২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

২১ রমজান : আমীরুল মুমিনীন আলী রা.-এর শাহাদাত দিবস

-

হজরত উসমান রা.-এর আকস্মিক শাহাদাতের পর মুসলিম বিশ্বে এক বিরাট সংকট দেখা দেয়। ওই সময় মদিনার সকলেই আলী রা.-কে খেলাফতের দায়িত্ব নিতে বলেন। হজরত আলী রা. প্রথমে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। কারণ তাকে যারা সমর্থন করে খলিফার দায়িত্ব নিতে বলছিলেন, এদের অনেকেই উসমান রা.-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহেও জড়িত ছিলেন।

নেতৃত্বশূন্য মুসলিম বিশ্বের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, মদিনার সকল সম্মানিত সাহাবির রা. একরকম জোরাজুরিতে খেলাফতের দায়িত্ব নিতে রাজি হন হজরত আলী রা.। এরপরই শুরু হয় আরেক সমস্যা। সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া রা. জানান, উসমান রা.-এর হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়া পরই তিনি আলী রা.-এর কাছে আনুগত্য জ্ঞাপন করবেন এবং তাকে খলিফা হিসেবে মেনে নিবেন।

কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে উসমান রা.-এর ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনা ছিল কঠিন ব্যপার। কারণ মদিনায় তখন পর্যন্ত আলী রা. বিদ্রোহীদের তুলনায় অধিক ক্ষমতাবান ছিলেন না। এছাড়াও ঠিক কারা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল তা খুঁজে বের করাও ছিল সময় সাপেক্ষ।

এমতাবস্থায় আলী রা. মদিনা থেকে ইরাকের কুফায় খিলাফতের কেন্দ্র স্থানান্তরিত করেন, যেখানে তিনি বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। এদিকে মুয়াবিয়া রা. আগের কথাতে অটল থেকে সিরিয়ায় নিজের শাসনকাজ পরিচালনা করছিলেন।

সিরিয়া ছিল মুসলিম খেলাফতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই ভূখণ্ড খিলাফতের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় আলী (রা.) কে বেশ সমস্যা পোহাতে হচ্ছিল। ফলে মুয়াবিয়া রা. ও আলী রা.-এর মাঝে একটি সমঝোতা জরুরি হয়ে পড়ে। একটি খণ্ড যুদ্ধের পর আলোচনায় বসেন তারা।

ওই আলোচনায় ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছিল ইতিহাসের বয়ানে তা স্পষ্ট নয়। তবে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় যে সিরিয়া খেলাফতের নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং ওই অঞ্চলে মুয়াবিয়া রা.-এর নিয়ন্ত্রণেই থাকবে তা মেনে নিয়েছিলেন আলী রা.।

ইতিহাসের পাতায় তথ্যবিভ্রান্তি থাকলেও এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, মুয়াবিয়া রা.-এর সাথে আলী রা. সর্বোচ্চ নমনীয়তা অবলম্বন করেছিলেন। কিন্তু তার এরূপ সমঝোতা মানতে অস্বীকৃতি জানান কিছু সংখ্যক অনুসারী। তারা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে আলী রা.-কে খলিফা হিসেবে অযোগ্য বলে প্রচার করতে থাকেন এবং পৃথক আরও একটি দল গঠন করেন, যারা খারেজি নামে পরিচিত।

খারেজিদের ধারণা ছিল, তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের যে দুরাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তার সমাধান হতে পারে কেবল আলী রা. ও মুয়াবিয়া রা.-কে হত্যার মাধ্যমে।

কয়েক বছর পর কুফার মসজিদে ফজরের সালাত আদায়ের সময় এক খারেজি যুবক ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রা.-কে বিষমাখা ছুরি দিয়ে আঘাত করলে শাহাদাত বরণ করেন তিনি।

তথ্যসূত্র
১। ডেস্টিনি ডিজরাপ্টেড; অনুবাদ : আলী আহমদ মাবরুর

২। লস্ট ইসলামি হিস্ট্রি; অনুবাদ : আলী আহমদ মাবরুর


আরো সংবাদ



premium cement