তার মুখের ভাষা হারিয়ে যায়। রাগে, দুঃখে, অপমানে তিনি চুপ করে থাকেন। লজ্জায় ঘৃণায় নিজেকে আরো বেশি গুটিয়ে ফেলেন নিজের ভেতর। শামুকের মতো জীবনযাপন শুরু করে দেন। তবুও তার স্বামীর সন্দেহ দূর হয় না। দিন দিন বাড়তে থাকে এই সন্দেহ প্রবণতা। হ্যাঁ, বলেছিলাম সন্দেহের কথা।
সন্দেহ বা ডাউট শব্দটি আকারে ছোট হলেও এই শব্দের ক্ষমতা অনেক। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অন্তর্বর্তী যে নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতি আমাদের যন্ত্রণা বা কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায় তার নাম সন্দেহ। সন্দেহ নামক ঘূণ পোকা যার মনের ঘরে আশ্রয় নেয় তাকে একেবারে মানসিক যন্ত্রণার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং নিঃশেষ করে ফেলে।
বর্তমান সময় সন্দেহ মহামারী আকার ধারণ করেছে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, বাবা মাকে, ভাই বোনকে, মা- বাবা সন্তানকে সন্দেহ করে। সন্দহ করে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবারের অশান্তি এমন পর্যায় চলে যাচ্ছে যে, পরিবারটি জাহান্নাম হয়ে গেছে। বিশেষ করে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যখন এই সন্দেহের বিষ ঢোকে তখন সেই ঘরে আর সুখ-শান্তি থাকে না।
সন্দেহ মূলত দু’টি কারণে হয়। যথাÑ ১. প্রচণ্ড ভালোবাসলে ২. অন্যের রিলেশনের ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে দেখে মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে।
১. প্রচণ্ড ভালোবাসলে: কেউ যদি কাউকে প্রচণ্ড ভালোবাসে তবে তার মনের মধ্যে সব সময় হারানোর ভয় কাজ করে। এই হারানোর ভয় থেকেই সৃষ্টি হয় সন্দের। অনেক সময় পিতা-মাতা সন্তানকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন আর এই প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকেই তারা সন্তানদের সব সময় সন্দেহ করতে থাকেন। ফলে সন্তানের সাথে পিতামাতার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। সন্তান পিতামাতাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যায়। বন্ধু বান্ধবের সাথে নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে যায়। আবার স্ত্রী অথবা স্বামীও একে অপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকেও সন্দেহ করতে শুরু করে। পারস্পারিক সন্দেহ আর ভুল বোঝাবুঝির কারণে নষ্ট হয়ে যায় তাদের পারিবারিক সম্পর্ক। অনেক সময় ভেঙে যায় তাদের পারিবারিক বন্ধন।
২.অন্যের রিলেশনের ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে দেখে মনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে: আশপাশের চেনা জানা কারো পরকীয়া বা অন্য কোনো নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখলে মনের মধ্যে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করে। সহকর্মীদের পরকীয়ায় জরাতে দেখে নিজের ঘরের স্ত্রীকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন অনেকে। অনেক পিতা মাতাও অন্যের বখে যাওয়া সন্তানকে দেখে নিজের সন্তানের প্রতি সন্দেহের তীর ছুঁড়তে শুরু করেন। সন্তানের ওপর অবিশ্বাস বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে সংসারের অশান্তি।
সন্দেহ যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে তখন সেটি রোগে পরিণত হয়। এই রোগের সুন্দর একটি নাম আছে। সেক্সপিয়ারের বিখ্যাত চরিত্র ওথেলো নিজের প্রেমিকাকে প্রচন্ডভাবে সন্দেহ করত। সেখান থেকেই এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে –ওথেলো সিনড্রোম। ওথেলো সিনড্রোম বা সন্দেহবাতিক রোগ এমন রোগ যেটা দাম্পত্য সম্পর্কে ভয়াবহ পরিণতি এনে দেয়। বিষময় হয়ে ওঠে জীবন। এ ক্ষেত্রে সন্দেহ করা অভ্যাসে রূপ নেয় এবং সন্দেহটি ঘনীভূত বিশ্বাসে পরিণত হয় যদিও এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ থাকে না। এ ক্ষেত্রে কল্পিত সন্দেহ নিছক হলেও সেটিকে বাস্তবে পরিণত করতে রোগী সব সময় সচেষ্ট থকে।
একটি জরিপে দেখা গেছে, ওথেলো রোগে পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় বেশি ভুগে থাকে। মহিলা ও পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার আনুপাতিক হার (১:৩)। গবেষণায় দেখা গেছে, ওথেলো সিনড্রোমের রোগীদের এই রোগের পাশাপাশি অন্য রোগ যেমন- প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া, নিউরোসিস, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, এলকোহলিজমসহ অন্যান্য মানসিক রোগও থাকতে পারে।
সন্দেহবাতিক রোগের কারণে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। ব্রিটেনে ব্রডমুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার রিপোর্টের ড. মোয়াট দেখিয়েছেন- এদের মধ্যে ১২% মহিলা এবং ১৫% পুরুষ ওথেলো সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে,- জেলাসি রোগী কর্তৃক শারীরিক জখমের মাত্রাও উল্লেখযোগ্য। এমনও দেখাগেছে, ক্রমাগত তীব্র সন্দেহের জ্বালা সইতে না পেরে অনেক নিরপরাধ পার্টনার আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ওথেলো সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কৌশলে মূল্যায়ন করতে হয়। রোগীর ভেতরে যদি প্রতিশোধপরায়ণ মনোবৃত্তি থাকে তাহলে বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে পার্টনারকে কৌশলে এবং ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন না সে রোগে আক্রান্ত। তাই সে ডাক্তারের শরণাপন্ন্ হতে চায় না। এক্ষেত্রে প্যাথলজিক্যাল বা ওথেলো সিনড্রোম রোগের রোগীদের চিকিৎসা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ রোগী মনেই করেন না যে, তার রোগ হয়েছে। ফলে চিকিৎসার যে কোনো উদ্যোগই তার কাছে অনধিকার চর্চা ও অন্যায় আচরণ বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে যদি স্ত্রী অর্থাৎ মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে মেয়ের পারিবারের পক্ষ থেকে মেয়েকে বুঝিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি স্বামীর প্রধান কাজ হবে স্ত্রীকে এ রোগে সম্পর্কে বোঝানো। বিফল হলে ভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। যদি রোগটি প্রকৃতই অমূলক বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে তবে এন্টিসাইকোটিক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। ওথেলো সিনড্রোম রোগীরা নিজের সন্দেহের কথাগুলো অন্যের কাছে বলে পরামর্শ চায়। কিন্তু যাকে তিনি বলেছেন তার জন্য তিনি কতটুকু ইতিবাচক হবেন তা ভাবেন না। ফলে যিনি শুনছেন তিনি তার কথা বিশ্বাস করে ভ্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর রোগীও সেই পরামর্শ গ্রহণ করে তার পার্টনারের সাথে নেতিবাচক আচরণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব, পারিবারসহ সবাইকে গঠনমূলক পরামর্শ দিতে হবে।
ওথেলো সিনড্রোম বা সন্দেহপ্রবণ রোগীর লক্ষণ
ওথেলো সিনড্রোম রোগীর ভেতরে কিছু আচরণ প্রকাশ পায়। যেমন...
১. ওথেলো সিনড্রোম বা সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি একা থাকতে পছন্দ করে। সবার ভেতরে থেকেও তারা যেন একাকিত্বে থাকে। নিজের একটা ভিন্ন জগৎ তৈরি করে রাখে। যে জগতে তিনি একাই রাজা একাই প্রজা। টিভির রুমেও তিনি যেন অন্য কিছু ভাবতে থাকেন। অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতে থাকেন।
২. সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তির মধ্যে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরি হয়। এমন কিছু অবাস্তব চিন্তা করেন বা বলেন যার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। নিজ থেকে কাল্পনিক দৃশ্য দেখতে পায় এবং কাল্পনিক কথাবার্তা শুনতে পায়। আর সঙ্গীকে দোষারোপ করতে থাকেন। দিন দিন তার এই সন্দেহপ্রবণতা বাড়তে থাকে।
৩. অনেক সময় সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি আক্রমণাতœকও হয়ে ওঠেন। তিনি যাকে নিয়ে সন্দেহ করেন তার প্রতি সব সময় একটা শক্রভাবাপন্ন মনোভাব প্রদর্শন করেন। একটি পর্যায়ে তিনি রেগে গিয়ে গায়ে হাত তুলতেও লজ্জা পান না।
৪. সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তির ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতার লক্ষণ দেখা যায়। ছটফট ছটফট করতে থাকেন। অফিসের কাজে মন বসে না, ঘরে থাকলেও কেমন যেন উদাস থাকেন। আবার কেউ কেউ এর উল্টো আচার আচরণও প্রকাশ করতে থাকেন। একদম স্থির পর্যায়ে অবস্থান করেন। সারাক্ষণ আনমনে কি যেন ভাবতে থাকেন।
৫. সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি সঙ্গীকে অবিশ্বাস করে। মূলত তারা সবাইকে অবিশ্বাস করে। আর অবিশ্বাসের মাত্রা এত বেড়ে যায় যে স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিক আচার-আচরণ বদলে যায়। কথাবার্তায় সব সময় সন্দেহ প্রকাশ করে। ফলে পরিবেশ- পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অসহনীয়।
৬. সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনায় একটা অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়। সারাক্ষণ মনগড়া অবাস্তব চিন্তা করার ফলে এরা সুষ্ঠু-সুন্দর চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
৭. অনেক সময় সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি আবার স্বাভাবিক কাজ-কর্মও সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন না। সন্দেহপ্রবণ স্বামী অফিসের কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে হুট-হাট বাড়ি ফিরে আসে। বাসায় এসে স্ত্রীকে চোখে চোখে রাখেন। এতে তার কর্মদক্ষতা কমতে থাকে, সুনাম নষ্ট হতে থাকে। ফলে তিনি আরো খিটমিট স্বভাবের হয়ে যান।
ব্যক্তি বিশেষে সন্দেহপ্রবণতার লক্ষণেও ভিন্নতা থাকে।

সন্দেহপ্রবণতার ক্ষতিকর প্রভাব
সন্দেহ মনের একটি বিষ। মানুষের মন হচ্ছে- নদীর মত। নদীর মত বহমান। নদীর মত ভঙ্গুর। মনের ভাঙ্গন হয়। মনে নদীর মত চড় পড়ে। নদীর মত ঝড় বয়। মনোবিজ্ঞানের মনের দুইটি স্তরÑ ১. চেতন মন, ২. অবচেতন মন
আমাদের চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা, আচার- আচরণ, ক্রিয়া- কলাপ, স্বপ্ন, আশা- ভালোবাসা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে অবচেতন মন।
এই মনে যখন সন্দেহের বিষ বাসা বাঁধে তখন সেই মানুষ আর সুস্থ থাকতে পারেন না। সন্দেহপ্রবণতার কারণে নানা রকম ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেয়। যেমন-
১. ক্যান্সার আর সন্দেহের মধ্যে একটি মিল রয়েছে। ক্যান্সার একটি শরীরকে দিন দিনে নষ্ট করে ফেলে আর সন্দেহ একজন মানুষের ভালোবাসা ও মনকে গভীরভাবে নষ্ট করে দেয়। শেষ করে দেয় জীবনের সুখ-শান্তি।
২. সন্দেহ দীর্ঘদিনের সম্পর্ক শেষ করে দেয়। বিশ্বাসের অর্থ হচ্ছে নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখা, নিজের কাজ কর্মের প্রতি যেমন ভরসা রাখা তেমনটি অন্যের কাজ কর্মের প্রতিও আস্থা রাখতে শেখা। সন্দেহ মনে এলে মন অবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
৩. সন্দেহ দীর্ঘদিনের সম্পর্ক গভীরভাবে গড়ে উঠতে অনেক সময় লাগে কিন্তু সেই সম্পর্ক যখন পারষ্পারিক সন্দেহ আর ভুল বোঝাবুঝির কারনে নষ্ট হয়ে যায় সেটা থেকে দুঃখের ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না।
৪. সন্দেহ মানুষকে পিছিয়ে দেয়। যে মানুষের জীবনে সন্দেহ এসে যায় সেই মানুষ আর এগিয়ে যেতে পারে না। সে আর কাজে সফল হতে পারে না।
৫. সন্দেহপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণে পারিবারিক সুখ শান্তি নষ্ট হয়। পরিবারে সব সময় একটি গুমোট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। একে অন্যের প্রতি বিরক্তি, রাগ, ক্ষোভ, প্রকাশ করে থাকে। একে অন্যের প্রতি সব সময় নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে থাকে।
৬. সন্দেহপ্রবণতা মানুষকে সামাজিকভাবে খাট করে দেয়। মনের মধ্যে সন্দেহের বিষ ঢুকলে রোগীরা নিজের সন্দেহের কথাগুলো অন্যের কাছে বলে। এতে সামাজিকভাবে নিজেদের মর্যাদা ক্ষুণœ হয় এবং পারিবারের গোপন কিছু তথ্য বাইরে রটে যায়। ফলে পরিবারটি সামাজিকভাবে নেতিবাচক আচরণ পেতে শুরু করে।
৭. সন্দেহপ্রবণতা পরিবারের সকল সদস্যের মুখের হাসি, মনের শান্তি কেড়ে নেয়। যদি স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে এই রোগ দেখা দেয় তো পরিবারের শিশুরা মারাক্তকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এ ধরনের সন্দেহপ্রবণতার ক্ষতিকর প্রভাব গিয়ে পড়ে শিশুদের ব্যক্তিত্বের উপরে। ফলে পরিবারের শিশুরা নেতিবাচক ব্যক্তিত্ব নিয়ে বড় হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে এইসব শিশুও নানা রকম মানসিক জটিলতার ভেতরে থাকে।
৮. সন্দেহপ্রবণতা মারাক্তক ক্ষতিকর প্রভাব হচ্ছে অনেক সময় রোগীরা যখন অন্যের কাছে গিয়ে পরামর্শ চায় তখন যিনি শুনছেন তিনি তার কথা (মানে রোগীর কথা) বিশ্বাস করে ভ্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর রোগীও সেই ভ্রান্ত পরামর্শ গ্রহণ করে তার সঙ্গীর সাথে নেতিবাচক আচরণ করে থাকে। অনেক সময় এ ধরনের ভুল পরামর্শই ভেঙ্গে দেয় রোগীর সাজানো গোছানো সুখের সংসার।

কেউ সন্দেহ করলে কি করা উচিত?
যেখানে সন্দেহ থাকে সেখানে ভালোবাসা থাকতে পারে না। একজন সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি কখনো মন থেকে ভালোবাসতে পারে না। সঙ্গী যদি সন্দেহপ্রবণ হয় তো জীবন হয়ে ওঠে যন্ত্রণাময়। সঙ্গী অথবা অন্য কেউ যদি সন্দেহ করে তবে কি করা উচিত?
কেউ যদি আমাদের নিয়ে সন্দেহ করে তাহলে আমরা অনেক সময় রেগে যাই। যে দোষে দোষী নই অথচ কেউ যদি সেই দোষে আমাদের দোষী করে বা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় বা কোন প্রকার নেতিবাচক আচরণ করে তাহলে আমরা সেটা বুঝি এবং রেগে গিয়ে নেতিবাচক আচরণ প্রকাশ করে থাকি। এটা উচিত নয়।
কেউ যদি আমাদের নিয়ে সন্দেহ করে তাহলে কি আপনি সেটা হয়ে গেলেন? কখনই নয়। কেউ যদি আপনাকে চোর ভেবে সন্দেহ করে তাহলে কি আপনি চোর হয়ে যাবেন? অবশ্যই নয়। যার যা খুশি ভাবুক, আপনি আপনার পথে সঠিকভাবে চলুন।
