১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা

সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা - মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম - ফাইল ছবি

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যত মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। সূরা ত্বীনে আল্লাহ তায়ালা তিনটি শপথ করে বলেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।’ (সূরা ত্বীন : ০৪)

মানুষ সৃষ্টির সেরা। কিন্তু মানুষ আল্লাহর দেয়া নিয়ামতকে ভুলে গিয়ে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে। বান্দার প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা খুব আক্ষেপের সাথে বলেন, ‘হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? অথচ যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন।’ (সূরা ইনফিতর : ৬, ৭)

অন্য আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরি অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার মৃত্যু দান করবেন। পুনরায় তোমাদেরকে জীবনদান করবেন। অতঃপর তাঁরই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।’ (সূরা বাকারা : ২৮)

মা যেমন তার সন্তানকে ভালোবাসে তার থেকেও বেশি বান্দাকে আল্লাহ ভালোবাসে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ তায়ালার ১০০টি রহমত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি রহমত সৃষ্টিকুলের মধ্যে বণ্টন করেছেন। এই একটি রহমতের কারণেই তারা একে অপরের প্রতি দয়া করে, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। এর দ্বারা জীবজন্তু তার বাচ্চার প্রতি মমতায় উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি অবশিষ্ট নিরানব্বইটি রহমত কিয়ামতের দিন তার বান্দার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য রেখেছেন।’ (ইবনে মাজা : ৪২৯৩)

শয়তান চায় বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে। পক্ষান্তরে আল্লাহ চায় বান্দাকে চিরস্থায়ী জান্নাতে নিতে। তাই তো আল্লাহ তায়ালা বান্দার অল্প আমলেই বেশি সাওয়াব দিয়ে থাকেন। যেমন- রাসূল সা: এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা করেনি, আল্লাহ তায়ালা তাকে পূর্ণ একটি নেকি দান করেন। আর যদি ইচ্ছা করার পর এ কাজ করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে দশগুণ হতে ৭০০ গুণ পর্যন্ত এমনকি তার হতেও বেশি গুণ সওয়াব দান করেন। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি যদি গোনাহের কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু তা সে করেনি। তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে একটি পূর্ণ নেকি লিখে দেন। আর যদি ইচ্ছা করার পর সে গুনাহ এর কাজটি করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার একটিমাত্র গুনাহ লিখে দেন।’ (বুখারি : ৬৪৯১)

আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি কতটা দয়াময় তা উপরিউক্ত হাদিসটি পর্যবেক্ষণ করলে আমরা বুঝতে পারব। এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি অশেষ রহমত ও দয়া। এ সম্পর্কে কুরআনেও আল্লাহ তায়ালা ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ সাওয়াব পাবে এবং যে একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে।’ (সূরা আনআম : ১৬০)

আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা এক বিঘত আমার দিকে অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। আর যখন বান্দা আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক কদম এগিয়ে যাই। আর বান্দা যখন আমার দিকে হেঁটে হেঁটে আসে, তখন আমি তার নিকট দৌড়ে আসি।’ (বুখারি : ৭৫৩৬)

বান্দা গুনাহ করতে পছন্দ করে আর মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করতে পছন্দ করে। তাই তো আল্লাহ তায়ালা সর্বদা বান্দার জিহ্বার দিকে তাকিয়ে থাকেন, কখন বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করে ফিরে আসে। যেমনটি রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা রাতে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যেন দিনের গোনাগার তওবা করে। আবার তিনি দিনে তার ক্ষমার হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতের গুনাগার তওবা করে।’ (মুসলিম : ৬৮৮২)

পৃথিবীর সব দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও, বান্দার গুনাহের দাগ মোচন করতে আল্লাহর ক্ষমার দরজা সর্বদাই উন্মুক্ত থাকে। গুনাহ করার পর বান্দা যেন আল্লাহর রহম হতে নিরাশ না হয়ে যায় এজন্য আল্লাহ তায়ালা আগেই কুরআনুল কারিমে আশ্বাস বাণী দিয়ে বলেছেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ ( সূরা যুমার : ৫৩)

একবার, দুইবার, তিনবার ভুল করলেই মানুষ ক্ষমা তো দূরের কথা আত্মীয়তার সম্পর্ক পর্যন্ত ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু কোনো মানুষ যদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তওবা করে আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে আসে। তাহলে বান্দা শতবার ভুল করলেও আল্লাহ তায়ালার ক্ষমার দরজা খোলা থাকে। এ সম্পর্কে সহিহ বুখারিতে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন- বনি ইসরাইলে এক যুবক ছিল। যে নিরানব্বইটি মানুষ হত্যা করেছিল। অতঃপর (তওবার উদ্দেশ্যে) এক পাদ্রীকে জিজ্ঞাসা করল, আমার তওবা কবুল হওয়ার সুযোগ আছে কি? পাদ্রী বলল না। তখন যুবকটি ওই পাদ্রীকেও হত্যা করে একশতটি পূরণ করল। অতঃপর পুনরায় সে (তওবার উদ্দেশ্যে) জিজ্ঞাসা করতে লাগল, আমার তওবা কবুল হওয়ার সুযোগ আছে কি? তখন তাকে আবারো এক পাদ্রীর কথা বলে দেয়া হলো। অতঃপর তওবার উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির দিকে ছুটে চলল। পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে গেল। (পরবর্তীতে আল্লাহ তায়ালা তার দিলের খালেছ তওবার কারণে তার জীবনের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিয়ে তাকে জান্নাত দান করলেন)।’ (বুখারি : ৩৪৭০)

আল্লাহ বান্দার প্রতি খুবই দয়শীল। এ জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে স্পষ্ট করে বলেছেন, মানুষের ওপর যদি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ না থাকত, তাহলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত।’ সূরা বাকারা : ৬৪)

বান্দার প্রতি আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসা কতটুকু এটা যদি কোনো মানুষ জানত, তাহলে তার সব জিন্দেগিটাই আল্লাহর গোলামিতে কাটিয়ে দিত। এ জন্য আল্লাহ তায়ালার মোহাব্বত পেতে আমরা বেশি বেশি এই দোয়াটি পড়ার চেষ্টা করব। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার ভালোবাসা এবং যে তোমাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা প্রার্থনা করি এবং এমন আমল করার সামর্থ্য চাই, যা তোমার ভালোবাসা লাভ করা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। হে আল্লাহ! তোমার ভালোবাসাকে আমার নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন ও ঠাণ্ডা পানির চেয়েও বেশি প্রিয় করে দাও। (তিরমিজি : ৩৪৯০)

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।


আরো সংবাদ



premium cement
টানা ১১ জয়ে ডিপিএলের প্রথম পর্ব শেষ করলো আবাহনী দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে? জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল