২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রবের হুকুমের কাছে ব্যক্তিচিন্তার আত্মসমর্পণ কোরবানির শিক্ষা

রবের হুকুমের কাছে ব্যক্তিচিন্তার আত্মসমর্পণ কোরবানির শিক্ষা - ইসলামী জীবন ডেস্ক

আমাদের নাফস তথা আত্মা আমাদেরকে বিভিন্ন খারাপ কাজের প্রতি ধাবিত করতে চাইবে, খারাপ কাজ করার ওয়াসওসা দেবে, নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ করার ইচ্ছা জাগবে কিন্তু সেই আগ্রহ বা ইচ্ছাকে কোরবানি করে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার আকাঙ্খা করতে হবে। এটাই কোরবানির অন্যতম শিক্ষা।

ইসলামের ঐতিহাসিক শিক্ষার বা মৌলিক নিদর্শনাবলীর অন্যতম কোরবানি। যা মুসলিম জাতি দীর্ঘকাল থেকে পালন করে আসছে। কোরবানি ইতিহাসের প্রথম উৎস হচ্ছে হযরত আদম (আ.) এর যুগ থেকে। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদায় (২৭-৩১ আয়াত) আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবিল-কাবিলের কোরবানির ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তবে প্রত্যেক নবী-রাসূলের কোরবানির পদ্ধতি একই রকম ছিল না।

বর্তমানে ইসলামী শরীয়তে কোরবানির যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তা মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) থেকে প্রাপ্ত। মহাগ্রন্থ আল কোরআন ও হাদিস থেকে এবিষয়টি স্পষ্ট জানা যায়। কোরবানিকে এজন্য সুন্নাতে ইবরাহীমী নামে অভিহিত করা হয়।

আনুমানিক ৪০০০ বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ সালের দিকে ইরাকের ‘ঊর’ নামক স্থানে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিরক ও জাহেলিহাতে পরিপূর্ণ একটি সমাজে। অতঃপর তাওহীদের দীক্ষা লাভ করেন। তাঁর পিতা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকলে তাঁকে তাওহীদ থেকে বিচ্যুত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল কিন্তু তিনি তাওহীদ তথা একত্ববাদের ওপর অটল এবং অবিচল থাকেন। শত বাধা-বিপত্তি, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে তাওহীদের মর্মবাণী প্রচারে তিনি অনড় থাকেন এবং আল্লাহর নির্ধারিত সুকঠিন পরিক্ষাসমূহে তিনি ক্রমাগত উত্তীর্ণ হয়ে খলীলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হন। মুসলিম জাতির পিতার মর্যাদা লাভ করেন।

হযরত ইবরাহীম আ:-এর নবুওতী জীবনের এক পর্যায়ে তিনি ইরাক থেকে ফিলিস্তিনে হিজরত করেন। বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। ৮৬ বছর বয়সে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি হাজেরার গর্ভে তাঁর প্রথম পুত্র সন্তান ইসমাঈলের এর জন্ম হয়। হযরত ইসমাঈল (আ.) পরবর্তীতে নবুওতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। জীবনের শেষ লগ্নে স্বপ্নযোগে হযরত ইবরাহীম (আ.) কে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। যেহেতু নবীদের স্বপ্নও এক প্রকার ওহী। তাই আল্লাহর নবী ইবরাহীম (আ.) কালবিলম্ব না করে প্রিয় সন্তান ইসমাঈলকে স্বপ্নের কথা জানালেন- ‘হে প্রিয় সন্তান ,আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে কুরবানি/যবেহ করছি অতএব এই ব্যাপারে তোমার কি অভিমত?

কঠিন এই প্রশ্নের জবাবে নবীর পুত্র ছোট্ট শিশু, ভবিষ্যত নবী ইসমাঈল (আ.) শান্ত এবং দৃঢ়ভাবে যে জবাব দিয়েছিল তা কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে। ইসমাঈল (আ.) বলেছিলেন- হে আমার সম্মানিত পিতা, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে যে আদেশ করেছেন আপনি তা বাস্তবায়ন করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল অবস্থায় পাবেন। (আল্লাহু আকবার)

এ যেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা-আনুগত্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও সম্মানের, নিজের মত বা চাওয়া-পাওয়ার কোররবানির অতুলনীয় উদাহরণ।

অনেক ঘটনার পর যখন বৃদ্ধ বয়সী ইবরাহীম (আ.) তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয়, কলিজার টুকরো, বুকের মানিক ইসমাঈলকে কুরবানি করার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেন। প্রিয় সন্তানের গলদেশে ধারালো ছুরি চালাতে যাবেন তখনই আল্লাহ তায়ালা জীবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে ইসমাঈল (আ.) এর পরিবর্তে একটি বেহেশতী দুম্বা দিয়ে ইবরাহীম (আ.) এর কোরবানি সম্পন্ন করেন।

রবের সন্তুষ্টি অর্জন, দৃঢ় সংকল্প, পরিশুদ্ধ নিয়ত থাকার কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বন্ধু ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ.) এর কোরবানিকে কবুল করেন এবং অন্যান্য পরিক্ষার মতো কঠিন এ পরিক্ষায় ও ইবরাহীম (আ.) উত্তীর্ণ হন। আর এজন্যই কোরবানিকে বা ইবরাহিমী এ সুন্নাতকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত জারি রেখেছেন।

কোরবানি থেকে শিক্ষা : ইবরাহিম আ:-এর এই ত্যাগ, আদর্শ ও অনুপ্রেরণা আমাদের জীবনকে ঈমানী আলোয় উজ্জ্বীবিত করবে, আল্লাহর আনুগত্যে আরো সক্রিয় করবে এটাই কোরবানির মৌলিক শিক্ষা। কোরবানি থেকে মুসলিম জাতির জন্য আরো যে শিক্ষাগুলো রয়েছে তার মধ্যে আল্লাহর পরিপূর্ণ আনুগত্য, নিয়তের পরিশুদ্ধতা, জীবনের সকল কিছু হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহর নৈকট্য পেতে জীবনের সকল ক্ষেত্রে কোরবানি, মতের বা ইচ্ছার কোরবানি ইত্যাদি।

আল্লাহ বেলন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেসবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ : ৩৭)

সকল প্রকার মানবিক দুর্বলতাকে কোরবানি করে যথাযথ তাকওয়া অর্জন করে তেজদীপ্ত ঈমানে বলীয়ান হওয়াই হোক কোরবানির শিক্ষা। আর এই শিক্ষা গ্রহণে আলোকিত ও প্রশান্তিময় হোক দেশ, জাতি, সমাজ ও পুরো বিশ্ব।


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত সিঙ্গাপুর প্রবাসী ফিরোজ মাহমুদের লাশ দেশে ফিরেছে ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে: ড. সুকোমল বড়ুয়া

সকল