১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আল্লাহর কুদরতে সৃষ্ট ৪ বস্তু

আল্লাহর কুদরতে সৃষ্ট ৪ বস্তু - মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম - ফাইল ছবি

পৃথিবীর একক সৃষ্টা আল্লাহ তায়ালা। তিনি কোনো কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলে কুন (হও) বলেন। অতঃপর সাথে সাথে তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসিন : ৮২) কিন্তু চারটি বস্তু আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কুদরতের হস্তে সৃষ্টি করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আল্লাহ চারটি জিনিস নিজ কুদরতের হাতে সৃষ্টি করেন। অবশিষ্ট সৃষ্টি কুন বলার পর হয়ে গেছে। এ চারটি জিনিস হলোÑ কলম, জান্নাতে আদন, আরশ ও আদম আ:। (হাকেম- ৩৫৮, কুরতুবি ২০তম খণ্ড- পৃষ্ঠা ৯১)

কলম : কলম শব্দটি আরবি ভাষার। এক বচন, বহু বচন আকলাম। কুরআন মাজিদের ৬৮তম সূরার নাম সূরা কলম। সূরা কলমও সূরা আলাকে কলম- এক বচন হিসেবে এবং সূরা লুকমান ও সূরা আলে ইমরানে আকলাম বহুবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কলম হলো- লেখার উপকরণ। হজরত ওবাদা ইবনে সামেত রা: থেকে বর্ণিত, মহানবী সা: বলেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার আদেশ দেন। কলম তখন আরজ করে, আমি কী লিখব? তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, সৃষ্টির তাকদির লিখ। আল্লাহর আদেশপ্রাপ্ত হয়ে কলম অনন্তকাল পর্যন্ত সম্ভাব্য সব ঘটনা ও অবস্থা লিপিবদ্ধ করে। সহিহ মুসলিম শরিফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত আছে, মহানবী সা: বলেন, আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টির তাকদির আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে লিপিবদ্ধ করেন। হজরত কাতাদাহ রা: বলেন, কলম আল্লাহ প্রদত্ত একটি বড় নিয়ামত। কোনো কোনো মনীষী বলেন, আল্লাহ তায়ালা সর্ব প্রথম তাকদির লিখার কলম সৃষ্টি করেন, তারপর মানুষের লিখার কলম সৃষ্টি করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, পড়–ন, আপনার প্রভু মহা দয়ালু। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা আলাক : ৪ ও ৫)। হাতে কলমে শিক্ষাই চিরস্থায়ী হয়। মহানবী সা: বলেছেন, লিখার মাধ্যমে জ্ঞানকে আবদ্ধ করো। (তিবরানি, তাফসিরে মুনির ১৫ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭০৬) সুতরাং লেখা হলো জ্ঞানকে চিরস্থায়ী রাখার মাধ্যম। হজরত ইবনে ওমর রা: বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আমি আপনার যেসব হাদিস শুনি তা কি লিখব? রাসূল সা: বলেন, হ্যাঁ! লিখো। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন (হাকেম পৃ. ৩৫৮)

আরশ : মাওলানা আবদুর রশীদ নূমানী বলেছেন, আরশ অর্থ- রাজকীয় সিংহাসন। কুরআন মাজিদের ২১টি সূরায় আরশের বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর আরশের মমার্থ ও তাৎপর্য মানুষের পক্ষে বুঝা অসম্ভব। কেননা তা মেনে নিলে বলতে হয়, আরশ আল্লাহর সত্তাকে ধারণ ও বহন করছে। অথচ আল্লাহর মহান সত্তা কোনো কিছুর ধারণ ও বহনের বহু ঊর্ধ্বে এবং তা থেকে পূতপবিত্র। ইমাম আবু বকর আহমদ ইবনুল হুসাইন আল-বায়হাকী বলেন, তাফসির লেখকদের মতে আরশ শব্দ দ্বারা সিংহাসনই বুঝায়। তা আল্লাহই স্বীয় কুদরতের হস্তে সৃষ্টি করেছেন এবং ফেরেশতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তা উপরে তুলে ধরার জন্য ও তার সম্মান প্রদর্শন ও তাওয়াফের মাধ্যমে তার ইবাদত করার জন্য। যেমন- পৃথিবীতে কাবা ঘর নির্মাণ করিয়ে আদম সন্তানদের নির্দেশ দিয়েছেন তার তাওয়াফ করতে এবং সেদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে।

জান্নাতে আদন : জান্নাতের আটটি স্তরের মধ্যে একটি হলো আদন। কোনো কোনো হাদিসে জান্নাতে ফেরদাউসকে উত্তম, আবার কোনো কোনো হাদিসে জান্নাতে আদনকে উত্তম জান্নাত বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষ্যমতে, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে আদনকে নিজ কুদরতের হস্তে সৃষ্টি করেন এবং এর বৃক্ষসমূহ ও নিজে রোপণ করেন। অতঃপর জান্নাতে আদন বলেছে, মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, কারণ তারা এ জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তাফসিরে কুরতবি, সূরা মুমিনুন)। কুরআন মাজিদের ১১টি সূরায় জান্নাতে আদনের বর্ণনা রয়েছে। জান্নাতে আদনের বাসিন্দারা যে ঝরনা থেকে পানি পান করবে তার বর্ণনায় সূরা আল মুতাফফিনে বলা হয়েছে, তাদের মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে। তার মোহর হবে কস্তুরী। (সূরা আল মুতাফফিন : ২৫-২৬, তাফসিরে কুরতুবি ১৯তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৪)।

হজরত আদম আ: : আল্লাহ তায়ালা আদম সৃষ্টির ইচ্ছা ফেরেশতাদের কাছে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ফেরেশতারা অভিমত প্রকাশ করলেন যে, মানব জাতির মধ্যে এমনো অনেক লোক হবে, যারা শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আদম সৃষ্টির দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করেন। অতঃপর প্রথমে জিবরাঈল আ:-কে, তারপর ইস্রাফিল আ:-কে, তারপর মিকাইলকে পৃথিবী থেকে মাটি আনতে বলেন। কিন্তু মাটি ক্রন্দন করে বলতে থাকে, আল্লাহ তায়ালা এ মাটি দ্বারা আদম সৃষ্টি করবেন আর তারা পাপ করবে। ফলে তাদের জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে। অতঃপর তিনজন ফেরেশতাই মাটি আনতে পারেননি। পরিশেষে হজরত আজরাঈল আ:-কে পাঠান। তিনি মাটির কান্নাকাটি উপেক্ষা করে সমস্ত পৃথিবীর উপরিভাগ থেকে মাটি নিয়ে আসেন। আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতের হাতে এ মাটি দ্বারা খামির তৈরি করে ষাট হাত মানব আকৃতি তৈরি করেন। অতঃপর তা চল্লিশ দিন সূর্যের আলোতে রাখেন, ফলে তা খুবই শক্ত হয়। অতঃপর চল্লিশ দিন তাতে বৃষ্টির পানি পতিত হয় অতঃপর তা নরম হলে তাতে রূহ ফুৎকার করা হয়। (নাহাজুল বালাগা-শরিফ রাযী)।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী।


আরো সংবাদ



premium cement