২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আল্লাহর পথে আহ্বানের গুরুত্ব

আল্লাহর পথে আহ্বানের গুরুত্ব - ছবি : সংগ্রহ

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন মুহাম্মাদ সা.-কে চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াত দান করেন। মুহাম্মাদ সা. প্রথম তিন বছর নীরবে গোপনে দীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। অতপর প্রকাশ্যে দা‘ওয়াত দেয়ার নির্দেশ আসার পর মুহাম্মাদ সা. প্রকাশ্যে দীনের দা‘ওয়াত দিতে থাকেন। মুশরিকরা হাসি-তামাশা, গাল-মন্দ, হুমকি-ধমকি এবং বানোয়াট কথা প্রচার করে তাঁর বিরোধিতা করতে থাকে। মুশরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সত্য-সন্ধানী মানুষেরা একে একে মু’মিনদের কাফেলায় শামিল হতে থাকে। এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মুশরিক শক্তি। নবুওয়াতের পঞ্চম সন থেকে দৈহিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এতই নাজুক হয়ে ওঠে যে বহু সংখ্যক মুমিন ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ভেড়া-ঘোড়া-উট ইত্যাদি পেছনে ফেলে হাবশায় হিজরত করেন। আর যারা মক্কায় থেকে গিয়েছিলেন তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।

নবুওয়াতের ৬ষ্ঠ সনে কুরাইশদের দশটি গোত্রের নয়টি গোত্র বানু হাশিমের বিরুদ্ধে একটি বয়কট চুক্তি স্বাক্ষর করে। মুহাম্মাদ সা.-কে হত্যা করার জন্য তাদের হাতে না দেয়া পর্যন্ত এই বয়কট চুক্তি বলবৎ থাকবে বলে স্থিরীকৃত হয়। প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ এড়ানোর জন্যে আবু তালিবের নেতৃত্বে বানু হাশিম এবং মুহাম্মাদ সা.-সহ মু‘মিনরা তাঁবু খাটিয়ে শিয়াবে আবু তালিব নামক স্থানে অবস্থান করতে থাকেন। তিনটি বছর পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে আল্লাহর অনুগ্রহে কয়েকজন বিবেকবান কুরাইশ যুবকের উদ্যোগে এই অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুহাম্মাদ সা., মু‘মিনরা এবং বানু হাশিম মুক্তি লাভ করেন। তবে বিরোধিতার মাত্রা সমভাবেই চলতে থাকে। মু‘মিনদের জন্য মক্কায় জীবন যাপন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। এই সময়টিতে নাযিলকৃত সূরাগুলোর একটি হচ্ছে সূরা আন্ নাহল। সূরা আন নাহলে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামিন অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় দা‘ওয়াত দানের পদ্ধতি তুলে ধরেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আল্লাহর পথে লোকদেরকে আহ্বান জানানোর বাস্তব সম্মত পদ্ধতি মু‘মিনদেরকে জানিয়ে এরশাদ করেন, ‘বিজ্ঞতা (বুদ্ধিমত্তা-বিচক্ষণতা) অবলম্বন করে ও নছীহাতপূর্ণ সুন্দর বক্তব্যের মাধ্যমে লোকদেরকে তোমার রবের পথের দিকে ডাক। আর তাদের সাথে বাক্য বিনিময় করো সর্বোত্তম যুক্তি-প্রদর্শন করে। অবশ্যই তোমার রব বেশি জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়েছে এবং তিনি বেশি জানেন কে আছে সঠিক পথে।’ [সূরা আন-নহল : ১২৫]

দা‘ওয়াহ এর অর্থ
শব্দটি দা‘ওয়াহ আরবি শব্দ হতে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ আহবান, নিমন্ত্রণ, ডাকা, সাহায্য কমনা, প্রচার, অনুরোধ ইত্যাদি। [লিসানুল আরব] অন্য অর্থে কাউকে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহিত করা প্রভৃতি। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে : 'সে (ইউসুফ) বলল, ‘হে আমার রব, তারা আমাকে যে কাজের প্রতি আহ্বান করছে তা থেকে কারাগারই আমার কাছে অধিক প্রিয়।' [সূরা ইউসুফ : ৩৩] পারিভাষিক অর্থে কোনো নির্দিষ্ট পথ, মত ও আদর্শের প্রতি মানুষকে আহবান জাননো ও বাস্তব জীবনে তা চর্চার পন্থা দেখিয়ে দেয়ার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সামগ্রীক পদ্ধতি ও কৌশলের নামই দা‘ওয়াহ। রবের পথে বলতে যে দা‘ওয়াত বা আহবান মানুষকে তার রব প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার দিকে আমন্ত্রণ জানায় তা-ই রবের পথে দা‘ওয়াহ। এটি আল্লাহ রব্বুল ‘আলামিনের একত্ব ও সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি আহবান ও তাঁর প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা দীন ইসলামকে পূর্ণরূপে গ্রহণ ও বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত কার্যক্রমকে নির্দেশ করে।

আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আদ্-দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ-র সরাসরি নির্দেশ রয়েছে। সূরা আল-মুদ্দাস্সির-এর ২য় ও ৩য় আয়াতে এই সম্পর্কে প্রথম নির্দেশ এসেছে। আয়াত দুটিতে মুহাম্মাদ সা.-কে সম্বোধন করে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন, ‘ওঠো, লোকদেরকে সাবধান করো। তোমার রবের বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো, প্রতিষ্ঠা করো।’ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আরো বলেন, ‘ওদেরকে বলো, এটাই তো আমার পথ যে আমি লোকদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই।’ [সূরা ইউসুফ : ১০৮]

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আরো বলেন, ‘তোমার রবের দিকে লোকদেরকে ডাকো।’ [সূরা আল মা-য়িদাহ : ৬৭] যে কথাগুলো ব্যবহার করে লোকদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানো হয় সেই কথাগুলো সর্বোত্তম কথা বলে উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন, ‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে লোকদেরকে ডাকে, আমালুছ্ ছালিহ করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের একজন।’ [সূরা হামিমুস সাজদাহ : ৩৩]

আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর (রা) থেকে বর্ণিত যে নবী সা. বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে একটি বাণী হলেও তা প্রচার কর। বানু ইসরাঈলদের থেকে (তাদের মধ্যে সংঘটিত বিষয়াদির) বর্ণনা করো, তাতে কোনো অসুবিধা নেই আর যে ব্যক্তি আমার নামে ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলবে সে অবশ্যই জাহান্নামে নিজের বাসস্থান বানিয়ে নেবে’। [সহিহুল বুখারি]

আহবানের বিষয়বস্তু
যুগে যুগে নবী-রাসূলদের আ. অভিন্ন আহবান ছিল তাগুতকে পরিহার করে আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যের দিকে মানুষকে নিয়ে আসা এবং মানুষকে তার রব প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার দিকে আমন্ত্রণ জানানো। যেমন- ইরশাদ করা হয়েছে : 'আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং পরিহার কর তাগুতকে।' [সূরা আন-নহল : ৩৬]

প্রাচীন ইরাকের উর সাম্রাজ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন ইবরাহিম আ.। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো এবং তাঁকে ভয় করে চলো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা তা বুঝো।’ [সূর ‘আনকাবূত-১৬]

প্রাচীন আরবের প্রতাপশালী আদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন হূদ আ.। তিনি তাঁর কউমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আমার কউম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই।’ [সূরা আল ‘আনকাবূত-১৬] সামুদ জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন ছালিহ আ.। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ [সূরা হূদ - ৬১] প্রাচীন আরবের তাবুক এবং এর নিকটবর্তী বিস্তৃত এলাকায় বসবাস করত মাদ্ইয়ান জাতি। এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন শুয়াইব আ. তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ নেই।’ [সূরা হূদ -৮৪]

কানান বা ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইয়াকুব আ.-এর এক নেক সন্তান ছিলেন ইউসুফ আ.। ঈর্ষাপরায়ণ ভাইদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি নির্জন মরুভূমির এক কূপে নিক্ষিপ্ত হন। একটি বাণিজ্য কাফিলার লোক তাঁকে কূপ থেকে বের করে মিসরে নিয়ে সেখানকার প্রতাপশালী এক ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করে। সেই প্রতাপশালী ব্যক্তির স্ত্রীর ষড়যন্ত্রে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। ইতোমধ্যে ইউসুফ আ. নবুওয়াত লাভ করেন। কারাগারের বন্দীদের মাঝেই তিনি দা‘ওয়াতি কাজ শুরু করেন।

বন্দীদের উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারো নয়। তাঁর নির্দেশ : তাঁকে ছাড়া তোমরা আর কারো ইবাদাত করবে না। এটাই মজবুত জীবনব্যবস্থা। অথচ অধিকাংশ লোকই তা জানে না।’ [সূরা ইউসুফ- ৪০]

প্রাচীন মিসরের ফিরআউন-এর কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন মূসা ইবনু ইমরান আ.। তিনি মিসরবাসীর কাছে এবং ফিরআউনের কাছে দীনের দা‘ওয়াত দিতে থাকেন। ফিরআউনের সামনে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদেরকে আমার হাতে সঁপে দাও। আমি তোমাদের প্রতি বিশ্বস্ত রাসূল হিসেবে প্রেরিত। আল্লাহর ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে যেও না। আমি তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট সনদ পেশ করছি।’ [সূরা আদ্ দুখান-১৮, ১৯] ফিলিস্তিনে আবির্ভূত হয়েছিলেন ঈসা ইবনু মারইয়াম আ.। তিনি তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার রব, তোমাদেরও রব। অতএব একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করো। এটাই সরল-সঠিক পথ।’ [সূরা মারইয়াম -৩৬]

দা‘ওয়াত দানের গুরুত্ব
আলোচ্য আয়াতে (সূরা আন-নাহলের ১২৫) যেমন দা’ওয়াতি কাজের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলাত বর্ণিত হয়েছে একইভাবে আল-কুরআনের অন্যান্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমাদের মধ্যে এরূপ এক দল থাকা উচিৎ যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে এবং ভালো কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজের নিষেধ করে আর তারাই সফলকাম’। [আল-‘ইমরান : ১০৪]

আল্লাহ তা‘য়ালা আরো ইরশাদ করেন : ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত, তোমাদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য উদ্ভব করা হয়েছে, তোমরা ভালো কাজের আদেশ করো এবং মন্দ কাজের নিষেধ করো এবং আলাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো’। [সূরা আলে-ইমরান : ১১০] উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা রা. বলেন : আমি রাসূল সা.-কে বলতে শুনেছি : ‘হে মানব সকল! আল্লাহ ‘আয্যা ও জাল্লা বলেন : তোমরা সৎ কাজের আদেশ করো আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখো, এমন মুহূর্ত আসার আগে যখন তোমরা আমাকে ডাকবে আমি তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো না, আমার কাছে চাইবে কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেব না এবং তোমরা আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে আমি তোমাদেরকে সাহায্য করব না’। [মুসনাদ আহমাদ]

আবু সা‘ঈদ আল-খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘তোমাদের কেউ কোনো অন্যায় দেখলে সে যেন হাতের দ্বারা তা পরিবর্তন করে। যদি তাতে সক্ষম না হয় তাহলে সে যেন তার জিহ্বা দ্বারা তা পরিবর্তন করে, তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সে যেন অন্তর দ্বারা পরিবর্তন করে আর এটা সর্বাধিক দুর্বল ঈমান।’ [সহীহ মুসলিম]

আবু মাস‘উদ উকবা ইবনু আমর আল আনসারী রা. হতে বর্ণিত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যেই ব্যক্তি কোনো ভালো পথ দেখায়, সেই ব্যক্তি এতটাই বিনিময় পায় যতটা ওই কাজ সম্পাদনকারী পেয়ে থাকে।’ [সহিহ মুসলিম] আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে হিদায়াতের পথের দিকে ডাকে, তার জন্য ওই পথের অনুসারী ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত পুরস্কারের অনুরূপ পুরস্কার রয়েছে।’ [সহিহ মুসলিম] আবু সা‘ঈদ আল- খুদরি রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমরা রাস্তার পাশে বসার বিষয়ে সাবধান হও! তারা বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের বৈঠকে বসা ছাড়া আর উপায় নেই, আমরা তো সেখানে কথাবার্তা বলি। তিনি বলেন : তোমরা যদি বসতেও চাও তাহলে পথের হক আদায় করবে। তারা বললো: পথের হক কি? তিনি বলেন : দৃষ্টি সংযত করা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা, সালামের উত্তর দান করা, সৎ কর্মের নির্দেশ দেয়া এবং অন্যায় কর্মকে নিষেধ করা’। [সহিহ মুসলিম]

দা‘য়ীর কর্তব্য
একজন দা‘য়ীর অবশ্যই তাঁর প্রচারিত আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবান, বিশ্বাসী ও তার পূর্ণ অনুসরণকারী হবেন। তাকে সর্ব প্রথমে তার ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও সকল দিকে দা‘ওয়াতের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেছেন : ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা তা কেন বলো, যা তোমরা করো না? তোমরা যা করো না, তা বলা আল্লাহর কাছে বড়ই ক্রোধের বিষয়।’ [সূরা আস-সফ : ২-৩] একজন দা‘য়ী ইলাল্লাহ পূর্ণাঙ্গ ইসলামকেই মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। ইসলামের অংশ বিশেষ তুলে ধরা এবং অংশ বিশেষ গোপন করা অন্যায়। পূর্ণাঙ্গ ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরার তাকিদ দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে কে বেশি জালিম হতে পারে যার নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া একটি সাক্ষ্য রয়েছে, আর সেটি সে গোপন করে।’ [সূরা আল-বাকারা : ১৪০]

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আরো বলেন, ‘এমন যেন না হয় যে তোমার প্রতি যা কিছু ওহি করা হচ্ছে তার কিছু অংশ তুমি উপস্থাপন করা থেকে বাদ দেবে এবং এই সব প্রচারণায় তোমার মন সংকুচিত হবে যে এই ব্যক্তির ওপর কোনো ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন অথবা এর সাথে কোনো ফেরেশতা আসেনি কেন? তুমি তো কেবল একজন সতর্ককারী। আর সব কাজের বিধায়ক তো আল্লাহই’। [সূরা হূদ : ১২]

সমাপনী
বিজ্ঞতা-বুদ্ধিমত্তা-বিচক্ষণতা সহকারে লোকদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানাতে হবে। নছিহাতপূর্ণ সুন্দর বক্তব্য উপস্থাপন করে এবং সর্বোত্তম যুক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে লোকদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানাতে হবে। নবী-রাসূলদের (আলাইহিমুস্ সালাম) অভিন্ন আহবান ছিল আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্যের দিকে মানুষকে নিয়ে আসা। শ্রেষ্ঠ উম্মাত হিসেবে আমাদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান জানাতে হবে। একজন দা‘য়ীর অবশ্যই তার প্রচারিত আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবান, বিশ্বাসী ও তার পূর্ণ অনুসরণকারী হবেন। তাকে সর্ব প্রথমে তার ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে ও সকল দিকে দা‘ওয়াতের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হিদায়াত প্রাপ্তি একদিকে ব্যক্তির আগ্রহ, অন্যদিকে আল্লাহর অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। দা‘য়ীর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক অব্যাহতভাবে দা‘ওয়াতি কাজে অবিরত থাকা। আল্লাহ তা‘য়ালা আমাদের সবাইকে সর্ববস্থায় আদ্ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহর কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাঁথিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ, সাঁথিয়া, পাবনা
ই-মেইল : drmidris78@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুলাউড়ায় জঙ্গল থেকে তরুণীর লাশ উদ্ধার ঈদগাঁওতে মাদককারবারি গ্রেফতার শিক্ষায় ব্যাঘাত : ফেসবুক-টিকটক-ইনস্টাগ্রাম-স্ন্যাপচ্যাটের বিরুদ্ধে ২৯০ কোটি ডলারের মামলা আমতলীতে কিশোরীকে অপহরণ শেষে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৩ মহানবীকে কটূক্তির প্রতিবাদে লালমোহনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ক্রিমিয়া সাগরে বিধ্বস্ত হলো রুশ সামরিক বিমান জর্ডান আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী বিচারক এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর

সকল