২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ত্বক ও চুলের বন্ধু অ্যালোভেরা

মডেল : সোনিয়া হোসেন, ছবি : মোহসীন আহমেদ কাওছার -


অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী আজকাল সবারই চেনা এবং এটি খুব সহজলভ্যও। এমনকি অ্যালোভেরা জেল দিয়ে তৈরি শরবতও কিনতে পাওয়া যায় শহরের অলিগলিতে। অ্যালোভেরা মূলত একটি গাছ যার পাতাগুলো মোটা। এই পাতার ভেতর থাকে অ্যালোভেরা জেল। এটি খাওয়া যেমন শরীরের জন্য উপকারী, তেমনি ত্বক ও চুলের যতেœ অ্যালোভেরার জেল বা জেল দিয়ে তৈরি মাস্ক ভীষণ উপকারী। এটি রোদে পোড়া দূর করে। অ্যালোভেরাতে আছে প্রচুর কোলাজেন যা রোদে ক্ষতিগ্রস্ত চুল ও ত্বকের ক্ষতিপূরণ করে। এটি শুষ্ক ত্বক ও চুলের শুষ্কতা নিয়ন্ত্রণ করে, মুখের বলিরেখা কমায়, চুলের খুশকি দূর করে, চুল মজবুত করে, ত্বক ও চুল ময়শ্চারাইজ করে। এ ছাড়াও অ্যালোভেরার আছে আরো নানাবিধ গুণ ও নানাবিধ ব্যবহার।

শুষ্ক ত্বকের যতেœ অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরাতে আছে হিলিং ও হাইড্রেটিং প্রপার্টি যা শুষ্ক ত্বকের জন্য খুবই দরকারি। অ্যালোভেরার ভেতরের জেল বের করে সরাসরি ত্বকে লাগান। এটি আপনার ত্বকের গভীরে পৌঁছাবে। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা স্ক্রাব : অ্যালোভেরা হলো একটি ক্লিনজিং এজেন্ট যা ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করে। এ ছাড়াও এতে আছে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা। স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে প্রথমে অ্যালোভেরার জেল বের করে নিতে হবে। এতে অল্প চিনি নিয়ে আলতোভাবে ত্বকে স্ক্রাব করতে হবে। এতে এক দিকে যেমন ত্বকের ময়লা দূর হবে, আরেক দিকে ব্রণের জীবাণুও দূর হবে।

ঝলমলে ত্বক পেতে অ্যালোভেরা : রাতে ঘুমানোর আগে মুখ, গলা ও ঘাড়ে অ্যালোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মুছে ময়শ্চারাইজার লাগান। সপ্তাহে ২ দিন এই মাস্কটি ব্যবহার করুন। কিছু দিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন ত্বকের ঝলমলে আভা।

দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা
ব্রণ ও অন্য নানা ধরনের দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর। দাগ দূর করার জন্য খরচসাপেক্ষ কোনো চিকিৎসার পেছনে টাকা ঢালার আগে অ্যালোভেরা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটোরি, অ্যান্টিসেপ্টিক, এস্ট্রিঞ্জেন্ট প্রপার্টি ও খুব উচ্চ পরিমাণে ময়েশ্চার কনটেন্ট যা একসাথে মিলে দাগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও অ্যালোভেরা ত্বকের নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে ফলে দাগযুক্ত কোষ দূর হয়ে নতুন দাগহীন কোষ জন্মায়। এক চা চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ৬ ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে দাগের ওপর লাগান। নিয়মিত লাগালে দাগ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। গর্ভাবস্থায় সৃষ্টি হওয়া স্ট্রেচ মার্কস দূর করতে হলে প্রতিদিন তিনবার দাগের ওপর অ্যালোভেরা জেল লাগালে এই দাগও সময়ের সাথে মিলিয়ে যায়।

ভ্রƒ ও চোখের পাপড়ির যতেœ অ্যালোভেরা : ভ্রƒ দু’টি সেট ও কন্ডিশনিং করতে অ্যালোভেরা খুবই কাজের জিনিসÑ যেমন সহজ তেমনি সস্তা। একটি চিকন ব্রাশে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিন। তার পর দু’টি ভ্রƒতে ব্রাশটি বুলিয়ে নিন। ভ্রƒ দু’টি সারা দিন সেট হয়ে থাকবে এবং চিকচিক করবে। অ্যালোভেরা চুল ঘন হতে ও বাড়তে সাহায্য করে। তাই সমপরিমাণ অ্যালোভেরা জেল ও ভার্জিন অলিভ অয়েল মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে ভ্রƒ ও চোখের পাপড়িতে লাগিয়ে নিন। অচিরেই পাবেন ঘন পাপড়ি ও ভ্রƒ।

পা ফাটা সারাতে অ্যালোভেরা : পা ফেটে গেলে ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে পায়ে ম্যাসাজ করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না ত্বক সেটা শুষে নিচ্ছে। ময়শ্চারাইজারের সাথেও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিয়ে পায়ে ব্যবহার করতে পারেন। নরম কনুই ও হাঁটু পেতেও ময়শ্চারাইজারের সাথে মিশিয়ে বা সরাসরি অ্যালোভেরা জেল লাগাতে হবে।

চুল ময়শ্চারাইজ করতে : শুধু ত্বকই নয়, চুল ময়শ্চারাইজ করতেও অ্যালোভেরা সমানভাবে কার্যকরী। চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে গেলে অ্যালোভেরা সেটা সারিয়ে তুলতে পারে এবং চুলের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে সারিয়ে তুলতে পারে। অ্যালোভেরা কেটে ভেতর থেকে জেল বের করে কাঁটা চামচ দিয়ে চেপে চেপে কুচি করে নিন বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। সারা চুলে লাগিয়ে চুল শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন ৩০ মিনিট।
তার পর পানি দিয়ে ভালোমতো ধুয়ে ফেলুন। চুল ময়শ্চারাইজ করতে আরেকটি অ্যালোভেরা মাস্ক তৈরির পদ্ধতি হলোÑ এক কাপ টকদই, আধা কাপ অ্যালোভেরা, ৬ টেবিল চামচ মধু, ৬ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল একসাথে ব্লেন্ড করে চুল ও তালুতে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। তার পর ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে : অ্যালোভেরাতে আছে অ্যান্টি-এজিং উপাদান। ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারীদের নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ৯০ দিন অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ত্বকে কোলাজেন তৈরির হার অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া ত্বকের ইলাস্টিসিটিও বৃদ্ধি পায়। এই দু’টি জিনিস ত্বককে তরুণ ও বলিরেখামুক্ত রাখতে খুবই জরুরি। অ্যালোভেরার একটি পাতা নিয়ে মাঝ বরাবর ছিঁড়ে নিতে হবে। হলুদ কষ বের হওয়ার পর কষটা ফেলে দিয়ে তার পর সারামুখে অ্যালোভেরা ম্যাসাজ করে লাগাতে হবে। এভাবে তিন মাস একটানা করতে হবে।

খুশকি দূর করতে অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরাতে আছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান। অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে মাথার তালুতে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়াও অ্যালোভেরা জেল ও টি ট্রি অয়েল একসাথে মিশিয়ে হেয়ার সেরাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

চুল পড়া রোধ করতে ও কন্ডিশনার হিসেবে অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরা চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে ও চুলের গোড়া শক্ত করে। এটি কন্ডিশনার হিসেবেও দারুণ কাজ করে। চুলে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখলে তা চুলকে ভেতর থেকে কন্ডিশন করে। ফলে চুলের ইলাস্টিসিটি বাড়ে ও চুল মাঝ থেকে ভেঙে যায় না।

রিলাক্সিং আইস কিউব : কাচের মতো সুন্দর ও চকচকে ত্বক পেতে ব্যবহার করুন এই আইস কিউবটি। অ্যালোভেরা জেল ব্লেন্ড করে আইসট্রেতে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন। বরফ হয়ে গেলে প্রতিদিন একটি করে আইস কিউব ব্যবহার করুন সারা মুখে। এতে বড় হয়ে যাওয়া লোমকূপের মুখ বন্ধ হবে এবং মুখে আসবে চকচকে ভাব। এ ছাড়াও দাগ দূর হবে ও ত্বকের বলিরেখা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ত্বকে একটি অ্যালোভেরা আইস কিউব বুলিয়ে নিন। ৯০ দিন পর দেখবেন আপনি পেয়ে গেছেন অসাধারণ সুন্দর ত্বক। মেকআপ করার আগে এই আইস কিউব ব্যবহার করলে মুখে মেকআপ সুন্দর বসবে।

অ্যালোভেরা ব্যবহারে সতর্কতা

অ্যালোভেরা সাধারণত ত্বকের জন্য নিরাপদ কিন্তু কিছু মানুষের অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জি থাকে। যাদের পেঁয়াজ বা রসুনে অ্যালার্জি থাকে তাদের অ্যালোভেরাতে এলার্জি থাকার সম্ভাবনা বেশি। প্রথমবার অ্যালোভেরা ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নেয়া উচিত। কনুইয়ের ভেতরের দিকের অংশে অল্প একটু জায়গায় অ্যালোভেরা লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে দেখুন। যদি কয়েক ঘণ্টার মাঝে কোনো সমস্যা না হয় তা হলে মুখের ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারবেন।
যদি কোনো স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করেন বা ওষুধ খান, তা হলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরার পাতা কাটার পর পাতা থেকে হলুদ এক ধরনের তরল বের হয়। এই তরলটি চুলকানির সৃষ্টি করে। এটি বের হতে সময় দিন। অ্যালোভেরা পাতা কেটে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। ১ ঘণ্টা পর হলুদ তরলটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে দিন।


আরো সংবাদ



premium cement