২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আনন্দে ভরপুর বনভোজনে চাঁদপুর

-

প্রতিবারের মতো এ বছরও দিনভর আনন্দ উচ্ছ্বাসে অনুষ্ঠিত হলো প্রিয়জনের বার্ষিক বনভোজন-২০২০। দৈনিক নয়া দিগন্ত পরিবারের প্রিয়জনের এবারে ভেনু ছিল ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। কেন্দ্রীয় প্রিয়জন সভাপতি হায়দার শাফির নেতৃত্বে ৭ ফেব্রুয়ারি প্রিয়জন পরিবার দিনব্যাপী আনন্দ উপভোগ করতে বের হয়। প্রিয়জনের এবারের বনভোজন ছিল অন্যরকম আনন্দে ভরপুর। ভ্রমণে যারা অভ্যস্থ নন তাদের অনেকেরই মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব বা মোশান সিকনেসের সমস্যা থাকে। প্রতিবারই এ সমস্যার কথা প্রিয়জনদের কাছ থেকে আমাদের শুনতে হয়েছে। কিন্তু এবার লঞ্চ ভ্রমণ হওয়ায় এ সমস্যার কথা কেউ উচ্চারণ করেনি। বনভোজন সফল করার জন্য প্রিয়জন কেন্দ্রীয় কমিটি একাধিকবার প্রস্তুতিসভার আয়োজন করে। বনভোজনের স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর ‘স্পট ভিজিটের’ দায়িত্ব পড়ে সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব ইব্রাহিমের ওপর। হাত-পা ঝাড়া গোবেচারা সোয়েব তার দায়িত্ব পালন করেন সুনিপুণভাবে। দুপুরের খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট বুকিং, ত্রিমোহনা পরিদর্শন, সাহাবুদ্দিন স্কুল পরিদর্শন, মিনি কক্সবাজারখ্যাত হাইমচর প্রভৃতি পরিদর্শন করে সোয়েব যথাসময়ে তার রিপোর্ট পেশ করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব প্রিয়জন সদস্যকে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হয় ঠিক সকাল সাড়ে ৭টায় সদরঘাটের লালকুঠি টার্মিনালে উপস্থিত থাকার জন্য। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক প্রিয়জন বনভোজনে অংশগ্রহণ করেন। বনভোজনে নিয়মিত সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হায়দার শাফি, অ্যাডভোকেট রফিক দম্পতি, মিরপুরের প্রিয়জন কবি ফজলুল হক ও তার দল, প্রিয়জন কাওসার, দোহার প্রিয়জন শওকত আলী রতন ও তার দল, প্রিয়জন সম্পাদক সাহিদা শিল্পী, প্রিয়জন ইদ্রিস আলী, প্রিয়জন সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় প্রিয়জন ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও তার দল, প্রিয়জন আনসার আলী, গাজীপুর প্রিয়জন ও দফতর সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির শিমুল ও তার নিয়মিত বান্ধবী এবং খুদে প্রিয়জন সাদিয়া ও আতাউল্লাহসহ আরো অনেকে। নানান সমস্যার কারণে অনেক প্রিয়জন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবার অংশ নিতে পারেননি।
একটা বিষয় খেয়াল করে দেখলাম, গাড়িতে বনভোজন যাত্রায় অনেকেই সাজুগুজু করতে করতে দেরি করে ফেলেন কিন্তু লঞ্চ জার্নিতে সবাই ৩০ মিনিট আগেই ঘাটে এসে হাজির! প্রিয়জন হায়দার শাফি ভাই আগে থেকেই এমভি বোগদাদিয়া-৭ এ এসি রুমের চেয়ার আসনের টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। টিকিট নিয়ে যার যার আসন গ্রহণ করে নতুন-পুরনো সব প্রিয়জনের মধ্যে পরিচয়পর্ব ও কুশলবিনিময় হয়। লঞ্চ ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ৮টা ৩৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল সোয়েব। লঞ্চ ছাড়ার সাথে সাথে সবার হাতে সকালের নাশতা পোঁছে দেন। নাশতা পেয়ে সবাই সোয়েবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! যেন, এত মজাদার নাশতা জীবনে কেউ খায়নি। যদিও সিদ্ধ ডিম বহনের সময় রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে একটু জখম হয়েছিল। নাশতা সেরে প্রিয়জনরা আড্ডায় মেতে ওঠে। কবি ফজলুল হক ভাই ঘোষণা করেন, সব প্রিয়জন দাদা হয়েছে। তার ছেলের ঘরে ছেলে হয়েছে। তারপর জানা গেল তিনিই প্রথম নন, এর আগেই প্রিয়জনদের এ সম্পর্কের স্বাদ দেয়ার সৌভাগ্যবান দুই প্রিয়জন হায়দার শাফি ও অ্যাডভোকেট রফিক ভাই। তারাও ছেলের ছেলে দিয়ে দাদা হয়েছেন। এ নিয়েই সব দাদা আনন্দে মেতে ওঠেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব ঘটনার ছবি ধারণ করেন দোহার প্রিয়জন ও সাংবাদিক শওকত আলী রতন। তার কাঁধে ছিল বিশাল আকৃতির ডিএসএলআর ক্যামেরা। লঞ্চে উঠে সবাই যেন সেলফি তোলার প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। মুক্ত আকাশ, পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, নয়নজুড়ানো প্রকৃতি দেখতে দেখতে প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা জার্নি শেষে আমরা চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছে যাই। চাঁদপুর প্রতিনিধি শরিফ চৌধুরী তার ব্যক্তিগত কাজ থাকায় আমাদের রিসিভ করতে পারেননি তবে পরে আমাদের দলে এসে শামিল হয়েছিলেন। তাতে কোনোই সমস্যা হয়নি। চাঁদপুর প্রিয়জনের সহায়তায় স্ট্যান্ডে গিয়ে প্রথমেই অটো রিজার্ভ করে সবাই দল বেঁধে যাই সাহাবুদ্দিন স্কুল পরিদর্শন করতে। স্কুলের স্থাপত্যশৈলী একটু ব্যতিক্রম। এরপর যাই তিন নদীর মোহনা রক্তধারা চত্বরে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এখানে গড়ে তোলা হয় রক্তধারা স্মৃতিস্তম্ভ¢। এই স্মৃতিস্তম্ভকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে একটি পার্ক। তিন নদীর মোহনায় এই পার্কে গিয়ে দাঁড়ালে আপনি একত্রে তিন নদীর বিশাল জলরাশি উপভোগ করতে পারবেন। এই তিন নদীর মোহনায় হিলশা কিচেনে আমাদের লাঞ্চের আয়োজন করা হয়। জুমার দিন হওয়ায় লাঞ্চের আগেই সব প্রিয়জন পাশের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে নেন। নামাজের পর হিলশা কিচেনের গরম গরম খাবার দিয়ে লাঞ্চ পর্ব শুরু হয়। চাঁদপুর মানেই ইলিশ! লাঞ্চে ইলিশের মেনু ছিল সবার পছন্দের তালিকায়। লাঞ্চের পর ছোটখাটো মিটিং সেরে আবার সবাই বেরিয়ে পড়ি মিনি কক্সবাজারখ্যাত বালুর চরে। ট্রলার রিজার্ভ করা হয় ত্রিমোহনা থেকে। ট্রলার চালকের সাথে চুক্তি হয় মিনি কক্সবাজার আবার মিনি কক্সবাজার থেকে চাঁদপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত। বালুর চরে নেমে যেন ছেলে-বুড়ো সব প্রিয়জন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। সমুদ্রের মতো অত বিশাল বিশাল ঢেউ নেই তাতে কী, সামনে ছোট ছোট ঢেউ তোলা বিশাল জলরাশি তো আছে! চার দিকে পানি আর পানি। নদীর বুকে জেলেদের মাছ ধরা ছোট-বড় অনেক ট্রলার আর নৌকা। মাথার ওপরে নীলাকাশ। মনের আনন্দে সবাই একসাথে গেয়ে ওঠে, কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। সময় তার আপন গতিতে গড়িয়ে চলে। দেখতে দেখতে ফেরার সময় হয়ে যায়। এ এক চিরন্তন নিয়ম। সময়ের ছকে বাঁধা আমরা সবাই। ফিরতে ইচ্ছা না করলেও ফিরতে হয়। সেলফি, হই-হুল্লোড় আর দৌড়ঝাঁপ শেষে সবাই আবার ট্রলারে উঠে পড়ি লঞ্চঘাটের দিকে। আবারো সেই এমভি বোগদাদিয়া-৭ লঞ্চ। সময় বিকেল ৫টা। স্থানীয় প্রতিনিধি এবং চাঁদপুর প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিদায়পর্ব শেষে কর্কশ সুরে লঞ্চের হর্ন বেজে ওঠে। যথাসময়ে লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। হাত নেড়ে স্থানীয়দের বিদায় জানাই। বিদায় চাঁদপুর! বিদায় ইলিশের বাড়ি। আবার দেখা হবে, আনন্দ হবে এ আশা বুকে নিয়ে।
সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় প্রিয়জন, ঢাকা।

একনজরে চাঁদপুর
নদীভাঙন ও বন্যায় আক্রান্ত একটি জনপদ চাঁদপুর। আয়তন এক হাজার ৭৪০.৬ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২৬ লাখ ২৬৩ জন। উপজেলা বা থানার সংখ্যা আটটি। চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ। পৌরসভা সাতটি। চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, ছেঙ্গারচর ও মতলব। ইউনিয়ন ৮৯টি এবং গ্রাম এক হাজার ৩৬৫টি। তিনটি নদী আছে চাঁদপুরে। মেঘনা, ডাকাতিয়া আর ধনাগোদা। মেঘনার দৈর্ঘ্য ১৪১.৫ নটিক্যাল মাইল। তার মধ্যে চাঁদপুর জেলায় প্রবাহিত ৪০ নটিক্যাল মাইল। ডাকাতিয়ার দৈর্ঘ্য ১২৫ নটিক্যাল মাইল। চাঁদপুর জেলায় প্রবাহিত ৭০ নটিক্যাল মাইল। আর ধনাগোদার দৈর্ঘ্য ২৫ নটিক্যাল মাইল। চাঁদপুর জেলার মধ্য দিয়ে পুরো ২৫ নটিক্যাল মাইলই প্রবাহিত। দর্শনীয় স্থান : বড় স্টেশন মোলহেড, নদীর মোহনা (চাঁদপুর সদর), জেলা প্রশাসকের বাংলোয় অবস্থিত দুর্লভ জাতের নাগলিঙ্গম গাছ। চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যের প্রতীক ইলিশ চত্বর। প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রতœসম্পদ এলাকা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। এ জেলায় শিক্ষার গড় হার প্রায় ৬৮ শতাংশ। জেলার প্রধান কৃষি হলোÑ ধান, পাট, গম, আখ, আলু, সরিষা, সুপারি, সয়াবিন, মরিচ, শাকসবজি।

 


আরো সংবাদ



premium cement