যারা আপনাকে সন্দেহের চোখে দেখছে বা সন্দেহ করে অন্যের কাছে আপনার নামে বদনাম বলে বেড়াচ্ছে তাহলে সেই মানুষগুলো থেকে সাবধান থাকুন। একটা ইতিবাচক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। এই ধরনের মানুষের কথায় মন খারাপ করবেন না, রাগ করবেন না। তার কথায় কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলুন, তাকে পাত্তা না দিয়ে মনকে শক্ত করুন।
বারবার সন্দেহ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হলে নিজের মত একমনে কাজ করে যেতে হবে। মনকে শক্ত করে রূখে দাঁড়াতে হবে। কিছু কিছু সময় শক্ত হতে হয়, সর্তক থাকতে হয়। তাহলে আর কেউ আপনাকে নিয়ে অহেতুক সন্দেহ করবে না। কেউ আপনাকে সন্দেহ করলে চুপ করে থাকুন। সময়ের উপর ছেড়ে দিন। বাস্তবে কেউ যখন আপনাকে সন্দেহ করছে তখন সে হয় তো কল্পনা করে সন্দেহ করছে অথবা কেউ তাকে আপনার নামে মিথ্যা অভিযোগ ঢুকিয়ে দিয়েছে সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় হবে বাস্তবে চুপ করে থাকা। এই সব পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে চুপ করে থাকলে সময়ের কারণে এসব অমূলক সন্দেহ এমনি এমনি দূর হয়ে যাবে।
কেউ আপনাকে সন্দেহ করলে সেদিকে না তাকিয়ে বরং নিজেকে ডেভলোপ করে নিন। কারো নেতিবাচক কথায় মন না দিয়ে নিজের কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিন এবং নিজেকে ডেভলোপ করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
যিনি আপনাকে সন্দেহ করছেন তাকে এড়িয়ে চলুন আর নিজে সব সময় আনন্দের মাঝে থাকতে চেষ্টা করুন। জীবনের সুখ- শান্তি অনুভব করার চেষ্টা করুন। আনন্দে থাকলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা যায়। তাই অন্যের সন্দেহকে পাত্তা না দিয়ে নিজের আতœবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন আর আনন্দিত থাকুন। জীবনের জন্য মানসিক শান্তি খুবই জরুরি। অন্যের সন্দেহের জন্য নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট করাটা বোকামি।
সন্দেহ প্রবণতা দূর করার উপায়
একটি সুন্দর সম্পর্ক মুহূর্তেই শেষ করার ক্ষেত্রে সন্দেহের চেয়ে বড় অস্ত্র আর হয় না। সন্দেহ থাকলে যে কোনো সম্পর্কই মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। তাই এই সন্দেহ প্রবণতাকে টের পাওয়ার সাথে সাথেই তা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রথমত, খোলামেলা আলোচনা করুন। আপনার মনের সন্দেহ কি সন্দেহ নাকি তা সন্দেহবাতিক তা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন। স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি সন্দেহের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য কারো সাথে খুলে আলোচনা করতে পারেন। এতে মন হালকা হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যাকে তাকে নিজের পারিবারিক সমস্যা বলবেন না। এবং নিজেকে হাসির পাত্র বানাবেন না।
দ্বিতীয়ত, পুনরায় মূল্যায়ন করুন। সব সময় নেতিবাচক পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকগুলো চিন্তা করুন। এটি আপনাকে নেতিবাচক ধ্যান- ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। যদি মনে হয় যে, আপনি এ ধরনের সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলছেন তবে নিজেকে বোঝান ও শক্তি সঞ্চয় করুন। তা ছাড়া নিজেকে সুন্দর চিন্তা করার সময় দিন। মনের যতœ নিন। মাঝে মাঝে গান শুনুন, ছবি আঁকুন, হাঁটতে বের হন। প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটান। সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। এতে মন নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকবে এবং মন ফুরফুরে হবে।
তৃতীয়ত, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। প্রচলিত আছে অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। তাই নিজেকে যথাসম্ভব ব্যস্ত রাখুন। আপনি অলস আছেন বলেই হয়তো ভালোবাসার মানুষটিকে ভেবে ভেবে অস্থির হচ্ছেন। কিন্তু যাকে নিয়ে ভাবছেন সে হয়তো আপনাকে সেভাবে সময় দিতে পারছে না। এমন অবস্থায় মনে সন্দেহের মেঘ জমতে পারে তাই নিজেকে কোনো সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন অথবা ধর্ম-কর্মে একটু বেশি মনোযোগী হতে পারেন। এতে আপনার সময় ভালো কাটবে আর সঙ্গীকে নিয়ে অযথা বাজে চিন্তা করার সময় কম পাবেন।
চতুর্থত, খারাপ দিকগুলো লিখে রাখুন। মানুষ যাই করুক না কেন তা যদি লিখে রাখে তবে তার সেই বিষয়গুলো বেশি মনে থাকে। তাই আপনার মাথায় বা মনে যে বিষয়গুলো ঘুরে সেগুলো একটি খাতায় লিখে রাখুন এবং অবসর সময় সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন আপনার কি করা উচিত অথবা আপনার কি করা উচিত নয়।
পঞ্চমত, বিশ্বাস রাখুন। আপনার সঙ্গীর ওপরে বিশ্বাস রাখুন। বিশ্বাসের উপরেই নির্ভর করে সম্পর্কের স্থায়িত্ব। আপনি যখনি আপনার সঙ্গীটিকে অথবা ভালোবাসার মানুষটিকে মন থেকে বিশ্বাস করবেন দেখবেন এসব সন্দেহ আপনার ধারে কাছেও আসবে না। তাই একে অপরের প্রতি বিশ্বাস কাছেও আসবে না। তাই একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। একে অন্যের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। তাহলেই আর এসব সন্দেহ মনে বাসা বাঁধতে পারবেন না।
ষষ্ঠত, কারণ খোঁজার চেষ্টা করুন। কেন দু’জনের মধ্যে এত ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে সে কারণ খোঁজার চেষ্টা করুন। অনেক সময় একে অপরের প্রতি বিরক্তি, রাগ, অভিমান, ইত্যাদি কারনেও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এ ধরনের কারনে যদি মনের ভেতরে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে নিজেকে বুঝুন এবং সেগুলো দূর করার চেষ্টা করুন।
সপ্তমত, নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করুন। আমাদের শরীরে যে জীন বা বংশধারা আছে তা আমাদের মুড, বিহেভিয়ার, ব্যক্তিত্বের ধারা, বাস্তব ধ্যান-ধারণা, অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং আমরা মানসিকভাবে দৃঢ় কিনা তা নির্ভর করে প্রধানত আমাদের চিন্তাধারা, অভিজ্ঞতা, আবেগ, আচরণ বা ব্যবহার, বিশ্বকে অনুভব করার শক্তি উপরে।
অসু গড়ৎরহ তার বই ১৩ ঞযরহমং গবহঃধষষু ঝঃৎড়হম চবড়ঢ়ষব উড়হ’ঃ উড়- তে কিছু উপায় তুলে ধরেছেন যেগুলো আমাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। সেগুলো হলো-
১. ডব ংযড়ঁষফ হড়ঃ ধিংঃব ঃরসব ভববষরহম ংড়ৎৎু ভড়ৎ ড়ঁৎংবষাবং: পূর্বের কোনো কাজের জন্য সে যত বড়ই ভুল হোক তার জন্য অনুতাপ করে কখনই সময় নষ্ট করা উচিত নয়। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা কখনই মনকে দুঃখের ভার বোঝাই করে জীবন আরো দুঃখময় করে তোলে না। তারা অতীতে যা হয়েছে তা গ্রহণ করতে শেখে এবং সেগুলো স্মার্টলি ইগনোর করে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে শেখে। তারা কখনই বলে না যে, আমার জীবনের সমস্যাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সমস্যা, বা যদি ভাগ্য ভালো হতো তাহলে এমনটি হতো না, ঠিক জীবনে উন্নতি করতে পারতাম বা দিনে দিনে দেখছি সমস্যা বেড়েই চলছে অথবা আমার দুঃখ-কষ্ট কেউই বুঝলো না বা আমার ভাগ্যটাই খারাপ এসব বলে আফসোস করে সময় নষ্ট করা যাবে না। এই সব হা-পিত্তেস বা অনুতাপ করে জীবন অতিবাহিত করতে চাইলে জীবন আরো দুঃখময় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তাই নিজের প্রতি করুনা করবেন না। অনুতাপ করে সময় নষ্ট করবেন না। মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে প্রথমেই অনুতাপ করে সময় নষ্ট করা বন্ধ করতে হবে। মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা সময়কে স্মার্টলি কাজে লাগিয়ে জীবনে সফলতার উন্নত শিখরে ঠিক পৌঁছে যায়। আজ থেকেই নিজেকে বদলে ফেলতে হবে।
২. ডব ংযড়ঁষফ ধপপবঢ়ঃ পযধহমব: মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সবসময় পরিবর্তনকে সানন্দে গ্রহণ করতে পারে। আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে একমাত্র চিরস্থায়ী সত্য হলো এই পরিবর্তন। যে জীবনের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তীত হতে পারে না সে আসলে জীবনের প্রবাহ থেকে ছিটকে পড়ে। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তি হতে পারে না। যেমন- আজকের এই কম্পিটার যুগে যেসব সফর্টওয়ার ব্যবহার করি তারা প্রত্যেক সময়ের সাথে নিজেদের আপডেট ও আপগ্রেট করে পরির্বতন করে থাকে বলেই কম্পিটিশনের মার্কেটে টিকে আছে। তাই সময়ের সাথে সাথেই নিজেকে পরির্বতন করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পরির্বতনকে স্বীকার করার ক্ষমতা একমাত্র মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষেরই থাকে।
৩. ডব ংযড়ঁষফ হড়ঃ ভড়পঁং ড়হ ঃযরহমং ঃযধঃ বি পধহহড়ঃ পড়হঃৎড়ষ: মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষরা কখনই সেই সব বিষয়ের উপর ফোকাস করে না যা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বেশির ভাগ দুর্বল মানসিক ব্যক্তিরাই হৃদয়ের গভীরে বিশ্বাস করে যে তাদের জীবন অদৃষ্ট, ভাগ্য, নিয়তি, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। আর মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা বিশ্বাস করে যে, ঞযব সধহ রং ঃযব সধশবৎ ড়ভ ঃযরং ড়িহ ফবংঃরহু তাই এই দৃঢ় প্রত্যয়ের ব্যক্তিরা সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বা পরির্বতনের চেষ্টা না করে নিজের মনের গতি ও পরিস্থিতি বদলে নেয়। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে চাইলে কোনো পরিস্থিতি বদলের চেষ্টা না করে নিজেকে বদলে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
৪. ডব ংযড়ঁষফ হড়ঃ ঃৎু ঃড় ঢ়ষবধংব বাবৎুড়হব: আমাদের কখনই সবার মন জুগিয়ে চলার জন্য কাজ করা উচিত না। যে ব্যক্তি সবাইকে খুশি করতে চায় সে আসলে কাউকেই খুশি করতে পারে না। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা মানুষের প্রিয়জন হতে চায় না বরং তারা নিজের ভালোবাসার দিকে লক্ষ স্থির করে অবিচল থেকে এগিয়ে চলে। সুতরাং আজ থেকে জায়গা ও পরিস্থিতি বুঝে বিনয়ের সাথে “না’’ বলতে শিখুন। কোথায় কাকে “না’’ বা কাকে “হ্যা’’ বলতে হবে তা ভালো করে শেখা দরকার আজ থেকেই। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সব সময় স্পষ্ঠভাষী হয়ে, তারা নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যায়। কারো মন জোগাতে চায় না।
৫. ঞযবু ফড় হড়ঃ ভবধৎ ঃধশরহম পধষপঁষধঃবফ ৎরংশং: হিসাব নিকাশ কষে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না বা পিছু পা হয় না। তাই তারা ঝুঁকি নেয় সাহসীভাবে নতুন নতুন কাজে হাত দেয় সফল হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে থাকে। তাই মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে চাইলে আজ থেকেই নতুন নতুন ঝুঁকি নিতে শিখুন।
৬. ঞযবু ফড় হড়ঃ ষরাব রহ ঃযব ঢ়ধংঃ: মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকে না বা অতীত নিয়ে চিন্তা করে বর্তমানকে ধ্বংস করে না। তারা বর্তমানকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে এবং বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সব সময় নিজেকে মানিয়ে নেয়।
৭. ঞযবু ফড় হড়ঃ সধশব ঃযব ংধসব সরংঃধশবং ৎবঢ়বধঃবফষু: মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা একই ভুল বার বার করেন না। জীবনের একটা ভুল থেকে তারা শিক্ষা নেয় এবং নিজেকে সংশোধন করে সামনে এগিয়ে যায়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা শিক্ষা নিয়ে তারা সফল হন।
৮. ঞযবু ফড় হড়ঃ ভববষ লবধষড়ঁং ধনড়ঁঃ ড়ঃযবৎ ঢ়বড়ঢ়ষব’ং ংঁপপবংং: মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা কখনই অন্যের সাফল্যে হিংসা বা ঈর্ষা করেন না। বরং তারা অন্যের সম্পর্কে সব সময় ভালো কিছু বলে। তারা অন্যের সাফল্য থেকে নিজেকে উন্নত করার পথ খুঁজে নেন। সফল ব্যক্তির কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করেন। কখনই তারা সফল ব্যক্তির বদনাম করেন না বরং ভালো কথা প্রচার করে থাকেন। তাই নিজেকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য অন্যকে হিংসা করা বন্ধ করতে হবে। অন্যের গুন দেখে সেই গুনের প্রশংসা করতে শিখুন।
৯. ঞযবু ফড় হড়ঃ মরাব ঁঢ় ধভঃবৎ ঃযব ভরৎংঃ ভধরষঁৎব: মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা প্রথমবার ব্যর্থ হলেও হাল ছেড়ে দেয় না। বার বার চেষ্টা করতে থাকে। তারা অধ্যাবসয়ে বিশ্বাসী হয়। পৃথিবীর অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীরা বার বার চেষ্টা করে তবেই সফল হয়েছেন। কবির ভাষায়- একবার না পারিলে দেখ শতবার। ঘবাবৎ মরাব ঁঢ় ধঃঃরঃঁফব তাদেরকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দেয়।
১০. ঞযবু ফড় হড়ঃ ভববষ নড়ৎরহম যিবহ ঃযবু ধৎব ধষড়হব:
মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা নিজের সাথে সময় কাটাতে বোর ফিল করেন না। নিজের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে। একাকী তাদের ভালো লাগে। একাকী তারা চিন্তার বিকাশ ঘটায়। নতুন নতুন আইডিয়া বের করেন এই একাকী চিন্তা করার কারনে। এবং তারা কখনই কোনো কাজের ফলাফল তাড়াতাড়ি আশা করেন না। তারা সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।
আজকের দিনে এই সন্দেহ প্রবনতা বা ওথেলো সিনড্রোম মহামারীতে রূপ নিয়েছে। ঘরে ঘরে বেড়ে চলেছে এই সমস্যা। তাই এখনই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে বন্ধু- বান্ধব, পরিবারসহ, সবাইকে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। কারন একটি ভুল সিদ্ধান্ত ভেঙে দিতে পারে রোগীর সাজানো সংসার।
ওথেলো সিনড্রোম দূর করার জন্য খুব বেশি প্রয়োজন পারিবারিক সম্পর্কের সুষ্ঠু বিকাশ। বাবা-মা, ও সন্তান এবং স্বামী- স্ত্রীর সমঝোতাপূর্ণ সম্পর্ক এবং অন্যের আবেগ অনুভূতির সাথে একান্ত হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করলে পারিবারিক সম্পর্ক উন্নত করা সম্ভব হয়। স্বামী- স্ত্রী যদি একে অন্যের আচরনে সুখী থাকেন, নিজেদের দায়িত্ব যথাসময়ে পালন করেন, অন্যের দোষ-ক্রটি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখেন, অন্যের পছন্দ, অপছন্দ, মতামতের মর্যাদা দেন, তাহলে তারা সুখী হবেন। সুখী বাবা- মায়ের সন্তানেরা সুখী হয়।
পরিবারের যদি ওথেলো সিনড্রোমের মত বিষ ঝামেলা বা সমস্যার সৃষ্টি করে তাহলে সবাই মিলে সুস্থ সুন্দর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই বিষ শুরুতেই বিনষ্ট করুন। বাঁচিয়ে রাখুন ভালোবাসাপূর্ণ পরিবার। গড়ে তুলুন সুন্দর পৃথিবী- শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement