আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণমাধ্যম
- ড. এম এ সবুর
- ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এ মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের অবদান কম নয়। মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকার, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, প্রবাসী বাঙালি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত নিয়মিত-অনিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকা-সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা-বর্বরতা, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ-দুদর্শা, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়। অধিকন্তু অসংখ্য পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ-সম্পাদকীয়, কবিতা-গান, প্রবন্ধ-কার্টুন প্রভৃতি মাধ্যমে পাকিস্তানিদের নির্মম-নৃশংসতার নিন্দা-ক্ষোভ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানানো হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা উদ্বুদ্ধ-অনুপ্রাণিত হন, জনমনের প্রত্যাশা বাড়ে এবং বিশ্ব জনমত গঠনে সহায়ক হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই আমাদের দেশের প্রায় সব গণমাধ্যম স্বাধীনতার সপক্ষে অবস্থান নেয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন এবং ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশীয় সংবাদপত্র-গণমাধ্যমগুলো স্বাধিকার আন্দোলনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তদানীন্তন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক চলাকালেই ২২ মার্চে দেশের পত্রিকাগুলো ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামের বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এতে বঙ্গবন্ধুর শুভেচ্ছা বাণী প্রকাশ করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য আমাদের এ সংগ্রাম। অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বুলেট-বেয়ানেট দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আর স্তব্ধ করা যাবে না। কেননা জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ।’ এতে পাকিস্তান সরকার সংবাদপত্রের ওপর রুষ্ঠ হয় এবং সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। এমতাবস্থায় দি পিপল পত্রিকায় প্রকাশের জন্য ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ : কণ্ঠরুদ্ধ সংবাদপত্র’ শিরোনামে প্রতিবেদন লেখা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগেই ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী দি পিপল অফিসে আক্রমণ করে এবং এতে ছয়জন সাংবাদিক নিহত হয়। ২৫ মার্চের ‘সার্চলাইট’ নামের গণহত্যার খবর যাতে দেশ-বিদেশে প্রচার হতে না পারে সে জন্য পাকিস্তানি বাহিনী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশী সাংবাদিকদের আটক করে। অধিকন্তু ২৬ মার্চে দৈনিক ইত্তেফাক এবং ২৮ মার্চে দৈনিক সংবাদ পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেয়। এসব সত্ত্বেও দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা ও সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্ব জনমত গঠন, পাকিস্তানি নৃশংতা-বর্বরতার সংবাদ পরিবেশন, নিন্দাজ্ঞাপন ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৪টি পত্রিকা প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি দৈনিক এবং বেশির ভাগ সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, সাময়িক, বুলেটিন, ম্যাগাজিন, নিউজলেটার প্রভৃতি। এসব পত্রিকার মধ্যে মুজিবনগর সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ও আওয়ামী লীগের মুখপাত্র জয় বাংলা পত্রিকাটির সম্পাদকীয়গুলোতে মুক্তযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞের তীব্রনিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। বঙ্গবাণী পত্রিকা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরে এর বিচার দাবি করে। স্বদেশ পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পাকিস্তানের বৈষম্যনীতি প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৌক্তিকতা তুলে ধরে। বাংলাদেশ পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুর প্রহসনের বিচারের সমালোচনা, নারীদের প্রতি পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণ প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করা হয়। এ পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে অবস্থানের জন্য বিশ্বের ২৪টি দেশের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আবেদন প্রকাশ করা হয়। রণাঙ্গণ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ইয়াহিয়া খানের বিশ্বাসঘাতকতা, বঙ্গবন্ধুর বিচারের সমালোচনা, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যসহ মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ক বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়। স্বাধীন বাংলার বিভিন্ন সংখ্যায় বাংলার নারীসমাজকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। উল্লিখিত পত্রিকাগুলো ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ, সোনার বাংলা, বিপ্লবী বাংলাদেশ, নতুন বাংলা, জাগ্রত বাংলা, অগ্রদূত, আমার দেশ, অভিযান, মুক্তি, দুর্জয় বাংলা, বাংলার মুখ, জন্মভূমি, সাপ্তাহিক বাংলা, দাবানল, স্বাধীন বাংলা, ঞযব ইধহমষধফবংয, ঞযব ঘধঃরড়হ, ইধহমষধফবংয ঞড়ফধু. সহ অনেক পত্রিকা-সংবাদমাধ্যম নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত এম আর আখতার মুকুলের ‘চরম পত্র’ এবং তেজোদ্দীপক গান-কবিতা, রম্য রচনা এ দেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিদেশী গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বিদেশী সাংবাদিকরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করে। ১৯৭১ এর মার্চ মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাসন, ইয়াহিয়া খানের ডায়ালগ নাটক প্রভৃতি ঘটনা ২৫ মার্চের ‘সার্চলাইট’ নামের গণহত্যার খবর যাতে দেশ-বিদেশে প্রচার হতে না পারে সে জন্য পাকিস্তানি বাহিনী হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশী সাংবাদিকদের আটক করে। এদের মধ্যে লন্ডনের ঞযব উধরষু ঞবষবমৎধঢ়য এর সাংবাদিক সায়মন ড্রিং এবং অংংড়পরধঃব চৎবংং এর ফটোগ্রাফার মাইকেল লরেন্ট আটক এড়াতে হোটেলের ছাদে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরে তারা সারা ঢাকা ঘুরে ঘুরে পাকিস্তানি বর্বরতা-নৃশংসতার ছবি তোলেন; যা পরবর্তীতে পত্রিকায় প্রকাশ করে বিশ্ববাসীকে পাকিস্তানি বর্বরতার খবর জানায়।
৩০ মার্চে ঞযব উধরষু ঞবষবমৎধঢ়য পত্রিকায় ঞধহশং পৎধংয জবাড়ষঃ রহ চধশরংঃধহ. ৫ এপ্রিলে ঘবংি ডববশ পত্রিকায় চধশরংঃধহ চষঁহমবং রহঃড় ঈরারষ ধিৎ শিরোনামে দীর্ঘ প্রতিবেদনে এবং ১২ এপ্রিলে ঞরসব সধমধুরহব এ পূর্ব পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞ ও গণকবরের বিস্তারিত খবর প্রকাশ করে। ১৯ এপ্রিল নিকোলাস টোমালিন ঞযব উধরষু ঞবষবমৎধঢ়য পত্রিকায় ঋধৎ ঋৎড়স ঞযব ঐড়ষড়পধঁংঃ শিরোনামে পাকিস্তানি নৃশংসতার বিবরণ তুলে ধরেন। সিঙ্গাপুরের ঞযব ঘবি ঘধঃরড়হ পত্রিকায় এবং সুইডেনের ঞযব ঊীঢ়ড়ৎঃধঃরড়হ পত্রিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন পত্রিকায় পাকিস্তানি ধ্বংসযজ্ঞের সংবাদ পরিবেশন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের যৌক্তিতা তুলে ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সরকার পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও উভয় দেশের বেশির ভাগ পত্রিকায় পাকিস্তানি আক্রমণ-নৃশংসতার সমালোচনা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। চীনা পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ইয়াহিয়া খানকে চেঙ্গিস খানের সাথে তুলনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হয়। ওয়াসিংটন থেকে প্রকাশিত ঞযব উধরষু ঘবংি লিখে, ‘পাকিস্তানের সাথে থাকা কিংবা নিশ্চুপ থাকা দুটোর মানেই বাঙালি নিধনে সহায়তা করা।’ ঘানার একটি সাপ্তাহিক ঞযব চধষাবৎ ডববশষু এর এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘ইয়াহিয়া খান সংখ্যালঘুর শাসন কায়েম করেছেন। তাই বিশ্বের শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর উচিত সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ত্বরান্বিত করা।’ উল্লিখিত পত্রিকাগুলো ছাড়াও ঞযব উধরষু গরৎৎড়ৎ, ঞযব ঊপড়হড়সরংঃ, ঞযব এঁধৎফরধহ, ঞযব ঘবধিৎশ ঞরসবং, ঞযব ঝঃধঃবংসবহ, ঞযব ঞরসবং খড়হফড়হ, ঞযব ডধংযরহমঃড়হ চড়ংঃ, ঞযব সধমধুরহব রহ ঘবধিৎশ. পত্রিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছে।
বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালির নিরপেক্ষ সংবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তথ্য তথা পাকিস্তানি বর্বরতা-নৃশংসতার খবর জানতে পেরেছে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। মার্ক টালির মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিডনি শনবার্গ, আ্যন্থনি মাসকারেনহাস, সাইমন ড্রিং, অ্যালেন গিন্সবার্গ, নিকোলাস টোমালিন, মাটির্ন গুনাকাট, জন পিলজার, ডেভিড, পিটার হাজেন হার্স্ট প্রমুখ সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মান, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রকৃত ঘটনা বিশ্ববাসীর কাছে পত্রিকার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। তাদের সাহসিকতা ও সংবাদের কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে।
ভারতের নয়াদিল্লিসহ প্রায় সব প্রদেশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার, দেশ, ত্রিপুরার সংবাদ, জাগরণ, গণরাজ. রুদ্রবীণা, নাগরিক জনপদ, সাপ্তাহিত্যিক সমাচার, দেশের কথা, সীমান্ত প্রকাশ ও ত্রিপুরার কথা নামে পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে সহায়তা করেছে।
উল্লিখিত পত্রিকা ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ সংবাদ, পবিত্র মা, জনমত, বাংলাদেশ পত্র, ইধহমষধফবংয ঘবংি খবঃঃবৎ, ইধহমষধফবংয ঝযরশশধ, পত্রিকার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এবং স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে সহায়তা করেছে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গণমাধ্যমের কারণে বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছে। এতে এক দিকে পাকিস্তানি বর্বরতা-নৃশংসতার প্রতি ঘৃণার উদ্্েরক হয়েছে, অন্য দিকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতি-সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিকন্তু আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস-মনোবল-শক্তি সঞ্চার করেছে; যাতে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা