২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দারুল উলুম ঢাকায় ভিন্ন পদ্ধতিতে খতম তারাবি

দারুল উলুম ঢাকা - ছবি : সংগৃহীত

আমাদের দেশে প্রচলিত পারা হিসেবে খতম তারাবিতে পদ্ধতিগত একটু পরিবর্তন এনে দুর্লভ এক পদ্ধতিতে তারাবির নামাজ চালু করেছে রাজধানীর মিরপুর-১৩-এ অবস্থিত ঐতিহাসিক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম ঢাকা। প্রতিষ্ঠানটিতে পারার পরিবর্তে রুকুর হিসেবে খতম তারাবির আয়োজন করা হয়েছে। পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম ও সালাফরা রুকুর হিসেবে তারাবি পড়ার এ পদ্ধতিকে-ই উত্তম পদ্ধতি আখ্যায়িত করেছেন।

দারুল উলুম ঢাকার প্রিন্সিপাল মুফতি রেজাউল হক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ নিজ পরিচালিত মাদরাসায় রুকুর হিসেবে তারাবি আয়োজনের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘পবিত্র কোরআনের ‘পারা’ বিন্যাস তারাবিকে কেন্দ্র করে হয়নি; বরং হিফজের ছোট বাচ্চাদের পড়া ও পড়ানোর সুবিধার্ধে হয়েছে। অপরদিকে ‘রুকু’ হিসেবে কোরআনের যে বিন্যাস তা করা হয়েছে অর্থ ও মর্মের দিকে খেয়াল করে আর এ বিন্যাসের উদ্দেশ্য ২৭ রমজানে পবিত্র কোরআন খতম করা। কেননা, কোরআনে সর্বোমোট ৫৪০টি রুকু আছে, প্রতি রাকাতে এক রুকু করে তিলাওয়াত করলে ঠিক ২৭ রমজানে খতম সম্পন্ন হয়। কারণ ৫৪০ সংখ্যাটিকে ২০ দিয়ে ভাগ দিলে ভাগফল হয় ২৭। এদিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, নামাজে রুকু হিসাবে তিলাওয়াত করলে প্রতি রাকাতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিষয়বস্তুর আলোচনা এসে যায়, যা মুস্তাহাব। পারা ও পৃষ্ঠার হিসেবে তিলাওয়াত হলে বিষয় বস্তুর ঠিক থাকে না- এতে একটি মুস্তাহাব পরিত্যাগ করা হয়, যা উচিৎ নয়; বরং চাহিদা ও তাগাদা অনুযায়ী হিফজের ক্ষেত্রে পারা ও তারাবিতে রুকু পদ্ধতির অনুশীলণ করাই ভালো মনে করি।’

উল্লেখ্য, পবিত্র কোরআনের পারা ও রুকু বিন্যাসের পৃথক পৃথক ইতিহাস আছে। পারা শব্দটি ফারসি, যার অর্থ- টুকরো, অংশ। বর্তমানে আমাদের সামনে পবিত্র কোরআনুল কারিমের যে প্রতিলিপি তা মোট ৩০টি অংশে বা পারায় বিন্যস্ত। পারার এই বিন্যাস অর্থ হিসেবে নয়, বরং হিফজের ছোট বাচ্চাদের পড়া ও পড়ানোর সুবিধার্থে। হাফেজি কোরআনুল কারিমের প্রতিটি পারায় ২০ টি পৃষ্ঠা থাকে। পৃষ্ঠার এ বিন্যাসও বাচ্চাদের দিকে খেয়ালকরেই সাজানো। এককথায়- পারা এবং পৃষ্ঠা অর্থ বা বিষয়ের প্রতি নজর রেখে বিন্যস্ত হয়নি। তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি পৃষ্ঠা বা পারা শেষ হয়েছে কিন্তু বিষয় বস্তু অপূর্ণ রয়ে গেছে। পারা ও পৃষ্ঠার এ বিন্যাস কে করেছেন- এর নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। তবে শাইখুল হাদিস ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তার অমর গ্রন্থ মাজমাউল ফাতাওয়াল কুবারাতে উল্লেখ করেছেন, হরকত তথা জবর, জের, পেশ-এর মতো পবিত্র কোরআনে পারারও প্রবর্তন করেছেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ (রহ.)।

অপরদিকে কোরআনের আরেকটি বিন্যাস আছে, যেটিকে রুকু বলা হয়। কোরআনের মুসহাফ বা প্রতিলিপিতে পার্শ্বটিকায় রুকুর চিহ্ন হিসেবে আরবি অক্ষর ‘আইন’ লেখা থাকে। রুকুর বিন্যাস করেছেন মাশায়েখে বুখারা। পুরো কোরআনকে তাঁরা সর্বোমোট ৫৪০টি রুকুতে ভাগ করেছেন। কোরআনকে রুকুতে বিভাজন করা হয়েছে অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য রেখে। উদ্দেশ্য, যেন আরবি ভাষা সম্পর্কে অনবহিত পাঠক বুঝতে পারে, কোথায় একটি বিষয়ের আলোচনা শেষ হয়েছে আর কোথা থেকে নতুন বিষয়বস্তুর আলোচনার সূচনা হয়েছে।

আর ৫৪০ সংখ্যায় রুকুর বিভাজনে রয়েছে দারুণ এক রহস্য। ফাতওয়া তাতারখানিয়ার প্রথম খণ্ডের ৪৭৯ পৃষ্ঠায় ও ফতোয়ায়ে আলমগীরি প্রথম খণ্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায় তারাবি অনুচ্ছেদে কোরআনুল কারিমের ৫৪০ রুকুতে বিভাজনের হিকমত ও রহস্য বর্ণনা করে বলা হয়েছে, মাশায়েখে কেরাম কোরআনকে ৫৪০ রুকুতে ভাগ করেছেন এ কারণে যে যাতে পবিত্র রমজানে তারাবির নামাজে ২৭ দিনে কোরআন খতম করা যায় অর্থাৎ প্রতিদিন ২০ রাকাত তারাবি নামাজে প্রত্যেক রাকাতে যদি এক রুকু পরিমাণ তিলাওয়াত করা হয় তাহলে ২৭ রমজান ৫৪০ টি রুকু তথা সম্পূর্ণ কোরআন খতম হবে। কেননা, ৫৪০ সংখ্যাটিকে ২০ দিয়ে ভাগ দিলে ভাগফল হয় ২৭।


আরো সংবাদ



premium cement