২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় ‘কোয়ারেন্টাইনে’ আরিফ আজাদ, যা বললেন ফেসবুকে

- ছবি : সংগৃহীত

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ইসলামিক লেখক আরিফ আজাদ করোনা ভাইরাস নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

‘‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে আছি...

আমার কোন জ্বর হয়নি। সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা কিংবা মাংশপেশিতে ব্যথা- করোনার লক্ষণসমূহের কোনোটাতেই ভুগছিনা, আলহামদুলিল্লাহ। তবুও, সতর্কতার অংশ হিশেবে নিজেকে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন অর্থাৎ ঘরে বন্দী করে ফেললাম।

বয়স বিবেচনা করে বৈশ্বিক মৃত্যুহারের দিকে তাকালে, করোনায় আমার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ০.২%। গাণিতিকভাবে হয়তো এই সম্ভাবনা খুবই দরিদ্র ঘরানার। কিন্তু, তাই বলে যে সতর্ক থাকবো না, তা নয়। করোনাক্রান্ত হলেও আমার সুস্থ হয়ে উঠার চান্স নাহয় ৯৯.৯৯%, কিন্তু, আমার বাসায় তো আমার বৃদ্ধ মা আছেন, আমার পাঁচ মাস বয়েসী সন্তান আছে, আছে আমার স্ত্রী। এর বাইরেও, আমি যে এলাকায় থাকি, সেখানে অনেক বৃদ্ধ মানুষ আছেন যাদের করোনায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। নিজের জন্য না হোক, অন্তত অন্য সবার জন্য হলেও নিজেকে গুটিয়ে রাখার মাঝে কল্যাণ আছে বলে মনে করছি। আমার একটু অসতর্কতার দরুন এই রোগ অন্য একজনের শরীরে বাসা বাঁধবে, এবং যদি তাতে তার মৃত্যু হয়, তাহলে এর দায় কিভাবে দেবো? অন্তত, আল্লাহর কাছে?

তো, কি করছি?

একান্ত, খুব দরকার না হলে বাইরে বেরুচ্ছিনা। অফিসে বলে কয়ে ছুটি নিয়ে নিয়েছি। দরকার পড়লে বাসায় বসে অফিস করা যাবে। কম্পিউটার-ল্যাপটপে ইন্টারনেট থাকলে মঙ্গলগ্রহ থেকেও অফিস করা সম্ভব। বাইরে বেরুলে অবশ্যই মাস্ক পড়ছি। জটলা এড়িয়ে চলছি। দোকানদারদের সাথে কথাবার্তা, জিনিসপত্রের দরদাম করার সময় বেশ দূরত্ব রেখে চলছি।

যতোক্ষণ বাইরে থাকি, ততোক্ষণ নাকে, মুখে, চোখে হাত লাগাচ্ছি না। এটা যতো বেশি পারা যাবে, করোনায় আক্রান্ত হবার হার ততো কমে আসবে, ইন শা আল্লাহ।

বাইরে থেকে এসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিচ্ছি। নিজের ওয়ালেট আমি ছাড়া আর অন্য কাউকে ধরতে দিচ্ছিনা আপাতত, কারণ টাকাগুলো যেহেতু অনেক অনেক মানুষের হাত বদল হয়, তাই সেগুলোর সাথে জীবাণু চলে আসা খুব সম্ভব। এজন্যে আমার ওয়ালেট আপাতত আমি ব্যতীত বাসার আর অন্য কেউ ধরছেনা।

চেষ্টা করছি বাইরে গেলে ফোন স্পর্শ না করতে। কারণ, তখন হাতে জীবাণু লেগে যেতে পারে৷ আর ওই জীবাণু ফোনে লাগলে, ফোন থেকে কথা বলার সময় মুখে, নাকে চলে আসা খুব সহজ৷ বাড়তি সতর্কতা।

এই সময় করোনাকে ব্যাপকভাবে আটকাতে হলে, আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে বুস্ট করতে হবে। তাই, খাদ্য তালিকায় ভাজাপোড়া খাবার তো বাদ-ই, সবুজ শাকসবজি, লেবু, আদা, রসুন, ব্রকলি সহ পুষ্টিকর খাবার যোগ করেছি। ভিটামিস সি জাতীয় ফলমূলও বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করছি। ভিটামিস সি জিনিসটা বেশি বেশিই নিচ্ছি।

মসজিদে জামা'আতে যাচ্ছি, কিন্তু সতর্কতার সাথে। অযূ বাসা থেকেই করে যাচ্ছি, কারণ মসজিদের কমন টেপগুলো অনেক মানুষ ব্যবহার করে। জীবাণু ছড়ানোর একটা ভালো মাধ্যম এটাও৷ চেষ্টা করছি জায়'নামাজটাও নিজে নিয়ে গিয়ে বিছিয়ে পড়তে, যেহেতু আমাদের মসজিদগুলোর ম্যাটে অনেক মানুষ সালাত পড়ে, সিজদায় হাঁচি-কাশির সাথে ম্যাটে জীবাণু লেগে থাকা অসম্ভব না। কিন্তু বিপদ হলো, এই দেশে এরকম সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখলে মানুষ এমনভাবে তাকায় যেন আকাশ থেকে টুপ করে এলিয়েন নেমে এসেছি। বিব্রতকর অবস্থা! কিন্তু, পাছে লোকে কি বলবে এরজন্য তো অসতর্ক হওয়া যাবেনা।

কেউ কেউ বলছে, 'আরে, আল্লাহ চাইলে মৃত্যু হবেই। এতো চিন্তার কি আছে?' কথা সত্য। কিন্তু, তাওয়াক্কুলের সংজ্ঞাটা এরকম না। এক সাহাবি একবার নবিজীর কাছে তাওয়াক্কুল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, 'আগে ঘোড়াটাকে রশি দিয়ে খুঁটিতে বাঁধবে, এরপর তাওয়াক্কুল করবে'।

মানে হলো, আগে সতর্কতার সবকটা স্তর পূরণ করতে হবে। সাথে তাওয়াক্কুল। সতর্ক না হয়ে, 'আরে কিছু হবেনা' টাইপ কথা বলার মধ্যে সঠিক তাওয়াক্কুল নেই।

সবমিলিয়ে, ঘরেই আছি। কতোদিন থাকবো জানিনা। আল্লাহ যেন এই দূর্যোগ থেকে আমাদের দ্রুত মুক্তি দেন। আপনাদেরও বলি, প্যানিকড হইয়েন না, কিন্তু সতর্ক হোন। আপনি সতর্ক হওয়া মানে আপনার ফ্যামিলিটা সেইফ থাকা। বাইরে যেতে হলে, অফিস-কাজে কর্মে যেতে হলে সতর্ক থাকুন। মাস্ক পড়ুন। বেশি বেশি হাত ধুবেন। বাইরে থাকাকালীন সময়ে, হাত না ধুয়ে কোনোভাবেই নাকে-মুখে-চোখে হাত লাগাবেন না। অফিসে গিয়ে, বাসায় এসেও ভালোভাবে হাত ধুবেন। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার খান। শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বুস্ট করবে এই জাতীয় খাবার বেশি বেশি খান। মনে রাখবেন, আপনার স্ট্রং ইমিউনিটি সিস্টেম করোনাকে আপনার শরীর থেকে উপড়ে ফেলতে পারে।

আর হ্যাঁ, দুয়া, ইস্তিগফারের কথা কিন্তু ভুললে চলবেনা।’’


আরো সংবাদ



premium cement