১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আত্মশুদ্ধি পূর্ণতা পাক রমজানে

- ছবি : সংগৃহীত

মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে পবিত্র মাহে রমজান আমাদের মাঝে উপস্থিত। আকাশে বাঁকা চাঁদ মুচকি হাসার সাথে সাথেই মাহে রমজানের শুভাগমন ঘটে, শুরু হয় তারাবিহর সালাতের মাধ্যমে পবিত্র মাসকে বরণ করে নেয়া। মুমিন মুসলমানদের কাছে এ এক পরম আনন্দ ও তৃপ্তির মুহূর্ত, তারা এ মৌসুমকে ইবাদত উপভোগের সুবর্ণ সুযোগ মনে করে। মুসলমানরা মাহে রমজানকে ফজিলত ও বরকত অর্জন এবং নিজের জীবন নিষ্পাপ পুণ্যময় করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।

ইতিহাসে আমরা দেখি সোনালি যুগের মুসলমানরা এ মাসকে যথাযথ ভাবগম্ভীর পরিবেশে অতিবাহিত করার জন্য রজব মাস থেকে প্রস্তুতি নিতেন এবং তারা রজব থেকে রমজান পর্যন্ত পুণ্য অর্জনের যে অবারিত ধারা প্রবাহিত হয় তা পাওয়ার জন্য খোদা তায়ালার কাছে ফরিয়াদ করতেন। খোদ আমাদের প্রিয় নবী সা: মোনাজাতে বলতেন, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগানা রামাদান।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন আর মহাপবিত্র মাহে রমজানে পৌঁছার তাওফিক দান করুন।’

রমজানুল মোবারক উপলক্ষে কুরআন ও হাদিসে যেসব বাণী এসেছে তা সত্যিই একজন মুমিনকে সৎপথে জীবন রচনার এক দুর্দমনীয় প্রতিযোগিতায় উদ্বেলিত করে তোলে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাস হলো সেই মাস- যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্যদিনে গণনা পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না- যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হিদায়াত দান করার দরুন আল্লাহতায়ালার মাহাত্ম্য বর্ণনা কর, (আর) যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ এর পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে- আর আমার বান্দারা যখন তোমার কছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে; বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিয়ে থাকি, যখন (তারা) আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য, যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে। (সূরা বাকারা : ১৮৫,১৮৬)।

উপরোক্ত আয়াত দু’টির প্রথমটিতে রমজান মাসকে অন্য ১১টি মাস থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে তুলে ধরা হয়েছে এবং এ মাসকে কুরআনের মাস হিসেবে আখ্যায়িত করে এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট করণীয় বিবৃত হয়েছে। এ মাসকে প্রকৃত হিদায়াত ও পথপ্রাপ্তির মোক্ষম মৌসুম বলেও এখানে ইশারা করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালার দরবারে আলিশানে ইবাদত বন্দেগী ও প্রার্থনার গুরুত্ব এবং এসব ব্যাপারে খুলুসিয়াত বা আন্তরিক বিশ্বাসের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আয়াতের মর্মার্থ দ্বারা বোঝা যায়, রমজান মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধির একটি ট্রেনিং পিরিয়ড এবং এ থেকে নিজেকে আমলের মাধ্যমে গঠন করার এক সুষ্ঠু পরিবেশ।

হাদিস শরিফে বারবার এ মাসকে প্রথম থেকেই অনুধাবন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত সালমান ফারেসী রা: একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিনকার ঘটনা। মহানবী সা: শাবান মাসের শেষ তারিখ আমাদের উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। এতে তিনি ইরশাদ করেছেন- হে লোক সকল! একটি মহান ও বরকতময় মাস তোমাদের সামনে উপস্থিত। এ মাসের রাতগুলোর মধ্যে এমন এক রাত বিদ্যমান যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাত্রি জাগরণকে করেছেন অতিরিক্ত ইবাদতে শামিল।

তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি এ মাসে একটি সাধারণ ভাল কাজ করবে অন্য মাসের তুলনায় তাকে একটি ফরজ ইবাদতের সাওয়াব প্রদান করা হবে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ ইবাদত পালন করবে তাকে ৭০টি ফরজ ইবাদতের সমপরিমাণ সাওয়াব প্রদান করা হবে। এ মোবারক মাস ধৈর্য ও সংযমের মাস। ধৈর্যের বিনিময় অবশ্যই জান্নাত। এ মাস পরোপকারের। এ মাসে বিশেষভাবে মুমিন বান্দাদের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। কেউ যদি একজন রোজাদারের ইফতারের ব্যবস্থা করে আল্লাহ তায়ালা তার পাপরাশি ক্ষমা করে দেন, তাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন এবং (রোজাদারের) রোজার সমান তাকে পুণ্য দান করেন। এ সময় সাহাবাগণ জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অনেকেই একজন রোজাদারকে ইফতারের ব্যবস্থা গ্রহণের মতো সক্ষম নই। হজরত জানালেন, এর জন্য বিশেষ কোনো আয়োজনের প্রয়োজন নেই। সামান্য দুধ, একটি খেঁজুর কিংবা অপারগতায় পানি দিয়ে ইফতারের ব্যবস্থা করলেও পরওয়ারদিগারে আলম উল্লিখিত পুণ্য দান করবেন। আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে পেটভরে তৃপ্তিসহকারে খাবারের ব্যবস্থা করবে আল্লাহ তাকে পবিত্র হাউজে কাউসারের পানি পার করাবেন যার পরে বেহেস্তে প্রবেশ পর্যন্ত তার কোনো পানির পিপাসা হবে না। এ মহান পবিত্র মাস তিনভাগে বিভক্ত। প্রথমাংশে আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। দ্বিতীয়াংশ ক্ষমা ও মার্জনার এবং শেষ অংশ দোজখ থেকে মুক্তিদানের। যে ব্যক্তি এ মাসে তার কর্মচারীর কাজের বোঝা কমিয়ে দেয় আল্লাহ তার গুনাহর বোঝা কমিয়ে দেন এবং দোজখের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করেন।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসকে সামনে রেখে আমরা দেখি, পবিত্র রমজান মাস আআত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের, সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার, পরস্পর সহানুভূতি ও সহমর্মিতার। এ মাস আধ্যাত্ম সাধনার, রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের। এর হুকুম আহকামগুলোও একই উদ্দেশ্য লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি। যেমন- ইফতার, সাহরী, তারাবিহ, খতমে কুরআন, যাকাত, ফিতরা, ঈদ-উল-ফিতর প্রভৃতি। মাহে রমজানের ব্যাপক উপকারিতা সঠিক উপলব্ধির মাধ্যমে কার্যতভাবে তা আমাদের মাঝে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তবেই আত্মশুদ্ধিতে আমরা নিজেদের আত্মাকে শুদ্ধ করতে পারবো।

লেখক : আলেম, লেখক ও সংবাদকর্মী

মেইল : kmmehedi520@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের।

সকল