২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৃষ্টি সংযত রাখুন, কল্যাণ লাভ করুন

দৃষ্টি সংযত রাখুন, কল্যাণ লাভ করুন - ছবি : সংগৃহীত

 

আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যা দেখা আমি হারাম করেছি, তা থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, (হে রাসূল) মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য শুদ্ধতর। তারা যা-কিছু করে, আল্লাহ তা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত।’ (সূরা : নূর, আয়াত : ৩০)

এই আয়াতে শুধু পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরের আয়াতে মহিলাদেরকেও দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন নারীদেরকেও বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনত রাখে ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (সূরা : নূর, আয়াত : ৩১)

এমনিভাবে প্রিয় নবী সা:-ও দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ইবনে বুরাইদাহ রা: তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: আলী রা:-কে বললেন, হে ‘আলী, কোনো নারীকে (নিজের স্ত্রী ও যাদের দেখা জায়েজ, তারা ব্যতীত) একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা তোমার জন্য প্রথমবার দেখার অনুমতি আছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা জায়েজ নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৯, তিরমিজি, হাদিস : ২৭৭৭)

অন্য হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী সা. বলেন, ‘তোমরা রাস্তার ওপর বসা ছেড়ে দাও। লোকেরা বলল, এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। কেননা এটাই আমাদের ওঠাবসার জায়গা। আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। তখন নবী সা: বলেন, যদি তোমাদের রাস্তায় বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করতে হবে। তারা জানতে চাইলো, রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ করা ও অন্যায় কাজে নিষেধ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৫)

এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিকে যে নির্দেশ দেন, তা সৃষ্টির কল্যাণেই দিয়ে থাকেন। এমনিভাবে রহমতের নবী সা:-ও উম্মতের কল্যাণেই বিভিন্ন বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তথাপি এখানে দৃষ্টি সংযত রাখার কয়েকটি উপকারিতা বর্ণনা করব। এগুলো আমাদেরকে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালনে সহযোগিতা করবে ইনশাআল্লাহ।

১. জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করলে রাসূল সা: তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়ে নেবেন। আর লজ্জাস্থানের হেফাজত তখনই হবে, যখন দৃষ্টিকে হারাম বস্তু দেখা থেকে সংযত রাখবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই ঠোঁটের মাঝখানের বস্তু (জিহ্বা) ও দুই পায়ের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থানের) জিম্মাদার হবে (অপব্যবহার থেকে সংযত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪, তিরমিজি, হাদিস : ২৪০৮, মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৭৯৫)

২. কোনো নারীর সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিকে সরিয়ে নিলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য এমন একটি ইবাদত করার সুযোগ দান করবেন, যার স্বাদ সে লাভ করবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু উমামা রা: নবী সা: থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘যে মুসলমান কোনো নারীর সৌন্দর্যের দিকে (প্রথমবার) দৃষ্টিপাত করে। এরপর দৃষ্টিকে অবনত করে ফেলে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য এমন একটি ইবাদতের সুযোগ করে দেবেন, যার স্বাদ সে লাভ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, ৫ : ২৬৪)

৩. অন্তরে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সা: ইরশাদ করেন, (আল্লাহ তায়ালা বলেন) দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীর। যে ব্যক্তি আমার ভয়ে তা পরিত্যাগ করবে, আমি তাকে এমন ঈমান দান করব, যার স্বাদ সে অন্তরে লাভ করবে।’ (আল-মুজামুল কাবির লিত্তবরানী, ১০/২১৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮/৬৩)

হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে শরিয়তের নির্দেশনা হলো, তাৎক্ষণিক দৃষ্টিকে হারাম বস্তুর দর্শন থেকে ফিরিয়ে নেয়া। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, জারির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী সা:-এর কাছে অনিচ্ছায় দৃষ্টি পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি আমার দৃষ্টি দ্রুত ফিরিয়ে নেই।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩৭)

লেখক : শিক্ষার্থী-উলুমুল হাদিস বিভাগ, মারকাযুদ দিরাসাহ আলইসলামিয়্যাহ ঢাকা।
ইমেইল : abdulmajid316045@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement