যে কারণে হজ গুরুত্বপূর্ণ
- মাওলানা মো: সিরাজুল ইসলাম কাসেমী
- ১০ জুন ২০২৩, ১৬:৫২
ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে পঞ্চম রোকন হলো হজ। কুরআনুল কারিমে ১০২ বার হজ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ: সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। পরিভাষায়: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মক্কা মুকাররামার নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে সফর করা এবং ইসলামী শরীআহ অনুসারে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা। নবম হিজরীর শেষ দিকে হজ ফরজ হয়েছে। হজরত মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম দশম হিজরীতে একবার সপরিবারে হজ পালন করেন। হজ শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। তাই উভয় দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। হজের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। নিম্নে হজের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করা হলো-
হজের গুরুত্ব-
১. ইসলামের পাঁচটি রোকনের মধ্যে পঞ্চম রোকন হলো হজ।
২. সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য হজ একটি অন্যতম ফরজ ইবাদত।
৩. হজ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।
৪. হজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়।
৫. তাকওয়া ও ইখলাস সহকারে ইবাদত চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালার নাম হজ ।
৬. হজ বিশ্ব মুসলিমের এক মহাসম্মেলনের কেন্দ্র ও মিলনমেলা।
৭. ইসলামের সর্বোত্তম পবিত্রতম স্থান, পূণ্যভূমি মক্কা-মদীনা জিয়ারতের সুবর্ণ সুযোগ।
৮. যেই কাবা ঘরের দিকে মুখ করে সারা জীবন সালাত আদায় করা হয়েছে সেই পবিত্র কাবা ঘর বাইতুল্লাহ জিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ।
৯. হজ বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।
১০. বর্ণ-গোত্র ও জাতীয়তার পার্থক্য ও ভেদাভেদ ভুলে সাম্যের প্রশিক্ষণের একটি মহান কেন্দ্র।
১১. ভেদাভেদ ভুলে মুসলমানদের আদর্শিক ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পবিত্র স্থান।
১২. রাসূল সা:-এর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন পবিত্র স্থান দর্শনের মহান সুযোগ।
১৩. বিশ্বের সকল মুসলিমের একের সাথে অপরের পরিচয়ের সুবর্ণ সুযোগ লাভ।
১৪. আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণার স্থান।
১৫. আল্লাহর কোনো শরিক নাই এ কথার স্বীকৃতি।
১৬. সকল নেয়ামত-ধন সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ এ কথার স্বীকারোক্তি।
১৭. তালবীয়া পাঠের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একচ্ছত্র রাজত্বের স্বীকৃতি।
১৮. কাফনের কাপড় পরিধানের মাধ্যমে সর্বোপরি দুনিয়া থেকে বিদায়ের একটি মহড়া অনুষ্ঠান এখানে বিদ্যমান।
হজের ফজিলত-
১. হজে গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর প্রতিনিধি ও মেহমান। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং হজ ও ওমরা পালনকারীগণ আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাদের ডেকেছেন, তারা সে ডাকে সাড়া দিয়েছে। অতএব, তারা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাই তাদের দিয়ে দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ : ২৮৯৩)
২. হজ জিহাদতুল্য ইবাদাত। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘বয়স্ক, শিশু, দুর্বল ও নারীর জিহাদ হলো হজ ও উমরা পালন করা।’ (নাসাঈ : ২৬২৬)
৩. হজ দারিদ্রতা দূর করে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা হজ ও উমরা পালন কর। কেননা হজ ও উমরা উভয়টি দারিদ্র্য ও পাপরাশিকে দূরিভূত করে। যেমনিভাবে হাপর স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহার মরিচা দূর করে দেয়। আর মাবরুর হজের বদলা হলো জান্নাত।’ (তিরমিযী : ৮১০)
৪. এক রাকাত সালাতে লক্ষ রাকাত সালাতের সওয়াব। জারেব বিন আব্দুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মসজিদুল হারামে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে (এ সালাতটি) এক লাখ বার আদায়ের চেয়েও বেমি সওয়াব।’ (আহমাদ-১৪৬৯৪)
৫. হজ পূর্ববর্তীকালে সকল গুনাহ মুছে দেয়। আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৮১১)
৬. মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে। আবু হুরায়রা রা: বলেন, আমি রাসূলকে সা: বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৫২১, সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৫০)
৭. হজে মাবরূরের প্রতিদান হলো জান্নাত। আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘এক ওমরা আরেক ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৩৫৪)
৮. সর্বোত্তম আমল। হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলকে সা: জিজ্ঞাসা করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, হজে মাবরূর বা কবুল হজ।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস : ২৬, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৩)
৯. নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তি ও শিশুদের সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজ ও ওমরাহ। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বললেন, না। বরং তোমাদের নারীদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হলো হজে মাবরূর।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস : ১৫২০)
১০. হজ ও উমরাকারীর দু’আ কবুল করা হয়। জাবির রা: বর্ণনা করেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘হজ ও ওমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা দু’আ করলে তাদের দু’আ কবুল করা হয় এবং তারা কিছু চাইলে তাদেরকে তা দেয়া হয়।’ (মুসনদে বাযযার, হাদিস : ১১৫৩)
আল্লাহ তাআলা সকলকে হজের গুরুত্ব বুঝে হ্জ করার ও ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন এবং কবুল হজ নসিব করুন। আমিন।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক। মোবাইল : ০১৭১২৬২৯২৬৩
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা