২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সূর্যমুখী ফুলের সাথে

-

মানুষ সুন্দরের পূজারী, যেকোনো সুন্দর জিনিস পেতে মানুষের মন ব্যাকুল হয়। ফুল হচ্ছে মানুষের কাছে তেমনি ভালোবাসা ও আকাক্সক্ষার বস্তু। মন ভালো করার জন্য ফুলের বাগানে ভ্রমণ অত্যন্ত সুখকর একটি বিষয়। ফুল এমন একটি বস্তু ‘যা চোখের পলকেই বিষণœ মনকে প্রফুল্ল করে দিতে পারে। সত্যি কথা বলতে একটি মানুষ মনের দিক দিয়ে যতই কঠোর হোক না কেন, ফুল তার ভালো লাগবেই। কেননা ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। সহধর্মিণী সানন্দা এসেছেন ঘুরতে, তাই আগের থেকেই আবদার করে রেখেছিল তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। কিন্তু নতুন কোথায় যাওয়া যায়, পড়লাম বেশ চিন্তায়। হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোঁজ পেলাম সিলেট শহর থেকে অল্প দূরত্বে কামাল বাজারে সূর্যমুখী ফুলের বাগানে। মনটা বেজায় খুশি হলো নতুন একটি জায়গায় ঘুরতে যেতে পারব ভেবে। তা ছাড়া সহধর্মিণীর আবদার ও পূরণ করতে পারব। যাহোক, শনিবার দিনের দ্বিতীয় প্রহরে আমরা বের হলাম সূর্যমুখী ফুলের বাগান ঘুরে দেখার জন্য। সূর্যের প্রখরতার মধ্য দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি নতুন গন্তব্যের পানে। সাথে আছে আমাদের পাইলট পলাশ ভাই। বন্দর বাজার, দক্ষিণ সুরমা, টেকনিক্যাল রোড পেরিয়ে চলছি আমরা। মহাসড়ক থেকে নতুন পথে পা দিলাম। আমরা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, পথে দেখা মিলল মায়াবতি সুরমা নদীর অসাধারণ রূপ। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা করে মাছ ধরছে নাম না জানা মাঝি। আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে রেললাইনের পাশ বেয়ে। রেললাইনের আঁকা-বাঁকা পথের দৃশ্য মনকে নাড়িয়ে দেয়। আমরা গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। এ দিকে সূর্যমামা তার রক্তিম বর্র্ণ প্রদর্শন করে বেশ মায়াবী রূপ ধারণ করেছে। রেললাইন ধরে হাঁটছি আর নতুন স্থানের সব কিছুকে দেখছি প্রখর দৃষ্টিতে বেশ মনোযোগের সাথে। আমাদের গাড়ির পাইলট পলাশ ভাই মনে করিয়ে দিলেন আমাদের গন্তব্য কামাল বাজারে যেতে হলে এখনই যেতে হবে। তাই আবার আমরা গাড়িতে চেপে রওনা দিলাম গন্তব্যে। নতুন গন্তব্য পথ তাই চার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে। এই বুঝি গন্তব্য স্থান পেরিয়ে চলে যাচ্ছি। স্বাগতম কামাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ দেখে খুব খুশি হলাম। এবার বোধ করি চলে এসেছি গন্তব্যে। কিন্তু বেশ খানিক পথ যাওয়ার পরও কোনো ফুলের তো দেখা পাচ্ছি না। ভুল পথে চলছি না তো আমরা। পলাশ ভাইকে বললাম, এলাকার কারো কাছে জেনে নিন সঠিক পথে যাচ্ছি তো আমরা। পলাশ ভাই গাড়ি থামিয়ে জানতে চাইলেন, কোথায় গেলে সূর্যমুখী ফুলের বাগানের দেখা পাওয়া যাবে। প্রত্যুত্তরে জনৈক ভদ্রলোক বললেন, সামনেই দেখা পাবেন ফুলবাগানের। আগন্তুকের কথামতো কিছু দূর যাওয়ার পরই আমরা দেখা পেলাম আমাদের কাক্সিক্ষত সেই সূর্যমুখী ফুলের বাগান। নীল আকাশের মায়াবী রূপের সাথে সূর্যমুখী ফুলের মায়াবী রূপ যে কারোর মনকে নাড়া দিতে বাধ্য। আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন এই নতুন গন্তব্য দেখতে। মাঠজুড়ে হলুদের রাজ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা। হলুদের আভায় চার দিকেই যেন ছড়িয়ে আছে অপার মুগ্ধতা। রূপে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে যে কারোরই। সবুজ মাঠ আর হলুদের ফুলের ওপর মৌমাছি, পাখির আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। ফুল থেকে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত হচ্ছে মধুও। সূর্যমুখী ক্ষেতে পাখির আনাগোনা। সূর্যমুখী ফুলের মোহনীয় রূপ আমাদের বিমোহিত করল। অনুমতি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করি। অসাধারণ লাগছিল সূর্যমুখী ফুলের বাগান দিয়ে হেঁটে যেতে। আমি একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। বলে রাখা ভালো, শীতের ফুল সূর্যমুখী। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর নাম হয়েছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর বৈজ্ঞানিক নাম হেলিয়ানথাস। দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে একে সূর্যমুখী ফুল বলা হয়। এর পাপড়িগুলো চারদিকে ছড়ানো। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। এই ফুলের গাছ ১ থেকে ৩ মিটার উঁচু আর কাণ্ড ও পাতা বেশ রোমশ হয়। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। আমাদের দেশে শীতকালীন শস্য হিসেবে এর চাষ হয়ে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী তেল ফসল হিসেবে এ দেশে আবাদ হচ্ছে। সূর্যমুখী কয়েক জাতের হয়। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সূর্যমুখী ফুল ফোটে। এর বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। সূর্যমুখীর তেল ‘ঘি’ এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়, যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেল থেকে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকরী। বন্ধুদের কাছে একটি অনুরোধ করব, যারা যাবেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান ঘুরে দেখতে; দয়া করে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করুন ফুলবাগানে। কোনো প্রকার পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট ফেলে দূষিত করবেন না পরিবেশ।

পথের ঠিকানা
ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, রাজারবাগ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রিনলাইন, শ্যামলী, এনা, হানিফ বা বিআরটিসি বাসে অথবা ট্রেনে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালে আন্তঃনগর পারাবাত, দুপুরে জয়ন্তিকা ও কালনী এবং রাতে উপবন সিলেটের পথে ছোটে ভাড়া ৩৬০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। সিলেট শহর থেকে কামাল বাজার সিএনজি অথবা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে। ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা।
ছবি : লেখক


আরো সংবাদ



premium cement
২০২৪-এর নির্বাচন : স্বৈরশাসনের হাতছানি গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা

সকল