২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা নয়া কাব্যভাষার সন্ধানে

-

মুক্তির আকাক্সক্ষা প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। মুক্তিপরায়ণ প্রাণ মানুষের জীবনের কেন্দ্রে অবস্থিত। মুক্তির জন্য তাই মানুষ ইতিহাসে বারবার সংগ্রাম করেছে; আন্দোলন, যুথবদ্ধ প্রচেষ্টা, যুদ্ধ কোনো কিছু বাদ যায়নি। বাঙালির ইতিহাসে মুক্তি সংগ্রামের নজির প্রচুর। কর্তৃত্বপরায়ণ শক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের মুক্তি আন্দোলন যুগে যুগে সংগঠিত হয়ে আসছে। সিপাহি বিপ্লব, ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন ইত্যাদি বাঙালির মুক্তিপরায়ণ ইতিহাসের স্বাক্ষর বহন করে। দেশ বিভাগের পর পূর্ববাংলায় ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সেই সংগ্রামী ইতিহাসের ধারাকে একটা ব্যাপক তাৎপর্য দান করেছে। সাথে সাথে জীবনের বিপুল সম্ভাবনা ও স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দেখা মিলেছে। মুক্তিযুদ্ধ জীবনের সর্বত্র মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের মানুষের কাছে। সাহিত্য-সংস্কৃতি সেই বদলে যাওয়া জীবনের শিল্পভাষ্য নির্মাণের মাধ্যমে নয়া রূপ, রীতি ও ঐশ্বর্যের সন্ধান পেয়েছে। মূলত রাজনৈতিক চেতনায় জারিত হয়েই কবিতার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে বিশাল এক ক্যানভাসে। আর সবচেয়ে বেশি বদল ঘটেছে কাব্যভাষায়।
ক.
আধুনিককালে রাজনৈতিক চেতনা বলতে যে বোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে, তার প্রকাশ একান্ত আধুনিক যুগেই। প্রাচীন বা মধ্যযুগের চিন্তাচেতনা থেকে তা সম্পূর্ণ পৃথক। উনিশ শতকে ব্রিটিশ উপনিবেশের চিন্তাবিপ্লবের সূত্রে এই চেতনার জন্ম। বাংলা কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত উনিশ শতকের পরাধীন ভারতে রাজনৈতিক চেতনায় প্রভাবিত হয়ে রচনা করেন ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। ফলে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান আধুনিক বাঙালির অপরিমেয় আশা এবং অনিবার্য পরাভবের প্রতীক হয়ে ওঠে রাবণ। অন্য দিকে উনিশ শতকের শেষ দশক থেকে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের কল্পনায় সূক্ষ্ম সৌন্দর্যবোধের জাগরণের সাথে স্বদেশের এক নতুন ভাবমূর্তি নির্মিত হয়। ‘বঙ্গভঙ্গে’র (১৯০৫) নির্দেশে শিক্ষিত বাঙালির যে মর্ম বেদনা, রবীন্দ্রনাথের গানেই তার আন্তরিক রূপায়ণ মেলে। কিন্তু এই শতকের তৃতীয় দশক শুরু হওয়ার আগেই উপমহাদেশের রাজনৈতিক পটের দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পরে ইংরেজ শাসকের সর্বশেষ মুখোশ খুলে পড়ে। রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্কটে নিক্ষিপ্ত মধ্যবিত্ত সমাজে তখন প্রচণ্ড অসন্তোষ ও ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে। ফলে যে প্রশান্তি, শৃঙ্খলা ও ইতিবাচকতার আজন্ম প্রবক্তা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ভিত্তি তখন আমূল বিচলিত। ক্রান্তিযুগের এই অস্থিরতা ও উচ্ছ্বাস স্বভাবতই রবীন্দ্রকাব্যে প্রতিফলিত হয়নি। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষভাবে সাড়া দিতে পারেননি, যদিও ‘মুক্তধারা’ ও ‘রক্তকরবী’ নাটকে ওই বিপুল গণজাগরণের পূর্বাভাষ পরিলক্ষিত।
তবে উজ্জ্বল ব্যক্তিক্রম কাজী নজরুল ইসলাম, তিনিই প্রথম রাজনীতিকে শিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে গ্রহণ করেন। ব্রিটিশবিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তার জীবনীশক্তি ও শিল্পশক্তির অধিকাংশই ব্যয় হয়। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা কবিতায় তিনিই প্রথম সুস্পষ্টভাবে মানুষের সমানাধিকারের কথা উচ্চারণ করেন এবং চিরঅবনত মানবসত্তাকে সঙ্ঘবদ্ধ অভ্যুত্থানের আহ্বান জানান। আবার ‘অন্তর ন্যাশনাল সঙ্গীত’ নাম দিয়ে তিনি অনুবাদ করেন সমগ্র পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের আকাক্সক্ষার বাণীরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল সঙ্গীত’। এভাবে মার্কসের রাজনৈতিক চেতনার সাথে বাংলা কবিতার সংযোগের সূত্র নজরুলই প্রথম বেঁধে দেন। সমাজের গুণগত পরিবর্তন নজরুলের আরাধ্য হলেও তিরিশোত্তর কবিদের কাছে শিল্পের উত্তরণই মূল লক্ষ্য। তবে বিষ্ণু দে’র কবিতায় সাম্যবাদী ও মননধর্মী রাজনৈতিক চেতনার প্রকাশ লক্ষণীয়। অতঃপর ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘে’র (১৯৩৬) জন্ম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা (১৯৩৯), ‘ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘে’র প্রতিষ্ঠা (১৯৪২) প্রভৃতি ঘটনার অভিঘাতে চল্লিশের দশকের কবিতায় রাজনৈতিক চেতনার রূপায়ণ প্রত্যক্ষ ও বিস্তৃত। সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সমর সেনের নাম এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। অন্য দিকে তিরিশের কলাকৈবল্যবাদী ধারা ও চল্লিশের প্রগতিবাদী ধারার সমন্বয়ে ও সমান্তরালে এক নবমাত্রিক কাব্যধারা সৃষ্টি করেন বাঙালি মুসলমান কবিরা। তারা হলেনÑ আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, গোলাম কুদ্দুস (১৯২০), আবুল হোসেন, সৈয়দ আলী আহসান, সানাউল হক (১৯২৪-১৯৯৩) প্রমুখ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ফ্যাসিবিরোধী সাহিত্য আন্দোলন, উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, দাঙ্গা, মন্বন্তর, মহামারী প্রভৃতির প্রতিক্রিয়ায় তাদের অধিকাংশই হয়েছেন রক্তাক্ত ও উজ্জীবিত। সেই সাথে তাদের কবিতার ভাষার ভেতর-বাইর সম্পূর্ণ পালটে যায়। নতুন এক কাব্যভাষার ইমারত তৈরি হয়ে যায়, যা উত্তরকালের কবিতায় প্রভাব বিস্তার করে প্রবলভাবে।
খ.
একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তপাত কোনো বিচ্ছিন্ন আকস্মিক ঘটনা নয়; তা একাধারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চরিত্র ও ভবিষ্যৎ ঘটনাবলির ইঙ্গিতবহ। স্বপ্নভঙ্গে ব্যথিত, বিমূঢ় এবং উত্তেজিত মধ্যবিত্ত সেদিন গভীর আবেগে ভাষা ও জননীকে অভিন্ন বলে জেনেছিল। ১৯৫৩ সালের মার্চে প্রকাশিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সঙ্কলনের অন্তর্গত কবিতাবলি শুধু কবিতা হিসেবেই মৌলিক নয়, সমাজ বিকাশের অভিজ্ঞান হিসেবেও মূল্যবান। আবার ভাষা আন্দোলন যেমন পরবর্তী সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তেমনি এই কাব্য সঙ্কলনও পরবর্তী কাব্যধারার ওপর ছায়াপাত করে। এ সময়ে সমাজসচেতন ও সাম্যবাদী উভয় শিবিরের কবিরা স্বদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে প্রত্যাবর্তন করে। ফলে কবিতায় পাকিস্তানবাদের স্থলে মা-মাটি-মাতৃভাষা স্থান করে নেয়। একুশে ফেব্রুয়ারি হয়ে ওঠে কবিতার উৎসব। মা, মাটি ও জনতার পাশাপাশি রক্ত, সূর্য, কৃষ্ণচূড়া ও লাল রঙ হয়ে ওঠে কবিতার বহুল ব্যবহৃত উপমা ও প্রতীক।
এই সময়ে ইতিহাসের রূপান্তরে সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতি ও কবিতার রূপান্তর দৃশ্যমান। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত সময়সীমায় কবিতার উৎস ধারা তীব্র বেগবান হয়ে ওঠে। এ পর্বেই ১৯৫৭-তে সিকানদার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ প্রকাশ পেলে এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে ‘জীবনধর্মী প্রগতিশীল সাহিত্যের এবং চিন্তার’ বিস্তৃতি ঘটে। ‘সমকালে’ আল মাহমুদ নিয়মিত কবিতা লিখতে থাকেন সমকালীন জীবনতরঙ্গ ও সময়চেতনা ধারণ করে।
১৯৫৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পূর্ববাংলার রাজনীতির স্বাভাবিক বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়। সামরিক শাসকেরা ক্ষয়িঞ্চু সামন্তবাদী ও সাম্প্রদায়িক চেতনাকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে থাকে। সম্ভাবনাময় একুশের আন্দোলন তাৎপর্যহীন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শৈক্ষিক দিকে সমাজের হতাশাগ্রস্ত রূপ সে সময়ের কবিতায় পরিলক্ষিত। বিশেষভাবে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত সময় এ দেশের কবিতার জন্য ‘চূড়ান্ত মন্দা’। এই কালপর্বে পূর্ব বাংলার রাজনীতি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে। ১৯৬২ সালে আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্রী শাসন প্রবর্তন ও শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ হয়। ছাত্রসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত ও সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে দেশের প্রগতিশীল যুবশক্তি নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যে আস্থাশীল হয়ে ওঠে। তবে মৌলিক গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে উপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলে তা হতোদ্যম, রাজনৈতিক অধিকার পদদলিত এবং অর্থনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তবে ১৯৬৬ সালে বাঙালি মধ্যবিত্ত স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে সোচ্চার হয় এবং কবিতার এক ‘নতুন অধ্যায়ের উদ্বোধন’ ঘটায়। ‘কণ্ঠস্বর’-এর সম্পাদক ও কবি-সমালোচক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মন্তব্য উল্লেখ্যযোগ্য :
ষাটের দশকের দ্বিতীয় পর্বে এসে আমাদের সামাজিক অঙ্গন আর একবার নতুনতর প্রাণস্পন্দনে উচ্চকিত হয়ে ওঠে। উনিশ শ’ ছেষট্টি-সাতষট্টির দিকে, বাঙালি মানসের দীর্ঘকাল সুপ্ত জাতীয় চেতনা, বহুতর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও বিশ্বাসঘাতকতা থেকে জেগে ওঠে, অস্ফুট চঞ্চল হওয়ার মতো আমাদের সামাজিক চৌহদ্দীকে মাতিয়ে তুলতে শুরু করে এবং পরবর্তী কয়েক বছরে, বিরতিহীন সংগ্রাম-সেøাগানের উদ্দীপ্ত পথ ধরে সার্বিক জাতীয় উজ্জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। এরই পাশাপাশি, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের রঙিন স্বপ্নচারিতা স্বাদেশিকতার এই প্রাণিত উজ্জীবনের সাথে মিশে জাতীয় চৈতন্যের সামনে শক্তি ও সম্ভাবনার অবিশ্বাস্য হিরণ দরোজা মেলে ধরে।
অন্য দিকে ‘ছয় দফা’কেন্দ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিঘাতে সামাজিক উজ্জীবন ও রাজনৈতিক চেতনার জাগৃতি ঘটে এবং কবিতায় তার ঢেউ আছড়ে পড়ে। এই সময়ই কবিদের মধ্যে আত্মজাগরণ, আত্মআবিষ্কার ও আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান লক্ষণীয়। ভাষা-আন্দোলনোত্তর কবিতা, বিশেষভাবে একুশের কবিতায় মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি একাকার হয়ে যায়। বায়ান্নোর সেই রক্তাক্ত জাগরণ ছেষট্টিতে এসে আরো অগ্রসর ও বিস্তৃত হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে উত্তাল ও জাগ্রত জনতার স্রোত রাজপথে শঙ্কাহীন। মা ও মাতৃভূমি অভিন্ন যোগসূত্রে ‘দেশজননী’ হয়ে ওঠে জনতার মিছিলে ও কবির কবিতায়।
রাজপথে জনগণ স্বাধীকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার অঙ্গীকারে উদ্দীপ্ত। জনগণ ও কবির কণ্ঠস্বর একই সুরে মিলিত হয়েছে স্বাদেশিকবোধে ও রাজনৈতিক প্রত্যয়ে। এই সময়ে অনেক নবীন ও প্রবীণ কবি একই চেতনায় ও নয়া কাব্যভাষায় সৃজনশীল। নবীনদের মধ্যে নির্মলেন্দু গুণের ‘না প্রেমিকা না বিপ্লবী’ কাব্যের ‘হুলিয়া’, আবুল হাসানের (১৯৪৭-৭৫) ‘রাজা যায় রাজা আসে’ (১৯৭২), ফরহাদ মযহারের (জ. ১৯৪৭) ‘খোকন এবং তার প্রতিপুরুষ’ (১৯৭২), হুমায়ূন কবিরের (১৯৪৮-১৯৭২) ‘কুসুমিত ইস্পাত’ (১৯৭২); সমকালীন শামসুর রাহমানের ‘নিজ বাসভূমে’ (১৯৭০), সৈয়দ শামসুল হকের ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তিমালা’ (১৯৭০), আল মাহমুদের ‘সোনালি কাবিন’ এবং সৈয়দ আলী আহসানের ‘আমার পূর্ব-বাংলা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব কাব্য নতুন জীবনবোধে, সংবেদনায় ও ভাষায় উজ্জ্বল।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান জাতীয় রাজনীতিতে বিপুল সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। উপনিবেশিক শাসনের সাথে সম্মুখ সঙ্ঘাতে আন্দোলনরত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সাফল্য একটা অনিবার্য পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে থাকে। অন্য দিকে দেশব্যাপী গণজোয়ারের তরঙ্গ এসে পড়ে কবিতায়। এ সময়ের কাব্যে উদ্দীপ্ত জনসাধারণের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম উত্তাপ ছড়ায়। এই মুক্তি সংগ্রামে শহীদের ভূমিকা ও অবদানকে স্মরণ করে সামনের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রেরণা আল মাহমুদের ‘ঊনসত্তরের ছড়া-১’ ও ‘ঊনসত্তরের ছড়া-২’ নয়া কাব্যভাষার আঙ্গিকে প্রকাশিত।
১১ দফার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানে অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত হয় আর সে আন্দোলন চরমপর্যায়ে পৌঁছায় উনসত্তরের জানুয়ারি মাসে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে গণ-আন্দোলন থেকেই এ দেশে প্রথম ধ্বনি উঠেছিল ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাঙলাদেশ স্বাধীন কর’। এই আন্দোলনের চরম পর্যায়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনারও চরম অভিব্যক্তি ঘটে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং ‘তোমার দেশ, আমার দেশ, বাংলা দেশ, বাংলা দেশ’ ধ্বনির মাধ্যমে। এই গণ-অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি ৬৮ সালের ডিসেম্বরের ৬ থেকে ৬৯ সালের ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখের মধ্যে সংগঠিত হয়। ৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্টনে মওলানা ভাসানীর জনসভায় বীর জনতা শপথ নিয়েছিল : ‘জেলের তালা ভাঙব শেখ মুজিবকে আনব’।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য, শেখ মুজিবসহ বিভিন্ন নেতা-সংগঠক বাঙালি সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, বেতার-টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ ঘোষণা, হত্যা-দমন-পীড়ন-নির্যাতনসহ আইয়ুব খানের দশ বছরের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণজাগরণের সৃষ্টি হয় ১৯৬৮ সালের শেষে। শেখ মুজিব জেলে থাকা অবস্থায় এই আন্দোলনকে তীব্র পর্যায়ে নিয়ে যান মওলানা ভাসানী। ৮ ডিসেম্বর তার ডাকা হরতাল, বলা যায়, গণ-অভ্যুত্থান পর্বের শুরু। শ্রমিকদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ পুরো আন্দোলনকে দ্রুত জঙ্গি ভাবাপন্ন করে তোলে। গ্রামাঞ্চলে মৌলিক গণতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে, গরুচোর ও থানা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দ্রুত ছড়াতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে গণ-আদালত গঠন করে গণশত্রুদের শায়েস্তা করা শুরু হয়। শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করার পেছনে বাম সংগঠন ও কর্মীদের ভূমিকা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা বলাই বাহুল্য।
২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এ ঘটনা পুরো আন্দোলন পরিস্থিতিকে প্রবলভাবে বেগবান করে। শামসুর রাহমান লেখেন ‘আসাদের শার্ট’ কবিতা। ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় একটি বিশাল মিছিল হয়। সচিবালয়ের সামনে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে সেনাবাহিনী। শহীদ হন রুস্তম আলী ও স্কুলের ছাত্র মতিউর। গণজোয়ার থামানোর জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। কোনো ঘোষণা ছাড়াই সারা ঢাকার বস্তি, শিল্পাঞ্চলসহ সব এলাকা থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ বেরিয়ে এসে সান্ধ্য আইন অস্বীকার করেন।
এই অবস্থার পর সরকারের আর টিকে থাকার অবস্থা ছিল না। এর মধ্যে জেলের মধ্যে নিহত হন আগরতলা মামলার আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুজ্জোহা শহীদ হন ক্যাম্পাসেই। আন্দোলন এরপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খান পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খানের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে পদত্যাগ করেন। ২৫ মার্চ থেকে ইয়াহিয়া খান আবার সামরিক আইন জারি করেন সারা দেশে। দুই বছর পর এই দিনেই ইয়াহিয়া খান পূর্ব-পাকিস্তানে শুরু করেন গণহত্যা এবং নির্যাতনের বর্বর পর্ব যা পাকিস্তানের পতন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
ঊনসত্তরের গণজাগরণের স্ফুলিঙ্গ, আবেগ ও উত্তেজনা আল মাহমুদের ছড়া আঙ্গিকের কবিতা দু’টিতে বাক্সময়। এ প্রসঙ্গে শামসুর রাহমানের ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’, ‘হরতাল’, ‘আসাদের শার্ট’ ও ‘গেরিলা’ কবিতাটি স্মরণযোগ্য। কবিতাবলি বিশেষভাবে স্মরণীয়। আল মাহমুদ ‘শুয়োরমুখো ট্রাকে’র প্রতীক রূপে উপস্থাপন করেন আইয়ুবী দুঃশাসনকে এবং শহীদ আসাদুজ্জামান ও শহীদ মতিউর রহমানের মহান আত্মত্যাগের ফলে উজ্জীবিত জনগণকে আগামী দিনের মুক্তি সংগ্রামে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান। আবার এই আন্দোলনরত জনতার প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে কবি ‘লাল মোরগের পাখার ঝাপট’ এবং সামরিক শাসনে শৃঙ্খলিত দেশকে ‘খোঁয়াড়’ রূপে চিহ্নিত করেন। অর্থাৎ প্রতীকী চিত্রকল্পের মাধ্যমে কবি জুলুম ও প্রতিরোধ-সংগ্রামের ছবি আঁকেন।
গণ-অভ্যুত্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রাম ও রক্তাক্ত আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব। আইয়ুব খানের দশ বছরের দুঃশাসনের বিদায়, ইয়াহিয়া খানের অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের জন্য ছয় দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের প্রচারণা ও বিপুল সমর্থন লাভ, সত্তরের মহাপ্রলয় ও দশ লাখ অধিবাসীর মৃত্যু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং পাকিস্তান সরকারের চরম অবহেলা, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়, পশ্চিম পাকিস্তানি পুঁজিবাদী মহল ও সামরিক চক্রের ষড়যন্ত্র, স্বাধীনতা আন্দোলনে চূড়ান্তপর্যায়ে উন্নীত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐতিহাসিক ছাত্রসভা (২ মার্চ : ১৯৭১) অনুষ্ঠিত ও স্বাধীন বাংলার পতাকা সর্বপ্রথম উত্তোলন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ কর্তৃক ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র (৩ মার্চ : ১৯৭১) প্রচার, রমনা রেসকোর্স ময়দানে জনসমুদ্রে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ঘোষণা, পঁচিশে মার্চের বিভীষিকাময় রাতে ঢাকা শহরে পরিকল্পিত গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ; বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ও গ্রেফতার এবং বাঙালির সম্মিলিত সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের সূচনা ও বিজয়ের (১৬ ডিসেম্বর: ১৯৭১) মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয়। কবিদের কাছে ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা লাভ বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ও সফল সশস্ত্র বিপ্লব হিসেবে বিবেচিত। এই মুক্তিযুদ্ধ দেশের কবিতাকে ও কবিতার ভাষাকে আমূল পালটে দিয়ে নয়া এক কাব্যভাষার রূপ নির্মাণ করে।

কাব্যভাষা সৃষ্টির পেছনে মূলত কয়েকটি বিষয় কাজ করে: ক. কবির ব্যক্তিস্বভাব; খ. সমাজ-সংস্কৃতি-পরিবেশের প্রভাব; গ. অগ্রজ ও অনুজ কবিদের প্রভাব; গ. সামগ্রিক অধ্যয়ন; ঘ. কাব্যাদর্শ ও জীবনাদর্শের প্রভাব; ঙ. শব্দশৈলীর প্রতি দৃষ্টিভৃঙ্গি ইত্যাদি। এই কয়েকটি বিষয়ের সমবায়ে একজন কবির ভাষা নতুন আদলে চেহারা পায়। মুক্তিযুদ্ধের কবিতাও একই নিয়মে নয়া কাব্যভাষায় বাক্সময়।
মুক্তিযুদ্ধের কবিতাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় : প্রথম পর্যায় : ভাষা আন্দোলন থেকে কালো পঁচিশের রাত; দ্বিতীয় পর্যায় : ছাব্বিশে মার্চ থেকে ষোলই ডিসেম্বর; তৃতীয় পর্যায়: মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়পর্বে একই বিষয় নিয়ে রচিত কবিতা। সব পর্বের কবিতা মিলেই মুক্তিযুদ্ধের কবিতা। তবে প্রথম পর্যায়ের কবিতাকে মুক্তিসংগ্রামের কবিতা বলাই যুক্তিসঙ্গত। মুক্তিযুদ্ধের কবিতার নয়া ভাব ও ভাষার বৈশিষ্ট্য সামগ্রিক সমাজ-সংস্কৃতি-পরিবেশ-রাষ্ট্রের সমবায়ে নির্ণিত।
ক. স্বাধীনতা ও মুক্তির আকুতি
খ. শত্রু বাহিনীর প্রতি প্রবল ঘৃণা
গ. সবাত্মক ধ্বংস ও মানবতার বিপর্যয়
ঘ. মানুষের হাহাকার ও আর্তনাদ
ঙ. যুদ্ধাস্ত্রের ভয়াল ব্যবহার
চ. প্রতিরোধ যুদ্ধের উদ্যম
ছ. আঙ্গিকের নয়া বিন্যাস
মুক্তিযুদ্ধের কবিতায় এসব প্রসঙ্গ এসে হাজির হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে, যা আগে কখনো বাংলা কবিতায় আসেনি। আসার কার্যকারণের অভাবেই আসেনি। কবিদের নিজ নিজ স্বভাব, সংবেদনপ্রবণতা ও অভিপ্রায় অনুসারে আলাদা আলাদা কাব্যভাব, কাব্যস্বভাব ও কাব্যভাষার রূপ দাঁড়িয়ে গেছে। কয়েকজন কবির কবিতার দৃষ্টান্ত নিলে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট হয় :
ক সারা গাঁওখানি দগ্ধ শ্মশান, দমকা হাওয়ার ঘায়
দীর্ঘ নিঃশ্বাস আকাশে পাতালে ভস্মে উড়িয়া যায়। [দগ্ধগ্রাম/জসীমউদ্দীন]
খ আজকে যখন খুঁড়তে গিয়ে
নিজের কবরখানা
আপন খুলির কোদাল দেখি
সর্বনাশা বজ্র দিয়ে গড়া
কাজ কি দ্বিধায় বিষণœতায়
বন্দী রেখে ঘৃণার অগ্নিগিরি? [বাঙলা ছাড়ো/ সিকানদার আবু জাফর]
গ. তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম
তুমি আসবে বলে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার
ঋস্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের ওপর। [তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা/ শামসুর রাহমান]
ঘ. প্রেম অবারিত হবে বিজয়ের ধারাজলে, রৌদ্রে, জোছনায়।
শত শতাব্দীর অবগুষ্ঠিত আশা পূর্ণ করে
মোছাব তোমার মুখ তোমারই আপন পতাকায়। [তোমার আপন পতাকায়/হাসান হাফিজুর রহমান]
ঙ এই তো এখানে ছিল
ওঠে গেল
আছে শুধু উপস্থিত তার
কবরে রোদ্দুরে ঘোরে স্তব্ধ হাহাকার
গ্রেফতার [শূন্য পটভূমিতে শূন্যতার স্থিরচিত্র/সৈয়দ শামসুল হক]
চ. নিসর্গের ঢাল ধরো বক্ষস্থলে
যেন হত্যাকারীরা এখন
ভাবে বৃক্ষরাজি বুঝি
বাতাসে দোলায় ফুল
অবিরাম পুষ্পের বাহার।
জেনো, শত্রুরাও পরে আছে সবুজ কামিজ
শিরস্ত্রাণে লতাপাতা, কামানের ওপরে পল্লব। [ক্যামোফ্লাজ/আল মাহমুদ]
ছ. আমার অনুজ পড়ে থাকে গলিপথে
হুমড়ি খেয়ে
আমার পিতার লাশ রক্তে ভাসে এখানে ওখানে [এপ্রিলের একটি দিন ১৯৭১/ফজল শাহাবুদ্দীন]
মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, প্রভাব, প্রতিক্রিয়া, সবুজময় থেকে রক্তাক্ত বাংলাদেশের পটভূমি একাকার এসব কবিতায়। আবহমান বাংলা কবিতা থেকে অনেক দূরত্বে, রঙ-রূপ-রেখার বদল ঘটিয়ে সমকালীন মানুষের দুঃসহ যন্ত্রণা-কষ্টকে কবিতাবলি ধারণ করে আছে। সমগ্র জাতির আমূল আলোড়িত করা মহাঘটনাকে কবিরা আবেগ-কল্পনা ও মননের রসায়নে কবিতার রূপ দিয়েছেন। কেননা এই লড়াই বাঙালি জাতির অস্তিত্ব, মানবিক মর্যাদা, ইনসাফ, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানুষের সমানাধিকারের প্রশ্নের সাথে জড়িত। এককথায় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য তৃষ্ণা, আকুতি ও লড়াইয়ের অভিজ্ঞতার নির্যাস এসব কবিতায় স্বাক্ষরিত।
মুক্তিযুদ্ধের কবিতার কাব্যভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এভাবে দাঁড় করানো যায় :
ক. অকৃত্রিম অনুভূতিময় শব্দাবলির ব্যবহার
খ. যুদ্ধের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসঞ্জাত
গ. যুদ্ধাস্ত্রসামগ্রীর উল্লেখ
ঘ. যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয়ের বর্ণনা
ঙ. নতুন জগৎ নির্মাণের স্বপ্নময় শব্দগুচ্ছের প্রয়োগ
চ. হানাদার বাহিনীর প্রতি ঘৃণা জাগানিয়া শব্দ ব্যবহার।
বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, স্বাধিকার, স্বায়ত্তশাসন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা অর্থাৎ এক সর্বত্র মুক্তি সংগ্রামে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, অনুভূতি, উজ্জীবন, ত্যাগ ও রক্তদানকে মুক্তিযুদ্ধের কবিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কবিরা নিজস্ব কাব্যভাষা ও আঙ্গিকে প্রকাশ করেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের কবিতা হয়ে উঠেছে সমগ্র বাংলা কবিতার এক উজ্জ্বল ও উদ্দীপ্ত অধ্যায়, যা নয়া কাব্যভাষার ইমারত নির্মাণে নিয়ামকের ভূমিকায় ক্রিয়াশীল। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল