২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেহেশতের পরিচয়

বেহেশতের পরিচয় - ছবি : সংগৃহীত

একজন মুমিন মুসলমান বিশ্বাস করেন- পৃথিবীর এই নশ্বর জীবন শেষে পরকালীন জীবন শুরু হবে। পরকালীন জীবন হবে অনন্তকালের। ওই জীবনই মানুষের আসল জীবন। পৃথিবীতে যারা মহান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করবেন, তারা পরকালীন জীবনে ‘বেহেশত’-এ বসবাস করবেন। বেহেশত ফার্সি শব্দ। এর আরবি হলো- জান্নাত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নববীতে এই শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ উদ্যান, নন্দনকানন। ফুলে-ফলে ও নয়নাভিরাম দানে-উপাদানে সাজানো সে জান্নাতে মানুষের কোনো প্রত্যাশাই অপূর্ণ থাকবে না। কুরআন ও হাদিসের আলোকে আটটি জান্নাতের নাম ও পরিচয় তুলে ধরা হলো-

জান্নাতুল ফিরদাউস
জান্নাতুল ফেরদাউস সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাসকরে ও সৎকর্ম করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্য রয়েছে ফেরদাউসের উদ্যান। সেখানে তারা স্থায়ী হবে; এর পরিবর্তে তারা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া কামনা করবে না।’ (সূরা কাহাফ : ১০৭-১০৮)।

হজরত আনাস রা: বলেন, ‘উম্মে রুবাইয়ে বিনতে বারা যিনি হারেসা ইবনে সুরাকার মা, তিনি নবীজির কাছে এসে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে হারেসা সম্পর্কে কিছু বলবেন না? সে বদরের দিন শহীদ হয়েছিল। যদি সে জান্নাতি হয় তা হলে ধৈর্যধারণ করব। না হয় তার জন্য মনভরে অত্যধিক কান্নাকাটি করব। নবীজি সা: বললেন- হে হারেসার মা! জান্নাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের জান্নাত আছে। তোমার ছেলে সর্বোচ্চ ফেরদাউস জান্নাতে পৌঁছে গেছে!’ (বুখারি শরিফ)

জান্নাতু আদন
আদন মানে চিরস্থায়ী। এটি অনন্ত সুখের একটি উদ্যান। এ জান্নাত সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের জন্য রয়েছে আদন জান্নাত; যার নিম্নদেশে নদীগুলো প্রবাহিত। সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ-কঙ্কনে অলঙ্কৃত করা হবে; তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর সে পুরস্কার ও কত উত্তম সে শরণস্থল!’ (সূরা কাহাফ : ৩১)।

মহানবী সা: স্বপ্নে আদন জান্নাত দর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দুটো জান্নাত রুপার; তার পাত্র ও সবকিছু রুপার। দুটো জান্নাত স্বর্ণের; তার পাত্র ও সবকিছু স্বর্ণের। আদন জান্নাতের বসিন্দাদের ও তাদের প্রতিপালকের মধ্যে কেবল তার চেহারার আভিজাত্যের চাদর থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

জান্নাতুল খুলদ
খুলদ মানেও চিরস্থায়ী। এ জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওদেরকে জিজ্ঞাসা করো এটিই শ্রেয় না খুলদ (স্থায়ী) জান্নাত; যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সাবধানীদেরকে? এটিই তো পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সূরা ফুরকান : ১৫)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: দোয়ায় বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অটল-অনড় ঈমান চাই, অফুরান নেয়ামত চাই এবং জান্নাতুল খুলদের সর্বোচ্চ চূড়ায় নবীজির সঙ্গ চাই।’ (সিলসিলাতুল আহাদিস : ২৩০)

জান্নাতুন নাইম
নাইম মানে নেয়ামতের প্রাচুর্য। এ জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা বিশ্বাসকরে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আছে জান্নাতুন নাইম।’ (সূরা লুকমান : ৮)। হজরত ইবরাহিম আ: এই জান্নাত চেয়ে দোয়া করে বলেছিলেন, ‘আমাকে নাইম জান্নাতের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন!’ (সূরা শুয়ারা : ৮৫)

জান্নাতুল মাওয়া
মাওয়া মানে ঠিকানা। এ জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিশ্বাসকরে সৎকাজ করে তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া।’ (সূরা সেজদা : ১৯)।

আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সে তাঁকে আরেকবার দেখেছিল সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। যার কাছে অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া।’ (সূরা নামল : ১৩-১৫)

জান্নাতে দারুস সালাম
দারুস সালাম মানে শান্তিনিকেতন। এ জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের জন্য রয়েছে দারুস সালাম (শান্তির আলয়) এবং তারা যা করত, তার কারণে তিনি হবেন তাদের অভিভাবক।’ (সূরা আনাম : ১২৭)।

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষকে দারুস সালাম জান্নাতের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন।’ (ইউনুস : ২৫)।

জান্নাতে দারুল মুকামাহ
দারুল মুকামাহ মানে স্থায়ী জগৎ। এ জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে দারুল মুকামাহ দান করেছেন; যেখানে আমাদেরকে কোনো প্রকার ক্লেশ স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি।’ (সূরা ফাতির : ৩৫)

জান্নাতে তুবা
তুবাও একটি জান্নাতের নাম। মহানবী সা: বলেছেন, ‘ওই বান্দার জন্য তুবা, যে আল্লাহর পথে নিজের ঘোড়ার লাগাম ধরে থাকে। যার মাথার কেশ আলুথালু, যার পদযুগল ধূলিমলিন। তাকে পাহারার কাজে নিযুক্ত করলে, পাহারার কাজে নিযুক্ত থাকে। আর তাকে কাফেলার পেছনে দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত করলে, পেছনেই থাকে। যদি সে কারও সাক্ষাতের অনুমতি চায়, তা হলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না এবং কারও জন্য সুপারিশ করলে, তার সুপারিশ গ্রহণ করা হয় না।’ (বুখারি শরিফ : ২৮৮৭)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঈমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য এমন আরো বিভূষিত জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন। যেগুলো পরকালে তিনি আমাদের দান করবেন। তবে শর্ত হলো পরিপূর্ণ মুমিন হয়ে নেক আমল করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement