২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জ্বর-কাশির চেয়ে স্বাদ-গন্ধ না পাওয়া করোনার বড় লক্ষণ

- ছবি : সংগৃহীত

করোনা সংক্রমণ হয়েছে কি না, গবেষকরা এখন বলছেন, তা বোঝার আরো নির্ভরযোগ্য ইঙ্গিত হল আপনার স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে কাশি বা জ্বরের চাইতে স্বাদ-গন্ধহীনতা কোভিডের আরো স্পষ্ট লক্ষণ।

এবছরের গোড়ার দিকে স্বাদ ও গন্ধ পাচ্ছিলেন না এরকম প্রায় ৬০০ রোগীর ওপর এক গবেষণা চালিয়েছে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ, এবং এদের ৮০ ভাগের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

যাদের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৪০ ভাগের জ্বর বা অনবরত কাশির মত কোভিডের অন্য কোন উপসর্গ ছিল না।

এই গবেষণা চালানো হয়েছে যাদের হালকা উপসর্গ ছিল তাদের ওপর।

করোনাভাইরাসের একটা লক্ষণ যে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া, সেই তথ্যপ্রমাণ প্রথম সামনে আসতে শুরু করে এপ্রিল মাস নাগাদ। মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ করোনার উপসর্গের তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এটা নিশ্চিত একটা লক্ষণ হিসাবে যুক্ত হয়।

করোনাভাইরাসের বর্তমান নির্দেশিকাতে বলা আছে, কারো যদি স্বাদ-গন্ধ চলে যায় বা কেউ যদি স্বাদ-গন্ধ আগে যেভাবে পেতেন তাতে কোন পরিবর্তন লক্ষ করেন, তাদের সেল্ফ-আইসোলেট করতে হবে অর্থাৎ তাদের সকলের থেকে আলাদা থাকতে হবে এবং কোভিডের পরীক্ষা করাতে হবে।

কিন্তু লন্ডনের এই গবেষণার ফলাফলের প্রধান লেখক অধ্যাপক রেচেল ব্যাটারহাম বলছেন এখনো মানুষ কাশি ও জ্বরকেই কোভিডের প্রধান উপসর্গ হিসাবে দেখছেন।

তিনি ২৩ এপ্রিল থেকে ১৪ মে পর্যন্ত লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার পারিবারিক চিকিৎসকদের (জিপি) সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের মাধ্যমে সেইসব লোকেদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন যারা আগের চার সপ্তাহে স্বাদ ও গন্ধ চলে যাওয়ার কারণে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছিলেন। এদের ওপরই তারা গবেষণার কাজটি চালান।

এই অংশগ্রহণকারীদের সবার শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয় এবং দেখা যায় এদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে চারজনেরই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা পজিটিভ হয়, যা প্রমাণ করে তারা কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছিল।

তবে এই গবেষণার পরিসর ছিল সীমিত। অর্থাৎ যাদের হালকা উপসর্গ ছিল, যার মধ্যে ছিল স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া শুধু তাদের নিয়েই এই গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলে, সব কোভিড রোগীদের এই গবেষণা বা জরিপের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

তবে অধ্যাপক ব্যাটারহাম বলছেন, এই জরিপ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে কেউ যদি তার স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন বা মনে করেন হঠাৎ করে সুগন্ধী সেন্ট, ব্লিচ, টুথপেস্ট বা কফির মত ''দৈনন্দিন'' জিনিসগুলোর গন্ধ তিনি আর পাচ্ছেন না, তাহলে তার বিচ্ছিন্ন থাকা এবং পরীক্ষা করানো আবশ্যক।

অবশ্য সব করোনাভাইরাস রোগীর স্বাদ ও গন্ধ চলে যাওয়ার উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে। কিন্তু তিনি বলছেন কারো এধরনের অভিজ্ঞতা হলে এই গবেষণার আলোকে এটা বলা যায় যে তিনি যে কোভিড আক্রান্ত সেটার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

অধ্যাপক ব্যাটারহাম বলছেন, আপনাকে দেখতে হবে- নাক বন্ধ হয়নি, বা সর্দি অথবা জ্বর হয়নি- কিন্তু মুখের স্বাদ চলে গেছে এবং গন্ধ পাচ্ছেন না। সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ তিনি দিচ্ছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে স্বাদ গন্ধের অনুভূতি চলে যাবার কারণ হলো এই করোনাভাইরাস নাকের ভেতর দিকে, গলার ভেতরের এবং জিভের কোষগুলোকে প্রথম আক্রমণ করে।

সাধারণ সর্দি জ্বরের থেকে এই অনুভূতি খুবই আলাদা। সাধারণ ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দিজ্বর হলে রোগীর শ্বাসনালী অনেকসময় ফ্লু ভাইরাসের আক্রমণের কারণে সঙ্কুচিত বা ব্লকড হয়ে থাকতে পারে। তাতে জিভে খাবারের স্বাদ নাও লাগতে পারে।

কিন্তু কোভিড আক্রান্ত হলে স্বাদ ও গন্ধ যেভাবে চলে যায় সেই অভিজ্ঞতা বেশ আলাদা।

লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষকরা যারা কোভিড উপসর্গ জরিপের একটি অ্যাপ চালাচ্ছেন, তারা আগে দেওয়া এক জরিপের ফলাফলে বলেছিলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ ভাগের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারিয়েছিল।

স্বাদ গন্ধ হারানো করোনা আক্রান্তদের জন্য হালকা ধরনের লক্ষণ এবং এই উপসর্গ নিয়ে কোন রোগীর সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি হবার নজির নেই। কিন্তু অধ্যাপক ব্যাটারহাম বলছেন এই লক্ষণের অন্য ঝুঁকির দিক রয়েছে। যেমন গন্ধ নাকে না গেলে আপনি হয়ত আগুন লাগলে ধোঁয়ার গন্ধ, গ্যাস লিক হলে গ্যাসের গন্ধ বা পচে যাওয়া খাবারের গন্ধ পাবেন না। এর গুরুতর ঝুঁকিও রয়েছে।

কোভিড আক্রান্ত কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে এই উপসর্গে ভুগেছেন বলে দেখা গেছে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে।

হাজার হাজার মানুষ অনলাইনে তাদের ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন তার ঘরে আগুন লেগেছে, অথচ তিনি ধোঁয়ার কোন গন্ধ পাননি। কেউ কেউ লিখেছেন সবসময় তারা পচা খাবারের টক টক গন্ধ বা জঞ্জালের দুর্গন্ধ পাচ্ছেন, কিন্তু আসলে কোথাও পচা কিছু নেই। পচা দুর্গন্ধের তাড়নায় তাদের জীবনধারণ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলেছেন সব খাবার মুখ দিলে তাদের মনে হচ্ছে খাবারে একটা ধাতব গন্ধ। ফলে খাওয়াদাওয়া তাদের বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুই তারা খেতে পারছেন না।

অনেকে আবার করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার কয়েকমাস পরেও খাবারের কোন স্বাদ পাচ্ছেন না। এক ব্যক্তি তো বলেছেন, মাংস মুখে দিলেই তিনি তাতে পেট্রলের গন্ধ পাচ্ছেন।

অধ্যাপক ব্যাটারহাম বলছেন অনেকে যারা স্বাদ গন্ধের অনুভূতি হারাচ্ছেন, তারা বুঝতেও পারছেন না এটা কোভিড-১৯ এর একটা লক্ষণ হতে পারে। তারা ভাবছেন তাদের জ্বর বা কাশি নেই। তাই অন্যদের সাথে তারা অবাধে মেলামেশা করছেন এবং ভাইরাস ছড়াচ্ছেন।

এই গবেষকরা বলছেন, যদিও স্বাদ আর গন্ধের অনুভূতি একটা অন্যটার সাথে জড়িত, কিন্তু কোভিড আক্রান্তদের ক্ষেত্রে স্বাদের চেয়ে গন্ধের অনুভূতি সম্পূর্ণ চলে যাওয়া বা সেটা বদলে যাওয়টাই বেশি দেখা যাচ্ছে। যারা করোনাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেছেন তারা তেমনটাই তাদের জানিয়েছে।

অধ্যাপক ব্যাটারহাম যখন এই গবেষণা ও জরিপের কাজ শুরু করেছিলেন, তখন কোভিডের স্বীকৃত উপসর্গগুলোর মধ্যে স্বাদ ও গন্ধ চলে যাওয়ার বিষয়টি আদৌ ছিল না। বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান

সকল