২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘হারামাইনের মুসাফির’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ফয়সাল আহমাদ। কাতার প্রবাসী বাংলাদেশী আলেম। দেশটির রাজধানী দোহার একটি মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। কিছুদিন আগে ঘুরে গেলেন দেশ থেকে। ফেরার কিছু দিন পরই নিজের কর্মস্থলে নিয়ে গেছেন স্ত্রী, ৬ মাস বয়সী সন্তান ও বাবা-মাকে। সেখানে পৌঁছে তাদের নিয়ে রওনা হয়েছেন পবিত্র দুই ভূমি মক্কা-মদিনার হারামাইনের উদ্দেশে, ওমরাহ পালনের জন্য। আর এই সফরটি হচ্ছে ফয়সাল আহমাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে। নিজেই ড্রাইভিং করে স্বপ্ন সফরে বের হয়েছেন তার সবচেয়ে কাছের মানুষদের নিয়ে। তার মসজিদ থেকে মক্কার দূরত্ব ১৪৫১ কিলোমিটার। সেখান থেকে ফের রওনা করবেন মদিনায়, মসজিদে নববীতে, রাসূল সা:-এর রওজায় দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি সালাম পেশ করতে। আবেগাপ্লুত এই সফর ফয়সাল আহমাদের মনে কেমন অনুভূত হচ্ছে এবং কী ঘটছে পথেঘাটে। সেটাই সংক্ষেপে তুলে ধরছেন তিনি। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য রইল পবিত্র এ সফরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা-

এক
বাসা থেকে বের হওয়ার পর দুইটা বড় বিরতি নিয়ে এখন পৌঁছেছি রুয়াইদা এলাকায়। অতিক্রম করেছি ৮১৮ কিলোমিটার পথ। আর মাত্র ৬০০ কিলোমিটার দূরে আল্লাহর ঘর, যতই কাছে যাচ্ছি, ততই সুবাস পাচ্ছি, এই অপেক্ষার স্বাদ কেবল এ পথের যাত্রীরাই বুঝতে পারে।
আব্বু, আম্মু, বাবুর মা, বাবু কেউই-আলহামদুলিল্লাহ-একটুও ক্লান্ত হননি, আমরা সবাই মিলে আমাদের জীবনের সেরা সময়টা কাটাচ্ছি, আল্লাহ হায়াতে বাঁচিয়ে রাখলে এই স্মৃতি রোমন্থন করে জীবনের শেষ সময়টাও রঙিন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

রিয়াদে এসে বিরতি নিয়েছিলাম এখানকার প্রসিদ্ধ রোমান্সিয়া রেস্টুরেন্টে, আসরের নামাজ আদায় করে এদের দুইটা ফেমাস আইটেম সিলেক্ট করার পর জানতে পারি যে ওগুলো শেষ, পাশে আরেকটা রেস্টুরেন্টের সন্ধান নিয়ে সেখানে যাই, একই অবস্থা এখানেও, খাবারের এটা নেই, ওটা নেই। পরে আরেকটু সামনে গিয়ে অপ্রসিদ্ধ রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু একটা খেয়ে নিয়েছি, আর গাড়িতে থাকা চা জুস পানি চিপস নুডলস চকলেট আমাদেরকে রিফ্রেশ করছে আলহামদুলিল্লাহ।

তবে নোট করার মতো বিষয় হচ্ছে রাস্তাঘাট কাতারের মতো মসৃণ না হলেও একেবারে খারাপ নয়। মাঝে বেশখানিকটা বৈরী পরিবেশে খাপ খেয়ে নিতে হয়েছে আরকি।

Untitled-2 (1)

রিয়াদে পৌঁছানোর আগে ধূলিঝড়ের কারণে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটার পথ অদেখার মতো এসেছি। আর রিয়াদের পর বৃষ্টির কবলে পড়ে পরিমাণের চেয়ে ধীরগতিতে আসতে হয়েছে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে উঁচুনিচু আঁকাবাঁকা পথে রাতের চেয়ে দিনে দিনে আসাটাই বেশি উপযোগী মনে হলো, কারণ কিছুটা রাস্তা ছাড়া ল্যাম্পপোস্টের দেখা মেলা ভার, একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

উঠেছি রুয়াইদা এলাকার একটা ছিমছাম হোটেলে, রাতে ঘুমিয়ে সকালের নাস্তা সেরে যাত্রা শুরু হবে এখান থেকেই। ওদিকে মক্কায় অপেক্ষা করছে বন্ধু ফয়সাল ও রিদওয়ান বিন হাফিজ। ওদেরকে নিয়ে আবার যেতে হবে তায়েফে। সবমিলিয়ে এবারের জার্নিটা আপডাউন ওভারঅল ৪০০০ কিলোমিটারের বেশি। সবাই দোয়ায় স্বরণ রাখবেন।

সফরের ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট তানভীর আহমাদ ফাহীম ভাই, আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক, দিলখোলা দোয়া আপনার জন্য।

দুই
গতকাল যাত্রা শুরু করি রুয়াইদা থেকে, একেতো সকালের ঘুমের চাপে উঠতে দেরি, আবার নাস্তা সেরে বের হতে হতেই ১১টা বেজে যায়।
প্রাথমিক টার্গেট নিলাম ননস্টপ ৩০০ কিলোমিটার, ৩০০ কিলো অতিক্রম করে ‘যালাম’ নামক এলাকায় পৌঁছলাম। কিন্তু বাধ সাধলো মাথাব্যথা, ১৪০ স্পিডের রাস্তা হলেও সর্বোচ্চ ১২০-এ ধীরেধীরে চালাতে হয়েছে, মাঝেমধ্যে সেটা ১১০-এ-ও নেমে এসেছে, একপর্যায়ে গাড়িটা মরুভূমির মাঝে সাইড করে নিলাম, উম্মে উনাইসা (স্ত্রী) খুব যত্ন করে মাথা ধুয়ে তেল লাগিয়ে একটু ম্যাসাজ করে দিলো, তারপর খুব রিফ্রেশমেন্ট অনুভব করি আলহামদুলিল্লাহ।

332703758_2915228958610983_2465849680069641844_n (1)

একপর্যায়ে ‘যালাম’ পৌঁছে যাই ২টার দিকে, বিরতি নেই এখানকার স্থানীয় এক পেট্রোল স্টেশনে, জোহরের নামাজ আদায় করে একটু কাত হয়েছিলাম, মসজিদ ও অত্র এলাকায় এতো ঝিঁঝিঁপোকা! গায়ে-পায়ে-পায়ে উঠে যাচ্ছিলো, অন্যদিকে জামাতের সময় অতিক্রম হওয়ায় এসিও বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ, গরমে ওভাবেই ১৫ মিনিট ঘুমানোর চেষ্টা করি, একটু ঘুম এলেই আবার মাছি ভনভন করে ওঠে। শেষমেষ দেরি না করে ওভাবেই বেরিয়ে পড়লাম।

ফের যাত্রা শুরু অজানায়, ছুটে চলছি তো চলছিই, বলে রাখা ভালো যে, কাতার থেকে ওমরাহ করতে গেলে তাদের মীকাত হলো ক্বরনুল মানাঝিল, যালাম থেকে ক্বরনুল মানাঝিলের দুরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার, ইচ্ছা ছিলো আসরের নামাজ মীক্বাতে গিয়েই আদায় করবো, গাড়ি ১৫০-১৬০ স্পিডে টেনে টেনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে যাই আমাদের মীক্বাত ক্বরনুল মানাঝিলে।

সুবহানাল্লাহ, মনে হলো গায়ে একটা রহমতের বাতাস লাগলো, পশম দাঁড়িয়ে গেলো, যদিও বাইতুল্লাহ বা সবুজ গম্বুজ এখনো অনেক দূরে, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুণ্যস্থান এটাই, আর নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে, আসলেই কি বাইতুল্লাহর জিয়ারাত আমার নসিবে আছে? আসলেই কি আল্লাহ আমাকে ডেকে নিচ্ছেন তার ঘরে? আসলেই কি তিনি আমাকে মেহমানদারী করাতে চান যমযমের সুপেয় পানি!

মাগরিবের নামাজ আদায় করে ইহরাম পরিধানের আগে চলে গেলাম কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে, গাড়ি স্টার্টে রেখে খাবার অর্ডার করার জন্য বের হতেই দেখি গাড়ির ডানপাশের লাইট অকেজো হয়ে আছে, এখানে কোথায় কী আছে কিছুই জানি না, গুগলের তদন্তেও লাইট রিপিয়ারের কোনো খোঁজখবর পেলাম না আশপাশে, ওদিকে ১২টার আগেই মক্কায় পৌঁছে হোটেলে চেক-চেক-ইন করতে হবে, এদিকে লাইট ঠিক না করে এখান থেকে এক চুলও নড়া যাবে না, দরকার হলে রাত এখানেই কাটাতে হবে, কারণ পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তায় অন্ধকারে লাইটবিহীন গাড়ি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। শেষমেষ...

চলবে...

 


আরো সংবাদ



premium cement