২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হজ : আল্লাহ প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন

- ছবি : সংগৃহীত

ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদি আমল হলো স্বামর্থ্যবানদের জন্য হজ করা। হজ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার ওপর অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। মুমিন মাত্রই সর্বদা মনের ভেতর দৃঢ় সংকল্প থাকে জীবনে একটিবার আল্লাহর ঘর জিয়ারতের। নবীজী সা:-এর রওজা পাকে উপস্থিত হয়ে সালাম পেশ করার। মন সর্বদা ব্যাকুল থাকে হজরে আসওয়াদ চুমু খেয়ে গুনাহ মার্জন করার। ওই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে বছরের নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময় আল্লাহ প্রেমিকরা ইবরাহিমী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে হজের বিধান পালন করে।

এই ইবাদতে একদিকে যেমন ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন ফুটে ওঠে। অপরদিকে আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবিও ফুটে ওঠে। মাওলানা আলী মিয়া নদবী রহ. বলেন, ঔপনিবেশিক শাসন ও বৃহৎ শক্তির কূটনৈতিক অপচেষ্টায় ইসলামী উম্মাহ আজ বিভিন্ন জাতীয়তাবাদের অভিশাপের শিকার। হজ হলো ওই অভিশপ্ত প্রথার বিরুদ্ধে বিশ্বজনীন মহান ইসলামী জাতীয়তাবাদের বিজয় উৎসব। এখানে এসে এক হয়ে যায় শত কোটি মুসলমান। ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ভাষা-বর্ণের ব্যবধান। বিলীন হয়ে যায় মানবীয় ভৌগোলিক সীমান্তরেখার বিভেদ-প্রাচীর। স্বজাতীয় পোশাক- যা ছিল আত্মগর্বের প্রতীক- ছেড়ে ধারণ করে ইহরামের শুভ্র একক ইসলামী পোশাক। লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হয় লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। এখানে নেই ধনী-গরিব, মনিব-গোলামের কোনো প্রভেদ। নেই শাসকের প্রভূত্বসুলভ অহঙ্কার। নেই শাসিতের হীনমন্যতা। ভাষা-বর্ণ ছাপিয়ে সর্বত্র ভেসে উঠে সর্বজনীন ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মনোরম দৃশ্য।

ইসলামিক ভ্রাতৃত্ববোধ ফুটে ওঠা ছাড়াও হজে রয়েছে নিখাঁদ মাওলা প্রেমের প্রতিচ্ছবি। দুনিয়াতে মানুষ সরাসরি আল্লাহকে দেখে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত তার অজস্র নিয়ামত ভোগ করে থাকে। যেকোনো বিবেকবান মানুষই তা অনুধাবন করে। সেজন্য আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসে। হৃদয়ের সজীবতায় সেই ভালোবাসা আরো নিবিড় হয়। এ ভালোবাসা যখন উপচে পড়ে মন উতলা হয়ে ওঠে, তখনই প্রেমাস্পদের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষা মানুষকে অস্থির করে তোলে। দুনিয়াতে যেহেতু মানুষ আল্লাহকে দেখতে পারবেনা, তাই মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার এই নিখাঁদ ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য কাবা শরীফকে নিজের ঘর বলে আখ্যা দিয়েছেন। যাতে বান্দা এই ঘরে এসে কিছুটা হলেও প্রেমাস্পদের সান্নিধ্যের সাধ আস্বাদন করতে পারে।

হজে মানুষ এমন কিছু কাজ করে, যা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক মূল্যবান। বান্দা শুধু মাওলা প্রেমে পাগলপারা হয়ে সেলাইবিহীন কাফন সদৃশ কাপড় পরে, খালি মাথায় চুল নখ না কেটে, সুগন্ধি ব্যবহার না করে, বাইতুল্লাহর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে, সাফা মারওয়ায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করে, জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে। এসব বান্দা হৃদয়ে লালিত পরম মোহাব্বতের বহিঃপ্রকাশ।

এই মোহব্বতের প্রতিদানের কথা আল্লাহর রাসূলের পবিত্র যবানে উচ্চারিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। সুনানে তিরমিজী, হাদিস : ৮১১।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছিল। সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৫২১, সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৫০

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ


আরো সংবাদ



premium cement