২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তওবার অশ্রুতে সিক্ত হোক পবিত্র রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো

-

দুনিয়ার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহতায়ালা। টাকা-পয়সা, ক্ষমতা সবকিছুই আজ আসমানি ফায়সালার কাছে- ‘লা শাই’, একেবারে তুচ্ছ! একদিকে অন্যায়-অত্যাচার ও ক্ষমতার দাপটে ইসলামবিরোধীরা যেমন নিপীড়ন চালিয়েছে মুসলমানের ওপর, অন্যদিকে মুসলমানরা জুলুম করেছে নিজেদের ওপর।

এ জুলুম হলো- আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য-অগণিত নেয়ামত ভোগ করেও তার নাফরমানি করা। এ ছাড়া অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও আমলহীনতা তো রয়েছেই। এভাবে অপরাধের পাল্লা দিন দিন ভারী হয়েছে। মানুষ নিজেকে সব ধরনের জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু আসলেই কী মানুষ খুব ক্ষমতাশীল? করোনার প্রকোপ দেখা না গেলে অনেকে হয়তো তাই ভাবতেন। করোনাভাইরাস মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, পরাক্রমশালী আল্লাহতায়ালার ক্ষমতা। এখানে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষা।

মুসলমান হিসেবে আমি বলতে পারি, প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাবো কী পাবো না, তা কেবল ওই আসমানের মালিক আল্লাহতায়ালাই বলতে পারেন। আমরা শুধু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি, চেষ্টা করতে পারি। নিশ্চিত কিছু বলার ক্ষমতা নেই। তবে ভয়াবহ এই বিপদের দিনে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগ্রত হওয়া দরকার, প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আর মৃত্যুর পর অনন্তকালের ওই জীবনের পাথেয় আমাদের কতটুকু রয়েছে?

নামাজ পড়িনি, অথচ মসজিদের মাইকে নিয়মিত আজান হয়েছে। কোনো বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াইনি, অনাচার-পাপাচারে লিপ্ত ছিলাম। দয়াময় প্রভু আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার প্রতিনিধি হিসেবে। আমরা কী ওই দায়িত্ব পালন করেছি? তিনি আমাদের এত কিছু দিলেন, আমরা তাকে কী এসবের সদ্ব্যবহার করেছি? আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীর রাজত্ব দিয়েছেন, ক্ষমতা দিয়েছেন, মেধা দিয়েছেন, ধন-সম্পদ দিয়েছেন। যেন মানুষ দয়াময় প্রভুর প্রতি অবনত হয়, তার ইবাদত করে; নিভৃতে- নির্জনে দু’ফোটা অশ্রু ঝরিয়ে তাকে ডাকে। কিন্তু মানুষ তা করেনি।

পৃথিবীভরা নিয়ামত পেয়েও মানুষ আল্লাহকে ভুলে গেছে। ব্যস্ততার কারণে নামাজ পড়ার সময় হয়নি, শারীরিক সুস্থতা ছিলো- তবুও রোজা পালন করেনি, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ করেনি, অঢেল সম্পদ ছিল, কিন্তু জাকাত দেয়নি। অহংকার, সম্পদের গৌরব আর ক্ষমতার দাপটে দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছে। গোনাহের কাজ ছাড়েনি, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সুপথে ফেরেনি। অন্যায়-অত্যাচার, অশ্লীলতা, সুদ, ঘুষ, জবরদখল মানুষ হত্যা চলছে। তারপরও আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি তার নিয়ামত জারি রেখেছেন। তিনি কিছুই বন্ধ করেননি। চাঁদ-সূর্য আলো দিচ্ছে, বাতাস বইছে, পান করার সুমিষ্ট পানির উৎস বন্ধ হয়নি। শুধুমাত্র করোনার ভয়ে আমরা গুটিয়ে গেছি। স্থবিরতা নেমে এসেছে জীবনে। মৃত্যুভয় আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা দ্রুত তার রহমত প্রত্যাশা করছি।

পার্থক্যটা এখানেই। কেন এমন মসিবত আমাদের ওপর আপতিত হলো- সেটা বুঝতে চেষ্টা করছি না। আমাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না। হজরত মুসা আলাইহিস সালামের যুগে যখন আল্লাহ তায়ালার গজব নেমে এসেছিল, নদির পানিগুলো রক্ত হয়ে গিয়েছিল, জমির সুজলা-সুফলা ফসলগুলো পঙ্গপালে খেয়ে ফেলেছিল, মানুষের মাথা উকুনে ভরে গিয়েছিল। তখন হজরত মুসা আ.-এর উম্মতরা কী করেছিল জানেন?

হজরত মুসা আ.-এর উম্মতরা হৃদয়টা তাওহিদি পবিত্র কালিমা দ্বারা পূত-পবিত্র করে মহা ক্ষমতাধর প্রভু আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান এনেছিল। হজরত মুসা আ.-কে নবী হিসেবে মেনে নিয়েছিল। ওই কঠিন মসিবত থেকে উত্তরণের পথ তারা আবিষ্কার করেছিল আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে।

সুতরাং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাস থেকেও বাঁচার পথ ও পদ্ধতি হলো- একনিষ্ঠভাবে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহমুখি হওয়া। আর কখনো গোনাহ না করার অঙ্গীকার করা। আল্লাহতায়ালা তো চান, যেন মানুষ সমস্যায় পড়ে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে, তার কাছেই উত্তরণের উপায়-উপকরণ কামনা করুক।
তিনি মহা ক্ষমাশীল, তিনি দয়ালু।

তাই আসুন, রমজানের এই শেষ দশকের প্রতিটি রজনীকে লাইলাতুল কদর মনে ইবাদত বন্দেগি করি। মহামহিম ক্ষমাশীল আল্লাহ তায়ালার কাছে দু’ফোটা অশ্রু ঝরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি কামনা করি। তিনি ছাড়া তো আমাদের আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই। তাঁর এক ইশারায় দূর হয়ে যেতে পারে আমাদের সব বিপদাপদ।

লেখক: তরুণ আলেম ও সংবাদকর্মী
muhammadbinwahid60@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement